1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

এ কেমন সব ভূতুরে কান্ড

ছবি : ইন্টারনেট 

এ কেমন সব ভূতুরে কান্ড

শমিত কর্মকার

সেই রাতটা যেন আজও বিভীষিকাময়। এখন যেন আতঙ্কের রাতটা মন থেকে মুছে ফেলা যাচ্ছে না। নবনীতা  আর রমেন নতুন বিয়ের পর বেড়াতে গিয়ে ছিল। নবনীতা র পুরাতন বাড়ি বনজঙ্গল দেখতে ভালো লাগে বলে কাছাকাছি মুর্শিদাবাদ নিয়ে গিয়েছিল রমেন। অতিমারি থাকায় বেশি দূরে যায় নি। নবনীতার শোনবার পর থেকে বেশ ভালোই লেগেছিল। শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে লালগোলা ফাষ্ট প্যাসেনজারে সীট বুক করে নিয়েছিল রমেন। দুজনার ট্রেনে উঠে সীটে বোসে বেশ মজাই লাগছিল যে আজ তারা কলকাতা শহর ছেড়ে দূরে কোথাও যাচ্ছে। যাত্রা পথের নানা অভিজ্ঞতা নবনীতার বেশ লাগছিল। 

        দুপুর দুটোর সময় রমেন নবনীতা মুর্শিদাবাদ ষ্টেশনে এসে নামল। রমেন ষ্টেশনে নেবে একটা দোকানে ঢুকলো খাওয়ার জন্য। জিনিস পত্র একটা জায়গায় রেখে ওরা দুজন খেতে বোসল।রমেন খেতে খেতেই দোকানে জিজ্ঞাসা করলো আচ্ছা দাদা এখানে থাকবার জায়গা কোথায় ভালো পাওয়া যাবে?দোকানের এক কারিগর বলল, দাদা ওই একটু দূরে ছাতিম তলায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করুন ভালো ভালো থাকবার জায়গার খোজ পেয়ে যাবেন। রমেন খাওয়া দাওয়া সেরে জিনিস পত্র নিয়ে নবনীতা কে সঙ্গে করে একটা রিক্সায় উঠল।

     ছাতিম তলায় এসে একটা ভালো বাড়ির সন্ধান পেয়ে সেখানেই উঠেছে নবনীতা ও রমেন। বাড়িটা দেখে দুজনের বেশ ভালো লাগলো। গাছগাছালি ঘেরা আলাদা একটা বাড়ি। ঐ বাড়ি থেকে আর সব থাকার জায়গা একটু দূরে। রমেন রাত্রের খাওয়া সেরে নবনীতা কে নিয়ে বাড়ি টায় এসে উঠলো। বাড়িটিতে রাত্রে যে পাহারা দেয় সে এসে বলে গেল আপনারা দুজনে রাত্রে একসাথেই থাকবেন, বাইরে বেড় হবেনা। বাড়িতে রাত্রের আলোও একটু কম ছিল। পাহারাদার চলে যাওয়ার পর ওরা ফ্রেশ হয়ে বিছনায় এসে বোসল। কিছুক্ষণ বাদে রমেন বাইরের বারানন্দায় গিয়ে একটা সিগারেট ধরাল।নবনীতা তখন ঘরে একা। নতুন জায়গায় এমন একটা ঘরে একা থাকতে তার ভয় ভয় করছিল। কিছুক্ষণ পর ঘরের একটা কোনে নবনীতা তাকাতেই দেখল টেবিলের উপর রাখা ফুলদানি টা কিছুটা সরে গেল, আরও ভয় তাকে পেয়ে বোসল। আবার কিছুক্ষণ পর ঐ দিকে তাকালো দেখলো  ফুলদানিটা জায়গা পরিবর্তন করেছে, এবার নবনীতা ভয় পেয়ে চিতকার করে উঠলো। রমেন চিতকার শুনে ছুটে ঘরের মধ্যে এলো, দেখল নবনীতা বড় বড় চোখ করে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। রমেন নবনীতার পাশে বোসতেই তাকে জরিয়ে ধরে চোখ বুজে কাঁদতে লাগলো। রমেন বলল তোমার কি হয়েছে? ওমন করছো কেন? কোন উত্তর ই সে দিচ্ছে না! কিছুক্ষণ বাদে বলল, তুমি এই বাড়ি ছেড়ে চলো। রমেন বলল, কেন?  এতো রাত্রে কোথায় যাবো। কিন্তু কেন এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাইছো? কি এমন হলো এইটুকু সময়ের মধ্যে, অনেক কিছু যা নিজের চক্ষে বিস্বাস করতে পারছি না। কিন্তু কি হয়েছে? বলছি, তুমি যখন বাইরে গেলে আমি তখন একা ঘরে বড় ঐ ঘরের এক কোনের দিকে দিকে হাত দেখিয়ে বলল ঐদেখো টেবিলের যে ফুলদানি টা আছে ওটা আপনা আপনি জায়গা পরিবর্তন করছিল। রমেন, কি বলছো তুমি! হ্যাঁ, আমি পষ্টো দেখেছি। এবার রমেন বলল, চলো আমরা শুয়ে পরি কাল সকালে দেখা যাবে। এবার ওরা ঘরের  লাইটা নিভিয়ে শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর রমেন এর কানে এলো কে যেনো ঐ বারান্দা দিয়ে হাঁটছে, সে ভাবলো আমি তো কিছুক্ষণ আগেই ঐ বারান্দায় সিগারেট খেয়ে এলো। রমেন এর নিজের এবার কেমন যেন মনে হলো, তাহলে কি নবনীতা যা বলছে ঠিক! তার ও কেমন যেন লাগছে। তাহলে কি এই বাড়িটি.. সেই জন্যই কি পাহারার বাইরে বেড়াতে বারো করলো। রমেন এর সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তাহলে কি এই বাড়ি টায় অন্য কিছু আছে? এই বাড়িতে কি অন্য কিছুর বাস! কিছু তেই ঘুম আসছে না, নবনীতা তাকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে ধরল। গায়ে হাত দিয়ে দেখলো তার শরীর সম্পূর্ণ ঠান্ডা। 

     রাত শেষ হতেই পরিমরি  করে ওরা দুজন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরল। কিছুক্ষণ পর রমেন ঠিক করলো আর নয়, আজই তারা কলকাতায় চলে যাবে। নবনীতা তাকে বলল, এই রাতের কথা সারা জীবন মনে থাকবে। আমার অনেক বেড়ানো হয়েছে। 

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment