1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

এখনো প্রাসঙ্গিক মানবতার পূজারী ও শান্তির দূত মাদার তেরেসা

ছবি : ইন্টারনেট

এখনো প্রাসঙ্গিক মানবতার পূজারী ও শান্তির দূত মাদার তেরেসা

পাভেল আমান

     ছাত্র অবস্থায় মাদার তেরেসা সম্পর্কে যখন পড়েছিলাম, তখন থেকেই এই বিশাল মহানুভবতা উদারতা দানশীলতা সেবাব্রতী সর্বোপরি মানবতার পূজারী মননকে উদ্দীপত, যার পর নেই অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি যেন বেঁচে থাকার চলমানতার অপরকে ভালোবাসার শ্রদ্ধা করার সর্বোপরি চেতনার অমলিন বাতিঘর । মনুষ্যত্ব মানবতা সহমর্মিতা সবকিছুই তার জীবনের পরতে পরতে  সুনিপুণভাবে জুড়ে ছিল । সেবা ধর্মকে আমৃত্যু জীবনের  শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে মান্যতা দিয়েছিলেন। এজন্যই জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিনি হয়েছিলেন সকলের মা জননী। মাদার তেরেসা শব্দটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে নীল পাড়ের সাদা রঙ্গের এক বিশেষ পোষাক পরিহিত সংকীর্ন শরীরের এক বৃদ্ধাকে। কোঠরের ভেতরে থাকা ঘোলাটে চোখ তখনও বেশ উজ্জ্বল। মনে হয় যেন বয়স নয় ; বরং কাজ করে ক্লান্ত হয়ে তিনি নুয়ে পরেছেন। নামের সাথে পার্মানেন্টলি ‘মাদার’ শব্দটি জুড়ে যাওয়া এই মহিলাকে আমরা প্রায় সবাই চিনি।মানবমুক্তি ও মানব কল্যানের মূর্ত প্রতিক মাদার তেরেসা – প্রেম , শান্তি ও আশ্রয়ের প্রতীক একটি নাম । নিপীড়ন , শশাষণ ও নিষ্ঠুরতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেবার জন্য যে সকল সাধু মহাত্মা অশেষ কষ্ট ভােগ করেছেন আজীবন , অকাতরে প্রাণ পর্যন্ত দিয়েছেন , মাদার তেরেসা তাদেরই শেষ উত্তরাধিকারী।প্রেম , করুণা , মায়া – মমতা , সেবা – শুশ্রুষার এক জীবন্ত প্রতিমা মাদার তেরেসা । দুস্থ দরিদ্র অসহায় অবহেলিত রােগজর্জরিত মানুষের ত্রাণকত্রী , মানবমুক্তি ও মানবকল্যাণের মূর্ত প্রতীক মাদার তেরেসা । ১৯৯৭ খ্রিঃ ২৬ ই সেপ্টেম্বর জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে পৌছে গেলেন অমৃতলােকে। মাদার তেরেসা ছিলেন একজন আলবেনীয়-বংশোদ্ভূত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী ও ধর্মপ্রচারক।তেরেসার জন্মস্থান অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের স্কপিয়ে। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি ভারতেই কাটান।মাদার তেরেসা ১৯৫০ সালে কলকাতায় ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটি’ নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেন। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষকে ভালোবেসে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় তিনি নিরবধি জনকল্যাণমূলক সেবামূলক কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছেন জীবনের শেষ দিন। বাঙালিরা খুঁজে পেয়েছিল তাদের প্রকৃত ভরসা যোগানো ভালোবাসার মা জননী। 

     ১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তার সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্নে ভূষিত হন। ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।প্রতিটি মানুষকে সেবার বাঁধনে স্নেহ ভালবাসায় আপন করে নিয়েছিলেন। বিনম্রতা শ্রদ্ধা ভক্তি স্নেহ ভালোবাসা সবি যেন মাদার তেরেসার জীবনকে আরও বেশি মহিমান্বিত করে তুলেছিল। মানবতার সেবা দান চিরন্তন পাশে থাকার বার্তা সহনশীলতা প্রশান্তির অভয় বাণী সর্বদা তাকে মানবতার শ্রেষ্ঠাসনে আসীন করেছিল। তিনি বলেছিলেন"আমাদের মধ্যে সবাই সব বড় কাজ গুলো করতে পারবে তা না, কিন্তু আমরা অনেক ছোট কাজ গুলো করতে পারি আমাদের অনেক বেশী ভালবাসা দিয়ে"।মাদারের অমর বাণী প্রাত্যহিক জীবনের বেঁচে থাকার চিরন্তন অবলম্বন। মাদার তেরেসা যখন মারা গেলেন তখন তার প্রতিষ্ঠিত মিশনারি অফ চ্যারিটি নামক দাতব্য সংস্থাইয় সিস্টারের সংখ্যা ছিলো চার হাজার। তার সাথে আরো তিনশো জন ছিলেন ব্রাদ্রারহুড সদস্য। আর তখন পুরো পৃথিবীতে এটির স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ১০০,০০০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। এসব মানুষের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীর একশত তেইশটি দেশে ৬১০টি মিশনারির মাধ্যমে চ্যারিটির কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এসব মিশনে এখনো এইডস থেকে শুরু করে কুষ্ঠরোগ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। মাদার তেরেসা নেই। কিন্তু পৃথিবীর ১২৩ টি দেশে হাজারো চ্যারিটিতে মাদার তেরেসা বেঁচে আছেন অনবদ্য ভাবে। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন হাজারো প্রতিকুলতার মাঝে কিভাবে ভালো কাজের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিতে হয়। এবছর একপ্রকার নির্জন নির্দিষ্ট কেটে গেল বিশ্ব মানবতার অগ্রদূত ও মূত্র প্রতীক শান্তির পূজারী মাদার তেরেসার ১২৬ তম জন্মদিন। আজকে চারিদিকে যখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বিদ্বেষের বাতাবরণ ভগ্নপ্রায় সম্প্রীতি রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক সেই মুহূর্তে মাদার তেরেসার জীবন দর্শন আদর্শ ও পথ চলা আমাদের সংকটের দিশারী হয়ে উত্তরণের অভিমুখে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমাদের বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধ বিবেক চেতনা মনুষ্যত্ব সেবার মানসিকতা এবং দেশাত্মবোধ সৃষ্টি করতে মাদার তেরেসার জীবনী যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আসুন আমরা সকলে মাদার তেরেসার সেবামূলক কাজ মনোভাব এবং জীবনীকে অনুসরণ করে মানববন্ধনে একে অপরে আবদ্ধ হয়ে গড়ে তুলি সম্প্রীতি সংহতি সৌজন্য এবং স্থিতিশীলতা দেশকে ভালোবেসে। সেটাই হবে আমাদের  মানবতার প্রতি অঙ্গীকার ও কর্তব্য নিষ্ঠা।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment