1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, August 15, 2022

আত্মঘাত

ছবি : ইন্টারনেট

আত্মঘাত
অনিন্দ্য পাল 

এক.
--ডাক্তারবাবু আমার
রণিতার কথা শেষ করতে দিলেন না ডাক্তার মিত্র। গম্ভীর স্বরে বললেন, 
-- হ্যাঁ, আপনার এবারেরটাও আগের দুটোর মতই। 
মোবাইলের ওপাশ থেকে নিস্তব্ধতা ভেসে এলো। কিছুক্ষণ পরে আবার বললো রণিতা, 
-- ডাক্তারবাবু এরা আমাকে বাঁচতে দেবে না। আপনি কিছু একটা করুন। ফোনটা কেটে গেল।

রণিতার শ্বশুর ডাক্তার মিত্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কোটিপতি ব্যবসায়ী। একমাত্র ছেলের ঔরসে ছেলে দরকার তাঁর। ব্যবসার পরম্পরা বজায় রাখার জন্য একটা পুংলিঙ্গ দরকার। কিন্তু রণিতা ইতিমধ্যেই দুই মেয়ের মা। এখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এদেশে ভ্রূণের লিঙ্গ জানা আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু টাকার কাছে আইন খুব ভঙ্গুর জিনিস। 
একটু পরে রণিতা আবার ফোন করলো। ডাক্তার মিত্র গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। ফোনটা রিসিভ করলেন, 
-- ইয়েস। স্পিকিং। 
-- আপনি বাচ্চাটাকে 
ওকে বলতে না দিয়ে ডক্টর মিত্র বললেন, 
-- ঠিক আছে, আগামী কাল বিকেল পাঁচটা, আমার সোনারপুরের ক্লিনিকে। ব্যবস্থা হয়ে যাবে। 
ডাক্তার মিত্র চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন। চারটে বাজতে যায়। এখান থেকে সোনারপুর যেতে আধঘন্টা লাগবে। বিকেল পাঁচটায় ক্লিনিকে না ঢুকতে পারলে… 

দুই. 
পরপর দু'টো ওয়াশ সেরে সবে চেম্বারে ঢুকে বসেছেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে সুখটান দেওয়া শুরু করেছেন কি করেন নি -- চেম্বারের বাইরে থেকে একটা বাগবিতণ্ডার শব্দ এল। বিরক্ত হয়ে ডাক্তার মিত্র কম্পাউন্ডার রতনকে ডাকলেন। 
-- ব্যাপারটা কি রতন? কি হয়েছে? 
-- স্যার, একটা মেয়ে বলছে আজই খসাবে। যে ভাবেই হোক ব্যাবস্থা করতে হবে। যত টাকা লাগবে দেবে। বারবার বলছি আজ স্যার আর 
রতনকে থামিয়ে দিয়ে ডাক্তার মিত্র বললেন, 
--টেবিলে নিয়ে যাও। আমি আসছি। ফিফটি বলবে। 
রতন চলে গেল। আবার গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন ডাক্তার মিত্র। 
মিনিট পাঁচেক একটু রেস্ট নিয়ে ঢুকলেন ওটিতে। টেবিলের উপরের স্পট লাইটে দেখলেন একটি মেয়ে শুয়ে আছে। মুখটা একটা ওড়নাতে সম্পূর্ণ ঢাকা। 
কাজ হয়ে গেলে, ডাক্তার মিত্র বললেন, 
-- ছেলে ছিল। 
তার কথা শুনে কেমন চমকে উঠলো মেয়েটি। উঠে বসতে গেল ধড়মড় করে। রতন তাকে জোর করে শুইয়ে দিয়ে বললো, "একটু পরে।" 
ততক্ষণে নার্স ওটি ঘরের আলো জ্বেলে দিয়েছে। সেই ধবধবে সাদা আলোতে ডাক্তার মিত্র দেখলেন মেয়েটির মুখ থেকে ওড়নাটা সরে গেছে। মেয়েটাকে হুবহু তার মেয়ে রূপসার মত দেখতে! 
ডাক্তার মিত্রের চোখের সামনে থেকে কে যেন হ্যাঁচকা টানে সব আলো সরিয়ে নিল। মেঝেতে পড়ে যেতে যেতে তিনি শুনতে পেলেন একটা প্রচন্ড ঝড়ে সব তছনছ হয়ে যাওয়ার আর্তনাদ।
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment