1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, October 21, 2023

নারী

ছবি : ইন্টারনেট

নারী

বিকাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য


সামাজিক সভ্যতায় ঘরে বাইরে নারীর অবদান অনস্বীকার্য, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই অর্থে প্রতিদিবসই নারীদিবস।

ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম, তখন অন্ততঃ ক্লাস সেভেন এইট পর্যন্ত নারী পুরুষের পার্থক্যটা প্রত্যক্ষভাবে বুঝতাম না। ক্লাস নাইন-টেনে বিচরণ কালে "আমরা-ওরা"র পার্থক্যটা একটু একটু করে বুঝে গেলাম। "প্রত্যক্ষভাবে" শব্দবন্ধটা ব্যবহার করলাম এইজন্য যে, কোথাও একটা কিছু পার্থক্য আছে, আমাদের সুশীল সমাজের কল্যাণে সেইটা পরোক্ষভাবে আমরা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ থেকেই জানতে পেরেছিলাম। যেমন, ছেলেদের মতো একইরকম রক্তমাংসের মানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও, মেয়েদের জোরে কথা বলতে নেই, লাফালাফি করতে নেই, জোরে শব্দ করে হাসতে নেই, কারো কথায় প্রতিবাদ করতে নেই ইত্যাদি। তখন এর গুরুত্ব না বুঝলেও, একসঙ্গে একই সামাজিক অবস্থানে থেকে, একসাথে পড়াশোনা, খেলাধুলা করা স্বত্ত্বেও দুই রকমের নিয়ম আমার অদ্ভুত লাগতো আর এর  কারণ খুঁজে পেতাম না।

পরবর্তীকালে বড় হয়ে জেনেছি আমাদের সমাজে ছোট থেকেই নারীদের তৈরি করা হতো পুরুষের সেবায় নিয়োজিত করার জন্য। এমনকি ভালো করে পড়াশোনা করানো হতো ভালো রোজগেরে স্বামী পাওয়ার জন্য। পুরুষশাসিত সমাজের এহেন নীতি আমি কেন জানিনা স্কুলজীবনেই মেনে নিতে পারিনি।  কলেজে পড়াকালীন আমার সীমিত ক্ষমতায় এই ভ্রান্তনীতির প্রতিবাদ করতে শুরু করলাম। না, কোনো মঞ্চে নয়, পরিচিত মহলে সোচ্চার হলাম পুরুষ নারীর সমান অধিকার নিয়ে। ফল হল মারাত্মক। অধিকাংশ লোকই ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য শুরু করে দিল, কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলাম। পণ নিয়ে বিয়ে করার জন্য আমার খুব কাছের বন্ধুর বিয়েতেও অনুপস্থিত ছিলাম। এরপর একসময়ে সংসার জীবনে প্রবেশ করলাম। এতদিন সংসারে নারী বলতে শুধু মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বুঝেছিলাম, সংসার করার পর বুঝলাম স্ত্রী ও মেয়ের ভূমিকাও কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সংসারে সবাই মিলেমিশে কাজ করতে চেষ্টা করে চলেছি এখনও পর্যন্ত এবং ভবিষ্যতেও এভাবেই করে যাবো।

আমার মতে সমান অধিকারের দাবিতে নারীদের পাশে দাঁড়ানো মোটেই খুব সহজ কাজ নয়। বিবাহিত পুরুষ যদি স্ত্রী অসুস্থ হলে সংসারের কাজ করে, তবে পুরুষশাসিত সমাজ তা সোজাভাবে মেনে নেয় না। এমন কি অনেক মহিলাও তথাকথিত পুরোনো সমাজব্যবস্থার বাইরে গিয়ে এইসব কাজ মেনে নিতে পারেন না। আমি যখন বাড়িতে থাকি তখন সংসারের কাজ দুজনে ভাগ করে করি বলে, আমাকেও বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে। অথচ এই স্ত্রীয়েরাই সারাদিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করার পরেও স্বামী কাজ থেকে ফিরে এলে চায়ের কাপটা হাতে তুলে দেন। কর্মরতা ক'জন গৃহিণী এই সুবিধাটি তার স্বামীর কাছে আশা করতে পারেন?

নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলতে গেলেই নারী স্বাধীনতার প্রসঙ্গ অবশ্যই আসতে বাধ্য। অনেক নারীকেই দেখেছি যে, পুরুষের মতো গালাগালি দেওয়া, সিগারেট আর মদ খাওয়াকেই নারী স্বাধীনতার অঙ্গ হিসেবে গ্ৰহন করেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এই কাজগুলো নাকি আধুনিকতার প্রতিনিধিত্ব করে। তারা প্রশ্ন তোলেন, পুরুষ যদি নেশা করে আমরা কেন করবো না? অবশ্যই যুক্তি আছে একথার, সমান অধিকারের কথা বলবো অথচ একই কাজ পুরুষ করলে দোষ নেই, মেয়েরা করলেই দোষ কেন হবে? আমার বক্তব্য হলো নিজের জীবনের ক্ষতি করে নেশা করাটাই তো মানুষ মাত্রই মারাত্মক ভুল, সে পুরুষই হোক বা নারী। নেশাতে সমানাধিকার না দেখিয়েও যেসব কাজ আগে শুধুমাত্র পুরুষরা করতেন সেইসব কাজ করে আধুনিক নারীরা আজকাল দৃষ্টান্ত রাখছেন। যুদ্ধবিমানের পাইলট হয়েছেন, শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত জাহাজ দূর সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছেন, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করেছেন, অ্যান্টার্কটিকার মতো দূঃসাহসিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছেন, সর্বোপরি এই পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে পারি দিয়েছেন। নারী যে পুরুষের সমান দক্ষ হতে পারেন, আশা করি এই উদাহরণগুলিই যথেষ্ঠ।

পরিশেষে বলি, আমার মনে হয় নারীকে সাহায্য করার থেকে সহযোগিতা করা অনেক বেশি প্রয়োজন, নারীর সাহায্যার্থে কোনো কাজ করলে সেটাকে কোনো মহৎ কাজ বলে মনে না করে দায়িত্ব বলে গণ্য করাই শ্রেয়। নারীকে অবলা ভেবে দয়া না দেখিয়ে সমান অধিকারের দাবিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলাটাই বাঞ্ছনীয়। ছোট থেকেই নিজের মেয়েকে ছেলেদের কূ-নজর এড়িয়ে চলতে শেখালে হবে না, বরঞ্চ নিজের ছেলেকে মেয়েদের উপযুক্ত সম্মান করতে শেখাতে হবে। সমদৃষ্টিভঙ্গিই একমাত্র সুশীল সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে। নারীকে ত্যাগের প্রতীক না বানিয়ে বরং সম্মানিত করা উচিত তার কাজকে। আবার নারীকে মহান দেবী না ভেবে মানুষ ভাবাটাই বেশি সমীচিন বলেই আমি মনে করি। উপযুক্ত সম্মান আর ভালোবাসা পেলে নারীরা পুরুষ নারী নির্বিশেষে এই পৃথিবীতেই স্বর্গের সুখ এনে দিতে পারে।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment