1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

রেডিও

ছবি : ইন্টারনেট
রেডিও
পথিক মিত্র

"বল হাতে ছুটে আসছেন ডোনাল্ড, সামনে রাহুল দ্রাবিড়। রক্ষনাত্যক ভাবে খেলে দিলেন দ্রাবিড়। সবুজ ঘাসের বুক চিরে সীমানার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বল। " রেডিও তে রাজু মুখার্জির সাবলীল কণ্ঠস্বর। দাদাই হাততালি দিয়ে উঠলেন।আমরাও চিৎকার করে উঠলাম। আর সেই সময় কারেন্ট চলে এলো। দেখলাম দ্রাবিড়ের ব্যাটের খোঁচায় বল ফাইন লেগে গিয়ে থেমে গেছে। কিন্তু লোডশেডিং এর সময় রেডিও যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলো সেটা আজকের 5G প্রজন্মের পক্ষে বোঝা অসম্ভব।

 1996। ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ফিলিপ্সের রেডিওটা আমার দাদাই এর। ক্রিকেট হোক বা কৃষি ভাই দের জন্য দাদাই সারাদিন রেডিও নিয়ে অবসেস্ড থাকতো। ক্রিকেটের পোকা ছিল দাদাই। তখন ৭৬ নট আউট।

২০০৩ চলে গেল দাদাই আর দিদুন ২০০৬ এ। কাকারা নিউটাউনের ফ্ল্যাটে শিফ্ট করলো ২০০৮ । ছোটকা তো আগে থেকেই মুম্বাই তে। শোভাবাজার এর পৈতৃক বাড়ির ইমোশান আঁকড়ে পড়ে রইলো বাবা মা। ২০১১ তে চাকরি নিয়ে আমি পুণে চলে এলাম। ২০১৬ তে আমার আর মালবিকার বিয়ে আর ২০১৮ বাবার বাইপাস হল। বাড়িটা আর রাখা যাচ্ছিল না। বাবার ইমোশন দিয়ে তো আর মেনটেইন করা যায়না বিশাল বাড়ি খানা। কাকারাও আর রাখতে চাইছিল না বাড়ি টা।

কাল বাবা মা শিফ্ট করে গেছেন আমার টালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে। বিল্ডার ভাঙ্গা শুরু করবে পরশু থেকে। আজ শেষ বারের মত কিছু জিনিস ডিসপোজ করতে এসেছি আমি। অদরকারি জিনিস সব। শুধু ইমোশনের দোহাই দিয়ে টিকে আছে। গুচ্ছ কাগজ, চশমা,জমানো প্লাস্টিক, দাদাই এর লাঠির সেট। মানে হাঁটার লাঠি, ফুল পাড়ার আক্ষী, কুকুর খেদানোর লাঠি, ফেলে দেওয়া উইকেট। আর সেই রেডিওটা। না ওটা দিসপোজ করতে পারলাম না।

রেডিওটা এখন আমার পুনের ফ্ল্যাটে। যদিও সে এখন  মূক। আসলে ওই রেডিও তে বাদশার " ওয়াখরা স্বাগ" ভালো লাগেনা। ওটাই আমার জন্য দাদাই। মাঝে মাঝে ওটা কে ছুয়ে দেখি আর শুনতে পাই সেই লোডশেডিং এর অলস দুপুরে রাজু মুখার্জিকে, "সবুজ ঘাসের বুক চিরে বল এগিয়ে চলেছে সীমানার দিকে"
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment