1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

দ্বিতীয় ঈশ্বর

ছবি : ইন্টারনেট

দ্বিতীয় ঈশ্বর 

দেবব্রত রায়

           হাতির পায়ের মতো ভারী-ভারী নক্সা করা থাম দিয়ে সাজানো অধ্যাপক সুরঞ্জন সান্যালের বিশাল বাড়িটা দিনে দিনে যেন একটা দুর্গে পরিণত হয়ে উঠেছে। আর এই কারণেই বোধহয়,পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ওর এত দিনেও খুব একটা ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়নি। এমনকী পথেঘাটে হটাৎ-ই, প্রতিবেশীদের মুখোমুখি হলেও,সুরঞ্জন ওর বাড়িতে আজওপর্যন্ত কাউকেই আমন্ত্রণ জানায়নি।

 উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা একটা দ্বীপের মতো  জায়গার উপর তৈরি বাড়িটার সবুজ লনে বিভিন্ন জাতের দেশি-বিদেশী গাছপালা,বিশাল আকৃতির ফাউন্টেন ফোয়ারা, শ্বেতপাথরের মূর্তি-----এসব মিলিয়ে সুরঞ্জনের সেই প্রাসাদ-বাড়িটা ঠিক যেন ছবির মতোই দেখতে লাগে। বাড়িটার অতিরিক্ত সিকিউরিটির কথা মাথায় রেখেই বোধহয়, সুরঞ্জন তার বাগানের বড়ো বড়ো গাছগুলোতে ওর নিজের ভাষায় "থার্ড-আই" অর্থাৎ,  সি সি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছে। যাতে করে দেয়াল টপকানো তো দূরস্ত, তার আসেপাশে কেউ উঁকি-ঝুঁকি মারলেও, সে ঘরের ভিতরে বসেই সবকিছু দেখতে পায়।  

 বছর পাঁচেক হলো সুরঞ্জন সান্যাল এই শহরেরই সবচেয়ে নামী কলেজের বাংলা বিভাগে জয়েন করেছে। অন্যান্য প্রফেসরদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে ইয়াং এবং অ্যাট্রাকটিভও কিন্তু, চাকরির জায়গাতেও সুরঞ্জন বাড়ির মতোই সবসময় নিজেকে একটা গাম্ভীর্যের খোলসে ঢেকে রাখে। দু-একজন খুব মনপসন্দ্ কলিগ ছাড়া সে অন্যান্যদের সঙ্গে বিশেষ -একটা কথা-বার্তাই বলে না। এমনকী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেও কেউ যদি ওর সঙ্গে ক্লাসে বা,ক্লাসের বাইরে একটু ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করে তাহলেই যেন একেবারে কুরুক্ষেত্র ঘটে যায়! সুরঞ্জনের অপমানজনক কথা-বার্তায় ছেলে মেয়েগুলো লজ্জায় চোখ-মুখ কালো করে পালিয়ে আসার যেন আর পথ খুঁজে পায়না। সাহিত্যের একজন অধ্যাপক হয়েও সুরঞ্জন যে এরকম শুকনো খটখটে এবং এতটা অভদ্র হতে পারে তা যেন কেউ দুঃসপ্নেও ভাবতে পারে না।  

 কলেজে জয়েন করার কিছুদিনের মধ্যেই  সুরঞ্জন সান্যাল বিশাল দ্বীপের মতন এই  জায়গাটা কিনে প্রাসাদোপম বাড়িখানা হাঁকিয়েছিল। ওদের কলেজের নিজস্ব প্রফেসর- হোস্টেল থাকা সত্ত্বেও,সুরঞ্জন সেখানে না থেকে এতদিন শহরেরই একপ্রান্তে একটা বাড়িতে ভাড়া থাকতো। এবং কোনোদিনই সেই বাসা- বাড়িতে এমনকী, নিজের এই প্রাসাদ-বাড়িতেও সে তাঁর কোনো বন্ধুবান্ধব অথবা,পাড়া- প্রতিবেশী কাউকেই আজপর্যন্ত আসার জন্য  বলেনি।       

এই কয়েক বছরের মধ্যে শুধুমাত্র,একজনই ওর ওই প্রাসাদ বাড়িতে ঢোকার সুযোগ পেয়েছিল।আর,সে হলো কলেজের অন্যতম ডাকসাইটে সুন্দরী রতিপ্রিয়া,রতিপ্রিয়া মল্লিক। তাও বোধহয়,প্রতিবেশী এবং এম,পি-র মেয়ে  বলেই। আসলে সেবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে সুরঞ্জন সান্যালের মাথা ফেটে একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটে গেছিলো! 

রতিপ্রিয়ার কাছে একটা অজানা রহস্যের গন্ধ নিতে এসে ওর বন্ধুরাতো একেবারে থ বনে গেছিল। রতিপ্রিয়া বলেছিল,সুরঞ্জন সান্যালের ড্রইংরুমের বিশাল দেয়াল জুড়ে একটা এল-ই ডি টিভি-স্ক্রীন এবং ঘরটার ঝা-চকচকে ফ্লোরে রাজ-রাজরাদের সিংহাসনের মতো নক্সা করা ভীষন দামি একখানা সোফা ছাড়া আর কোনো আসবাবপত্রই নাকি ও দেখতে পায়নি  ! এমনকী সুবিশাল হল-ঘরটার ভিতরে বই রাখার এক-আধটা সেল্ফও নাকি,রতিপ্রিয়ার নজরে পড়েনি । 

সুরঞ্জন পারৎপক্ষে টিভি দেখে না।দেখলেও,তার  প্রথম পছন্দ শেয়ার মার্কেটের খবরাখবর পাওয়া যায় এমন সব চ্যানেল আর,বুগি বুগি।এটা তার একটা প্রিয় গেম।গভীর রাত পর্যন্ত জেগে সুরঞ্জন বুগি-বুগি দেখে। কখনো কখনো আবার সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে সদ্য কেনা পিস্তল্টা হাতে নিয়ে ও ঘরময় পায়চারি করে আর,মাঝে-মাঝেই  সি সি টিভির দিকে তাকিয়ে কী-যেন দেখার চেষ্টা করে তারপর, একসময় আরাম করে সোফায় বসে জায়ান্ট-স্ক্রিনে ওয়ার্ল্ড রেসলিং দেখতে দেখতে ওর ইনকাম-ট্যাক্সের দু-নম্বরি খাতা-পত্রগুলো যে ছোকরা দেখভাল করে মাঝরাত্রে তাকে ফোন করে। বলে, কি হে, সুইস ব্যাংকের কোনো এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারলে? 

 ওপাশের উত্তর শুনে সুরঞ্জন কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে তারপর,ফোনে কেউ আড়ি পাততে পারে ভেবে সাংকেতিক ভাষায় বলে, "শোনো, বেড়ালের বাচ্চাগুলো রাখার জন্য তাহলে, আরেকটা রুম বের করতে হবে!"

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment