1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

লাল জড়ুল

 

ছবি  : ইন্টারনেট

লাল জড়ুল

শম্পাশম্পি চক্রবর্তী

--" তারপর স্যার আপনার লাল জড়ুল উপন্যাসটা তো শুরু করলেন না? বললেন এবারের বই মেলাতে ওটা উপন্যাস হিসেবে আনবেন। তা বইমেলাতে তো পেলামই না বই হিসেবে আর অন্য কোনো মাধ্যমে যেমন ফেসবুকেও প্রকাশ করলেন না।। খুব মন খারাপ লাগছে। আপনি তো জানেন আপনার লেখার বড়ো ভক্ত আমি । কবে থেকে অপেক্ষা করছি লাল জড়ুল উপন্যাসটা পড়বো কিন্তু কোথায়?

আপনি জানেন না স্যার আপনার গল্প কীভাবে আমি গোগ্রাসে গিলি। "

      শশাঙ্ক আলগা হাসি  হেসেছিল সেই মুহূর্তে  সদ্য যুবতীটির কথাগুলির প্রত্যুত্তরে। যুবতীর হয়তো পছন্দ হয়নি শশাঙ্কর তার কথাগুলির প্রত্যুত্তরে সামান্য হাসিটুকু দিয়ে ছেড়ে দেবে । কপট রাগ দেখিয়ে বলে উঠেছিল --" এমন ভাবে এড়িয়ে গেলে হবে না স্যার। আপনার থেকে লাল জড়ুল উপন্যাসটা আমার চাইই চাই। " শশাঙ্ক পুনরায় হেসেছিল। যুবতীটি তাতে কিছু সময়  ভ্রু কুঁচকে থেকে নিজেও হেসে ফেলেছিল।

            শশাঙ্ক শেখর রায় । জনপ্রিয় সাহিত্যিক।

অনেক উপন্যাস ও গল্পের বই প্রকাশিত করে ওর নাম মোটামুটি সাহিত্য জগতে কারো কাছে অজানা নয় তা বলা যেতেই পারে। বিশেষ করে ভৌতিক বা রহস্য গল্পের লেখক হিসেবেই ও পরিচিত। বিভিন্ন সাহিত্যসভা তো আছেই তার সাথে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাহিত্যিক হিসেবে উপস্থিত থাকতে গিয়ে শশাঙ্ককে যে আরো সুপরিচিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

            কয়েকদিন আগে এমনি একটি সাহিত্য সভায় উপস্থিত থাকতে গিয়ে  হঠাৎ দেখা খুব কাছের একজন পাঠিকার সাথে। ফেসবুকের পাঠিকা, পরিচয় দেবদত্তা মুখার্জি।  নামটা শুনে  শশাঙ্কের চিনতে এতটুকু অসুবিধা হয় না। কারণ আর কিছুই নয় তার ফেসবুকে প্রকাশিত গল্প ও উপন্যাস গুলির একনিষ্ঠ পাঠিকা দেবদত্তা। ফেসবুকে দেবদত্তার প্রোফাইল পিকচার দেখে বেশ ভালোই লাগতো মেয়েটাকে। বিশেষ করে ওর গভীর দুটি কাজল কালো চোখের দৃষ্টি । বড়ো তীক্ষ্ম। গত তিন বছর ধরে শশাঙ্ক  যতগুলো গল্প বা উপন্যাস নিজের ছাপা অক্ষরে প্রকাশ ছাড়া  ফেসবুকে  পোস্ট করে আসছে সে গুলিতে দেবদত্তা একজন সু পাঠিকা হিসেবে শুধু  সুন্দর মন্তব্য  দিয়ে গল্প বা উপন্যাস কে সমাদৃত করে আসছে তাই নয় গল্প উপন্যাস গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ পড়ে তার ত্রুটি বিচ্যুতি গুলোও শশাঙ্কের ফেসবুক ইনবক্সে জানিয়ে দিতেও ভোলে না। 

         যাইহোক সেই জন্যই হোক বা দীর্ঘদিনের পাঠিকা হিসেবে মুখচেনার কারণেই হোক শশাঙ্ক মনে প্রাণে যথেষ্ট পছন্দ করতো দেবদত্তাকে। আর পছন্দ করবেই বা না কেন দেবদত্তাকে শশাঙ্ক , দেবদত্তার পোস্ট করা ছবি গুলো দেখে আন্দাজ করা যেতই দেবদত্তা দীর্ঘাঙ্গী, এবং অসাধারণ দেহ বল্লরীর অধিকারিনী যুবতী যার সৌন্দর্য  সাধারণ বাঙালি মেয়েদের থেকে একটু আলাদাই মনে হতো।

সেই হেন দেবদত্তাকে সাহিত্য সভায় চাক্ষুষ দেখে মেয়েটার  যতোটা ফেসবুকে ছবি দেখে ভালো লেগেছিল তার চাইতে বহুগুন বেশি ভালো লাগলো শশাঙ্কের । আর তার প্রশ্ন গুলো যখন একের পর এক তার সামনে উপস্থিত হচ্ছিল মিতভাষী সদা লাজুক শশাঙ্ক তার প্রত্যুত্তর দেবে কী উত্তর খুঁজে না পেয়ে স্মিত হাসি হেসে বুঝিয়ে দেয় সে বিশেষ ভাবে আনন্দিত। তার সাথে বেশ কিছু সময় দেবদত্তার দিকে তাকিয়েও থাকে। দেবদত্তার প্রশ্ন যখন অগণিত তখন একান্ত বাধ্য হয়েই শশাঙ্ক  সলজ্জ কন্ঠস্বরে বলে উঠেছিল --" উপন্যাসটা যে তৈরি করবো তার প্লট পাচ্ছি না ম্যাডাম। কেমন করে লিখি বলবেন? নামকরণ তো করে ফেলেছি উপন্যাসটার ফেসবুকে বিজ্ঞাপন ও দিয়েছি অথচ আশ্চর্যের বিষয় উপন্যাসটা শুরু করবো এমন কোনো মনের মতো প্লট মাথায় আসছে না । প্লট আসলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি বই আকারে ছাপা অক্ষরে উপন্যাসটা প্রকাশ করে ফেলবো। আমার একটি ছাপা অক্ষরে বই প্রকাশিত হতে চলেছে কয়েক দিনের মধ্যেই । তাতেই এই উপন্যাসটা পেয়ে যাবেন। দেবদত্তা সবটুকু শুনে  বলে উঠেছিল----" সেটাই তো স্যার আমিও তাই ভাবছিলাম যে আপনি গল্পটার নাম প্রকাশ করেছেন অথচ বই টা প্রকাশ করলেন না কেন ? ভালো প্লট ছাড়া গল্প? না কখনোই পাঠক পাঠিকার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না স্যার। যাইহোক  শুভকামনা রইলো আপনার আগামী উপন্যাসের জন্য। আপনি লিখুন আমি আপনার সাথে আছি। আসি তাহলে স্যার। হয়তো কোনো দিন আবার দেখা হবে আমাদের। কোনোখানে এমনি হঠাৎ ।"

        দেবদত্তা চলে গিয়েছিল। ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকতে গিয়ে  একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলেছিল শশাঙ্ক সেই মুহূর্তে ।

           এরপর মাস তিনেক মতো সময় পার হয়ে গেছে।  বিশেষ কাজে ফেসবুক থেকে ক'টা দিন নিজেকে সরিয়ে রেখেছিল শশাঙ্ক । সামনেই কয়েকটি সাহিত্য সভাতে যাওয়া আছে।  তারই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রাত ক'টা হবে আন্দাজ এক টা বা দুটো। হঠাৎ ল্যান্ড ফোনের ক্রিরিং ক্রিরিং সুতীব্র শব্দে দ্রুত এগিয়ে গেল সেন্টার টেবিলের দিকে শশাঙ্ক । এতো রাতে কার ফোন আসতে পারে? বেশ অবাক হলো। কপালে ভাঁজ পড়লো। অকৃতদার শশাঙ্ক । রাতের বেলা তাকে ফোন করার মতো কেউ নেইও বর্তমানে। এক সময় অবশ্য ছিল পত্রলেখা। রাত্রি বেলা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে যেত। কিন্তু সে আজ অনিকেত কে বিয়ে করে কানাডা না কোথায় থাকে। শশাঙ্কের সাহিত্য প্রেম উপরন্তু কেরাণী জীবন তার ভালো লাগেনি তাই ইঞ্জিনিয়ার অনিকেতকে তার ভালো লাগলো ও শশাঙ্ক কে ত্যাগ করলো। শশাঙ্ক যে তাতে কিছু মাত্র অনুশোচনা করে ছিল না তা করেনি। কারণ তার যুক্তি তাকে ভালোবাসতে গেলে আগে তার সাহিত্যিক মনটাকে ভালোবাসতে হবে। নচেৎ তাকে ভালোবাসা যাবে না। পত্রলেখাও আর সময় নষ্ট করে নি শশাঙ্কের পেছনে। বাবা মায়ের পছন্দের পাত্র অনিকেতকে বিয়ে করে নেয়।

          ক্রিরিং ক্রিরিং । রিসিভারটা হাতে তুলে নিলো শশাঙ্ক ।

---" হ্যালো কে?"

---" স্যার আমি।"

---" এতো রাতে আমি টা কে? তাও মহিলা কন্ঠস্বর। কে আপনি।"

---" স্যার আমি । আপনি আমার কন্ঠস্বর চিনতে পারছেন না?"

---" না কে আপনি? এতো রাতে কোনো মহিলা এমন ভাবে ফোন করে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করবে ওনাকে চিনতে পারছি কী না? আমার জানার বাইরে।" বেশ কঠোর শোনালো শশাঙ্কের কন্ঠস্বর।

----" স্যার আমি দেবদত্তা। আপনার একনিষ্ঠ পাঠিকা। চিনতে পারছেন এবার।" শশাঙ্ক কিছুটা চিন্তা মুক্ত হলো। সামান্য গলাটা খুক খুক করে পরিষ্কার করে নিয়ে বলে উঠলো---" তুমি!  এতো রাতে ? কেন কী প্রয়োজন আমাকে? কাল সকালে তো ফোন করতে পারতে। এতো রাতে কেউ ফোন করে? তাছাড়া আমার ফোন নম্বর পেলে কোথায়?"

----" কেন ফেসবুকে । আপনি রাগ করলেন স্যার? কিন্তু আপনাকে যে আমার বড়ো দরকার । "

---" আমাকে ? তোমার? কীসের দরকার?"

---" কেন প্লট । আপনার উপন্যাসের প্লট চাই না? আপনার "লাল জড়ুল" উপন্যাস  তো তাহলে লেখাই হবে না।"

---" তুমি আমার সাথে ইয়ার্কি করছো দেবদত্তা। এখন প্লট নিয়ে আলোচনা! যাও শুতে যাও। কাল ফোন কোরো শুনবো" শশাঙ্ক রিসিভারটা রাখতে গেলে অদ্ভুত মোহময়ী কন্ঠস্বরে হেসে উঠলো দেবদত্তা তারপর  বলে উঠলো---" রাখবেন না স্যার আপনাকে উপন্যাসের প্লট টুকু না জানালে যে আমার আত্মা শান্তি পাবে না। আপনাকে শুনতেই হবে আজ এই রাতে এখনি।"

----" কী আবোল তাবোল বলছো তুমি? তোমার আত্মা শান্তি পাবে না এসব কী কথা।" শশাঙ্কের কন্ঠস্বর কম্পিত হলো এবার।

---" স্যার আজ রাতে না বললে যে আর কোনো দিন বলা হবে না আপনাকে । আপনার লালজড়ুল উপন্যাস অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। আপনি কী তাই চান?" শশাঙ্ক বুঝে উঠতে পারলো না কী করবে। হঠাৎ গোঁ গোঁ শব্দ । ফোনের লাইনটা কেটে গেল। ঘরের মধ্যে শ্মশানের নীরবতা নেমে এলো। নীল রঙের রাত বাতিটা খানিকক্ষণ দপ দপ করতে করতে নিভে গেল। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। নিজের চেনা ঘরটাই বড়ো অচেনা বোধ হলো শশাঙ্কের। ভীত হলো সে। ঘরের এমন অদ্ভুত পরিবেশের সাথে সে আগে কখনো পরিচিত হয় নি। খানিকটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল নিমেষের মধ্যে তার শরীরের ওপর দিয়ে । শশাঙ্ক উপলব্ধি করলো ঘরে সে ছাড়াও অন্য কারো উপস্থিতি ঘটেছে।

---" কে?"

----" আমি স্যার দেবদত্তা।"

---" তুমি? তুমি এখানে মানে এ ঘরে কী করে এলে?" শশাঙ্কর কন্ঠস্বর পুনরায়  ভীত। কম্পিত।

---"আমার এখন সর্বত্র বিচরণ । আপনি ভয় পাবেন না স্যার । আমি আপনার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি। আমি এসেছি আমার যারা ক্ষতি করেছে আজ কয়েক ঘন্টা আগে, তাদের কথা আপনাকে বলতে। আপনি আমার অসহায়তার কথা আপনার উপন্যাসে লিখবেন তো স্যার । আপনার উপন্যাসের নাম লাল জড়ুল যে আমার জীবনের আশীর্বাদ নয় অভিশাপ। আপনি সেই অভিশাপ আপনার একটি একটি অক্ষরে সাজিয়ে উপন্যাসটি তৈরি করবেন ।"

---' কী বলছো তুমি? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। " অনুরূপ ভয়ার্ত কন্ঠস্বর শশাঙ্কের।"

----" স্যার আমি তাহলে সবটুকু বলি। আপনি লিখতে থাকুন । আপনার খাতা কলমটা নিন। শুরু করুন  আপনার লাল জড়ুল উপন্যাস । যার প্লট আমি দিচ্ছি। আমার আজ রাতের নিদারুণ অভিজ্ঞতাই আপনার লাল জড়ুল উপন্যাস সৃষ্টি করবে। নিন স্যার শুরু করুন । ভোরের আলো ফোটার আগেই যে আপনাকে শেষ করতে হবে আপনার কালজয়ী উপন্যাস লাল জড়ুল।" শশাঙ্ক বাধ্য ছেলের ন্যায় অন্ধকার হাতড়ে এগিয়ে গেল কাঠের ডেস্কের কাছে। বার করলো খাতা পেন। লাইট ল্যাম্পটা জ্বালাতে গিয়ে মোহময়ী কন্ঠস্বর বলে উঠলো---" না না ওটা জ্বালাবার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি বলে যাচ্ছি আপনি লিখে যান। আপনার লিখতে কোনো অসুবিধা হবে না। আমি আপনাকে লিখতে সাহায্য করবো।

লিখুন লিখুন স্যার --

      লালজড়ুল"। ভোর হয়ে গেছে। পূবের আকাশ লাল করে প্রথম সূর্যের আলো এসে পড়েছে শশাঙ্কের চোখে মুখে। ঘুমটা ভেঙে যেতেই চমকে এদিক ওদিক তাকাতে কৈ কারো উপস্থিতি তার ঘরে মধ্য রাতে ঘটেছিল বলে তো মনে হচ্ছে না। ঘরের সর্বত্র বৃত্তাকারে বারবার দেখা সত্ত্বেও যখন হতাশ হয়ে আপন মনে নিজেকে প্রশ্ন করে ওঠে -----"কোথায় গেল দেবদত্তা? সত্যিই তো সে তার উপস্থিতি উপলব্ধি করেছিল। তাহলে গেল কোথায় মেয়েটা? তবে কী সবটুকু স্বপ্ন । অবচেতনের বিকার?"

         হঠাৎ কাঠের ডেস্কের ওপর চোখ গেলে চমকে ওঠে শশাঙ্ক । মোটা একটি খাতা । দ্রুত ছুটে যায় শশাঙ্ক । পাতা ওল্টাতে থাকে।  প্রায় দুশো পাতা জুড়ে একটা আস্ত  উপন্যাস । হস্তাক্ষর শশাঙ্কের নিজের । লেখার কোথাও এতটুকু ভুল ভ্রান্তি নেই। নিখুঁত সুন্দর হস্তাক্ষরে তার লেখা "লাল জড়ুল" উপন্যাস। । কিন্তু সে লিখলো কখন? কিছুই তো তার মনে পড়ছে না। বারবার চিন্তার গভীরে ঢোকার চেষ্টা করে শশাঙ্ক কিন্তু বিফল হয়। না না ভাবা যাচ্ছে না । অগত্যা সব ভাবনা ছেড়ে খাতাটা তুলে নেয় নিজের হাতে। পুনরায় পাতা ওল্টাতে থাকে । দু তিনটে পাতা ওল্টাতে শুরু করলো শশাঙ্ক " লাল জড়ুল" উপন্যাস। আমি দেবদত্তা মুখার্জি বাবা, মা, আর আমি আর আমার থেকে কয়েক সেকেন্ডের বড় দাদা। এই আমাদের পরিবার ছিল দমদমে। বাবা স্কুল মাস্টার, আর মা একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স। সুখের সংসার । ধীরে ধীরে স্কুল শেষ করে দুই ভাইবোন কলেজ তারপর ইউনিভার্সিটি। এক সাথেই যাতায়াত । বলতে গেলে দাদা'ই আমার বডি গার্ড। রোজকার মতো আজ ও ফিরছিলাম দু'জনে । দাদা আগে আগে আমি পিছনে। বাড়ি ফেরার পথে মুখুজ্জে দের গলি পথটা পার হলে অনেকটা কাছে হয়। খানিকটা গিয়ে থমকে ছিলাম। আধো আলো আধো ছায়াময় পরিবেশে কয়েক জন দুর্বৃত্ত পথ আটকে দাঁড়ালো দাদার। ওরা সংখ্যায় পাঁচ।  দাদা বলে উঠলো--" আপনারা কে? এমন ভাবে পথ আটকালেন কেন ?"

---" কেন বুঝলি না। নিজে একাই ভোগ করবি আমাদের একটু প্রসাদ দে।" ওদের মধ্যেই একজন বলে উঠলো। দাদা উচ্চস্বরে বলে উঠলো--" কী বলছেন আপনারা। পথ ছাড়ুন। রাত অনেক । বাড়ি ফিরতে হবে।"

---" আরে ফিরবি ফিরবি তোকে কে আটকাতে যাচ্ছে তোর সাথে ওই যে যেটা রয়েছে সেটা কে যে আমাদের চাই। তুই বাড়ি যা। আমরা ওর সাথে একটু খেলা খেলা খেলি তারপর ।"

---" ও আমার বোন। মুখ সামলে কথা বল্।" দাদার কন্ঠস্বর কঠোর থেকে কঠোরতর ।

--" ও আচ্ছা ও তোর বোন। তাহলে বসে বসে দেখ তোর বোনের সাথে কী খেলা খেলি।" আর এক দুর্বৃত্তের কন্ঠস্বর। দাদা আরো কিছু বলে ওদের সাথে বিরোধে লিপ্ত হতে গেলে হঠাৎ সজোরে ভারি কিছুর আঘাত দাদার মাথায় পড়তেই দাদা ছিটকে পড়লো। আধো আলো আধো ছায়াময় পরিবেশে দেখলাম দাদা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ওর শরীরটা। আমি চিৎকার করতে উঠতে গেলে কার যেন হাতের তালু আমার মুখটা চেপে ধরলো। আমার পরনের সালোয়ারটা এক টানে ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বন্য উল্লাসে ওরা মত্ত হলো। ওদের একের পর এক হাতের স্পর্শ ছুঁয়ে যেতে লাগলো আমার সর্বাঙ্গ। মুহূর্তে  আমাকে তুলে নিয়ে ফেললো ওরা একটা ভাঙা মন্দিরের চাতালে। আমার বুকের মাঝ বরাবর লাল জড়ুল টা যা মা বলতো সৌভাগ্যের চিহ্ন ওই জড়ুল না কী কোনো দিন কোন ক্ষতি হতে দেবে না আমার। এদিকে ওদের মধ্যে কারো চোখ জড়ুলটার দিকেই চলে যেতে জ্বলন্ত  সিগারেট চেপে ধরলে যন্ত্রণায় ছটফট করে উঠলাম। আমার হাত, মুখ বাঁধা । ওদের উল্লাস শুরু হলো আমার শরীরটা কে নিয়ে । একের পর এক দুর্বৃত্তের চাহিদা মেটাতে নিদারুণ অত্যাচার সহ্য করতে করতে আমি তখন অচৈতন্য । ওরা তাতেও ক্ষান্ত হয় নি। আমার গলায় বসিয়ে দিলো চকচকে ধারালো কিছু। আমার হাত দুটো কেটে ফেলে দিলো দূরের ডাস্টবিনে। আমার পা দুটো চিড়ে দিয়েও শান্তি নেই ওদের । যৌনাঙ্গে প্রবেশ করালো লোহার রড। লাল টাটকা রক্ত দেখে উদ্দাম,উল্লাসে ওরা তখন একে অপরকে জড়িয়ে আনন্দে নাচছে। আমার দুটো চোখ স্থির হয়ে ওদের দেখছে। ওদের নগ্ন  উল্লাস আমার শরীরের ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে লাগলো। তারপর । তারপর আর কিছু মনে নেই স্যার। এরপর আপনি লিখবেন আপনার কল্পনা দিয়ে। আপনি লিখবেন আপনার উপন্যাস লাল জড়ুল। "

       খাতাটা বন্ধ করে পূব দিকের জানলা বরাবর এগিয়ে গিয়ে নব উদিত সূর্যের দিকে তাকালো শশাঙ্ক । একটু পরেই সকাল হবে। নতুন সকাল। যে সকালে দেবদত্তাদের দেহ পাওয়া যায় কোনো অন্ধকার গলিতে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় । পাশে পড়ে থাকে মৃত দেহ কোনো হতভাগ্য দাদা বা প্রেমিক। থানা বা হাসপাতাল ফেরত বৃদ্ধ বাবা মা রাত শেষে মেয়ের ছিন্নভিন্ন শরীরটা শনাক্ত করতে পেরে হাহাকার করে ওঠে। বুকের মাঝে লাল জড়ুলটা যা মায়ের কাছে সন্তানের সৌভাগ্য চিহ্ন তা উন্মুক্ত দেখে ছেঁড়া সালোয়ারের অংশ দিয়ে পরম যত্নে ঢাকা দিয়ে মৃতা মেয়ের লজ্জা নিবারণের চেষ্টা করে। না আর ভাবতে পারে না শশাঙ্ক। মনে মনে নিজেকে নিজেই অপরাধী মনে করে পুরুষ জন্মের জন্য।

        ---" বাবু সকাল হয়ে গেছে। খবরের কাগজওলা কাগজ দিয়ে গেছে। চা বসাই।"সর্বক্ষণের কাজের লোক হরিহরের ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল শশাঙ্ক ডাইনিং  টেবিলের দিকে। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে টেবিল থেকে দৈনিক পত্রিকা টি চোখের সামনে মেলে ধরতেই চমকালো শশাঙ্ক । প্রথম পৃষ্ঠায় বরবর হরফে লেখা যুবতীকে ধর্ষণ ও খুন। আশ্চর্যের বিষয় ধর্ষণকারী পাঁচ জনকেই আন্দাজ করা হচ্ছে ওরাই যুবতীকে ধর্ষণ ও খুন করেছে ওদের দেহ ও যুবতীর দেহের পাশে পাওয়া গেছে। সকলের গলা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।

         তদন্ত চলছে । শশাঙ্ক একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কাঠের ডেস্কের ওপর রাখা খাতার পাশে ওটা কী চকচকে করছে খানিকটা অংশ  আবার রক্তে মাখা কিছু একটা বস্তুর দিকে তাকালো। মনে করতে আর অসুবিধা হলোনা শশাঙ্কের গত রাতের সব কথা।অশরীরী দেবদত্তার করুন পরিণতি শুনে দেবদত্তার দেখানো পথে সে উপস্থিত হয়েছিল সেই গলিপথে। আলোছায়ার পরিবেশে দেখেছিল আকন্ঠ মদ্যপান করে দুর্বৃত্তরা তখন আনন্দে মত্ত। দেবদত্তা প্রদত্ত আসুরিক শক্তি তখন  শশাঙ্কের মধ্যে প্রবেশ করে অলৌকিক ভাবে। শশাঙ্ক  ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্বৃত্তদের ওপর। ওদের ই কারো কোমরে গোঁজা ধারালো অস্ত্র টা দিয়ে ছিন্নভিন্ন করে কেটে দিয়েছিল ওদের কন্ঠদেশ। দেবদত্তা তৃপ্তির হাসি হেসেছিল শশাঙ্কের দিকে তাকিয়ে । তার কাজল কালো গভীর চোখের  লবণাক্ত ধারা যেন বুঝিয়ে দিয়েছিল---" উপন্যাস টা এবার শেষ হলো তো স্যার।"

...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment