1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

কাঙাল অহম

ছবি : ইন্টারনেট 

কাঙাল অহম

অরণ্য চ্যাটার্জি

রাত না বাড়লে, লিখতে না পারার অভ্যেসটা বুঝি আর যাবে না। ভিতরের কোলাহল যতক্ষণ না বাইরের সকল শব্দমালা ছাপিয়ে যেতে পারছে, বর্ষা আসে না আমার লেখনীতে। কুলহীন উপনদীর মতোই তখন, তার আলতো ঢেউ আছড়ে পড়ে না দুইপাড়ে। রাত নামে, বর্ষা আসে, নিয়ে আসে আর্দ্রতায় মোড়ানো আবেগ। তবেই না মনমাঝি তার নৌকা ছাড়বে। 

আসলে, মানুষই পারে তার পুরনো সবকিছুকে অতিক্রম করতে। যা কিছু ছিল সযত্নে তুলে রাখা, সবকিছু ফেলে দিয়ে, নতুন কিছুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে। কিন্তু যে অদম্য স্পৃহায় অতিবাহিত হয় দিন, তার সবচেয়ে বড় অস্ত্রই হচ্ছে দিশা। সবাই কি খুঁজে পায় তাকে, পায় সবাই তাদের পথের দিশা? যে উত্তর অজানা রয়ে গেল, তা অজ্ঞাতই থাক।

আমার শহরে তাই সন্ধ্যে নামে প্রতিদিন, শুধু অল্প আলোয় তোমায় কেমন মানায়, তা দেখবে বলে। সমস্ত সীমারেখার আহ্বান উপেক্ষা করে, জিভ কেটে এক পা ফেলে অন্য দেশে। আঙুলের ফাঁকে আস্তে আস্তে জ্বলতে থাকে জোনাকি আর জ্বালাতে থাকে সব অনুভুতি, সব প্রতিশ্রুতি। সেই প্রীতিশ্রুতি যা মাদকের কাঁচে আলতো ভাবে লেগে ছিল একদিন, স্পর্শ পেয়েছিল তোমার ঠোঁটের। সে ঠোঁটের নাগাল পেলো না কত মানুষ। যে বিহ্বলতা, ক্ষমতা রাখে নিমেষে একটা গোটা দেশের ক্ষরায় বাঁধ সাধতে, তাকে চিনলো না কেউ। সে শুধু কারোর হবে বলেই কি তবে..... 

সেসব কথা থাক।

তখন, গাড়িটা চলেছে ফাঁকা কোন রাস্তা ধরে। যুধিষ্ঠিরের রথ নয় বলেই, উড়তে গিয়েও উড়তে পারেনি সে, চাকা লেগে আছে মাটিতেই। স্পিডমিটারের কাঁটা তখন বোজাতে চাইছে চোখ। শহুরে রাত কেমন জানি নিজেই নিজের ভিতর বয়ে আনে এক পশলা মাদকতা। অফিস ঘন্টার সমস্ত কোলাহল তখন বহুদূরের রাজধানী, তখন, ঠিক তখনই প্রেম নেমে আসে আমার শহরে। আর তুমি জানলার কাঁচে কনুই ঠেকিয়ে, কোনো এক অজানা ভরসায় এলিয়ে দাও মাথা।

আমি, বহুদূরের পথিক এক, চাতক পাখির মতোই খুঁজে বেড়াই একটু আশ্রয়। তোমার মুখের ওপর নেচে বেড়ায় একের পর এক ল্যাম্প পোস্টের ছায়া। আমার অবাক চোখে তখন কেবলই তুলকালাম, আসক্ত মাথার মধ্যে ধেয়ে আসছে অজস্র প্রশ্ন। গাড়ির স্পিকারে বাজছে পাকিস্তানি শিল্পীর গলায় কি অদ্ভুত মায়াবী এক গান-

"चाँदनी रात बड़ी देर के बाद आई है

लब पे इक बात बड़ी देर के बाद आई है..."

সেই সুরে গুলিয়ে যাচ্ছে সমস্ত ঠিক বেঠিকের হিসেব, দুই দেশ ভুলে যাচ্ছে হিংসার সব গণিত.... 

সমস্ত নির্জনতা ভেদ করে, ক্রমশই কাছে আসতে থাকে গন্তব্য। কোথাও একটা যে থেমে যেতে হবে, এটা ভাবলেই কেমন যেন করে ওঠে বুকের ভিতরে, একটা ঠান্ডা চাদরের মতোই আঁকড়ে ধরে বুকের পাঁজর। তাহলে যে সব কথা বলা হল না, হয়ে উঠলো না! বলতে গেলেই যেখানে গলার ভাঁজে জমছে যত আদিম উদ্বেগ, ভার হয়ে আসছে কথা বলার ক্ষমতা। তোমাকে তো নামতে হবে। 

তুমি চলে গেলে, রয়ে গেল তোমার গন্ধ। ঝাপসা চোখ তখন বিচারে অক্ষম, তোমার পিছন ফিরে চাওয়া কি সত্যিই এলো...... 

গাড়িতে তখন-

"ना खुले आँख अगर ख्वाब है तो ख्वाब सही...

ये मुलाकात बड़ी देर के बाद आई है

लब पे इक बात बड़ी देर के बाद आई है

चाँदनी रात..."

তোমার আমার সম্পর্কটা আসলে, যে সমস্ত কথা বলা হয়ে উঠলো না, তাদের প্রতীক হয়েই বেঁচে থাক, যে হাত দুটো কাছে এসেও এলো না তাদের কথাই মনে করাক, যে ঠোঁট দুটো দূরত্বের মাপকাঠি হয়ে রয়ে গেল, তাদেরই গল্প বলুক। তোমার আমার সম্পর্কটা নিভু আগুনের আঁচেই বেঁচে থাক, বেঁচে যাক।

মেহেদী হাসানের গলায় তখন উঠছে সুর-

"अब की हम बिछड़े, तो कहीं ख्वाबों में मिले...."

হওয়ায় ভেসে যাচ্ছে সে সুর, আর আমার কাঙাল অহম, আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে.... আবার স্বপ্ন দেখবে বলে.....

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment