1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

অকাল মৃত্যু এবং বসন্ত

ছবি : ইন্টারনেট
অকাল মৃত্যু এবং বসন্ত 
গোপা চক্রবর্তী

আজ বসন্তের কথা মনে পড়তে ইন্দু স্মৃতির পাড় ধরে পৌছে যায় বৃক্ষের ছায়া শোভিত পথে দুদন্ড পায়ে হেঁটে কয়েক কদম চলা হাতে হাত রেখে স্বপ্নের দিন গুলোতে । সেই চলাতে ইন্দু কখন ইন্দি হয়ে  সূর্যের সাত রং মেখে দিবাস্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারপর কখন বসন্তের আকাশে রামধনু হয়ে জেগে ওঠে.....চারিদিক অপূর্বতায় ভরে যায়।
সেই অনুভূতি নিয়েই ইন্দি আপন মনে বিচরন করতে থাকে মনের আনাচ কানাচ পেরিয়ে.......যেখানে শৈশবের এক্কা দোক্কা খেলা থেকে শুরু করে, স্কুল ছুটির পর আইসক্রিম খাওয়া , বর্ষার দিনে স্কুলের জল ভর্তি মাঠ এক সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে জল ছিটিয়ে পেরিয়ে চলা, কলেজের দিনে ছুটির পর ট্রামে, বাসে পাশাপাসি কাটা সিটে বসা, হটাৎ করে বাসের জানলা দিয়ে ইশারায় কিছু দেখিয়ে আনমনা করে পিঠে চিমটি কাটা.....এই সব খুনসুটির মধ্যে দিয়ে কলেজের দিন পার হয়ে যায় !!
রামধনুর রঙে ভাসতে ভাসতে ঘুমিয়ে পড়া ইন্দির পাথর চাপা মনে বসন্তকে স্বপ্নে  দেখে । গলার মধ্যে পাকিয়ে ওঠে অস্ফুট স্বর। ভারী চোখের ধারাপাতে বেদনা জর্জরিত মন দেখে বসন্তের আকাশে রামধনু পুড়ে ঝরা পাতার মত ঝরে যাচ্ছে !
ইন্দির উত্তেজিত মন বসন্তকে আসতে বলে, চিঠির মাধ্যমে  না বলা মনের কথা জানিয়ে দিতে চায়।

তোমার মনে বসন্ত থাক ওই পলাশ রঙে রাঙিয়ে ,
ঝরা পাতায় রেখ না আমায়....
পাতা ঝরার নিগড় থাক প্রকৃতির হাতে।
সকাল- সন্ধ্যে ফোটা ফুলের সৌরভে
এসো ছিপ নৌকোয় ; বসন্তের কত রঙ ! মাখব দুজনে !
বসন্ত আজ এসেছিল পলাশ আভোরনে ! কিন্ত ইন্দির ভারাক্রান্ত মন  না ...না  বলে চিঠি লিখে  টেবিলে  রেখে দেয়....
এই চিঠি বসন্তর হাতে পৌঁছল কিনা আর দেখা  হয় না ! কিন্তু রামধনুর বুকের জল ভরা মেঘ যখন শুষ্ক হয়ে উড়ে যায় তখন যে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়..... তা অনুভব করার মত সময় কাউকে রাখে না।
বসন্ত,
আজ চারিদিকে রঙের ফুটন্ত সুভাস আর পাখির গুঞ্জনে মুখরিত এই উঠোন, ওই প্রাঙ্গণ। তবু কোথাও কি কিছুর অভাব চোখে পড়েছে !  ধুসর পাতা গুলো.... না না  পাতা গুলো ধুসর নয়.... কিছুক্ষণ আগেও সবুজ প্রাণবন্ত হয়ে প্রজাপতির মত ডানা মেলে ওড়ার স্বপ্ন ছিল। আর এখন  প্রাণহীন ধূসর জীর্ন... ! এখনও ওর শিরা উপশিরা বসন্ত ঘ্রানে উৎসুক। মর্মে রয়েছে ওর চির বসন্তের দোলা, কোন বেদনাই  কি জীর্ন করতে পারে ? বেদনারা গ্রীষ্মের দাবদাহে পুড়ে যায় না। বরং সরস ফলের মত রসাল । বর্ষায় বেদনারা প্রান হীন নয়, বরং পুষ্ঠ ।প্রাণের জোয়ার আসে বেদনার বর্ষায় সিক্ত হয়ে। শরতে শিউলির ঘ্রান,আর কাশের দোলায়  বেদনা পরষ্পর আনন্দ-বিষাদের আতিসহ্য বহন করে। হেমন্ত যতই আপন করে নিক না কেন মন প্রাণ দিয়ে ,বেদনা দূরে ঠেলতে না পারলেও কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলে। শীতে, বেদনারা একাকিত্বের অনুভবে নিজেকে আড়াল করতে চাইলেও, একটা ভয় মিশ্রিত ভাব গম্ভীর সখ্যতা গড়ে তোলে। প্রেমের প্রাপ্তি আর আপ্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে বেদনা মুখর হয়ে ওঠে বসন্তে। কিন্তু জীর্ণ করে না নিজেকে,বরং প্রতিটা ঋতুতে বেদনা ঋদ্ধ হয়। বেদনা ছাড়া প্রেমের মাহাত্য বোঝা যায় না।
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে প্রেম ঝরা পাতার গায়ে বেদনা লিখে দেয় বসন্তের সুঘ্রান পেতে  বারে বারে ..,  
 কি জানি কীসেরও  লাগে প্রাণ করে হায় হায় ------

"বসন্ত....বসন্ত......আবার এসো , ঠিক এসো কিন্তু.....
যদি আবার দেখা হয় , তখন নতুন কিছু কথার জন্ম হবে ! নতুন উত্তেজনা  আর কিছু আবেগের অলি গলি ধরে পৌঁছে যাব সেই পথে। যে পথ চেনা অচেনার গন্ডী ছাড়িয়ে একদিন সমান্তরাল পথের শেষ বিন্দুতে পৌছবে যেখানে চাওয়া পাওয়ার উর্ধে উঠে এক পরম প্রাপ্তিতেই লীন হবে এই জীবন।
পরোজন্ম যদি মান, তবে আবার দেখা হবে নিশ্চয় -----!"
ইতি----
ইন্দি
...(সমাপ্ত)...

1 comment:

  1. খুব ভালো লিখেছেন

    ReplyDelete