1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, April 17, 2022

রক্তের গন্ধ

ছবি : ইন্টারনেট 

 রক্তের গন্ধ

সৌরভ নাগ

প্রবল অস্বস্তিতে ঘুমটা ভেঙে গেল নিখিলের। গলা শুকিয়ে গিয়েছে তার জামা ভিজে গিয়েছে ঘামে। ঘরের আবহাওয়া যেন গুমোট মেরে থমকে রয়েছে। এই ঘরে একটিই মাত্র জানালা। কিন্তু শীতের রাতে জানালা খুলে শোওয়ার কোনো মানে হয় না। কলকাতা থেকে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দূরে এই মফস্বলে মশা আর চোরের উপদ্রব, দুটোই বেশি।

    মশা পতঙ্গটি বড় অদ্ভুত। পরের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। রক্তপিপাসু এই জীব রক্তের লোভে এদিক সেদিক ছুটে বেড়ায়। মশা ছাড়াও প্রচুর রক্তপিপাসু জীব রয়েছে পৃথিবীতে। তাদের বেশিরভাগই চোখে দেখতে পারে না। রক্তের গন্ধ  তাদের আকর্ষিত করে টেনে আনে।

রক্ত জিনিসটা বড় বিস্বাদময়। ছোটবেলায় খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে জিভে বেশ আঘাত লেগেছিল তার। তখনই রক্ত চুষে খেয়ে সে কোনোমতে সেসময়ে রক্ত বের হওয়া বন্ধ করেছিল। রক্তের একটা হালকা উৎকট গন্ধও পেয়েছিল যেন।

    নিখিল একজন ডাক্তার। সুতরাং রক্ত ও অন্যান্য মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়েই তার দৈনিক জীবন। রোজ প্রায় দেড়শ—দুশোজন রোগীর সাথে কথা হয় তার। প্রচুর জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি নির্বিকারভাবে তার কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু একদিন একটা লোকের সাথে তার এক অদ্ভুত রোগের বিষয়ে বিস্তর বাক্যালাপ হয়। লোকটি নিজেও সেই অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এবং তার  সুবাদেই ড. নিখিলের এই মফস্বলে আগমন।

    এখানে আসার পর থেকে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন এখানকার লোকেরা সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে বাড়ি ফিরে যায়। পথঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। কোনও এক অজানা বিপদের আশঙ্কায় যেন তারা চুপসে রয়েছে।

    লোকটির নাম অনিকেত ভট্টাচার্য। কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। রিটায়ারের পর এখানে পৈতৃক ভিটেতে চলে আসেন। কলকাতার কোলাহল থেকে দূরে নির্জন এই আধা শহরে প্রৌঢ়ত্ব কাটানোর জন্যে বেছে নিয়েছেন তিনি। এবং সেখানেই মাসখানেক আগে ব্যাপারটা শুরু হয়।

    জায়গাটির নামটি বড় অদ্ভুত, ঘুটঘুটি। নামটা শুনলেই যে কারোর বিদঘুটে লাগতেই পারে। নামেই মফস্বল। আদতে অজ পাড়াগাঁ। এখানের বেশিরভাগ অঞ্চলেই এখনও বিদ্যুৎ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। সপ্তাহে একদিন হাট বসে। এছাড়া এখানে কোনও দোকান পর্যন্ত নেই। এখানকার লোকেদের প্রধান জীবিকাই হল কৃষি। একটি স্টেশন আছে এখানে। তাও এখান থেকে প্রায় দু-মাইল দূরে।

    এই পাণ্ডববর্জিত এলাকায় মাসখানেক আগে এক অদ্ভুত পাগলাটে গোছের লোক হাজির হয়। এখানে একটি পুরনো ভাঙাবাড়ি রয়েছে। লোকটি সেখানেই গিয়ে উঠেছিল। এখানকার লোকেরা নতুন লোকেদের এড়িয়ে চলে। সুতরাং কেউই তার সাথে যেচে আলাপ করতে যায়নি। তবে তারা প্রতিদিনই সেই ভাঙাবাড়ি থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ পাওয়া যেত। যারা বাড়িটার পাশ দিয়ে যাতায়াত করেছিল তারা বিভিন্ন উৎকট, ঝাঁঝালো, মিষ্টি ও বিভিন্ন ধরনের গন্ধ পেয়েছিল। লোকটি হাটে আসে প্রত্যেক সপ্তাহে। এবং খাবারের পাশাপাশি কিছু অদ্ভুত শিকড়বাকর কিনে ফিরে যায়। এখানকার কিছু লোক তাকে তান্ত্রিকও ভেবে ফেলে।

    কিছুদিন পর হঠাৎই দেখা যায় সেই লোকটির মৃতদেহ পড়ে রয়েছে ভাঙাবাড়ির সামনের চত্বরে। এবং এরপর থেকেই এখানে প্রায়ই কেউ না কেউ নিখোঁজ হতে শুরু করে। কয়েকজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়, কিন্তু বাকিদের চিহ্নমাত্র মেলে না। সেই লোকটি এবং বাকি সব মৃতদেহগুলির একই অবস্থা। ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য শরীর। এবং প্রত্যেকের গলায় দুটি গভীর ছোট্ট ক্ষত।

    কয়েকজন নাকি রাতে সেই পাগলাটে লোকটিকে নাকি ঘুরে বেড়াতে দেখেছে এলাকাতে। কিন্তু কেউই আর সাহস করে এগিয়ে দেখতে যায়নি। একজন মৃত ব্যক্তিকে হঠাৎ যদি চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাহলে যে কোনো সাহসী ব্যক্তিরও বুক কেঁপে উঠবেই।

    এবং শুধু মানুষ নয়, নিখোঁজ ও মৃত্যু হতে লাগল গবাদি পশুরও। সেই একই ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য দেহ। ঘুটঘুটির লোকেরা বেশ ভয় পেয়ে গেল এরপর । সন্ধ্যে হলেই তারা ঘরে ঢুকে দরজা জানালা বন্ধ করে দিত। এক অজানা আতঙ্ক গ্রাস করে ফেলল ঘুটঘুটিকে।

    এসবই তিনি শুনেছেন অনিকেতের কাছ থেকে।

    জানালাটা হাট করে খোলা এবং চাঁদের জ্যোৎঙ্গা ঘরের মধ্যে এসে পড়েছে। তার ভালই মনে রয়েছে যে তিনি শোবার আগে জানালাটি বন্ধ করে শুয়েছিলেন। তাহলে জানালাটি খুলে গেল কিভাবে?

    তার থেকেও বড় প্রশ্ন, জানালা খোলা থাকা সত্ত্বেও ঘরের মধ্যে এত গুমোট ভাব কেন?

    তিনি উঠে গিয়ে জানালাটি বন্ধ করে দিলেন।

    পরদিন সকালে পাওয়া গেল আরেকটি দুঃসংবাদ | অনিকেতবাবুর বৃদ্ধ পরিচারক নিতাইয়ের ফ্যাকাশে ও রক্তশূন্য মৃতদেহ পাওয়া গেল বাগানের মধ্যে। পুলিশ এল বটে, কিন্তু দারোগাও কিছু সুরাহা করতে পারলেন না।

    অনিকেতবাবু চাপাস্বরে বললেন দারোগার বড় ছেলেও নাকি দিনচারেক আগে এরকমভাবেই মারা গিয়েছে।

যারা নিতাইয়ের মৃত্যুর কথা শুনে দেখতে এসেছিল তাদের চোখেমুখে চাপা আতঙ্ক লক্ষ্য করলেন নিখিল।

    তিনি ঠিক করলেন আজকের রাতটা ছাদে কাটাবেন।

    অনিকেতবাবুর বাড়িটা বেশ বড়, চারতলা। পুরো এলাকাতে ভাঙাবাড়ি ছাড়া এত বড় বাড়ি আর নেই। এত বড় বাড়িতে থাকতেন মাত্র দুজন। এখন নিতাইও মারা গেল | এই মৃত্যু বিভীষিকার করলে আরো কতজনের মৃত্যু হবে তা সত্যি আতঙ্কের বিষয়।

    ছাদে ওঠার প্রধান কারণ হল এখান থেকে ঘুটঘুটির বেশিরভাগ এলাকাই দেখা যায়। যদি এই অজানা বিভীষিকাকে চাক্ষুষ করতে হয় তাহলে এর চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই এই অঞ্চলে।

    একটা তীব্র মিষ্টি গন্ধে নিদ্রাভাবটা কেটে গেল নিখিলের। চাঁদ তখন প্রায় মধ্যগগনে। হালকা জ্যোৎত্তায় ছেয়ে গিয়েছে চারিদিক। তার মধ্যেই তার নজরে পড়ল অদ্ভুত দৃশ্যটি।

    কিছুদূরে রাস্তায় এক বেগুনী ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। এবং তারই মাঝে কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ধোঁয়া প্রায় পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এবং সম্ভবত মিষ্টি গন্ধটিও সেখান থেকেই বেরোচ্ছে। গন্ধটি এতটাই তীব্র যে নাক জ্বলে যাচ্ছে নিখিলের। তিনি সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে একটি চাদর জড়িয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন।

    লোকগুলোর কাছাকাছি পৌঁছে তিনি দেখতে পেলেন যে গন্ধটা বেরোচ্ছে একটি মৃতদেহ থেকে। একটি কুকুরের মৃতদেহ। সেই ফ্যাকাশে ও রক্তশূন্য দেহ। গলার পাশে দুটি গভীর ক্ষত।

    লোকগুলোর দৃষ্টিও কেমন যেন ফ্যাকাশে। তারা নিখিলকে যেন খেয়ালই করেনি। প্রত্যেকেই একইভাবে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    সহসা মিষ্টি গন্ধটা আরও তীব্র হয়ে উঠল। এবং তার সাথে সাথেই লোকগুলোর মধ্যে যেন প্রাণের সঞ্চার হল।

তারা ঘুরে নিখিলের দিকে তাকাল। কিন্তু ও – ও কী? লোকগুলোর চোখ রক্তবর্ণ কেন? আর তাদের মুখের দুপাশে যে দুটি দাঁত বেরিয়ে এসেছে।

    ওগুলো – ওগুলো কি শ্বদন্ত?

    নিখিল প্রমাদ গুনলেন। তিনি ধীরে ধীরে পেছতে পেছতে হঠাৎই দৌড় লাগালেন। পেছন থেকে ভেসে এল অনেকগুলো পায়ের শব্দ।

    ভ্যাম্পায়ার! তার আগেই বোঝা উচিত ছিল। ফ্যাকাশে রক্তশূন্য মৃতদেহ আর গলার আশেপাশে গভীর ক্ষত দেখে কোনও রক্তচোষা প্রাণীর কথাই মাথায় আসা উচিত। আর এখন হৃদত্ত দেখার পর তার মনে আর কোনও সন্দেহের অবকাশই রইল না।

    কোনোমতে বাড়ির সামনে পৌঁছতেই অনিকেতবাবুকে দেখতে পেলেন তিনি। তিনি প্রধান ফটকের ভেতরে সামনের লনে চলে এসেছেন।

    উৎকট মিষ্টি গন্ধে নিখিলের দম আটকে আসছিল। গেটের সম্মুখে এসে সেই উৎকট গন্ধ আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি। মাথা ঘুরে গেল তার। অজ্ঞান হওয়ার পূর্বে তিনি যেন একটা হালকা শিসের শব্দ শুনতে পেলেন।

নিখিল জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলেন প্রধান ফটকের সামনে।

    কলকাতার বাসে ফিরছিলেন নিখিল। গতকাল তাকে বাঁচাতে এসে রক্তচোষার শিকারে পরিণত হয়েছেন অনিকেতবাবু। এখানে এসেও যে তিনি তার পেশেন্টকে বাঁচাতে পারলেন না সেটার গ্লানি হয়ত সারাজীবন তাকে তাড়া করে বেড়াবে। ঘুটঘুটির ভ্যাম্পায়ারের কেসটা এখন দিনের আলোর মতই স্পষ্ট তার কাছে।

    বছরদুয়েক আগে কমলেশ চ্যাটার্জি নামে এক পাগলাটে বিজ্ঞানী এক অদ্ভুত ফর্মুলা আবিষ্কারের দাবি করে বসেন। তিনি নাকি এক এমন কেমিক্যাল আবিষ্কার করেছিলেন যার ফলে মানুষের মস্তিষ্কের ব্যবহারের ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তার ল্যাবরেটরিতে এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটার ফলে তার আবিষ্কার সমেত তার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। তার মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। ফলে পুলিশের ধারণা হয়েছিল যে তিনি হয়ত সেই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন। ব্যাপারটাতে সেসময় বেশ একটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পুলিশ ব্যাপারটাকে দুর্ঘটনায় বিজ্ঞানীর মৃত্যু দিয়ে চালিয়ে দেয়।

কিন্তু কমলেশের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি। ল্যাবরেটরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তিনি চলে আসেন তার পৈতৃক ভিটে ঘুটঘুটিতে।

    এখানে এসেও তিনি তার এক্সপেরিমেন্ট বন্ধ করেননি। কিন্তু এবার তিনি তার আবিষ্কারকে আরও উন্নত করে তুলতে গিয়ে এক মারাত্মক ভুল করে বসেন। তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী তিনি এখানের হাট থেকেই সংগ্রহ করতেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হল। তৈরি হল মানুষ থেকে ভ্যাম্পায়ারে পরিবর্তিত হওয়ার ফর্মুলা। সেই ফর্মুলাই কেড়ে নিল ড. চ্যাটার্জির প্রাণ। এবং ঘুটঘুটিকেও ফেলে দিল ভয়ঙ্কর বিপদের দোরগোড়ায়।

    তার এই অসাধারণ আবিষ্কারের কথা কেউ জানল না। সাক্ষী রইল তার হাতে তৈরি প্রথম ভ্যাম্পায়ার এবং তার ল্যাবরেটরি।

    ভ্যাম্পায়ারের মৃত্যু নেই। এক ভ্যাম্পায়ার যেকোনো সুস্থ মানুষকে ভ্যাম্পায়ারে পরিবর্তিত করতে পারে। তাদের আছে শুধুমাত্র রক্তের তৃষ্ণা।

    আরও এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য ছিল সেই ফর্মুলার। ওটার থেকে তৈরি হওয়া ভ্যাম্পায়াররা শুধুমাত্র রাতেই রক্তপিপাসু হয়ে ওঠে। দিনের বেলায় তারা অন্যান্য মানুষের মতই আচরণ করে। রাত হলেই তাদের রূপ বদলে যায়। বেরিয়ে আসে ছোট শ্বদন্ত, চোখ হয়ে ওঠে রক্তিম | মস্তিষ্কের ক্ষমতাও প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। ওদের শরীর থেকে তখন বের হয় উৎকট তীব্র মিষ্টি গন্ধ | যে সব শিকারদের থেকে রক্তপান করে তারা, পরদিন রাতে তারাও ভ্যাম্পায়ারে পরিবর্তিত হয়। শিকার থেকে শিকারে টেনে নিয়ে যাবার ক্ষমতা তাদের একটাই, রক্তের গন্ধ!

    কন্ডাক্টর টিকিট কাটার জন্য নিখিলের কাছে এসে দাঁড়াল। সে বোধহয় তাকে চিনতে পেরেছে। স্মিত হেসে কন্ডাক্টর জিজ্ঞেস করল, "আপনি সেই পাগলা বিজ্ঞানী ড. চ্যাটার্জির ছেলে না?"

    নিখিল মৃদু হেসে বলল, "ঠিকই ধরেছেন।"

    কণ্ডাক্টর টিকিট কেটে চলে যাবার পর তার পাশের সহযাত্রীটি বলে উঠলেন, "সেকি। ড. কমলেশ চ্যাটার্জির ছেলে আপনি। আমি কমলেশের স্কুল ফ্রেন্ড ছিলাম। এর আবিষ্কারটির কথা সে বলেছিল আমাকে। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং হলেও তখন খুব একটা পাত্তা দিইনি ওকে। তা আপনি ঘুটঘুটিতে কি করতে এসেছিলেন? কোনও আত্মীয়স্বজনের —"

    "না — না। আসলে আমি একজন ডাক্তার। এখানে এক পেশেন্টের জন্য এসেছিলাম।" নিখিল উত্তর দিল |

ভদ্রলোক চাপাস্বরে বললেন, "এই ঘুটঘুটি জায়গাটা মোটেই ভালো নয়। রক্তচোষার উপদ্রব আছে ওখানে।" তিনি গলার স্বর আরও নামিয়ে বললেন, "রোজই নাকি কেউ না কেউ মরছে। মানুষ, গরু, ছাগল, কুকুর, বিড়াল কেউই বাঁচছে না সেই বিভীষিকার হাত থেকে। আপনি কপালজোরে বেঁচে গিয়েছেন।"

    নিখিল চুপ করে জানালার বাইরে চেয়ে রইল। হাইওয়ের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেত।  সূর্য দূরে ক্ষেত ও আকাশের মিলনস্থলে চলে এসেছে। গোধূলির আলোয় আকাশ যেন আরও মায়াবী হয়ে উঠেছে।

    তার পাশের ভদ্রলোকের বোধহয় স্টপেজ এসে গিয়েছিল। তিনি উঠতে যেতেই হঠাৎ জিভ কেটে বললেন, "এ হে। আপনার নামটাই তো জিগ্যেস করা হল না। আমি নির্মল সেন।"

    লোকটি হাতজোড় করে নমস্কারের ভঙ্গি করল।

নিখিল একটা চওড়া হাসি হেসে হাতজোড় করে বললেন, "আমি ড. নিখিল চ্যাটার্জি।"

    সূর্যাস্ত হয়ে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে। সন্ধ্যের অন্ধকার বাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বাসে একটা ছোট কম ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে। সেই মৃদু আলোতে বাসে বেশ একটা রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

    হঠাৎই তার মাথা ঘুরে গেল। তার মাথার ভেতর যেন কেউ মৃদু শিস দিচ্ছে।

    বছরদেড়েক আগে কমলেশ চ্যাটার্জির অজান্তেই তার চারবছরের ছেলে খেলাচ্ছলে ফর্মুলাটি খেয়ে ফেলে। প্রথম ভ্যাম্পায়ারের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। পরিবর্তিত হন ভ্যাম্পায়ারে। শিকার করতে লাগলেন ঘুটঘুটিতে।

    তার মৃত্যুর পর তার ছেলেকে আশ্রয় দেয় তার বন্ধুর এক ট্রাস্ট। তাকে রেখে আসে এক মিশনারি অরফানেজে। কিন্তু সেই অরফানেজের প্রত্যেকজন তার শিকারে পরিণত হয়। তারাও হয়ে ওঠে ভ্যাম্পায়ার।

    বড় হয়ে ওঠার পর সে ডাক্তারি পড়তে চলে আসে কলকাতায়। হয়ে ওঠে কলকাতার এক নামকরা ডাক্তার |

    নিখিল বুঝতে পারল তার মুখের ভেতর থেকে চারটি সুক্ষ ধারালো কিছু বেরিয়ে আসছে। এবং ধীরে ধীরে বাসে একটা তীব্র মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে এক সুস্বাদু টাটকা সুমিষ্ট গন্ধ।

রক্ত – রক্তের গন্ধ!

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment