ছবি : ইন্টারনেট |
প্রথাগত পরিবর্তন নৈতিকতার আগমন
ফাহিম ফারুকী
আসলে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সকল প্রাণীর স্বভাবজাত ধর্ম। মানুষের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়, সমাজে বহুল প্রচলিত প্রথা হলো বিয়ে বাড়িতে নাচ গান আর মেয়েদের আসল মানব রূপের বিকৃত করে সৌন্দর্য বর্ধনের প্রচেষ্টা।
রাতের মনোরম পরিবেশ যখন হঠাৎ লাল-নীল আলোতে ধুম ধুম আওয়াজে মেতে ওঠে, তখন বোঝার বাকি থাকে না যে বিবাহের অনুষ্ঠানের অথবা গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের নাচানাচি। ছেলেমেয়েদের হাতে হাত ধরে নাচানাচি, পোশাকের বৈচিত্রতা, অভাদ মেলামেশা, ছেলে-মেয়েদের হাসিঠাট্টা, এইসব আসলেই সমাজের একটি গোপন ক্যান্সারের আভাস। ভালো মেয়েটা যখন দেখে তার আরেক মামাতো বোন নাচানাচি করছে এক ছেলের সাথে তখন তার মগজেও অবিকল কর্ম সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন হয়। এটাকে সে অতটা অপরাধ মনে করে না। এভাবে তার অবস্থাও একই দিকে অগ্রগামী হয়। পরিবার গুলো আজ সমাজ এর চেহেরাটাকে বিক্ষিপ্ত করছে।কী করুন চিত্র!
বর্তমান সমাজে প্রচলিত আরেক মরণব্যাধির নাম উচ্চারণ ব্যতিরেকে বর্ণনা করছি।
সত্যিকার অর্থে নারীজাতি সৌন্দর্যের প্রতীক, যুবকের সবচেয়ে রোমান্টিক মুহূর্ত নারীদের কে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়। সমাজের চিত্র যখন যুবকের যৌবনের উদ্দীপনাকে উদ্দীপ্ত করে তখন অবুঝ ছেলের হাতে রমণীর হাতের ছোঁয়ার বিপদ চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। মানুষ গড়ার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম শিক্ষা, আর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠান। রক্ষকদের হাতে যখন ভক্ষক হওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় তখন চাহিদা তো বৃদ্ধি পাবেই। সহশিক্ষা নামে প্রতিষ্ঠানগুলো তৈরি করছে জেনার কারখানা। ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশার দৃশ্য সর্বত্র এখন লক্ষণীয়। ছেলের পাশের বেঞ্চে যখন মেয়ে বসে থাকে তখন টিচারের দিকে তাকানোর থেকে মেয়েদের দিকে তাকানো যেকোনো ছেলের জন্য নিত্য ঘটনা। গোলাপের সৌন্দর্য যেমন যেকোনো পথচারীকে তার দিকে তাকাতে বাধ্য করে তেমনি যে কোন যুবক নারীর দিকে তাকাতে বাধ্য। এ কারনেই আমাদের বাস্তব পর্যবেক্ষন থেকে বলছি সহশিক্ষা জিনার সেরা মাধ্যম। হৃদয়ের স্বপ্ন তাই যা সে অত্যাধিক ভাবে। ফলশ্রুতিতে আমরা রমণীর সৌন্দর্য দেখে তার রূপের বাহারের ভাবনায় নস্যাৎ করছি আমাদের অধ্যাবসায়ী জীবনের সেরা মুহূর্ত।
ঘটনা প্রবাহ এক --
রাইসুল নামের যুবক সম্পর্কে আমার ভাই, সূর্যের কিরণ যখন দীপ্তমান হয় আমাদের আড্ডার আসর তেতুল তলায় ব্যাপকতা লাভ করে। রাতে হয়তো শীতের নির্মম স্বাদে দাঁতের বিরক্তি হয়েছে পানি দ্বারা, ত্বকের লোম দাঁড়িয়েছে বস্ত্রের অপার্যাপ্ততায়। কত বিষাদ। শীতকালের সূর্যের কিরণে শান্তির এক অকল্পনীয় অনুভূতি!শীতের বাস্তব বা অনুভূতিক চিত্র গ্রামীণ পরিবেশের বাহিরে পাওয়া চিন্তার বাহিরে। রাইসুল এইচএসসি এক্সাম শেষ করে শীতকালের প্রথম ভ্রমণ মামার বাড়িতে দিবে বলে ঠিক করলো এবং সময়ের ব্যবধানে সে মামা জহির এর বাড়িতে গমন করে এবং মামার বাড়িতে অল্প সময়ে পৌঁছে যায়। মামা জহির সরকারি চাকরিজীবী দিনের সম্পূর্ণ সময় প্রতিষ্ঠানে এবং রাতের কিছু সময় বাজারে চায়ের আড্ডায় মাতে, এসবের মধ্যে সুযোগ করে সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীকে দুই ঘন্টার মত সময় দিতে পারে প্রত্যেকদিন, ঘুমের জন্য খাওয়ার জন্য বাকি সময় তো লাগবেই, রাইসুল মামার বাড়ি এসে মামাকে অফিসে পেয়ে, মামীর কাছে যায় এবং সকল ভালো মন্দের খবর নেয়। সকালের নাস্তা মামি রাইসুলের আগমন উপলক্ষে পূর্বেই তৈরি করে সাদা থালার মধ্যে চাপ দিয়ে রুটি আর সবজি রেখেছিল। মামাতু বোন রাইসুল কে দেখে অবাক হলো শুভেচ্ছা বিনিময় করল। খাবার শেষে বিভিন্ন বিষয়ে কথা শুরু করল। রাইসুল টিভির রিমোট নিয়ে বিছানায় গা হেলান দিয়ে টিভি দেখা শুরু করল সাথে মামতো বোন, ভাই সহ অনেকে হাশি,তামাশা করছে।এভাবে পর্দার খেলাফ করে সবার সাথে কথা বলা, সবার সাথে দেখা সাক্ষাত করা হারাম অথচ এটাকে তারা কিছুই মনে করছে না।এভাবেই সমাজের মানুষগুলো নির্লজ্জ, অসামাজিক, বর্বর হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যখন মাহারাম ব্যাতিত বিপরীত লিঙ্গের কাউকে দেখে তাখন মনের অজান্তেই শয়তানি আঁকড়ে বসে মনে, হয়তো তা বোঝা সকলের জন্য সমীচীন নয়।
দুপুরে খাবারের পর মামী আর মামাতো বোন টিভি চ্যানেল পরিবর্তন করছে আর মনের মত নাটক দেখছে। রাইসুল বিছানার পাশে দাড়িয়ে একটু দেখতে চেষ্টা করলে মামী তাকে তাদের সাথে বসার জন্য বললেন এবং সে কিছু চিন্তা না করেই বসে যায়। যথারীতি টিভি দেখতে থাকে। মামাতো বোন মুভি দেখতেছে সাথে রাইসুল। মামাতো বোনের সাথে বসে মুভি দেখা আমাদের সমাজে খারাপ বলে বিবেচিত নয় তবে কিছু ঘটে গেলে সমালোচা ভালোই জমে। মুসলিম পরিবারগুলোর এইরকম উদাসীনতা এবং শরিয়া বিরোধী কাজের কারণে বর্তমান সমাজের নাজেহাল পরিস্থিতি। সমাজের রীতিনীতি গুলো পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক। যদি আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ গড়তে হয় তাহলে ইসলামিক প্রথাগুলো ব্যতীত সকল অপসংস্কৃতির পুরাতন আমলের প্রথা নতুন প্রথা বাদ দিতে হবে। আমাদের প্রভু যেখানে পবিত্র কোরআনে বলেছেন"-“তোমরা জিনার কাছেও যেও না।"
কিন্তু সেখানে বেগানা নারীর সাথে বসে টিভি দেখা কত বড় গুনাহ!তাহলে সমাজের এই পরিণতির মূল কারণ হলো, মানুষ এগুলোকে অপরাধ ভাবে না। কেউ কেউ বলে আরে মা-বোনের মতই। এরকম বাজে কথা বলা এবং কাজ করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।পরিবর্তন করার দায়িত্ব আমাদের কারন এটি আল্লাহ তায়ালার সীমারেখা। পর্দা করা ফরজ।
ঘটনা প্রবাহ ২-
দিনের অবস্থান ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৫ই ডিসেম্বর। দিনটি নকিব এর জীবনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । এই দিনে নকিব দুনিয়ার আলো বাতাসের প্রথম ছোয়া পায়। বাবা-মায়ের ১ম সন্তান হিসেবে দুনিয়াতে আগমন করে সে। নকিব এখন ১৪ বছরের ছেলে। আজ তার ১৫ তম জন্মদিন । বাবা মা তার জন্মদিনে তার সকল বন্ধুদের আমন্ত্রণ ও খাবারদাবারের বিশাল ব্যবস্থা রেখেছে। আজ রাত ১২ টায় সবাই ফেসবুকে উইশ করেছে। গোসল শেষ করে তৈরি হয়ে নিচ্ছে।দশটা বাজার সাথে সাথে তাদেরকে প্রোগ্রাম শুরু করতে হবে। মা-বাবা সকল কিছু গোছানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে কাজ করছে। দশটা বাজার বাকি দুই মিনিট নকিবের ১০ জন বন্ধু বান্ধবী উপস্থিত হয়েছে এই অনুষ্ঠানে। সময় মতো কেকের দেহকে টুকরো টুকরো করল নকিব ও তার হাতের উপর মা বাবার হাত ছিল। নকিব সকল কে মুখে কেক দিচ্ছে। বান্ধবীদের মুখে দিল, বন্ধুদের মুখে দিল। হঠাৎ কেউ একজন অপরজনের মুখে মারল, তার এই কাজের পরে শুরু হল মাখামাখির কাজের প্রতিযোগিতা।সব বন্ধু বান্ধবী একে অপরের মুখে হাত দিয়ে ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছে, যা কেকের ওপরে থাকে যেটাকে মাখন বলে, কি বাজে পরিস্থিতিতে মেয়ে বন্ধুর গালে ছেলে বন্ধুর হাত। আবার মেয়েও ছেলেটাকে জোরজবর দস্তি করে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কেক মাখাচ্ছে। ছেলে বন্ধু ছুটে চলে যেতে চাইলে দুই বান্ধবী একজনকে চেপে ধরে এই মাখন তার মুখে লাগিয়ে দিচ্ছে। এগুলো হলো বর্তমান সমাজের নোংরা প্রথা। মা-বাবার ভ্রান্ত ও অযথা আয়োজনে সন্তান ধ্বংসের শেষ প্রান্তে। এরকম ১০-২০ জন ছেলে মেয়ের অবাধ চলাফেরা হাসি-আড্ডা সমাজের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং সন্তানের জীবনের ব্যর্থতার মূল কারণ হবে। সুতরাং আমাদের সমাজের ভ্রান্ত প্রথাগুলো কে পরিবর্তন করে আদর্শ ও নৈতিকতা সম্পন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আমদানিকারী হতে হবে। সমাজের পরিবর্তন তখনই হবে যখন নৈতিকতা মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ সমাজে থাকবে। তাই সমাজ পরিবর্তনের জন্য নৈতিক হওয়ার কোন বিকল্প নেই ।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment