1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 21, 2025

স্মৃতির পুজো

ছবি : ইন্টারনেট

 স্মৃতির পুজো

 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় 

শারদোৎসব বলতে আমরা প্রধানত আমাদের বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত এক গ্রাম কুশমুড়ির দুর্গাপুজোকে
বুঝতাম। গ্রামের সেই বারোয়ারি বা গ্রাম ষোলোআনার পুজোর স্মৃতি মনের সেই বিশেষ পাতাটিতে
তার পূর্ণ অস্ত্বিত্ব নিয়ে বেঁচে আছে।
আমার বালকবেলার গল্প ছিলো ক্ষুদ্রায়তন, ছোটো-ছোটো ভাবনা,চাওয়া ও আনন্দ, বন্ধুদের নিয়ে খেলা
এইসব। বড়োদের সাহায্য নিয়ে ইচ্ছাপূরণ করা আবার নিজেদের আনন্দে সযত্নে তাদের ছোঁয়াচ
বাঁচিয়ে চলা। শিউলি ফুটিয়ে কখন শরৎ এসে যেত টের পেতাম যখন মিস্ত্রিকাকা অর্থাৎ ঠাকুর গড়ার কারিগর
দুর্গামন্দিরে বাঁশ,খড়,মাটি নিয়ে কাজ শুরু করতেন। স্কুল ছুটির আগের দিন সবাই শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিয়ে
মাস্টারমশাইদের হাতে দিয়ে প্রণাম করার প্রথা ছিলো। মেয়েরা শিউলির মালা গেঁথে আনতো।
প্রথম কৈশোরের যোগ্য সাহচর্যে বুঝতে শিখেছিলাম শারদীয়া উৎসব মানে অনেক কিছু তার ঋতুরঙ্গ, আকাশ,
সাদা মেঘ,সবুজ ধানখেত,হালকা বাতাস, কাশ-শিউলি-শালুকের তীব্র সংবেদ, সাবধানি বিড়ালের
হালকা চলনের মতো শিশিরপতন,মননশীল কত কথা,আড্ডা,লেখালিখি আর নতুনগন্ধ শারদীয়া সংখ্যাগুলোতে
বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে একেবারে ডুবে যাওয়া।তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতো বেশ কিছু ভালোলাগা ও মন্দলাগা।
 যখন থেকে প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হলো অর্থাৎ খড়ের কাঠামোতে একমেটে(মাটি),দোমেটে, মুখ বসানো,খড়ি
দেয়ার পর রং করা,চালচিত্র আঁকা ও চোখ আঁকার পর ঘামতেল (বার্নিশ) করা। শেষে ডাকসাজ পরানো। তার মানে
পুজো এসে গেলো। মহালয়া পার হয়ে গ্যাছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অমৃত কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ রাত জাগা এক উৎসবে
শেষ হলো আর দশমী পর্যন্ত ও তার পরেও কিছুদিন চললো তার রেশ।
আমাদের গ্রামে একটাই দুর্গাঠাকুর,একটাই ঢাকে নানান বোল বাজে,তার সাথি একটাই কাঁসি তালে তালে
ঠাঁইঠাঁই বাজে। দুর্গাপুজো বলে কথা আমাদের গর্বের শেষ নেই। আশেপাশে বেশিরভাগ ছোটো গ্রামেই বড়োপুজোর(দুর্গা) চলনেই, লক্ষ্মী,কালী,সরস্বতী প্রতিমা হয়তো আসে।
পুজোয় আমাদের একটা করে জামাপ্যান্ট হয়,তাকে নিয়ে আগ্রহ ও আনন্দ অপরিসীম। বড়জোর একজোড়া
নতুন জুতোও জুটে যেতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি কখনোই নতুন জামাপ্যান্টে স্বচ্ছন্দ থাকতাম না,এখনো থাকি না। শুধু
মনে হতো, আহা এটা ময়লা হয়ে যাবে আর পুরোনো হয়ে যাবে।এক-দুবার পরার পর খুব যত্নে তুলে রাখতাম।
পুরোনো হয়ে গেলে অবশ্য সমস্যা থাকতো না। তবে গরিব পরিবারের বন্ধুদের নতুন জামা জুটতো না তাই তাদের জন্য
খুব মনখারাপ হতো আর সেই মনখারাপের কাঁটা সহজে দূর হতো না তাদের সামনে নতুন জামাপ্যান্ট পরে বের হতে
গভীর লজ্জা ও সঙ্কোচে পীড়িত হতাম,স্বস্তি পেতাম না।
 আজ এত বছর ধরে এত রকম আয়োজন, প্রাচুর্য দেখেও ভুলতে পারি না আমার গ্রামের সেই ছোটোবেলার
পুজো টিমটিমে আলো, ঠ্যাটাং ঠ্যাং ঢাক,মাইকে জোরালো বাংলা গান সারাজীবন ভোলা যায় না,যাবেও না মন চায়
একবছর পুজোয় গ্রামে থেকে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে পুরোনো স্মৃতিগুলো নতুনভাবে উদ্ধার করবো,কিন্তু
হতাশ হই যখন দেখি তার আগেই চলে আসে অজস্র ডাক,পড়ি নানান সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সামাজিক উদোগের
আহ্বান আর আমি জড়িয়ে যাই সেইসব জালের পাকে পাকে। পরে উৎসব চলে যায় আর আমি যেতে না
পারার আক্ষেপ-অবসাদে কণ্টকিত হই যার রেশ থেকে যায় বহুদিন।
...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment