1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

পবিত্ৰ ভালোবাসা : ভালো থাকা-রাখার একমাত্ৰ মাধ্যম

ছবি : ইন্টারনেট

পবিত্ৰ ভালোবাসা : ভালো থাকা-রাখার একমাত্ৰ মাধ্যম

সন্দীপ ঘোষ

বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানদের অবহেলা লাঞ্ছনা-গঞ্জনা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে শারীরিক অত্যাচার জনিত খবর প্রায়শ'ই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে | ঘটনাগুলো খুবই দুঃখজনক বেদনাদায়ক | কোনো কোনো ঘটনা আবার এমন মর্মান্তিক যে হৃদয় মোচড় দিয়ে ওঠে | যারা এই ধরনের অমানবিক ঘটনার সঙ্গে যুক্ত , তাদেরকে ধিক্কার | তবুও এধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে | শুধু আইন আদালত দিয়ে কি দমন করা সম্ভব ? সমাজ যেটা চোখে দ্যাখে কিম্বা শোনে তাই দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ অন্তে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় | তাতে ভূল বোঝাবুঝির পারদ বেড়ে গিয়ে অশান্তি চরমে ওঠে | সমস্যা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে | সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উঠে আসা স্বাভাবিক নয় কি ?

        যাইহোক সে প্রশ্নে যাচ্ছি না |  যথাযোগ্য স্থানে আমার প্রণাম , বিনম্র শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে বলি যে , যে ঘটনা গুলো ঘটছে তার পিছনে যে অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখিনা | আমরা বলে থাকি মা-বাবার প্রতি এরকম ঘটনা কখনো কাম্য নয় | জ্ঞানের থলি থেকে কিছু কিছু উপহার দিয়ে দায় সারি | আর সেইসঙ্গে অভিযুক্ত সন্তানকে দুষতে থাকি | শহুরে শিক্ষিত ও অল্পশিক্ষিত সমাজের কিয়দ্ অংশে মা-বাবা বনাম সন্তানের দ্বন্দ্বের চিত্র দেখতে পাওয়া যায় | তাহলে কি মানবিক মূল্যবোধগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে ? উপায় কি ? বিশ্বায়নের যুগে গ্রাম্যসমাজ এখনও পিছিয়ে | কুসংস্কারমুক্ত হতে পারেনি তারা | যদিও গ্রাম্যসমাজের ব্যপ্তি বিশাল | তার সবটার কথা বলছি না | বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সমাজের একটা বৃহদ্ অংশে কুসংস্কারের প্রয়োগ বেশি লক্ষ্য করা যায় | অশিক্ষা, অজ্ঞানতাকে দায়ী করা হয়ে থাকে | যেমন কিছু ঘটনা উল্লেখ করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে | এখনও প্রতিবেশি- আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করা হয়ে থাকে বাড়িতে  পুত্র সন্তান জন্মালে | মিষ্টি বিতরণ খুবই আনন্দের খবর কিন্তু পুত্ৰ-কন্যা বৈষম্যকে ঘিরে কেন ? কন্যার বেলায় নয় কেন ? এটাকে আমার সংকীর্ণ মানসিকতা বলেই বোধ হয় | এই সংকীর্ণ পরিসরে বড় হওয়া পুত্রসন্তানটি আগামীদিনে  সংকীর্ণ মানসিকতার ধারক-বাহক হয়ে উঠবে না কে বলতে পারে ! কারণ এই বোধটা তার কাছে স্বাভাবিক | মেয়েদেরকে শুধু মেয়ে বলেই ভাবতে শিখবে , মানুষ বলে ভাবতে পারবে না | সুতরাং তার দ্বারা কোনো অনিষ্ট হলে শিক্ষিত বা অশিক্ষিত যাইহোক না কেন , বিচারে তার শাস্তি হয় | শাস্তি পাওয়ায় সে হয়ত বুঝবে তার অন্যায় হয়েছে | কিন্তু মানুষ যে কোনোদিন ভাবতে পারেনি, শুধু মেয়ে বলেই ভেবে এসেছে এটা সে কখনো বুঝতে পারবে কি ? আবার সব  মা-বাবাই চান তাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হোক | কিন্তু চাইলেই যে হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই | কারণ আমরা সন্তানদের মধ্যে আমাদের আন্তরিকতা, স্নেহ ভালোবাসা, একশো শতাংশ উজাড় করে দিতে পারিনা | চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কোনো না কোনো সময়ে মনের গভীর সুপ্ত বাসনা বোধ স্বার্থের স্বরূপকে বিকশিত করে | আর স্বার্থ মানেই একটি অলিখিত অনুভূতিহীন মনের দূরত্ব তৈরী হয়ে যায় সন্তানের সঙ্গে | অর্থাত্ এইরকম যে সন্তান বড় হোক কিম্বা ছোট, সে  যদি কোন অন্যায় করে তাকে প্রশয় না দিয়ে তারই স্বার্থে করা উচিত খুবই তীক্ষ্ণ শাসন  | অথচ সেই শাসনের ভিতরে থাকবে আন্তরিকতা, স্নেহ,মায়া, মমতা ও ভালোবাসার প্রাণের আলোর  মেলবন্ধনে নিবিষ্ট পথনির্দেশিকা | তাহলে সেই শাসন সন্তানের বুক স্পর্শ করে তার চেতনার উদ্রেক ঘটাবে | আবার আমরা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে কখনও কখনও ভুল শাসন করে ফেলি | যদি সন্তানের কাছে এই ভূলটা সাবলীলভাবে স্বীকার করে নিতে পারি, তাহলে সন্তানের অন্তরে সহজ বোধের দ্বার উন্মুক্ত হবে | বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা তা পারিনা | দিনের পর দিন বা একটানা চলতে থাকলে একটা সময় সংঘাত অনিবার্য রূপে প্রকট হয়ে উঠে | সন্তানকে দেশ ও দশের একজন করে গড়ে তোলার মানসিকতাই আমাদের নেই | মা-বাবা হিসেবে আমরা শুধু বুঝি নিজের স্বার্থটা | সন্তানের সাফল্যে অন্তরে মাত্রাছাড়া অহংকার | চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই | তবে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলে অন্ধকারের হদিশ পাওয়া যায় |

         আমাদের কামনা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বয়সে সন্তান বিশেষ করে পুত্র সন্তান আমাদের দেখভাল করবে , আমরা ভাল থাকব | সন্তানকে মানুষ করতে হবে | নিজ স্বার্থ চরিতার্থে অন্তঃস্থলে গভীর এক সুপ্ত বাসনার সত্ত্বা তৈরী হয় | আমৃত্যূ এই মোহ সুস্থ থাকার পথকে কাঁটার মতো বিঁধে চলে | বলাইবাহুল্য যে এই মায়ামোহ-র পর্দা সুখের আলোকে আটকে দেয় | আমরা বুঝতেও পারিনা | সুতরাং বলা যেতে পারে এটি একটি মারাত্মক স্বার্থচিন্তা | এর কুপ্রভাব নিষ্পাপ সন্তানের উপর পড়ে | আগেই বলেছি এগুলো একদিনে ঘটেনা | এছাড়াও আমরা যেটা পারি না, সন্তানের জন্ম থেকে শৈশব, কৈশোরে স্নেহ-ভালোবাসা-মমত্ববোধ যে প্রকৃতির থাকে যুবক বয়সে কোথা দিয়ে যেন সেই প্রকৃতির ওপর শুষ্কতা গ্রাস করে | অর্থাত্ অবাঞ্ছিত এক ভাবনা ঘাটি গেড়ে বসে | সন্তান আর ছোটটি নেই বড় হয়ে গেছে | প্রতিষ্ঠিত হয়েছে | এবার বিয়ে দিলেই আমাদের দায় সম্পূর্ণ | কেউ আমার সঙ্গে একমত হবেন কিনা জানিনা তবে আমি মনে করি এখান থেকেই  সাংসারিক সংঘাতের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়ে যায়

          জন্ম হওয়ার পর দুধের শিশু বা সদ্যোজাত শিশু সন্তানটির প্রতি যে গভীর অনুভুতি অন্তরে বিরাজ করে সেটা আমরা অন্তরে ধরে রাখতে পারি না সন্তানটির পরিণত বয়সে | সন্তান যতই ধারেভারে বড় হোক না কেন সে তো সন্তান | ব্যক্তিত্বের ভারসাম্য বজায় রেখে অন্তরের আবেগিক স্নেহভরা প্রাণোচ্ছল অনুভুতি দিয়ে আচরণ করা যেতেই পারে | কিন্তু দেখা যায় যে বার্ধক্যে পৌঁছে দীর্ঘদিনের লালিত স্বার্থ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে | তাই ছেলে- বৌমার প্রতি সজাগ মানসিকতা থেকে একটি অভিমান বোধ তৈরী হয় | জ্ঞানে বা অজ্ঞানে হোক সংসারে কোনপ্রকার অপছন্দের ঘটনা বা অনিয়ম ঘটলেই দোষারোপ বর্ষিত হতে থাকে সন্তানের উপর বিশেষতঃ বৌমার উপরে | যদি বলা হয় সন্তানতো ভূল হয়ে গেছে |  ক্ষমা করে দিলেই তো মিটে যায় | না ক্ষমা নয়,  আমরা বলি যে ছেলে- বৌমা শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত ,অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি এই প্রতিদান পাব বলে ! আবারও বলছি দীর্ঘ সময় ধরে ঘটে চলা সংসারে একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি বা নতুন কোন ঘটনার সন্মুখীন হলে সাংসারিক অশান্তি প্রকটরূপে দেখা দেয় যা কখনো কাম্য নয় | মূল কথা হচ্ছে গোড়াতেই গন্ডগোল | সংসারের প্রতিটি সদস্যের একে অন্যের প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসার অভাব সাংসারিক-পারিবারিক সম্পর্ককে ভিখিরি বানিয়ে দেয় | আজ যা আমরা নিত্যনৈমিত্তিক চাক্ষুস করে চলেছি | এখন তো বেশিরভাগ মানুষ (পারিবারিক গন্ডীতে) নিজেকেই আগে বোঝে | অর্থের মানদন্ডে নিজেকে জাহির করে | জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই 'টাকা ছাড়া জীবনে কিছু নেই' এই দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধি সমগ্র জীবনের ওপর রেখাপাত করে |  ফলে সুক্ষ্ম অনুভূতির জায়গা শুকিয়ে গিয়ে পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলে | কখনও কখনও অপরাধের ঘটনা প্রত্যক্ষ করি |

অপরাধের সাজা আইন দেবে | এতে অপরাধী একদিন মুক্তি পাবে বা হয়ত পাবেনা | সেটা আইন-আদালত, বিচার্য বিষয় | কিন্তু  'অপরাধ' মুক্তি পাবে কি ? অপরাধ নিয়ে কেউ আসে না পৃথিবীতে | পারিপার্শ্বিক, পারিবারিক,সামাজিক অবস্থার আবহে  জন্মের পর কোনো শিশু বেড়ে ওঠে |  সেই সময়কাল প্রতিটি জীবনের ক্ষেত্রে অতীব গুরুত্বপূর্ণ | প্রতিটি শিশুর সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে পরম আন্তরিকতা স্নেহভালোবাসায় যদি ভরিয়ে তুলতে পারে বাবা-মা সহ পরিবারের অন্য সদস্যরা তাহলে সেই শিশুটির পর্যাপ্ত মানসিক বিকাশ তৈরী হবে | সর্বোপরি পরিবারটিকে হতে হবে অহংকারমুক্ত, নিঃস্বার্থ নিষ্কাম কর্মযুক্ত আন্তরিক,সহানুভূতিশীল | অর্থাত্ আত্মকেন্দ্রিকতা ও আমিত্ব মুক্ত পারিবারিক পরিবেশ |  জীবনে ঝড়ঝঞ্ঝার মতো বাধাবিপত্তি আসতেই পারে | সেগুলোকে তাত্ক্ষণিক ভাবে সন্তানকে মোকাবিলা করার শক্তিটুকু সংগ্রহ করার সুযোগ দিতে সুস্থ পারিবারিক পরিবেশের কোনো বিকল্প হয় না | এক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন উঠে আসা স্বাভাবিক যে, তাহলে কি সন্তান শাসনমুক্ত থাকবে ? না না তা কেন ! ছেলেমেয়েরা বড়হোক বা ছোট, শাসনের গন্ডির মধ্যে অবশ্যই থাকবে তবে সে শাসন হবে নিঃস্বার্থ, আন্তরিকতাপূর্ণ দৃঢ় ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ | যা সন্তানের হৃদয় স্পর্শ করবে এবং তার ঠিক-ভুল বিচারবোধ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে মা-বাবার শাসনকে সন্মান জানিয়ে | এক অটুট মেলবন্ধন তৈরী হবে যা জীবনের পরবর্তী প্রতিটি পর্যায়ে পারস্পরিক সুসম্পর্কের চেতনালব্ধ পথকে প্রশস্ত করবে |

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment