ভাগ্যিস
প্রতীক মিত্র
বিশ্বাসই হচ্ছে না।না হওয়ারই কথা। পাশে বসা ওই গোবেচারা বুড়োটাই শেষমেশ চোর! সুব্রত কি করেই বা বুঝবে?বেশ কিছুক্ষণ তো সেই বুড়ো ওর সাথে বকে গেল।সুব্রত মূলত শ্রোতার ভূমিকাতেই ছিল। বুড়োর নাকি চন্দ্রকোণায় দোকান আছে। বুড়োর মেয়ে জামাই আর নাতি ক’দিন আগেই এসেছিল বুড়োর কাছে। খুব মজা হয়েছে। বুড়ো যে একা তাও নেই নেই করে চার বছর হল। অবাঙালি যুবকটাও পাশেই দরজার কাছে ছিল। একটু আগে ব্যাগে মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছিল। ওরই ব্যাগ চুরি গেছে। বুড়োই নিয়ে গেছে।ও ব্যাগটা দিয়ে সিটে জায়গা রেখে একটা দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল।হাওয়াটা দরজায় বেশি খেলে। যুবকটি একটা দরজা প্রায় আটকে ছিল বলে বুড়ো ওদিক দিয়ে যেতে পারেনি। ফলে বুড়ো নাকি পরের দরজা দিয়ে নেমে গেছে। সেই যুবক গালি দিয়েই চলেছে বুড়োকে। যুবকের ওই ব্যাগে নাকি অনেক টাকার জিনিস ছিল।যুবকটাই বা কেন যে ব্যাগ ছেড়ে চলে গেল দরজার কাছে? সুব্রতর তবু বিশ্বাস হচ্ছে না। এই কারণে নয় যে বুড়োর প্রতি ওর মায়া পড়ে গেছে। বরং এই কারণে যে সে নিজে একটু আগেই ট্রেনে চেপেছে পেট পরিস্কার করে। ট্রেনযাত্রার মাঝপথে এমন সে বেগের তীব্রতা যে সুব্রত বেচারা ঘেমে নিয়ে একশা। ভালো করে মাথা তুলে সোজা হয়ে হাঁটতে পর্যন্ত পারছিলো না। সঙ্গে যে সহকর্মী ছিল সেই ভাগ্যিস জানালো সামনের স্টেশনে টয়লেট আছে। গিয়ে দেখে কি দুর্ভাগ্য! টেন্ডার নাকি শেষ হয়ে গেছে।তাই টয়লেটে তালা। অগত্যা উপায়?ওই সহকর্মীই নিয়ে গেল কয়েক পা হাঁটিয়ে। সামনে একটা সিনেমা হলে। সিনেমা হলের লোকেরা কেন ইতস্ততঃ করছিল সেটা সুব্রত টের পেল একটু পরে।অন্ধকার সিনেমা হলে ঢুকে কিছুটা হাতরে গিয়ে ঝোপঝাড় টপকালে বাথরুম। দরজা না থাকারই মতন আর বাথরুমের যা চেহারা!যাজ্ঞে।কাজ মিটলে সুব্রত কিছু টাকা দিতে চেয়েছিল।ওরা রাজী হয়নি। অমায়িকভাবে সঙ্গ দিয়ে গেছে ওই সহকর্মীও। ভগবান যেন সহকর্মীর মঙ্গল করে। এই মানুষগুলোও তো এই যুগের, এখনকার। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি।অথচ সেখানে এই বুড়োটার ব্যাপারটা কেমন যেন মানতে ইচ্ছেই করছিল না। ভাগ্যিস করেনি বিশ্বাস কেননা সুব্রত জানতো না বুড়োর ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। রোগটা বেশ গুরুতর। সুব্রত জানতো না বুড়ো চেষ্টা করেছে ওই যুবকটিকে ব্যাগ ফেরত দেওয়ার। ছেলেটি যে ফ্যাক্টরিতে কাজ করে সেই ফ্যাক্টরির মালিকের কার্ড ছিল। হয়তো ব্যাগ ফেরতও পেয়ে যাবে যুবকটি। এসব কিছুই জানতে পারেনি সুব্রত। চুরি বলে এটাকে বিশ্বাসও তেমনি করেনি। ভাগ্যিস!
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment