1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 2, 2024

প্রতিক্রিয়া

ছবি : ইন্টারনেট

প্রতিক্রিয়া

জনা বন্দ্যোপাধ্যায়

      কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে গোপন সোর্স মারফত নিষিদ্ধ মাদকের হাত বদলের খবর এসেছিল। পয়লা মে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ব্লকের সিংটি গ্রামে ভাই খাঁ পীরের মেলায় নিষিদ্ধ মাদকের হাত বদল হবে। এই খবর পেয়ে সাব ইন্সপেক্টর মহম্মদ রাসেল টিম নিয়ে রওনা হলেন ভাই খাঁ পীরের মেলার উদ্দেশে। তিনি কর্তব্যপরায়ণ ও মনে প্রাণে একজন ধার্মিক মুসলমান। বয়স প্রায় আটান্ন। বেলা এগারোটায় পুলিশের টিম হাজির হয় মেলায়। আলু ও সর্ষে খেতের মাঝখান দিয়ে অসংখ্য মানুষজনকে এই মেলায় আসতে দেখা যায়। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরোনো এই মেলা। এককালে দূর দূরান্ত থেকে সবাই পায়ে হেঁটে আসতো এই ঐতিহ্যবাহী মেলায়। ক্যানিং, কাকদ্বীপ ইত্যাদি জায়গা থেকে কাঁকড়ার পসরা নিয়ে আসে অনেক মানুষ। মাটির উনুনে মাটির পাত্রে আলুর দম তৈরী করেন বৃদ্ধ নঈম চাচা। বয়স সত্তরের ওপর। বহু মানুষ এখানে এসে কলা পাতায় আলুর দম, মুড়ি খায়। এছাড়া ঘুঘনি, জিলিপিও বিক্রি হয়। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে এই ভাই খাঁর পীরের মেলার আকর্ষণ আছে।

            সাব ইন্সপেক্টর রাসেল নঈম চাচাকে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, "এখানে তো শুনেছি ভাই পীরের মাজার আছে। আপনি জানেন নিশ্চয়ই।"

চাচার শ্বেত শুভ্র বড় দাড়ি। দড়ি পাকানো শরীর। তিনি বলেন, "হ্যাঁ বাবু আপনি ঠিকই শুনেছেন। এখানে ওনার মাজার আছে, সেই সঙ্গে তাঁর দুজন শিষ্য সইফ আলি খাঁ আর গোপাল খা-র মাজারও আছে। একজন মুসলমান আর অপর জন হিন্দু। এই মেলা তো হিন্দু মুসলিম ভাই ভায়ের মেলা। তাই এত বিখ্যাত।"

           কাকদ্বীপ থেকে এসে কৃষ্ণপদ বারুই সামুদ্রিক কাঁকড়ার পসরা সাজিয়েছেন। মিঃ রাসেল তাকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন কৃষ্ণপদ এই মেলায় গত পনেরো বছর ধরে আসছেন।পুলিশ টিম সাধারণ ড্রেসে মেলার এদিক ওদিক ঘুরে সবার ওপর নজর রাখে।

        সন্ধ্যে পর্যন্ত সন্দেহজনক কোন কিছু ধরা না পড়ায় অফিসার রাসেল ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন। তবে তিনি এই প্রথম এরকম হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির মেলা দেখলেন। আরব থেকে এসে ভাই খাঁ তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় মানুষদের কাছে জনপ্রিয় হন। তিরিশে পৌষ তাঁর মৃত্যু হয়। পরদিন তাঁর শেষকৃত্যে বহু মানুষ ভিড় করেন। ওই দিনটিতেই প্রাচীন মেলার সূচনা হয়।

       মাদক পাচারকারীর খবরটা ভুল হলেও এই মেলা পরিদর্শন করে অফিসার রাসেলের মনে পরিবর্তন আসে। তাঁর কন্যা আফসানা একজন হিন্দু ছেলেকে ভালোবাসে। ছেলেটি কলকাতায় থাকে, ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু মিঃ রাসেল মেয়ের এই আচরণ মেনে নিতে পারেননি। একমাত্র মেয়েকে ধমক দিয়ে বাড়িতে বন্দী করে রেখেছেন। এমনকি কলেজেও যেতে দিচ্ছেন না। এই ভাই খাঁ পীরের মাজার ঘুরতে ঘুরতে হিন্দু মুসলমানদের একই সঙ্গে মেলায় আসা ও খাওয়া দাওয়া করতে দেখে মিঃ রাসেল সিদ্ধান্ত নেন তিনি আর মেয়েকে বারণ করবেন না। মেয়ের পছন্দ করা ছেলেটিকে ডেকে কথা বলবেন।

         মেলায় মাদক পাচারকারী ধরা পড়লে মিঃ রাসেলের প্রমোশন কেউ আটকাতে পারতো না। সে সুযোগ হয়নি। তবে ভাই খাঁ পীরের মেলা তাঁর ধর্মভাবনার মূলে নাড়া দিয়েছে। বোধোদয় হয়েছে মিঃ রাসেলের। যা হয় তা ভালোর জন্য!

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment