1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Monday, July 24, 2023

আশীর্বাদ চাই

ছবি : ইন্টারনেট

আশীর্বাদ চাই

পীযূষ কান্তি সরকার

    বিমানবন্দরের লাউঞ্জে একটা বড় ব্যাগের পাশে বসেছিলেন সুপর্ণা। যেতে যেতে তাঁকে দেখে তাঁরই ছেলে তন্ময়ের বয়সী একজন বছর ছত্রিশের যুবক এগিয়ে এসে বলল, " আণ্টি -- আপনি এখানে ?"

--- তোমাকে তো ঠিক চিনতে পারছিনা বাবা !

--- তা দশ-এগারো বছর দেখা হয় নি তো! আমি তন্ময়ের কলেজের বন্ধু সন্দীপ, আপনাদের বাড়িতে যেতাম বিশেষ করে নোটস-এর ব্যাপারে। তন্ময় কোথায় ?

--- ওতো কানাডার টরেন্টোতে থাকে। তুমি তো বাবা প্লেনেই এলে! টরেণ্টোর প্লেন কি এখনো ছাড়ার সময় হয় নি ?

--- আমি এই বেঙ্গালুরু থেকে ফিরলাম কিন্তু তন্ময় আপনাকে বসিয়ে রেখে কখন গেছে ?

--- তা বাবা চার-পাঁচ ঘণ্টা তো হবেই !

--- বসুন আমি একটু খোঁজ নিয়ে আসছি।

খোঁজ নিতে গিয়ে সন্দীপের চক্ষু চড়কগাছ ! চারঘণ্টা আগেই তন্ময় রায় চেকিং করিয়ে দুপুর একটার ফ্লাইটে বেরিয়ে গেছেন। চোখে জল এসে গেল সন্দীপের। মনে মনে কর্তব্য স্থির করে ফেলল সে। সুপর্ণার কাছে ফিরে এসে বলল, "চলুন আণ্টি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিই। তন্ময় ঘণ্টা চারেক আগের ফ্লাইটে বেরিয়ে গেছে।"

    চমকে উঠলেন সুপর্ণা, "খোকা চলে গেছে! তবে কি ভুল করেই উঠে পড়ল! আমি যে সব গুছিয়ে নিয়ে চলে এসেছিলাম বাবা!"

   চোখ ফেটে জল আসছে তবু মুখে হাসি ফুটিয়ে সন্দীপ বলল, " কী আর করবেন! আপনার বাড়িতেই আপনাকে পৌঁছে দিয়ে যাব। চিন্তা করবেন না আমি যোগাযোগ রাখব।"

   এবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সুপর্ণা বললেন, "ওর বাবা ছ'মাস হল মারা গেছেন। এতদিন পর এসে বাৎসরিক শ্রাদ্ধটাও সেরে ফেলল। ভাবলাম ওর বাবার তবু কাজটা পুরো হল। তারপর বলল বাড়ি-জমি বিক্রি করে দিয়ে চলো টরেণ্টোয় চলে যাই। এখানে একা থাকলে কে তোমায় দেখবে! ওখানে অনেক বাঙালি আছে, কিছুরই অভাব নেই। এত কথা বলে শেষে কিনা চলে গেল! কোথায় যাব বলো তো বাবা!"

    সন্দীপের চোখ আর বাঁধ মানলো না। হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, " বাড়িতে তো আমারও মা আছে। চলো মা আমাদের সঙ্গেই থাকবে। আর আমি যেন এমন ভুল না করি এই আশীর্বাদটুকু শুধু চাই।

...(সমাপ্ত)...

1 comment:

  1. বাস্তব। বেশ স্পর্শকাতর লেখা।

    ReplyDelete