1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

প্রিয় শুভ্র

ছবি : ইন্টারনেট
প্রিয় শুভ্র
শুভদীপ চক্রবর্তী

নমস্কার, আমি এষা, আর ওই যে কালো শার্ট ও জিন্স পরে চায়ের কাপ হাতে ছেলেটিকে দেখছেন, ও শুভ্র। পূর্ব বর্ধমানে কোনো এক অপরিচিত মায়াময় গ্রাম থেকে কলকাতার গোলকধাঁধার অলিতে গলিতে ডিগ্রি ভর্তি ঝোলা হাতে চাকরির সন্ধানে হেঁটে বেড়ানো একসময়ের এক উদ্ভ্রান্ত পথিক শুভ্র মুখার্জী। আমার জীবনের সবথেকে প্রিয় মানুষগুলোর মধ্যে আমার মা, বাবা আর আমার প্রাণের বন্ধু শুভ্র।
না, এটা ঠিক শুভ্রর আত্মজীবনী নয়, এক সাধারণ গ্রাম্য ছেলের জীবনে কি বা এমন বিচিত্রতা থাকবে, যা শুনে শ্রোতার মুখমণ্ডলে নিম্ন চোয়াল নেমে যেতে পারে? যা বলতে চলেছি, তা বর্তমানে অধিকাংশ যুবক-যুবতীরা ফেসবুক পেজে দেখে আক্ষেপ করে আর তার।বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কারণ জিনিসটি আজ খুবই দুর্লভ কিন্তু খুঁজে চলেছে পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ। জিনিসটি আর কিছুই না, "প্রেম"। এই প্রেমের অর্থ বলতে আমি বুঝতাম খুব দৃঢ় এমন এক সম্পর্কের বন্ধন যাতে না থাকবে কোনো জটিলতা, না থাকবে কোনো গূঢ় ষড়যন্ত্রের গন্ধ। কিন্তু প্রেমের যে সংজ্ঞার সঙ্গে আমি পরিচিত ছিলাম, সেই দৃষ্টিভঙ্গীর মোড় ঘুরিয়ে বাস্তবতার পরিচয় পেলাম আমার এই বন্ধুটির জীবনের পাশে থাকার ফলে।
সালটি ২০১২-র বোধহয় জানুয়ারীর পড়ন্ত বিকেল। বাড়ির বাইরে কলিং বেলের শব্দে যখন দরজাটি  খুললাম, দেখি প্রায় আমার সমবয়সী কিন্তু শারীরিক ভাবে বিধ্বস্ত এক অতি সাধারণ বেশভুষোর যুবক, এসে দাঁড়িয়েছে আমাদের দরজায়। জানতে পারি তার নাম শুভ্র মুখার্জী। ওই শুভ্রর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ও জানাল যে ও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে কলকাতার একটি কোচিং সেন্টারে, তাই আমাদের দেওয়া পেয়িং গেস্টের বিজ্ঞাপন দেখে ও এসেছে। খুব একটা অসুবিধা হলো না ওকে আমাদের দোতলার ঘরটা ভাড়ার জন্য ছেড়ে দিতে। অল্পভাষী, বিচক্ষণ, বুদ্ধিমান, বছর চব্বিশের ছেলেটিকে কিন্তু বেশ ভালো লেগেছিলো আমাদের বাড়ির সবার। বন্ধু সার্কেলটা আমার বরাবরই খুব ছোট, আর যেহেতু আমরা দুজনেই প্রায় একই বিষয়ে এবং একই উদ্দেশ্যে অর্থাৎ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছি, তাই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতেও সময় লাগলো না খুব বেশি। একে নতুন জায়গা, তারপর চাকরি পাওয়া এবং তার  মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চাপ সর্বক্ষণ তার মধ্যে বিচরণ করত। আসলে এই বয়সে মানুষের জীবনচক্রের সবথেকে প্রতিকুল সময় অতিক্রান্ত হয়। কত আবেগ, কত কিছু পাওয়ার আনন্দ, হারিয়ে ফেলার ভয়, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর উদ্দম প্রচেষ্টা, রুমালের আদলে চোখের জল লুকানোর কৌশল, নিদ্রাহীন রাত, আরো কতোকিছুর সঙ্গী হয়ে থাকে এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা। তাও হাসিমুখে লড়ে যেতে হয়। শুভ্রও লড়ছিল। ও ভর্তি হলো আমার পাশের কোচিং-এ। পড়াশোনা খুব ভালোই করে ও। আমি প্রায়ই যেতাম ওর রুমে গ্রুপ স্টাডি করতে, যেটা দুজনের জন্যই বেশ উপকারী ছিল। আমাদের দুজনের দিনরাত পরিশ্রমের ফসল হলো এই যে, আমরা দুই বন্ধুই, প্রথমে শুভ্র এক বছরের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রথম ধাপ উত্তীর্ণ হয় ও আমি উত্তীর্ণ হলাম শিক্ষক নিয়োগের প্রথম ধাপে। সবে তো প্রথম ধাপ, কিন্তু তাও একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত ছেলের জীবনে সফলতার প্রথম সিঁড়িতে পা দেওয়ার আনন্দ সেদিন ঝরেছিল শুভ্রর দু চোখ বেয়ে।
বয়সের এই নির্দিষ্ট সময়ের আরেকটি অসুবিধা হলো, ভুলের অবকাশ খুবই কম। হয়তো শুভ্রর জীবনেও এল সেরকমই এক অকস্মাৎ পরিবর্তন, যা হতবাক করে দিচ্ছিল আমাকে। হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেলো আমাদের গ্রুপ স্টাডি। বন্ধ হয়ে গেলো শুভ্রর চিরাচরিত অভ্যাসগুলো। আমার সবচেয়ে কাছের, আমার চেনা বন্ধুটি হঠাৎ হয়ে উঠল বড্ড অচেনা। যেই শুভ্র অনেক রাত অব্দি পড়ত আবার সকাল পাঁচটা বাজলেই বই খুলে বসত, সেই শুভ্র এখন রাত চারটে অব্দি অনলাইন থাকে,আবার সকালে ঘুম থেকে ওঠে ৯টার পর। টিউশনেও ঠিকঠাক যেত না। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ যেন অক্টোপাসের মতো নাগপাশে জড়িয়ে শুষে নিচ্ছে শুভ্রর সামনে এগোনোর সব গতি, ঝাপসা করে দিচ্ছে ওর স্বপ্ন কে।
হ্যাঁ, আমার সন্দেহই ঠিক, প্রেম। যা সঠিক হলে তাকে অবলম্বন করেই কাটিয়ে দেওয়া যায় সমস্ত প্রতিকূলতাকে, আর যদি মানুষটি ভুল হয় তাহলে প্রেম হয়ে ওঠে সেপটিক ক্ষতের মতো, ধীরে ধীরে পচাতে থাকে সমস্ত মন-মস্তিস্ককে। পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপের জন্য হাতে মাত্র তিন মাস সময়। এর মধ্যে কিভাবে নিজের পড়াশোনার সামলে শুভ্রর সেপটিক ক্ষতকে সারিয়ে তুলব তার চিন্তাই আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল। তবুও হাল ছারিনি, ছিলাম বন্ধুর পাশে। আমাদের দুজনেরই দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফলাফল বেরোল খুব কম সময়ের ব্যবধানে। আমি পেরেছি, কিন্তু পারেনি আমার বন্ধুটি, পারল না পরের বছরও।
আমি এখন এক উচ্চবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষিকা। কিন্তু না পাওয়ার হতাশা, না পারার আক্ষেপ, হেরে যাওয়ার ভয়, হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা ততক্ষনে আমার বন্ধুটিকে জর্জরিত করে তুলেছে। একদিন আচমকাই আমাকে ফোন করে শুভ্র। ফোনের ওপার থেকে কান্না-ভাঙা গলায় বলে উঠলো, "এষা, প্লিজ একবার আসবি আমার রুমে?"
আমার "কেন? কি হয়েছে তোর?"- প্রশ্নটার আগেই ফোনটা কেটে দেয় ও। বুকের ভিতরে এখন আমার মিশ্র অনুভূতির জোয়ার-ভাটা খেলছে। স্কুল ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সোজা চলে এলাম শুভ্রর রুমে। আজ প্রায় দেড় বছর পর এলাম এ রুমে কিন্তু দেড় বছর আগে যা দেখেছিলাম আর আজ যা দেখছি, তাতে আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
বললাম, "ঘরটার কি অবস্থা করেছিস শুভ্র!"
উত্তর এলো, "হম (বিষণ্ণ হাসি), খুব অগোছালো, তাই না?"
শুরু হলো আমাদের কথোপকথন, বললাম, "কি হয়েছে তোর? শরীর তো একেবারে শেষ করে রেখেছিস! টিউশনে যাস না কেন? কেন করছিস এরকম? আর মেয়েটা...", পরেরটা আর বলতে পারলাম না।
শুভ্র- "শুনবি? সময় আছে হাতে? বেশ তাহলে"
বললাম, "পাগলামি করিস না। শুনতেই এসেছি, (শুভ্রর হাত দুটো আঁকড়ে ধরলাম) বল শুভ্র... প্লিজ বল"
শুভ্র- "টিউশনে একটি মেয়ের সঙ্গে আমার আলাপ হয় আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে, মৌপ্ৰিয়া ঘোষ। আমরা দুজনেই স্যারের প্রিয় ছিলাম। একদিন টিউশন থেকে ফেরার পথে ও আমাকে ডেকে বলল, "শুভ্র, আমার তোমাকে বেশ পছন্দ। তোমার ফোন নম্বরটা পাওয়া যাবে?" আমি তো শুনে হতবাক। কারণ এই ধরণের অনুভূতির সঙ্গে আমার তখনো পরিচয় ঘটেনি। আমি নম্বরটা দিলাম। আমারো কিন্তু ওকে খুব একটা খারাপ লাগত না, জানিস? সেদিন রাতে ও কল করল, কথা চলল প্রায় ভোর চারটে পর্যন্ত। জানিনা এষা, আমার মতো ছেলে এতো স্বপ্ন, এতো আশাকে উপেক্ষা করে কিভাবে ধীরে ধীরে ওর প্রেমের গহ্বরে তলিয়ে গেলাম। কেমন একটা অনুভূতি হতে আরম্ভ করল। এখন আমি ওকে কল করে ছাড়া থাকতে পারিনা। টিউশনেও যেতে দেয় না ও আমাকে। ওই সময়ে আমরা পার্কে বা গঙ্গার ঘাটে বসে সময় কাটাই। তোর কথা বলেছিলাম ওকে। আমার ফোন নিয়ে ব্লক করে দেয় তোকে, আর দিব্যিও দেয় যাতে তোর সঙ্গে কথা না বলি।"
এতদূর বলে আমার কোলে মাথা রেখে খানিক থামল শুভ্র, বোধহয় অজশ্র অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ। বললাম, "তারপর?"
শুভ্র বলে চলল, "খুব ভালো চলছিল আমাদের প্রেম, অন্তত আমার তো তাই মনে হচ্ছিল। পড়া হচ্ছে না, ঠিক সময় খাওয়া হচ্ছে না, চাকরি হচ্ছে না, বাবার পাঠানো অত কষ্টের টাকা রাখতে পারছিনা। কারণ? কারণ, সিনেমা, গিফ্টস, আমোদ-প্রমোদ... খুব ভালো চলছিল আমাদের প্রেম (দীর্ঘশ্বাস ফেলল শুভ্র)। পাগল হয়ে উঠেছিলাম, জানিস? কি করছি কোনো হুঁশই ছিল না। শুধু ছিল মৌপ্ৰিয়া, আমার মৌ। ও আমার কাছে নেশার মতো হয়ে উঠেছিল। সবসময় ওকে হারিয়ে ফেলার ভয়, আতঙ্ক, গ্রাস করে রাখত আমাকে।"
এই মুহূর্তে আমি ভাবলাম শুধু একটাই কথা, যে, সেপটিক ক্ষতের ক্যান্সারে রূপান্তকরণ।
শুভ্র বলে চলল, "জানিস, সেকেন্ড এটেম‌ন্ট-এও যখন পারলাম না চাকরিটা পেতে, ও হঠাৎ করে দূরে চলে যেতে লাগল। আমাদেরই টিউশনের আকাশ ওর খুব কাছের বন্ধু হয়ে উঠল, ঠিক যেমন আমরা ছিলাম এক সময়ে। এখন ও আমাকে আর সহ্য করতে পারে না। কল করলেও কেটে দেয়। কিন্তু তবুও ওকে আমি ভালোবাসি। হ্যা, বাসি ওকে আমি ভালো, কারণ অভিনয় আমি শিখিনি। কিন্তু এখন আমি বড় অসহায়। আবার আমি একা, বড্ড একা। অপরাধী তোর কাছে, সমাজের কাছে, আমার মা-বাবার কাছে, নিজের কাছেও। আমি মুক্তি চাই, এষা।"
এখন আমার ভিতরে আবেগের সুনামি চলছে। শুভ্র, আমার সেই শুভ্র, পড়া-পাগল, নিরীহ প্রকৃতির এক সাধারণ ছেলে, যার সাধারণতাই আমার মন কেড়েছিল প্রথম দিনই। আচ্ছা, সত্যি কি শুধু গ্রুপ স্টাডির জন্য যেতাম ওর রুমে? সত্যি কি সম্পর্কটা কেবলমাত্র বন্ধুত্বের ছিল? ভিতর থেকে কে যেন চিৎকার করে উঠল, না, শুধু বন্ধুত্বের নয়, আরেকটু বেশি কিছু। কিন্তু কতটা বেশি? সে উত্তর আবেগ, অনুভূতির দাঁড়িপাল্লায় মাপা যায় না। কিন্তু এটুকু জানি, শুভ্রর ক্ষতি আমি কোনোদিন চাইতে পারিনি, আজও পারব না। শুভ্র পরীক্ষার প্রথম ধাপ পাশ করাতে কি শুধুই আনন্দে ওর একারই চোখের জল বেরিয়েছিল? আমার চোখের কোনার জল কি সত্যি শুভ্র দেখতে পায়নি? নিজের সফলতার থেকেও বেশি খুশি হয়েছিলাম আমি ওর সফলতায়। এটাই কি প্রেম? হবে হয়ত, কিন্তু এটুকু জানি, ওকে আমি বিশ্বাস করি। ওর পরিবর্তনে কত কষ্ট আমি পেয়েছি সেটা কি ও আঁচ পেয়েছে? আজ এতগুলো দিন পরেও একটা কলে ছুটে এসেছি কোন অজানা টানে, জানি না। তবে শুভ্র যা পেয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি পাওয়ার যোগ্য ও। আমি আমার শুভ্রকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে দেব না, ওকে আমি সফল করে তুলবই, আর এটা আমার দৃঢ় সংকল্প। প্রেমের কাছ থেকে যে আঘাত ও পেয়েছে, তাকে সারিয়ে তুলে প্রেমের সঠিক অর্থ বোঝানোর দায়িত্ব আমারই।
আসলে মানুষের জীবনে যখন প্রথম প্রেম আসে, সে ভুলে যায় ভালো-খারাপের মাপকাঠি, হারিয়ে ফেলে বিচারশক্তি। সেই মানুষটিই তার জীবনের সবথেকে কাছের হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন আমার কাছে শুভ্র, আর শুভ্রর কাছে মৌপ্ৰিয়া। নাই বা বাসল শুভ্র আমাকে ভালো, আমি তো বেসেছি, আবার নাই বা বাসুক মৌপ্ৰিয়া, শুভ্র তো ভালোবেসেছে। বড়ই অদ্ভুত এই চক্র। আসলে আমরা যখন কাউকে চাই, তাকে পাওয়ার জন্য এতটাই উতলা হয়ে উঠি, যে এটা দেখতে ভুলে যাই যে সামনের মানুষটি ঠিক কতটা গ্রহণ করে নিয়েছে আমাদের। প্রেম তো কোনো কষ্টদায়ক প্রতিবন্ধক নয়, এটি হলো দুটি মনের অবাধ বিচরণক্ষেত্র যেখানে দুজনের মধ্যে স্বাধীনতা থাকবে, বন্ধুত্ব থাকবে, মন খুলে হাসি যেরকম থাকবে, মন খুলে কান্নাও সেরকম থাকবে। যে পাশে থাকলে জীবনের শেষ অবধি হেসেই কাটিয়ে দেওয়া যায়, ঠিক যেমন ভেবেছিলাম আমি শুভ্রর সঙ্গে। আজ শুভ্র কি কিছুই টের পায়নি? পেয়েছে, তাই তো আজ এতগুলো দিন পরেও, এতো আঘাতের মধ্যেও প্রথম কলটি সে আমাকেই করল। শান্তিতে মাথাটি আমার কোলেই রাখল। দেখিইনা, প্রেম যদি একটা মানুষকে এতটা ভাঙতে পারে, আমি না হয় ওকে আবার তৈরী করেই দেখাব।
এর পর কেটে গেছে অনেকগুলো দিন। এতদিন শুভ্রকে কিভাবে সামলেছি সেটা আমিই জানি। ভর্তি করেছি ওকে একটা ভালো কোচিং-এ। আর্থিক চাপ যে ওকে কুরে কুরে খাচ্ছিল, সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম। একদিন ওকে বললাম, "শুভ্র, আমার একটা কথা রাখতে হবে, প্লিজ। কথা দে রাখবি?"
শুভ্র- "তোর কোন কথাটা আজ পর্যন্ত রাখিনি বল তো? নিশ্চয়ই রাখব, বল"
আমি বললাম, "দেখ শুভ্র, আমি এখন আমার নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত, আমাকে তোর পাশে দাঁড়াতে দে, তোর কোচিং ফি টা আজ থেকে আমার দায়িত্ব।"
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ও শুধু বলেছিল, "বেশ! তাই হোক।"
সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে ওকে কোচিং পাঠানো থেকে শুরু করে রাতে অন্তত ৩০ মিনিট ছোটখাটো ব্যক্তিগত আলোচনা... আমার মনে হচ্ছিল যেন বহু নিষ্ঠুরতার সঙ্গে কেটে ফেলা কোনো গাছকে আমি আবার সযত্নে বাঁচিয়ে বড় করে তুলছি। ধীরে ধীরে শুভ্রর মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলাম। নতুন উদ্দম, নতুন চেষ্টা, নতুন উর্যায় ভরপুর হয়ে উঠেছিল। শুধু এটুকু ছাড়া আর কিছু কি নতুন নয়? নিশ্চই, নতুন প্রেম, যার আভাস আমি পাচ্ছিলাম কিন্তু না আমি বলতে পারছিলাম, না ও।
শুভ্র এখন ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বি. ডি. ও.)। আজ আমি সফল। 'আমরা' সফল।প্রেম যদি অন্তর থেকে আসে, তাহলে তার পরিণতি শুভই হয়। সময় লাগে, আমারও লেগেছে, কিন্তু আমি আমার শুভ্রকে পেয়েছি। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি, প্রেম দিবস। আমার জীবনের সবথেকে বড় উপহারটি শুভ্র আজ দিল আমাকে, আমাদের ভালোবাসাকে পরিণতি দিয়ে। আজ আমাদের রেজিস্ট্রি, আইনত বিয়ে। আমার কানে এসে শুভ্র বলল, "একসময় যে স্বপ্নের বাস্তব রূপ দেখতে পাব, সেটাই ভাবতে পারিনি। তুই আমার জন্য অনুভূতি, সবসময় একইরকম ধরে রেখেছিলিস, ধন্যবাদ এষা। প্রাপ্তির এতটা যে একসঙ্গে পাব, সেটা কোনোদিন ভাবতে পারিনি। জানিনা কি বলব তোকে, জাস্ট ভালোবাসি, খুব খুব ভালোবাসি।"
এই প্রথম প্রেম নিবেদন পেলাম শুভ্রর গলায়। আমার কপালে একটি চুমু খেলো শুভ্র আর চোখের কোনার জলটা মুছে দিল দু'হাত দিয়ে। খেয়াল করলাম আজ কিন্তু জলটা এড়ায়নি ওর চোখকে।।
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment