1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

একটি দৃশ্যের তাপ-উত্তাপ

 

ছবি : ইন্টারনেট

একটি দৃশ্যের তাপ-উত্তাপ 

সুমিত্রা পাল


। 

বোটানির ল্যাবে ঢুকতে যাচ্ছিল নিবেদিতা, জয়ন্ত আর সোমা পথ আটকাল।

-‘অ্যাই! সারাটাদিন তুই ফিলোসফারের মতো মুখ করে ঘুরে বেড়াস কেন রে? নিজেকে খুব এরিস্টটল, প্লেটো ভাবিস তাই না’?

চোখ কুঁচকে তির্যক ভঙ্গীতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল জয়ন্ত, যেন বেশ জব্দ করা গেছে গোছের।

নিবেদিতা সপাৎ জবাব দিল

-‘ফিলোসফার নইরে, তবে সিরিয়াস। পড়াশুনা করতে এসেছি, সারাদিন ক্লাশ কেটে ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়িয়ে তো লাভ নেই। তাছাড়া দুবছরের কোর্স চার বছরে করার জন্য আমার বাবার ট্যাঁকে এত পয়সা ও নেই’।

-‘তুই কড়া আর ঝাঁঝালোই রয়ে গেলি। রসেবসে আর হলি না’। সোমার মন্তব্য।

-‘আর হবও না। যা পালা’, বলে নিবেদিতা ল্যাবে ঢুকে যায়।

কলেজে ঢোকার পর থেকে সে পেছন থেকে, আড়ালে-আবডালে অনেক মন্তব্য শুনে এসেছে। যেমন

-‘একেবারেই মিশুকে নয়’।

-‘বাংলা পাঁচ এর মতো মুখখানা হামেশা আমসি’।

-‘কথা বলতে গেলে এমন ভাব করে যে মনে হয় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।

-‘হয়তো প্রেমে বিশাল কোন দাগা খেয়েছে’... ইত্যাদি ইত্যাদি।

।  

নিবেদিতা জানে একটি দৃশ্য, শুধুমাত্র একটি দৃশ্য, তার গোটা ব্যাক্তিত্বে বারে বারে প্রভাব ফেলে যায়। একটু অন্যমনস্ক হলেই, অবচেতনার স্তর থেকে উঠে আসে সেই দৃশ্য তার চেতনার স্তরে, তার দুচোখে। তিন বছর ধরে তাই সে নিঃসঙ্গ থেকে আরও নিঃসঙ্গ হয়েছে। তার চারপাশে গড়ে উঠেছে দুর্ভেদ্য, বিশাল এক পাঁচিল। আর সেই পাঁচিলের ভিতর সে স্বেচ্ছা অন্তরীন।

মাঘী পূর্ণিমার রাত। কুয়াশার মধ্য দিয়ে অপ্সৃয়মান একটি কায়া চলে যাচ্ছে দেবব্রত। তার হাতে দিয়ে গেছে একটি চিরকূট-

          'চলে যাচ্ছি। তবু জানি রয়ে যাব

          তোমার প্রতিটি শ্বাসে, তোমার গভীর বিশ্বাসে

          তোমার না বলা কথার রেশটুকু ধরে

          নিদ্রাহীন প্রতিটি রাতের গভীরে।

তিন বছর ধরে এই একটি দৃশ্য, তার সমস্ত মগ্ন চৈতন্য জুড়ে। তার সহজ-স্বাভাবিক জীবনে একটি লক্ষণরেখা যেন এঁকে দিয়ে গেছে সেই দৃশ্য। তার সামনে উন্মুক্ত বাতায়ন অথচ সেই দৃশ্য যেন এক লৌহগারদ। দেবব্রত চলে গিয়ে তার অস্তিত্বে যেন আরও বেশি করে বিদ্যমান হয়ে আছে। কিন্তু এমনভাবে আর কতদিন?  

।    

অন্য দিনের মতো আজও নিবেদিতা ক্লাশে এসেছে। প্রফেসর ক্লাশে ঢুকতে সবার সঙ্গে নিয়মমাফিক সেও উঠে দাঁড়িয়েছে। বসেছে। নোটবুক খুলে অন্যমনস্কভাবে দু-একটি ডুডল এঁকে ফেলেছে। শুনল

-‘হ্যালো, লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান! আয়্যাম ডি.ডি। দেবব্রত দত্ত, এমএ, পিএইচ ডি, য়োর ন্যুউ ইংলিশ লেকচারার ওয়েলকাম অল অফ য়্যু ইন মাই ক্লাশ, দোজ হু আর অ্যাটেনটিভ, অ্যান্ড দোজ, হু আর নট অ্যাটেনটিভ, অল...অল...’

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হল যেন নিবেদিতা। তাকাল ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা নতুন অধ্যাপকের দিকে। দেখল দেবব্রত তাকিয়ে আছে তার দিকেই।

     বিস্মৃত হল সে চারপাশের পরিস্থিতি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিজেরই অজান্তে উঠে দাঁড়াল সে।  

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment