1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

অন্তিম উপলব্ধি

ছবি : ইন্টারনেট

 অন্তিম উপলব্ধি 

রণিত ভৌমিক

                                                                                                                                     

----১----


সেদিন ভোরবেলা দিল্লি এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে, শুভর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিল নেহা। হয়ত ওর মন কিছুতেই শুভকে যেতে দিতে চাইছে না। কিন্তু ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাড়িতে নানান অজুহাত দিয়ে কলকাতা ফিরে যাওয়ার বিষয়টা এতদিন ধরে এড়িয়ে গেলেও, চাকরি পাওয়ার পর এখন আর শুভর পক্ষে দিল্লিতে থাকা সম্ভব নয়।  

কলকাতার ফ্লাইটটা কিছুক্ষণ আগে এনাউন্স হয়েছে, মনের মধ্যে শত ঢেউ উথালপাথাল হচ্ছে জেনেও, নিজের প্রিয় মানুষটাকে বিদায় জানানোর প্রাক্কালে নেহা শুধু মুখ ফুটে বলল,

- তুমকো এক বাত কেহনা থা, শুভ।

- কি কথা? 

হয়ত মনের মধ্যে সেই আশা নিয়েই কথাটা জিজ্ঞেস করল শুভ কিন্তু নেহা যে কিছু বলতে চেয়েও, পারছে না বলতে। শেষমেশ তাই মনের কথা মনের মধ্যে রেখেই শুভকে বলল,

- মুঝে ভুল মাত যানা। হাম জারুর এক দুসরে সে দূর রেহেঙ্গে, লেকিন হামারি ইয়ে দোস্তি হামেশা আইসা হি রেহে গা। ইউ আর অলয়েস ইম্পরট্যান্ট টু মি। টেক কেয়ার। বাই।

হ্যাঁ! নেহা আর শুভর বন্ধুত্ব সেই জেএনইউর ফার্স্ট ইয়ার থেকে। ওদের এই বন্ধুত্বটাকে বাকিরা প্রেম শব্দের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললেও, ওদের কাছে এই সম্পর্কটা স্রেফ বন্ধুত্বের। কারণ ওরা একে অপরকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে অথচ কেউ কাউকে নিজের মনের কথাটা কখনো মুখ ফুটে বলতে পারেনি। ফলস্বরূপ, ওদের গল্পটা আজও প্রেম অবধি পৌঁছায়নি। 

কলকাতার মাটিতে পা রাখতেই শুভর অনুভূতি হল যে এই শহরের নানান বদভ্যাসের মধ্যে একটি হল, অসময় বৃষ্টি। ঠিক যেন হতদরিদ্র মানুষের দুর্দশা আরো বেশি করে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতলব। সবাইকে থামিয়ে দিয়ে একটা শহর নির্লজ্জের মতো কাঁদে আর সেটা নিয়ে কবিদের আদিখ্যেতার শেষ থাকে না। ওদিকে, এয়ারপোর্টের লাউঞ্ছে দাঁড়িয়েই বিরক্তি সহকারে শুভ বৃষ্টি পড়া দেখছিল এবং তারপর একটা ক্যাব নিয়ে সোজা বাড়ি। 

রাস্তায় যেতে যেতে ওর মনে হচ্ছিল, মাত্র কিছু বছরের ব্যবধানে কলকাতা শহরটায় অনেক কিছু পাল্টেছে। রাস্তাঘাট বদলেছে। মেট্রো স্টেশনগুলোর নাম পাল্টেছে। পাড়ায় একটা টেলিফোন থেকে একটা ঘরে চারটে সেলফোন এসেছে। আর সবচেয়ে দ্রুত যেটা পাল্টেছে, সেটা হল মানুষের চরিত্র। এখন আর সেইভাবে কেউকে খোলা মনে গল্প করতে দেখা যায় না। পাড়ার চায়ের দোকান হোক কিংবা পাড়ার রকে, আড্ডা দেওয়ার বিষয়টা যেন ক্রমশই কমে আসছে। 


----২----


কলকাতায় ফেরার পর, সদ্য জয়েন করা অফিসে শুভর কাজের চাপ এতটাই বেড়েছে যে বাড়ি ফিরে সে নিজের জন্য এক মুহূর্তও সময় দিতে পারে না। এমনকি নেহার সঙ্গে ওর যোগাযোগ আগের চেয়ে খানিক হলেও কমেছে। অবশ্য নেহাও যে ওর সঙ্গে আগের মতো যোগাযোগ রেখেছে, তেমনটাও নয়। সময়ের সঙ্গে দৈনন্দিনের ব্যস্ততা হয়ত কিঞ্চিত পরিবর্তন ঘটিয়েছে দুজনের সম্পর্কে। তবে, বলতে দ্বিধা নেই যে নেহার প্রতি ওর ভালোবাসাটা একই রয়েছে কিন্তু ওই যে, নিজের মুখে এখনো বলেই উঠতে পারল না শুভ। ওদিকে, নেহাও নিজের মনের কথাটা ওকে বলতে দ্বিধাবোধ করে। 

আর এইভাবেই বেশ কয়েকটা মাস কেটে গেল। শুভর পরিবারের প্রত্যেকেই এখন ওর বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। মাস দেড়েকের মধ্যে তিন-চারজন পাত্রীও দেখা হয়ে গেল। কিন্তু কাউকেই যে শুভর মনে ধরে না। আর ধরবেই বা কি করে, ওর মনে যে নেহার ছবিটাই সবসময় ভাসে। সেই প্রথম সাক্ষাৎ, সেই প্রথম অনুভূতি।

হ্যাঁ! ওইদিন আকাশটা বড্ড মেঘলা হয়েছিল। তখনও বৃষ্টির দেখা নেই। সারাদিন গুমোট একটা পরিবেশ। ঘরের বুকশেলফ থেকে গীতবিতানটা নামিয়ে দু-চার পাতা পড়ার চেষ্টা করছিল শুভ। কিন্তু গীতবিতানের পাতাগুলো একেবারে ধূলো পড়ে হলদে হয়ে গেছে। সুতরাং সেই হলদে হয়ে যাওয়া মোড়া কাগজের কোনও লাইনই আর ওর মনে ধরছিল না। মেঘের সঙ্গে আকাশের মন কষাকষি হলে বৃষ্টি যেমন রাগ ভাঙাতে ঝরে পড়ে, এমন মুহূর্তের যেন তখন বড্ড অভাব। তবে, সন্ধ্যে নামার ঠিক আগের মুহূর্তে বৃষ্টির দেখা মিলল।

কিন্তু পিজির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই বৃষ্টি উপভোগ করবে কি! ওর রুমমেট বরুণ ফোন করে বলল, 

- শুভ, আমি বৃষ্টির জন্য শপিংমলে আটকে গেছি। ছাতা যে আনিনি ভাই। এখন তাই বৃষ্টি যদি না থামে, পিজি-তে ফিরতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তুই ছাতা নিয়ে এসে আমাকে নিয়ে যা প্লিজ।

কথাটা শুনে ওর মেজাজটা গেল বিগড়ে। মহারাজ নিজের প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে সেই দুপুরের দিকে বেরিয়েছে। আর এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। প্রেমে পড়া ছেলেদের এই একটা সমস্যা, ওরা প্রেমিকার সঙ্গে ঘুরতে বেরলে সময় দিন কোনও কিছুরই হিসাব রাখে না!

এদিকে, শুভ তখন মাত্র কিছু দিন হয়েছে দিল্লিতে পা রেখেছে। ফলে, ওর পক্ষে রাস্তাঘাট চিনে চটজলদি শপিংমল পৌঁছানো সম্ভবপর নয়। তাও সে একে ওকে জিজ্ঞেস করে একটা অটোরিকশ নিয়ে শপিংমলের সামনে এসে, ছাতা মাতায় বরুণকে ফোন করল। ও ফোনটা রিসিভও করল কিন্তু শুভ কিছু বলার আগেই চোখের সামনে ওর সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। হ্যাঁ! ওই প্রথম নিজের চোখের সামনে দিয়ে শুভ নেহাকে হেঁটে যেতে দেখল।

পড়নে হালকা ঘিয়ে রঙের চুড়িদার, কানে ঝোলা দুল, এক হাতে ঘড়ি আর অন্য হাতে সবটা লক্ষ্য করতে না পারলেও, যেটুকু ওর চোখে পড়েছিল তা হল- নতুন জামাকাপড়ের প্যাকেট। তবে, যেটার কথা এখানে না উল্লেখ করলেই নয়, সেটা হল ওর বৃষ্টি ভেজা দীর্ঘ কালো কেশ। নেহার সেই রূপ দেখার পর, শুভর মনে 'সুন্দর' শব্দটার প্রতি যেন এক আলাদা ধারণা জন্মালো। হয়ত নেহার মতো রমণীর রূপের বর্ণনা দেওয়ার সুবিদার্থেই এমন শব্দের সৃষ্টি। 

একদিকে, বরুণ দূর থেকে ওকে দেখতে পেয়ে 'এই শুভ, আমি এখানে' বলে অনর্গল চিৎকার করে যাচ্ছে। আর অন্যদিকে, শুভ তখন হারিয়ে আছে ওই সদ্য দেখা রমণীর রূপের মায়াতে।

- এক্সকিউজ মি। আর ইউ শুভ, ফ্রম জেএনইউ ইংলিশ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার?  

অনেকক্ষণ ধরে শুভর উদ্দেশ্যে বরুণকে ডাকতে দেখে নেহা নিজেই ওর সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে এল। কিন্তু শুভ তখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে। মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের হল না। ওকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে, ফের নেহা ওর চোখের সামনে হাত নেড়ে বলল,

- হ্যালো। তুম শুভ হো নাহ? তুমকো সায়াদ বারুণ বুলা রাহা হায়। 

দ্বিতীয়বার বলায়, শুভর হুঁশ ফিরল ঠিকই কিন্তু সেই সময় নেহার সামনে ও যথেষ্ট অপ্রস্তুতে পড়ল। সুতরাং সেই স্থান ছেড়ে যতটা সম্ভাব তাড়াহুড়ো করে ও দূরে বিরক্তিকর মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বরুণের দিকে এগিয়ে গেল। তবে, কিছুটা যাওয়ার পর শুভ যখন পিছন ফিরে তাকাল, তখন নেহার মুখে এক অদ্ভুত হাসি ও লক্ষ্য করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকা মূল কারণটা বোঝার আগেই বন্ধু বরুণের হাজার একটা বাক্যবাণে তখন জর্জরিত শুভ।  

ফেরার পথে, অটোরিকশার ঝাঁকুনির মাঝে সেই ফিরে তাকানো আর নেহার ওই হাসি যেন ওর অন্তরের এককালের কবি সত্ত্বাটার ঘুম ভাঙ্গালো। বেখেয়ালি মনে কিছু লাইন ওর অন্তর থেকে বেড়িয়ে এল,

যেমন করে বৃষ্টি এসে, ভেজায় কিছুক্ষণ,

তেমন করেই তুমি এসে, ভিজিয়ে দিলে মন।

ভিজুক আমার চোখের পাতা, থামুক উচাটন,

সোহাগ মেখে ভিজুক দেহ, না হয় কিছুক্ষণ!

বর্ষার ঘনঘন রুপবদলানোটা শুভর কোনোদিনই পছন্দ ছিল না। কিন্তু এখন বৃষ্টি ওর ভীষণ প্রিয়। আসলে এই বৃষ্টি ওর জীবনে এক অন্যরকম ভালো লাগার মুহূর্ত উপহার দিয়েছিল। এরপর, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুভ আর নেহা কখন যে একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠল, তা গোটা জেএনইউ ক্যাম্পাসের কেউই টের পেল না। ধীরে ধীরে ওদের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা এবং বন্ধুত্ব, যেন আদতে দুজনকে এক অজানা বাঁধনে বেঁধে দিল। 


----৩----


ফেরা যাক বর্তমান সময়ের কথায়। শুভর জন্য দেখা সর্বশেষ পাত্রী, সোহিনীকে ওর পরিবারের সকলের বেশ মনে ধরেছে। অতএব বিষয়টা বেশিদিন ফেলে না রেখে, তারা কিছু মাসের মধ্যেই ওদের দুজনের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাইছে। 

এদিকে, গোটা একটা ক্যালেন্ডার পার হয়ে গেল। তবুও, শুভ আর নেহা একে অন্যকে নিজেদের মনের কথাটা কিছুতেই বলে উঠতে পারল না। আর এর ফলে, যা ঘটার সেটাই ঘটল। ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারার ব্যর্থতাটাই পুরোপুরি ডুবিয়ে ছাড়ল শুভকে।  

দেখতে দেখতে বিয়ের দিনটাও চলে এল এবং বিয়ের পর আজ ওদের ফুলশয্যা। ভিতরে অজানা একটা ভয় যেন শুভর মধ্যে কাজ করছে। বিয়ের পর প্রথম রাত বলে কথা! যেখানে নতুন একটা মানুষের কাছে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করাই একজন আদর্শ পুরুষের নিদর্শন, সেখানে ওর মন এখানো পড়ে রয়েছে নেহার কাছে। একবার ভাবছে, নেহার কথা সোহিনীকে সে সবটা খুলে বলবে কিন্তু পরক্ষনেই সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে দাম্পত্য জীবনের প্রথম রাতেই ঝড়ের সম্মুখীন দাঁড় করানোটা আদৌ উচিত হবে কিনা, সেই ভেবে ওর হাত পা কাঁপছে, ঘাম দিচ্ছে। ভিতরে ভিতরে একটা অস্বস্তি অনুভব করছে বলে ওকে সন্ধ্যার পর থেকে, বড্ড বেশি বিচলিত লাগছিল। 

সোহিনীর বিষয় সে যতটা নিজের মায়ের মুখে শুনেছিল, তা হল- ওর মুখটা নাকি চাঁদের মতো এবং দেখতে যথেষ্ট সুন্দর। কিন্তু সত্যি বলতে, শুভর চোখে এখনো 'সুন্দর' শুধুই নেহা। আর তাই বিয়ের আগে হোক কিংবা বিয়ের মুহূর্তে, একবারও সোহিনীর দিকে তাকাতে ওর ইচ্ছা করেনি। অতএব ওকে দেখতে কেমন, গায়ের রঙ কেমন সব কিছুই রয়ে গেছে ওর চোখের আড়ালে। 

যাইহোক, এখনো শুভ ঘরের বাইরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে। রাত এগারোটা বাজে। ভিতরের অস্বস্তিটা এখনো কাটেনি। যার ফলে, বুকে যতটা সম্ভব সাহস জোগাড় করে সে এবার ঘরের দিকে রওনা হল। ভিতরে ঢোকার মুহূর্তে ছোট বোন, রিয়াকে সে ঘর থেকে বেরতে দেখল এবং একইসঙ্গে দুষ্টু হাসি মুখে ওকে বলতে শুনলো,

- কীরে, দাদা তুই এখনো বারান্দায় ঘুরঘুর করছিস? লজ্জা লাগছে তাই তো?

- কীসের লজ্জা। এখানে লজ্জার কি আছে। এমনি হাঁটাহাঁটি করছি, সবাই ঘুমিয়ে পড়ুক তারপর যাব।

- দাদা, অলরেডি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আমি তোকে ভালো করেই চিনি তুই কেমন। অতএব আমার কাছে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। তোর মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে তুই লজ্জায় বিভোর হয়ে আছিস।

- বড্ড পেকেছিস, তাই না রে? তাড়াতাড়ি এবার ঘুমাতে যা।

- যাচ্ছি, রে যাচ্ছি। তুইও আর ঘোরাঘুরি না করে, ঘরে যা। বউদি তোর জন্য অপেক্ষা করছে।

রিয়া সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে যাওয়ার পর, ধীরে ধীরে শুভ ঘরের ভিতর পা রাখল এবং দেখল বিছানার উপর সোহিনী চুপ করে বসে রয়েছে। মাথায় ঘোমটা, কেবল হাতগুলো দেখে যাচ্ছে। মেহেন্দির সাজে হাত দুটো বড্ড অন্যরকম দেখাচ্ছে।

ঘরে ঢুকে দরজাটা লক করে সোহিনীর পাশে বসতেই, শুভর হার্টবিট যেন তখন মিনিটে ১০০+ বেগে ছুটছে। দুজনের মাঝে শুধু নিরবতা, মনে হচ্ছে যেন কেউ মারা গেছে আর ওরা দুজনে তার শোক পালন করছে। কিন্তু বেশিক্ষণ আর চুপ করে থাকতে পারল না শুভ। 'সোহিনী'র নাম ধরে ডাকতেই সোহিনী ওর দিকে এক অদ্ভুত চাওনি নিয়ে তাকাল এবং বলতে দ্বিধা নেই যে দুজনের প্রকৃত শুভদৃষ্টি যেন ওই মুহূর্তে ঘটল। 

একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ওরা দুজনেই যেন এক মায়াবী ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিল। হয়ত এই প্রথম নেহা পর কোনও অন্য নারীর সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে তার চোখের দিকে একভাবে এতটা সময় তাকিয়ে থাকল শুভ। কিন্তু হঠাৎ টেবিলের ওপর রাখা শুভর ফোনটা কেঁপে ওঠায়, সেই ঘোর গেল কেটে। 

ফোনটা হাতে নিতেই চমকে উঠল শুভ। নেহার একটা মেসেজ। তাতে লেখা, 

"শুভ, মুঝে লাগা থা কি পেহলে তুম হি বলো গে। লেকিন ইতনা দিন ওয়েট কারনে কে বাদ, মুঝসে আউর রাহা নেহি গেয়া। ইসিলিয়ে আজ তুমকো মে ইয়ে কেহনা চাহাতি হু কি- আই লাভ ইউ। ইয়েস আই লাভ ইউ, শুভ। উইল ইউ ম্যেরি মি?"

মেসেজে লেখা প্রত্যেকটা শব্দ পড়ার পর, ওর হাত থেকে ফোনটা গেল মেঝেতে পরে। উত্তরে শুভ ওর নতুন জীবনের সূচনার খবরটা দিতে গিয়েও যেন পারল না দিতে। এতদিন ধরে যেটা শোনার জন্য ও ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করেছিল, আজ সেই কথাটাই ওকে অন্তর থেকে একেবারে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও ওর চারপাশের পৃথিবীটা যেন থমকে গিয়েছিল। তবে, হুঁশ ফিরতেই মেঝে থেকে ফোনটা উঠিয়ে নিজের হাতে নিল শুভ এবং ভাগ্যের পরিহাস ভেবে মুচকি হেসে সে নেহার নম্বর থেকে আসা ওই মেসেজটা পৃথিবীর সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ডিলিট করে দিল। আর সেইসঙ্গে ওর নম্বরটাও সারাজীবনের জন্য পাঠিয়ে দিল ব্লকলিস্টের চির নিদ্রায়।

হ্যাঁ! কারণ জীবনের এই নতুন সূচনার মুহূর্তে শুভ আর কোনও পিছুটান রাখতে চায় না। আসলে আমাদের সবার জীবনে এমন বেশ কিছু গল্প থেকে, যা অসমাপ্ত রয়ে যাওয়ার জন্যই হয়ত বিধাতার দ্বারা রচিত হয়। আগে ভাগে ভবিষ্যতটা জেনে নেওয়া সম্ভব নয়, জানি। তাও মনের আড়ালে কোথাও যেন ভবিষ্যতটা জেনে ফেলার একটা বাসনা সবার মধ্যে রয়েই যায়। আর তাই আগামীদিনে ঠিক কি কি ঘটনা ঘটবে, সেটা জানার জন্য আমাদের প্রত্যেকের ভিতরের আমিটা মাঝে মধ্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তবে, এটাও ঠিক যে সব গল্পের মতো বিধাতার লেখা এই জীবন নামক মহাগ্রন্থের পুরোটা আগে থেকে জেনে নিলে, এর মূল উত্তেজনাটাও ফিকে হয়ে যাবে এবং প্রত্যেকের জীবনে তখন সুখ-দুঃখের মধ্যে কোনও তফাৎ থাকবে না। 

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment