![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
অচেনা স্মরনক
অহনা পাল
পূর্ণিমার সন্ধ্যাগুলো
অন্যান্য দিনের সন্ধ্যার চেয়ে ভিন্ন। পূর্ণিমায় চাঁদের আলো উপভোগ করা আমার কাছে বদ্ধ
পাখির মুক্ত হওয়ার আনন্দের সমান। তাই আমি প্রায় ছাদে গিয়ে কিছুক্ষন নিজের মতো সময়
কাটায়। এই সময়টায় যেন সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে এক নতুন অনুভূতির
সৃষ্টি হয়।
১০ বেজে ৩০ মিনিট
বিছানায় এলাম শোবার জন্য। কিছুক্ষন ঐ ভাবেই শুয়ে থাকার পরও ঘুমের দেখা মিলচ্ছে না।
তাই উঠে গিয়ে জানালার পাশে দাঁড়ালাম। জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখার পর হঠাৎই
ছাদে যাবার জন্য মনটা বায়না ধরে। কিন্তু মস্তিষ্ক বোঝায়-" না এখন যাওয়া যাবে
না অনেক রাত হয়েছে।" কিছুক্ষণ দোটানায় ভুগতে থাকি। নাহ, মনটাকে আর আঁটকে রাখতে পারলাম না। মনের নির্দেশ
অনুযায়ী পা দুটোও ছাদের সিঁড়ির দিকে অগ্রসর হয়।
ছাদে আসার পর একটু
স্বস্তি হয়। পূর্ণিমার আলোয় ছাদের ফুলগাছগুলি যেন নতুন ভাবে সেজে ওঠেছে। আজ আবার
মাঝে মাঝে এক মিষ্টি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে।আহ্: কী সুন্দর পরিবেশ!
হঠাৎই আমার নজর যায়
ফুল গাছগুলির পাশে থাকা দোলনাটির দিকে। একটি পুরুষ আধাশোয়া অবস্থায় শুয়ে আছে ওটার
ওপর। যার সম্পূর্ণ দৃষ্টি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে। কিন্তু আমাদের বাড়ীতে এই অপরিচিত
পুরুষ কী করছে? এই প্রশ্নটি বারবার
আমার মনে ধাক্কা দিচ্ছিল ।
পুরুষটি আমার সামনে
এসে দাঁড়িয়েছে । হয়তো আমাকে লক্ষ্য করেই এসেছে।
একটি শ্যামলা বর্ণের
পুরুষ, বেশ লম্বা চওড়া।এক কথায়
যাকে বলে সুদর্শন পুরুষ। যে এখন পলকহীন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবচেয়ে আকর্ষর্ণীয়
তার চোখগুলি। চোখগুলি পুরো গভীর জলাশয়ের ন্যায়, যাতে ডুব দিলে অতল ভাবে তলিয়ে যাবে। পূর্ণিমার
আলো থাকায় তাকে পরোখ করতে অসুবিধা হয়নি।
একবার মনে হলো নীচে
চলে যায় কিন্তু ঐ অপরিচিত পুরুষের মোহনীয় রূপ আমার ষষ্টদশীর মনকে ভীষণভাবে আকর্ষন
করছিল।
হঠাৎই পুরুষটি একটি
হলুদ খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলো। প্রথমে ইতস্তত বোধ হলেও কিছুক্ষন পর খামটা আমি আমার
হাতে নিয়ে নিই। খামটা খুলতেই প্রথমে একটি শুকনো গোলপ ফুল পেলাম, তারপর একটি চিঠি। চিঠিটাও বেশ পুরানো মনে হচ্ছিল।
চিঠিটা খুলে আমি পড়তে শুরু করলাম---
" প্রানের প্রিয় মায়বিনী
, তুমি হয়তো আমায় ভুলে গেছো,
যদিও এটা স্বাভাবিক। কিন্তু
আমি তোমাকে আমার মনের চিলেকোঠায় জমিয়ে রেখেছি। তোমার আমার পরিচয় জনম জনমের। তোমাকে
আমি কথা দিয়েছিলাম তুমি যদি আমায় ভুলে যাও আমি নিজে গিয়ে তোমাকে আমার কথা স্মরন
করিয়ে দিয়ে আসব। কথা রাখতে হাজির হলাম তোমার সামানে।"
চিঠিটা পড়ে শেষ করার পর আমি ঐ পুরুষটার দিকে তাকালাম
যে আগে থেকেই মুখ ভরা হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়েছিল । আমার মনে জমে থাকা প্রশ্ন
গুলো তাকে জিজ্ঞাসা করার আগেই নীচ থেকে মায়ের ডাক এলো। আমি ছুটে নীচে চলে এলাম কারন
আমার রাতে ছাদে যাওয়ার অভ্যাসটা মায়ের খুব অপছন্দ। মা আমার থেকে চলে যাওয়ার পর আবারও
ছাদে গেলাম। কিন্তু চারপাশে আর কেউ ছিল না, এমনকি সেই চিঠি আর গোলপ ও নেই।
" কে ছিল ঐ পুরুষ?
আর সে এসেছিলোই কোথা থেকে?
বা চলেই গেল কোথায়?
এটা আমার ভ্রম নয়তো?"
...(সমাপ্ত)...
Beautiful.....👏👏👏👏
ReplyDelete