1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

বিশ্বাসহন্তা

ছবি : ইন্টারনেট 

বিশ্বাসহন্তা

রিয়া ভট্টাচার্য 

(১) 


স্বর্ণনির্মিত প্রাসাদগাত্র চুঁইয়ে পড়ছে ম্লান জ্যোৎস্নার আলো, তারাহীন আকাশে জেগে রয়েছে একলাটি গোল চাঁদ। 

এখন রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর, প্রাসাদের সকল বাসিন্দা গভীর ঘুমে মগ্ন, প্রহরীদের সতর্ক চলাফেরা ও মাঝে মাঝে রাতপাখির কর্কশ চিৎকার ছাড়া আর শব্দ নেই চরাচরে। 

অন্দরমহলের সবচেয়ে আড়ম্বরহীন ঘরখানায় একলা জেগে রয়েছে এক রাজকন্যা। প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজার কনিষ্ঠা কন্যা সে, জন্ম মুহূর্তে তার রূপে আছন্ন হয়ে রাজা তার নাম রেখেছিলেন ' সাইকি ', যার অর্থ হলো আত্মা। এই সুবিশাল সাম্রাজ্যের আত্মাস্বরূপা সে, সকলের প্রিয়জন। তার মধুভাষ, অচঞ্চল শান্ত স্বভাব তাকে আলাদা করে রেখেছে তার দুই জ্যেষ্ঠা ভগিনীর থেকে। কিন্তু তাতে তার কোনো লাভ হয়েছে কি! আদপে নয়।

প্রাসাদের অন্দরমহলে বাকি দুই ভগিনীর সঙ্গেই হেসে খেলে বড়ো হয়ে উঠেছিল সে, কিন্তু বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি, বদলে গিয়েছেন প্রিয়জন। তার রূপ, হ্যাঁ তার রূপই সবচেয়ে বড়ো শত্রু হয়ে উঠেছে তার। বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তাকে যেন ঐশ্বরিক দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেছে সকলে। সে মানবী নয়, কোনো দেবী, রূপে স্বয়ং তাদের আরাধ্যা দেবী আফ্রোদিতির সমকক্ষা, হয়তো তাঁর চেয়েও রূপবতী সে। মানুষের দৃষ্টিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা, মোহ, বিস্ময় ও লোভ দেখেছে সে। কিন্তু ভালোবাসা? কখনোই নয়। 

কালের নিয়মে অন্য রাজার গৃহিণী হয়েছে তার সহোদরাগণ, পিতার প্রাসাদ ত্যাগ করে গমন করেছে শ্বশুরালয়ে। তার কথা একবারও ভাবার চেষ্টা করেনি কেউই। সে রয়ে গিয়েছে একলা, ঠিক যেন আকাশের গায়ে আলো ছড়ানো চাঁদের মতো। বয়স্থা কন্যাকে বিদায় করতে না পারার অক্ষমতা ভাবিয়েছে রাজাকে, দেশে দেশে দূত পাঠিয়েছেন তিনি, অন্যান্য রাজ্যের রাজা ও রাজকুমারদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রাসাদে। কিন্তু, কেউই সাড়া দেননি সেই আহ্বানে, দেবী আফ্রোদিতির কোপে পড়ার সাধ্য নেই যে কারো! 

সে জানে, তার সঙ্গে বারবার রূপের তুলনা হওয়ায় কুপিতা হয়েছেন দেবী আফ্রোদিতি। এই তো সেদিন, মন্দিরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে খুলে পড়েছিল ভারী ধাতু দ্বারা নির্মিত ঘণ্টাখানা, নিভে গিয়েছিল মন্দিরের সমস্ত প্রদীপ। নিচ্ছিদ্র অন্ধকার নেমে এসেছিল চারিপাশে। প্রহরীদের তৎপরতায় একটুর জন্য আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল সাইকি, কিন্তু চারপাশের মানুষদের ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নজর এড়ায়নি তার। এই মানুষগুলিই এককালে তার রূপের তুলনা করেছিল দেবীর সঙ্গে, ঈশ্বরজ্ঞানে দৃষ্টি নামিয়েছিল তার মুখমণ্ডল থেকে। আজ তারাই দেবী কুপিতা হওয়ায় সরে গিয়েছে তার পাশ থেকে, বিদ্ধ করছে তাকে ঘৃণা দ্বারা। সময় কতো শীঘ্র বদলে যায় তাই না!

আজ এই প্রাসাদে তার শেষ রজনী। আগামীকাল ঊষালগ্নে তাকে নিয়ে দূরের পাহাড়ের দিকে যাত্রা করবেন রাজা, সেখানেই তার ভাগ্যের মুখে ফেলে আসা হবে তাকে। রাজ্যের শক্তিশালী গণৎকারের কথামতো সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর আরাধনা করেছিলেন রাজা, তিনি আদেশ দিয়েছেন দূরে পাহাড়চূড়ায় তাকে ফেলে আসার জন্য। অসামান্যা রূপবতী সাইকি নাকি এক দৈত্যের ভাগ্যদৃষ্ট সঙ্গিনী, যে দৈত্যকে ভয় পায় সমগ্র সৃষ্টি, এমনটাই জানিয়েছিলেন দেবতা অ্যাপোলো, নিদান দিয়েছিলেন ভাগ্যের হাতে তাকে সঁপে দেওয়ার। ধর্মভীরু রাজা তাঁর আদেশ অনুসারে নিজের প্রিয়তমা কন্যাকে ত্যাগ করতে চলেছেন, সেইসঙ্গে নিষ্প্রদীপ হতে চলেছে তার অহাহুত ভবিষ্যৎ। 

দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায় রাজকন্যা। সেবিকা এসে দাঁড়িয়েছে দুয়ারপ্রান্তে। স্মৃতি রোমন্থনে কতখানি সময় কেটে গিয়েছে জানা নেই তার, বিদায়লগ্ন উপস্থিত। রেশমশয্যার একপাশে রাখা ফ্যাকাশে বসনখানি হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় রাজকন্যা। এই বসন মৃতের, অলংকারহীন, রঙহীন, ঠিক যে তার জীবনের প্রতিরূপ। 

ভোরের আলো তখনও ঠিকমতো পরিস্ফুট হয়নি আকাশে, সূর্যালোক মুছে দিতে পারেনি রাতের কালো। মোরগের দল এখনো ডেকে ওঠেনি ঘরে ঘরে, শোনা যায়নি সদ্যজাতের ক্ষুধার্ত কান্না শব্দ। তবুও মানুষ ভীড় করেছে পথের ধারে, যে পথ বেয়ে প্রহরীবেষ্টিতা হয়ে মৃত্যুমুখে এগিয়ে চলেছে রাজ্যের সবচেয়ে রূপসী রাজকন্যা। শেষবারের মতো তার রূপের আলো মেখে নিচ্ছে মানুষ, কেউ কেউ মাথা নীচু করে বেদনা প্রকাশ করছে। কিন্তু রাজকন্যার দৃষ্টি মাটির দিকে নিবদ্ধ। ঘেন্না, বেদনা, সহানুভূতি কোনোটিই আর স্পর্শ করছে না তাকে। তার ফ্যাকাশে বসন লুটোচ্ছে পথের ধূলোয়। এগিয়ে চলেছে সে ধীর পদক্ষেপে।এক অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যৎ এর দিকে। 


(২)


পার্বত্যগুহার নিকষ আঁধার হার মানায় রাত্রির অন্ধকারকে। সেইসঙ্গে মুছে দেয় আলোকময় জীবনের প্রত্যাশা। নিষ্ঠুর শীতলতা হতাশা জাগায় প্রাণে, সেইসঙ্গে শেষ করে দেয় মননশীল চিন্তাকে। 

কতকাল, ঠিক কতকাল এই নীরব অন্ধকারে বন্দী হয়ে রয়েছে সাইকি, জানা নেই তার। যখন তাকে পরিত্যক্ত শবদেহের মতো পর্বতচূড়ায় ফেলে ফিরে গিয়েছিল রাজপ্রহরীরা, জীবনের আশা তখনই ত্যাগ করেছিল সে। মৃত্যুস্পর্শে নিজের শেষ চেতনাটুকু মুছে ফেলার আগেই সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন শীতল বাতাসের দেবতা জেফিরাস, তিনিই তাকে নিয়ে এসেছিলেন এই গুহায়। প্রেমের দেবতা ইরোসের শরণে৷ 

দেবতা ইরোস, নামখানি মনে পড়তেই লজ্জায় অবনতা হয় সাইকির মুখ। তিনি হলেন দেবী আফ্রোদিতির পুত্র, দেবলোক অলিম্পাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। প্রেম, ভালোবাসা তাঁরই সৃজনী, সবচেয়ে বড়ো কথা তিনি সাইকির প্রেমাস্পদ, তার রক্ষাকর্তা। তাঁর নির্দেশেই তাকে এই গুহায় নিয়ে এসেছিলেন জেফিরাস, তাঁর কৃপায় সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল সে। অদর্শনেও যে কাউকে ভালোবেসে ফেলা সম্ভব, তা হয়তো আগে কখনো ভাবতে পারেনি সাইকি৷ দেবতা ইরোস তাকে ভালোবাসার নতুন সংজ্ঞা শিখিয়েছেন, আদরের স্পর্শ এঁকেছেন তার আঘাতপ্রাপ্ত অন্তঃকরণে। কিন্তু, বড়ো অদ্ভুত তাঁর শর্ত, তাঁকে দর্শন করার অধিকার সাইকির নেই৷ অন্ধকারের চাদরে নিজেকে ঢেকে তার কাছে আসেন তিনি, বিলাস শেষে ফিরে যান স্বর্গলোকে। এই গুহার বাইরে পা রাখার অধিকার নেই সাইকির, নেই কারো সঙ্গে বার্তালাপ করার সুযোগ। তবু প্রেমাস্পদের স্পর্শ গায়ে মেখে অপেক্ষা করে সে, অপেক্ষা করে কোনো একদিন শর্ত শিথিল হওয়ার৷ 

আগামীকাল তার পরিবার প্রথমবারের জন্য পদার্পণ করবে এই পাহাড়ে, তার মৃত্যুর স্মৃতিতে শোকজ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যে। তাদের সঙ্গে দেখার অনুমতি চেয়ে ইরোসের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে সাইকি৷ কিন্তু তার আঁধারমগ্ন বদ্ধ মন এই প্রথমবার বিরুদ্ধাচারণ করছে তার প্রভুর সিদ্ধান্তের। এতকাল পরে নিজের পরিবারকে একবার দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে তার হৃদয়, যন্ত্রণাদগ্ধ, উপশমহীন মানবিক হৃদয়। ঈশ্বরের নৃশংসতার সঙ্গে যার পরিচয় হয়নি কখনো। 

(৩)


" অদর্শিত সত্ত্বার সঙ্গে প্রেম অসম্ভব! দেবী আফ্রোদিতির পুত্র নিতান্ত এক মানবীর প্রেমে কেন নেমে আসবেন পৃথিবীর বুকে! যদিও বা আসবেন, কেন আরোপন করবেন এক অযৌক্তিক শর্ত! তোমার নির্বুদ্ধিতা তোমায় কোনো কপট সত্ত্বার শয্যাসঙ্গিনী করেছে, নিজের বংশপরিচয় ভুলে গিয়েছো তুমি। আমাদের পিতার অপমান করেছো তুমি!" 

অশ্রুসিক্তা সাইকির উদ্দেশ্যে যেন গরল নিক্ষেপ করে তারই এক সহোদরা। 

তাকে জীবিত আবিস্কার করে আনন্দিত হয়ে ওঠেনি তাদের হৃদয়, বরং ইর্ষার বিষবাষ্প আচ্ছন্ন করে ফেলেছে তাদের মানবিক চেতনাকে৷ রূপবতী সহোদরার প্রতি কোনোকালেই বিশেষ সহমর্মিতা অনুভব করেনি তারা, তার মৃত্যুর খবর তাৎক্ষণিক শান্তি দিয়েছিল তাদের। পিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে এই পাহাড়চূড়ায় এসেছিল তারা, যেখানে দেবতা ইরোসের নিষেধ সত্ত্বেও তাদের একটিবার দেখার উদ্দেশ্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল সাইকি। কিন্তু বিধাতার গহীন উদ্দেশ্য জানার সাধ্য হয়নি তার৷ 

" না, তিনি নিজেই পরিচয় দিয়েছেন আমায়। দেবতা কখনো মিথ্যে বলতে পারেন না। " 

জোর গলায় বলবার ব্যর্থ চেষ্টা করে সাইকি, তার আহত হৃদয় যন্ত্রণায় স্তব্ধ হয়ে যায়। 

" হে মূর্খ নারী! কতখানি অযাচিত তোমার বিশ্বাস! যিনি নিজেকে গোপন করে তোমার সঙ্গে মিলিত হন তাঁর কথায় ভরসা করে আকাশকুসুম স্বপ্ন দেখে চলেছো! প্রকৃতই তুমি রাজকন্যা হওয়ার অযোগ্য। তোমায় ত্যাগ করে যথার্থ কাজ করেছেন পিতা। " 

গলিত শব্দের তরবারির শেষ প্রহার নিক্ষেপ করে নিজ বাসস্থানের উদ্দেশ্যে গমন করেন দুই ভগিনী, পেছনে পড়ে থাকে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলতে থাকা এক যন্ত্রণাদগ্ধ নারী, যার প্রতি সহমর্মিতা অনুভব করেনি কেউই। না দেবতা, না দানব, না মানব ; তাকে খণ্ডবিখণ্ড করেই তৃপ্তিলাভ করেছে সকলে। উপাচার লেপনের চেষ্টা করেননি কেউই। 

(৪)


অন্ধকারের মাঝে ম্লান দীপশিখা জ্বেলে এগিয়ে চলেছে সাইকি, এগিয়ে চলেছে নিজের সন্দেহ নিরসনে। তার অন্ধকারমগ্ন প্রস্তরশয্যায় বর্তমানে নিদ্রামগ্ন রয়েছেন দেবতা ইরোস। রমণক্লান্ত তিনি। নিঃস্তব্ধ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে তাঁর ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ। তিরতির করে কাঁপছে তাঁর শ্বেতশুভ্র ডানা৷ তাঁর শুভ্র বসন লুটিয়ে রয়েছে জমিনে৷ এককোণে পড়ে রয়েছে তাঁর বিখ্যাত ধনুর্বাণ।

 প্রেমের দেবতা, যাঁর বাইবেলের নাম কিউপিড, যাঁর মদনশর এড়িয়ে যেতে পারেন না উচ্চমার্গের সাধকবৃন্দ, সেই দেবতা এক মানবীর প্রেমে নেমে এসেছেন মাটিতে৷ দেবী আফ্রোদিতি সাইকির রূপের জল্পনায় কুপিতা হয়ে তাঁকে নিয়োজিত করেছিলেন তার ক্ষতিসাধনে, কিন্তু তার প্রতি একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করার পরেই থেমে গিয়েছিল তাঁর শর। পারেননি তিনি, এক যন্ত্রণাকাতর একলা কন্যার জীবন হরণ করতে। বরং ধরা দিয়েছিলেন তার বাহুপাশে, মুছিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তার একাকীত্ব ও যন্ত্রণা। পেরেছেন কি? হয়তো না! 

ম্লান প্রদীপের আলোয় অন্ধকার সরে যায় না, বরং তা যেন আরো গভীরভাবে চেপে বসে। শ্বাসরোধ করতে চায়, ভয় জাঁকিয়ে বসে হৃদয়ে। প্রস্তরশয্যায় সামনে দাঁড়িয়ে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে নিদ্রারত দেবতার ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের দিকে চেয়ে রয়েছে সাইকি। অবশ হয়ে আসছে তার দেহ ও মন। না, ইনিই দেবতা ইরোস, শাস্ত্রের বচন অনুযায়ী সম্পূর্ণ মিলে যাচ্ছে তাঁর বর্ণনা। বিশ্বাসঘাতকতা হয়নি তার সঙ্গে, ভঞ্জন হয়েছে তার সন্দেহ। তার সহোদরার উৎকণ্ঠা ভুল প্রমাণিত হয়েছে, নিজের বংশপরিচয় জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো দানবের সঙ্গে মিলিত হয়নি সে। তার প্রেমাস্পদ একজন দেবতা, স্বয়ং ভালোবাসার দেবতা। 

সুপ্ত ইরোসের সৌন্দর্যমুগ্ধা সাইকির হাত কেঁপে যায়। জ্বলন্ত প্রদীপ থেকে একফোঁটা তেল আছড়ে পড়ে দেবতার সুগঠিত উন্মুক্ত বুকে, নিদ্রা ভেঙে জেগে ওঠেন তিনি। এ কী! 

ক্ষোভ, হতাশা, ভয়!  

একত্রে এতগুলি অভিব্যক্তি খেলা করে দেবতার মুখে। তাঁর রক্তিম ওষ্ঠদ্বয় কম্পিত হয়, সমুদ্রনীল চোখে বিষাদ ভীড় করে। একটিও কথা না বলে উঠে দাঁড়ান তিনি, তাঁর সাদা পালকযুক্ত ডানা অদৃশ্য হয় মুহূর্তে।

" ক্ষমা করুন!" 

সাইকির কণ্ঠ বেয়ে মাত্র দুইখানি শব্দ প্রকাশিত হয়। প্রদীপ নিভিয়ে দেবতার পদতলে পতিত হয় সে। ইরোস সরে দাঁড়ান। 

" দেবী আফ্রোদিতির কোপানল থেকে তোমায় রক্ষা করার জন্য এই গুহায় গোপন করে রেখেছিলাম আমি, আলোকের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর অনুচররাও প্রবেশ করতে পারে গুহায়, তাই আলোক প্রজ্বলন নিষিদ্ধ ছিলো এখানে। নিষেধ অমান্য করে সূর্যালোকে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়েছো তুমি, প্রশ্ন তুলেছো আমার প্রেমে, আমার পরিচয়ে। ক্ষমা কি করে আশা করো দেবী!" 

দেবতার কণ্ঠস্বরের তীব্র শ্লেষ যেন দংশন করে সাইকিকে। কুঁকড়ে যায় সে, অশ্রুধারায় ভিজে যায় গুহার পাথরের চাতাল। 

" একটি, মাত্র একটি শর্ত ছিলো আমার প্রেমে, সেটিও রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছো তুমি। দেবী আফ্রোদিতি ঠিকই বলেছিলেন, একজন মানবী কখনো একজন দেবতার প্রেমের যোগ্য হয় না। আর একজন মানবী কখনোই দেবী হতে পারে না। আজ এই মুহূর্তে, আমি তোমায় ত্যাগ করলাম। বিশ্বাসহন্তা!" 

শব্দের কষাঘাতে মৃতপ্রায় সাইকির দিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে প্রস্থান করেন দেবতা ইরোস। এক আহত মানবীর যন্ত্রণাদগ্ধ আর্তনাদ ধ্বনিত হয় গুহাগাত্রে। একজন রোষাপ্লুতা দেবী, ইর্ষাকাতর পরিবার, ত্রুটিযুক্ত সমাজ ও সর্বোপরি এক দেবতার স্বার্থান্বেষী প্রেমের বলি এক মানবীর আর্তনাদে সাড়া দেয় না কেউই। শুধু একলা আকাশের কোল বেয়ে কয়েক দানা বৃষ্টি ঝরে পড়ে। সাইকির বেদনার সাক্ষী হয়ে।। 

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment