
নতুন বিশ্বের সন্ধানে
অর্কজ্যোতি চক্রবর্ত্তী
সন্ ২১২৬। পৃথিবীর চরম
দুর্দিন সমাগত। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন বেড়ে প্রায় ঊর্ধসীমায় পৌঁছেছে, তাই বিশ্ব-উষ্ণায়ণের
ফলে অন্ধ্র-প্রদেশের শ্রীহরিকোটায় জুলাই মাসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রী
সেলসিয়াস। হ্যাঁ, এখানেই রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ভা.ম.গ.কে.)। সেখানকার
তাবড়-তাবড় বিজ্ঞানীরা এখন পৃথিবীবাসীদের বাঁচাবার মরিয়া প্রচেষ্টায় রত। জলবায়ুর ক্রমাগত
পরিবর্তনের ফলস্বরূপ ভারত তথা পৃথিবীতে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। ভারতের মত বিপুল
জনসংখ্যার দেশে বাজরা আর আলু ছাড়া অন্য কোনো খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে না। তদুপরি দূষিত
বায়ু, উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের গুণগত মান ক্রমশ
নিচের দিকে। তাই ভামগকে’র ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, বর্তমান প্রজন্মই হতে পারে এ ধরণীতে
মানবজাতির অন্তিম প্রজন্ম।
শ্রীহরিকোটা থেকে
প্রায় ৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুলিকেত শহরে বসবাস করে ছোট্ট এক বাঙালী পরিবার। পরিবারটির
প্রধান ব্যক্তিটির নাম দীপ্তাংশু মোদক। বছর দশেক আগে ভামগকে’তেই চাকরী করতেন। মহাকাশযান
চালানা করায় অসীম পারদর্শিতা ছিল তাঁর। তাঁর পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে
সফল পরিভ্রমন করে একটি দল। তারপর মানসিক অবসাদের জন্য চাকরি ছেড়ে তিনি এখন পুলিকেত
হ্রদের কিনারে একটি অনতিবৃহৎ জমিতে জৈব কৃষিকার্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। এই কাজে
তাঁর সঙ্গী তাঁরই দশ বছরের ছোট মেয়ে অশ্বিকা ও পনরো বছরের ছেলে ঋষি। তাদের মা ছোটবেলাতেই
গত হয়েছেন, তাই তাদের দেখভাল করেন ঠাকুমা তথা দীপ্তাংশুর মা ষাটোর্দ্ধ মৃণালিণী
দেবী। মৃণালিণী দেবী সেদিন দীপ্তাংশুকে বললেন, “বুঝলি বাবা! আমার শ্বাসকষ্টটা
দিন-দিন বাড়ছে। সূর্য্য শেষ কবে দেখা দিয়েছিলেন, তার ঠিক নেই। চারিদিকে শুধু কালো ধোঁয়া!”
দীপ্তাংশু বললেন, “ঠিক আছে মা। আমি শীঘ্রই তোমাকে তনবীর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”
দীপ্তাংশু তাঁর
ছেলেমেয়েকে নিয়ে মাঝেমধ্যে তাঁদের ক্রুজার বোটটিতে চেপে পুলিকেত হ্রদে মাছ ধরতে যান।
সেদিনও বেরিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের জালে ধরা দিল রাশিকৃত মরা মাছ। দীপ্তাংশু চমকে
উঠলেন। তাহলে কি পুলিকেত হ্রদের নির্মল, স্বচ্ছ জলও এবার দূষিত হয়ে গেছে? তাঁর
মেয়ে অশ্বিকা বলে উঠল, “বাবা, এই মাছগুলো মরে গেছে কেন? কেউকি এদের মেরে ফেলেছে?” ঋষি
বিরক্তির স্বরে বলল, “আরে, বোকা বুঝিস না! হ্রদের জলে ক্ষতিকর মৌলের পরিমাণ বেড়ে
গেছে তাই।” দীপ্তাংশু তাঁর ছেলেমেয়েকে সাহস জুগিয়ে বললেন, “শুধু এখানকার জলই দূষিত,
বাকি সব জায়গার জল পরিষ্কারই আছে।” যাইহোক, এরপর তাঁরা হ্রদের ওপর দিয়ে দ্রুত নৌকা
চালিয়ে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলেন। অন্ধকার ঘনিয়ে এল। কিন্তু দীপ্তাংশু রাস্তা হারিয়ে
এক অচেনা দ্বীপের কাছাকাছি এসে পৌঁছলেন। আর কিছুটা এগোবার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের
নৌকার ওপর একটা তীব্র সার্চ-লাইট এসে পড়ল। ভেসে এল এক ভারী কণ্ঠ-স্বর: “আর বেশী
এগোবেন না। না হলে আপনাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হব।” অশ্বিকা ভয়ে কেঁদে উঠল,
“বাবা, এখন আমরা কি করব?” দীপ্তাংশু ছেলেমেয়েকে সতর্ক করে বললেন, “একদম চুপ! একটা
শব্দও কোরো না।” এরপর অতর্কিতে সামরিক পোষাক পরিহিত একদল বন্দুকধারী তাদের নৌকায়
পাশের জলপথ দিয়ে এসে সটান উঠে পড়ল। দীপ্তাংশু সোচ্চারে বলে উঠলেন, “দয়া করে আপনারা
গুলি চালাবেন না। আমি পুলিকেতের বাসিন্দা, ছেলেমেয়েকে নিয়ে হ্রদে মাছ ধরতে
এসেছিলাম।” কিন্তু তাতে মুস্কিল আসান হল না, দীপ্তাংশুর মুখে কালো কাপড় বেঁধে এক
অজানা গন্তব্যর উদ্দেশ্যে তারা পাড়ি দিল। দীপ্তাংশুর ছেলেমেয়ে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার
করতে থাকল, “অনুগ্রহ করে আমার বাবাকে ছেড়ে দিন।” মিলিটারীর লোকগুলি স্বভাবত:ই কচি-কাচাদের
অনুরোধ-উপরোধে একটুও আমল দিল না।
এরপর যখন
দীপ্তাংশুর মুখ থেকে কালো কাপড় খুলে দেওয়া হল, তখন তিনি দেখলেন, তিনি এক গবেষণাকেন্দ্রে।
সেখানে কি বিষয়ে গবেষণা চলেছে, তা তিনি আঁচ করার আগেই সরকারী পোশাক পরিহিত এক তামিল
ভদ্রমহিলা তাঁকে ডেকে নিয়ে গেলেন এক বড় কন্ফারেন্স রুমে। দীপ্তাংশু বিচলিত হয়ে
সেই ভদ্রমহিলাটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমার ছেলেমেয়ে কোথায়? তাদের আপনারা কোথায় ধরে
নিয়ে গেছেন?” ভদ্রমহিলাটি স্মিত হেসে বললেন, “বিচলিত হবেন না, তারা আমাদের কাছে
সুরক্ষিত আছে। আপনার সঙ্গে আমাদের মিটিং হয়ে গেলেই, আপনি তাদের কাছে পাবেন।” দীপ্তাংশু
আপাত সম্মতি জানালেন, “সারি” মানে ঠিক আছে।
তারপর, কন্ফারেন্স রুমে যাঁদের সাথে দীপ্তাংশুর দেখা হল, তাঁদের মধ্যে প্রধান ব্যক্তিটি তাঁর পূর্ব-পরিচিত। তিনি খানিক বিস্মিত হলেন। ব্যক্তিটি হলেন প্রফেসর সি. নটরাজন। ভামগকে’র মুখ্য বিজ্ঞানী। দীপ্তাংশু জোরালো কণ্ঠ-স্বরে বললেন, “কি ব্যাপার স্যার্। এখানে ভামগকে কি গবেষণা শুরু করল আবার?” প্রফেসর কিছু বলার আগেই তাঁর কন্যা অর্থাৎ সেই তামিল ভদ্রমহিলা ড. রাধিকা নটরাজন খানিক চাপা গলায় বলতে লাগলেন, “দীপ্তাংশু শুনুন। এখানে আমাদের একটা খুবই গোপনীয় প্রজেক্ট্ চলেছে। আমরা কিছু সমান্তরাল বিশ্বের খোঁজ করছি। যেখানে পৃথিবীর মত মানুষের বাসযোগ্য স্থান ও শ্বাস নেওয়ার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বায়ুমন্ডল রয়েছে। প্রফেসরের কাছে এই নিয়ে সুবিন্যস্ত পরিকল্পনা রয়েছে। পৃথিবীর মানুষদের অন্য আরেক বসবাসযোগ্য বিশ্বে পাঠাবার উদ্দেশ্যে, প্রয়োজনীয় মহাকর্ষ-সম্পর্কিত সমীকরণ সমাধান করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। আপনাকে আমাদের এসব বলার কারণ হচ্ছে, আপনি একসময় আমাদের সংস্থায় ছিলেন এবং আপনি একজন দক্ষ মহাকাশযান পরিচালক।” দীপ্তাংশু মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি প্রকাশের সুরে বললেন, “কিন্তু আপনি বোধহয় এটাও জানেন যে আমি এসব অনেকদিন হল ছেড়েছি!” তামিল মহিলাটি কিঞ্চিৎ হেসে বললেন, “মান্নিকাভুম (মানে ক্ষমা করবেন)....আপনি আমাদের সঙ্গে সহমত হলে তবেই আমরা আপনার ছেলেমেয়েকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসব।” দীপ্তাংশু তখন প্রফেসর নটরাজনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবলেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁর দৃষ্টি ঘুরিয়ে, ড. রাধিকাকে তাঁদের পরিকল্পনা আরো বিস্তারিতভাবে বলতে বললেন। রাধিকা তক্ষুনি ‘প্রদর্শন পর্দা’টি চালালেন; সেখানে ভেসে উঠল মহাকর্ষ বল সংক্রান্ত কিছু সমীকরণ এবং তার সাথে ‘মিল্কি ওয়ে’র কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ্কের কক্ষপথ ও গতিবেগ সংক্রান্ত তথ্যাদি।
রাধিকা আরো
বললেন, “আমাদের সৌরজগতের মহাগুরু বৃহস্পতি গ্রহের প্রায় পাঁচ আলোকবর্ষ নিকটে একটি কৃষ্ণগহ্বর
রয়েছে, যেটির নাম ‘বৃহদ্বিবর’; এর ভর সূর্য্যের থেকে প্রায় সহস্রগুণ। কোটি-কোটি
বছর আগে সূর্য্যের মত কোনো এক নক্ষত্রের পতনের দরুণ এটি সৃষ্টি হয়েছিল। কৃষ্ণগহ্বরে
স্থান-কালের ‘সিংগুলারিটি’....”- দীপ্তাংশু রাধিকার কথা কেটে বললেন, “কৃষ্ণগহ্বরের
বিজ্ঞানটা আমি বেশ জানি, আপনি আপনার উপস্থাপনায় এগিয়ে যেতে পারেন!” এতে কিঞ্চিন্মাত্র
বিব্রত না হয়েই রাধিকা তাঁর বক্তৃতা চালাতে থাকলেন, “পিরেচ্চেনেই-ইল্লেই (মানে কোন
অসুবিধা নেই)। ‘বৃহদ্বিবর’-এর কাছে কিছু অস্থির ‘ওয়ার্ম-হোলের’ অস্তিত্ব আমরা সনাক্ত
করতে পেরেছি। ‘ওয়ার্ম-হোলের’ মধ্যে দিয়ে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব; যেমনটি অসম্ভব
ব্ল্যাক-হোলের মধ্যে ‘টাইম-ট্রাভেল’ করা-অর্থাৎ অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ-এর সম্পর্কিত
ঘটনাক্রমের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাওয়া।” দীপ্তাংশু খানিক বিদ্রূপের সুরে বললেন, “ওয়ার্ম-হোল-
বাহ্। মানে একটা পিপীলিকার আপেলের মধ্যের গর্ত দিয়ে এক পাশের বিশ্ব থেকে অন্য
পাশের বিশ্বে চলে যাওয়ার মতো আর কি!” রাধিকা মুচকি হেসে আরো বললেন, “হ্যাঁ, তবে ‘ওয়ার্ম-হোলের’
মধ্যে দিয়ে আমরা পৌঁছে যেতে পারি আরো দুটো সম্ভাব্য বিশ্বে।” দীপ্তাংশু বিস্মিত
হয়ে বললেন, “আরো দুটো?” রাধিকা বললেন, “হ্যাঁ। এছাড়াও আমরা ‘বৃহদ্বিবর’-এর
সন্নিহিত ‘ক্রোররেখ’ গ্রহেও জীবনের সন্ধান করতে চাই। দশ বছর আগে, আমাদের এক মহাকাশ
অভিযান হয়েছিল এবং সেই অভিযানে আমাদের তরুণ বিজ্ঞানী মঞ্জুনাথ সাফল্যের সঙ্গে ‘ক্রোররেখ’
গ্রহে অবতরণ করেন। তিনি আমাদের অনেক তথ্য পাঠিয়েছেন, যেগুলি সেখানে জীবনের সম্ভাবনার
ইঙ্গিতবাহী!” দীপ্তাংশু মাথা নামিয়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলেন। ঠিক সেই সময় প্রফেসর
নটরাজন বলে উঠলেন, “শোন দীপ্তাংশু! তুমি কি এই গবেষণাগারে আসার পথে বিশেষ কিছু লক্ষ্য
করতে পেরেছ?” দীপ্তাংশু বললেন, “হ্যাঁ। এই গবেষণাগারটিতে যে মহাকাশযান নির্মিত হচ্ছে
সেটা একটা পলিমার ক্যাপসুলের আকারে তৈরী।” প্রফেসর নটরাজন বললেন, “ঠিক তাই। মহাকাশের
যে জায়গায় আমরা পৌঁছতে চাইছি, সেখানে যে পেল্লায় মহাকর্ষের আমরা সম্মুখীন হব, তা
সামাল দেওয়ার জন্য এই ধরনের ব্যতীক্রমী আকার জরুরী।” তারপর, গ্রীণ-বোর্ডের দিকে দীপ্তাংশুর দৃষ্টি
আকর্ষণ করে প্রফেসর বললেন, “এদিকে দেখ। এই সমীকরণটা স্পেস-টাইমের অপেক্ষিকতার সাথে
‘কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি’র সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। আমি এই সমীকরণটা প্রায় সমাধান
করে ফেলেছি- আমার আর একটা অনুমান যাচাই করলেই....আর তার জন্য আমার দরকার তোমাকে।” দীপ্তাংশু সমীকরণটা দেখে কিছু একটা অনুধাবন করতে শুরু
করলে, রাধিকা বললেন, “আপনি রাজী থাকলে আপনার সঙ্গে এই মিশনে আমি, আমার সহকারী গৌতম
লাল এবং আমাদের একটি স্বয়ংক্রিয় রোবট ‘যন্ত্ররোরা’ থাকবে।” দীপ্তাংশু রাজী হলেন
বটে, কিন্তু মনে মনে ভাবলেন, কিভাবে তাঁর মা ও ছেলেমেয়েকে এই দুরন্ত মহাকাশ
অভিযানের কথা বুঝিয়ে বলবেন?
দীপ্তাংশু বাড়ী
ফিরে এলেন তাঁর ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে। তাঁর পরিকল্পিত মহাকাশ অভিযানের কথা জানতে
পারলে ছোট্ট অশ্বিকা তাঁর সাথে যথারীতি কথা বন্ধ করে দিল। যদিও মৃণালিণী দেবী ও ঋষি
নিজেদের অবুঝ মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার হাজারো চেষ্টা করলেন। ভামগকে’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা
দেওয়ার আগে দীপ্তাংশু অশ্বিকার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। অশ্বিকা চেঁচিয়ে উঠল, “বাবা
তুমি এখান থেকে চলে যাও এক্ষুণি। আমি তোমার সঙ্গে একটি কথাও বলতে চাই না।” দীপ্তাংশু
খানিক জোর করে তার ছোট্ট হাতদুটি চেপে ধরলেন, “চুপ করে আমার কথাটা শোন বোকা। আমি যেখানে
যাচ্ছি, সেখান থেকে ফেরা হয়তো খুব মুশকিল। যদি ফিরে আসি তবে হয়তো আমার বয়স তোমার
থেকে বছর ত্রিশেক কম মনে হবে। কিন্তু এটা মনে রেখ, আমি যেখানেই থাকি তোমার সঙ্গে
আমার যোগাযোগ থাকবেই। সুতরাং সর্বদা সজাগ থেক।” এই বলে দীপ্তাংশু সেখান থেকে চলে
গেলেন। অশ্বিকা তখন কাঁদতে কাঁদতে তার খেলনাগুলোকে ঘরের দরজায় ছুঁড়তে লাগল, চিৎকার
করে বলল, “বাবা তুমি একটা পাষণ্ড...।”
এরপর দীপ্তাংশু
ছেলে আর তাঁর মাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন ভামগকে’তে, যদিও স্বভাবত:ই মেয়ে তাঁর
সঙ্গে দেখা করতে এল না। দীপ্তাংশু ভামগকে’তে এই অতিদীর্ঘ মহাকাশ-অভিযানের জন্য নিজেকে
ধীরে-ধীরে তৈরী করতে লাগলেন। ‘যন্ত্ররোরা’ রোবট তাঁকে চমকিত করল। রোবটটির সঙ্গে
তাঁর পুরোদমে আলাপ-আলোচনা চলতে লাগল। ‘যন্ত্ররোরা’, যার ডাকনাম ‘রোর’, জানাল তার
সিস্টেম সেটিংসে ৫০% কম্পিউটার সায়েন্সের কারিকুরি, ৩০% অ্যাস্ট্রোনমিকাল ডেটা বিশ্লেষণ-ক্ষমতা।
দীপ্তাংশু কৌতূহল প্রকাশ করল, “তাহলে বাকি ২০%-টা কি?” যন্ত্ররোরা বলল, “স্যার! বাকিটা
রসিকতা করার ক্ষমতা! এই অতিদীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে সবাইকে আমার ইতিবাচক রসিকতার রসে
সিক্ত করে চাঙ্গা রাখাই আমার লক্ষ্য হবে।” দীপ্তাংশু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন,
“হুমম্ রোর! সেটা যে ভীষণ দরকার...।” মহাকাশযান উৎক্ষেপণের দিন দীপ্তাংশুর সঙ্গে প্রফেসর
সি. নটরাজনের কথা হল। প্রফেসর দীপ্তাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বললেন, “দীপ্তাংশু,
তোমার কি মনে হয় না, যে কোথায় কোন অদৃশ্য জগৎ থেকে কেউ তোমাকে এই অভিযানের জন্য বেছে
নিয়েছে- সমস্ত পৃথিবীর মানুষকে বাঁচাবার জন্য।” দীপ্তাংশু কথাটা ঠিক বুঝলেন না, বরং
কঠিন দৃষ্টিতে প্রফেসরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তাঁরা কারা?” এর উত্তর কিন্তু
প্রফেসর দিতে পারলেন না।
মহাকাশ-অভিযান শুরু হল। ২০০ মেট্রিক টন ওজনের অতিকায় ‘ব্রহ্মকমল’
মহাকাশযানে দীপ্তাংশুর সঙ্গে রইলেন ড. রাধিকা নটরাজন, ড. গৌতম লাল, ‘যন্ত্ররোরা’ রোবট
এবং উল্লেখনীয় ভাবে বৃহদাকার শীতল চোঙে সঞ্চিত সহস্রাধিক মানবীয় নিষিক্ত ডিম্বাণু।
সমস্ত পৃথিবীর মানুষদের যদি মহাবিশ্বের অন্য কোনো বাসযোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া
প্রাথমিকভাবে সম্ভব না হয়, তবে ঐ দ্বিতীয় পদ্ধতিটির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মানব উপনিবেশ
গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। যাইহোক, প্রবল গতিতে নিকষ কালো মহাকাশের বুক চিরে উড়ে
চলল ‘ব্রহ্মকমল’। আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী মহাকাশ অভিযানে ‘সময় প্রসারণের’ জন্য
(মানে ধীরে ধীরে সময় পরিবর্তন) তাঁদের ‘অতিদীর্ঘ’ ঘুমের দরকার হল। মাঝে-সাঝে দীর্ঘ
ঘুমের পর তাঁরা উঠে পড়ে নিজেদের মধ্যে পদার্থ-বিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গভীর
আলোচনায় নিমগ্ন থাকতেন। সময় প্রসারণের ব্যাপারটাতে আলোকপাত করতে গিয়ে গৌতম বলেন, “আমরা
যে গতিতে এগোচ্ছি, তাতে ‘ক্রোররেখ’-এ পৌঁছতে আমাদের বয়স খুব একটা না বাড়লেও পৃথিবীতে
আমাদের প্রিয়জনদের বয়স পনরো বছর বেড়ে যাবে।” তখন রোর বলল, “হুমম্! এখানে এক ঘন্টা
পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ বছরের সমান।” এরই মধ্যে রাধিকা জানালেন, “হ্যালো সতীর্থরা! আমরা
যখন ‘অতিদীর্ঘ’ নিদ্রারত ছিলাম, তখন আমাদের কাছে পৃথিবী থেকে কিছু ভিডিও মেসেজ এসে
জমা হয়েছে....।” একে একে সেই বার্তাগুলি ‘ব্রহ্মকমল’-এর ছোট টিভি স্ক্রীনটিতে ভেসে
উঠতে থাকল। প্রথমে এল দীপ্তাংশুর মেয়ের ভিডিও বার্তাটি। দীপ্তাংশু অশ্রু-সজল চোখে
দেখল মেয়ে অশ্বিকা বড় হয়ে উঠেছে। সে এখন ভামগকে’তে প্রফেসর নটরাজনের ছাত্রী। অপেক্ষিকতার
সাথে ‘কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি’র সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টায় সে প্রফেসরকে সাহায্য
করছে এবং তাঁর মা মৃণালিণী দেবী গত
হয়েছেন। অশ্বিকা বলল, “বাবা জানি আমার কোনো কথাই তোমার
কানে পৌঁছচ্ছে না....জেনে রেখ আমি তোমাকে ভালোবাসি আর আমাদের আবার দেখা হবেই.....।”
এখানেই বার্তাটি আকস্মিক ভাবে সে শেষ করল। সর্বশেষে যে বার্তাটি তাঁদের কাছে পৌঁছল
সেটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁরা দেখল অতিবৃদ্ধ প্রফেসর নটরাজন মৃত্যুশয্যায় শায়িত।
তিনি বললেন, “আমি দু:খিত, আমি সমীকরণটার শেষ সমাধান বের করতে পারলাম না। এর জন্য
আমার আরও তথ্য দরকার ছিল, যা কেবল কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরেই পাওয়া সম্ভব। তাই পৃথিবীর
মানুষকে হয়ত অন্য বিশ্বে স্থানান্তকরণের প্রচেষ্টায় আমরা সাফল্য পাব না। সুতরাং কোনো
বসবাসযোগ্য গ্রহ যদি আমরা খুঁজে পাই, তবে সেখানে কৃত্রিম পদ্ধতিতে প্রজননের
মাধ্যমে মানব উপনিবেশ গড়ে তোলার কাজই আমাদের করতে হবে।” এই মেসেজ পাওয়ার পর দীপ্তাংশু
ও তাঁর সতীর্থরা হতোদ্যম হয়ে পড়লেন, তাহলে কি পৃথিবীতে তাঁদের প্রিয়জনেদের বাঁচান
সম্ভব হবে না? অন্তত: প্রফেসরের শেষ কথা তো সেদিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে! এতো এক
প্রকারের প্রতারণা। যিনি একসময় দীপ্তাংশুর মহাকাশবিজ্ঞান অধ্যয়নের প্রেরণা ছিলেন,
তিনি কিভাবে সমীকরণ সমাধানে নিজের ব্যর্থতার কথা গোপন করলেন। দীপ্তাংশুর মনের
মধ্যে তখন শুধু প্রফেসরের সেই কথাটা বারবার খোঁচা দিতে লাগল: “কোথায় কোনো অদৃশ্য
জগৎ থেকে, কেউ তোমাকে এই অভিযানের জন্য বেছে নিয়েছে...।”
যাইহোক, এরই
মধ্যে রোর গণনা করে জানাল, প্রফেসরের ক্যোয়ান্টাম ডেটায় খামতি রয়েছে। ‘ব্রহ্মকমলে’র
ভর প্রায় এক-চতুর্থাংশ না কমালে, ‘ক্রোররেখ’-এ পৌঁছবার আগেই ‘বৃহদ্বিবর’-এর বিপুল
মহাকর্ষের প্রকোপে ‘ব্রহ্মকমল’ ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাবে। দীপ্তাংশু এই সফরের অধিনায়ক
হিসাবে প্রস্তাব দিলেন, ‘ব্রহ্মকমল’ থেকে তিনি একপ্রকার ‘গুলতির’ মতো চালন-কৌশলে নিজেকে
মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত করবেন এবং চলে যাবেন কৃষ্ণগহ্বরের দিগন্তের দিকে- সঙ্গে
নেবেন রোরকে। আর বাকিরা ‘ব্রহ্মকমলে’র মধ্যে থেকে নির্ধারিত কক্ষপথ অনুসরণ করে বৃত্তাকার
ওয়ার্ম-হোলের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবেন ‘ক্রোররেখ’ গ্রহে, সেখানে গড়ে তুলবেন নব মানব
উপনিবেশ। রাধিকা দীপ্তাংশুর এই প্রস্তাবে সম্মত হলেন না। তিনি কিছুতেই তাঁদের এক
অপরিহার্য ও অতি গুরুত্বপূর্ণ সফরসঙ্গীকে এইভাবে নিশ্চিৎ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে
চাইছিলেন না। দীপ্তাংশু তবুও তাঁর সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি রাধিকাকে বিদায়-বেলায় বলে
গেলেন, “কাবনী (মানে শুনুন)রাধিকা! আমি আপনার বাবার মৃত্যুতে শোকাহত। কিন্তু আমি
আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার কন্যাটিকে প্রাণাধিক ভালোবাসি। তাই যে বিশ্বলোকেই আমি
থাকি না কেন, সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তার কাছে আমি পৌঁছে যাব।” এটা বলার মুহূর্তে হঠাৎ
ব্রহ্মকমলের চারপাশ থেকে এক অত্যদ্ভুত তীব্র আলোর শিখা এসে স্পর্শ করল। রাধিকা বললেন,
“আপনি ঠিকই বলেছেন। এই আলো তাঁদেরই দ্যুতি, অভ্রভেদী রথের ধ্বজা উড়িয়ে তাঁরা
ভ্রাম্যমান। ঐ ওয়ার্মহোল তাঁদেরি সৃষ্টি। আপনার সঙ্গে আবার আমার নিশ্চয়ই দেখা হবে-
নতুন কোনো গ্রহে, সময়-অক্ষের নতুন কোনো বিন্দুতে। আর মনে রাখবেন ‘বৃহদ্বিবরে’র চরম
মহাকর্ষ বল- আপনার ফিরে আসতে আসতে পৃথিবীতে আরো অর্ধশতাব্দী পার করে দেবে কিন্তু।”
দীপ্তাংশু ঘাড় নাড়লেন, “আচ্ছা! বিদায়....আবার দেখা হবে।”
এরপর দীপ্তাংশু রোরকে নিয়ে বিরাট কৌশলে ‘ব্রহ্মকমলে’র একটি অংশকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে এগিয়ে চললেন ‘বৃহদ্বিবরে’র দিগন্তের অভিমুখে। কিছুপথ আাসার পর প্রবল মহাকর্ষের প্রকোপ তিনি অনুভব করলেন; তাঁর অক্সিজেন মাস্ক ও স্পেস-জ্যাকেট ছাড়া বাকি সব জ্বলে ধ্বংস হয়ে গেল। রোরকে তিনি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে হারিয়ে ফেললেন। প্রবল কম্পনের কারণে তিনি বেহুঁশ হলেন, মহাকর্ষ তাঁকে আরো ভিতরে টেনে নিয়ে চলল। কিছুক্ষণ পর তাঁর জ্ঞান ফিরলে দেখলেন, তিনি অসংখ্য বৃহদাকার পরস্পর-সংযুক্ত ঘনকের মধ্যে আবদ্ধ। তিনি রোরকে ট্রান্সমিটার দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করলেন, “রোর, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? ওভার্।” কিছুক্ষণের মধ্যেই কোনো এক প্রান্ত থেকে রোরের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “হ্যাঁ! পাচ্ছি...আপনি দেখছেন সময়ও এখানে একটা মাত্রা। ওভার্।” দীপ্তাংশু সেই বৃহদাকার ঘনকগুলির বাহু-বরাবর ‘উপর-নীচ’ ‘ডাইনে-বাঁয়’ করতে লাগলেন, তিনি দেখতে পেলেন এক-একটি ঘনকে তাঁর ঘরের ছবি, সেখানে তাঁর ও ছোট্ট অশ্বিকার বিদায়-মুহূর্তের ঘটনাটি। তিনি এবার ঘনকগুলির বাহু-বরাবর ক্রমাগত ডানদিকে এগোতে লাগলেন, এবার দেখলেন তাঁর ঘরের বর্তমান মুহূর্তের ছবি, সেখানে সাবালিকা অশ্বিকা পদার্থবিদ্যার সমীকরণটি সমাধানের চেষ্টা করছে। অশ্বিকার চাই শুধু কৃষ্ণগহ্বরের ভিতরের ক্যোয়ান্টাম ডেটা, সেটা হলেই প্রফেসরের অসমাপ্ত সমাধান সে বের করতে পারবে আর ‘ভামগকে’ পৃথিবীর সব মানুষকে অন্য বসবাসযোগ্য বিশ্বে স্থানান্তরিত করতে সক্ষম হবে। দীপ্তাংশু রোরকে

এদিকে
দীপ্তাংশুর ক্যোয়ান্টাম তথ্য স্থানান্তরীকরণ সমাপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই কৃষ্ণগহ্বরের
মধ্যের সেই ঘটনাসমৃদ্ধ ঘনকগুলি কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপরের ঘটনা আর দীপ্তাংশুর
মনে নেই। চোখ খুললে তিনি দেখলেন, তিনি কোনো এক অজানা গ্রহের হাসপাতালের বিছানায়
শায়িত। সেই হাসপাতালের নার্সকে তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কোথায়?”
নার্সটি বললেন, “আপনি এখন অশ্বিকা গ্রহাণুতে। আপনার ‘পার্থিব’ বয়স এখন ১২৮ বছর!” দীপ্তাংশু
এবার মুচকি হাসলেন, কারণ তিনি কৃষ্ণগহ্বরে সময়-প্রসারণের ব্যাপারটি আগে থেকেই জানতেন;
বললেন, “অশ্বিকা গ্রহাণু?” নার্সটি এবার বিস্তৃতভাবে বললেন, “হ্যাঁ এই গ্রহাণুটি আপনার
কন্যার নামে নামাঙ্কিত। আপনাকে ভামগকে’র মহাকাশচারীদের দল ‘বৃহদ্বিবরে’র কাছাকাছি কোনো
এক স্থান থেকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে এসেছেন। তবে আপনার মেয়েকেও এখানে নিয়ে আসা
হয়েছে, তিনি খুবই অসুস্থ- বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। কিছুসময় পর আপনাকে অশ্বিকার
কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।”
তারপর এল সেই
অশেষ আনন্দের মুহূর্তটি: বাবা দীপ্তাংশুর সঙ্গে তাঁর কন্যা অশ্বিকার আবার দেখা হল।
মুমূর্ষু বৃদ্ধা অশ্বিকার সামনে এসে দাঁড়ালেন তার বাবা- যাবার সময় যেমনটা সে
দেখেছিল ঠিক সেরকমই-বয়স বোধহয় বাড়েনি একটুও। সে সজল নয়নে জিজ্ঞাসা করল, “কেমন আছ
বাবা?” এটা শোনামাত্র অশ্রুসিক্ত দীপ্তাংশু তাঁর মেয়ের হাত চেপে ধরে বললেন, “আমি ঠিক
আছি।” তারপর কিছুক্ষণ বাবা-মেয়ের অনেকদিনের জমা কথার কিছুটা হল বটে, কিন্তু ক্লান্ত
হয়ে অশ্বিকা ঘুমিয়ে পড়ল। দীপ্তাংশু হাসপাতালের ঘরটি থেকে বেরিয়ে এলেন।
তারপর সেদিন
পৃথিবীতে তাঁর ঘরের মতো হুবহু এক ঘরের বারান্দায় বসে বাঁক খেয়ে যাওয়া অদ্ভুত এক
দিগন্তের দিকে তাকিয়ে তিনি গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, এই যে ‘ওয়ার্ম-হোলের’
সৃষ্টি; কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে পঞ্চমাত্রাসম্পন্ন ঘনকে আবদ্ধ হয়ে তাঁর পরিবারের ঘটনাবলীর
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতে ‘সময়-ভ্রমন’; ও সেখান থেকে তাঁর এভাবে বেঁচে অশ্বিকাগ্রহে
চলে আসা, এ সব কিছুই ‘তাঁরাই’ নিয়ন্ত্রণ করেছেন, আমরা যাঁদের অসীম অনন্ত শক্তি বলে
মনে করে থাকি। তাঁদেরকে অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন সেই সর্বশক্তিমান ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর
বললে বোধহয় ভুল হবে না। প্রফেসর এঁদেরই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এঁরাই তো একাধারে কারিগর
বিশ্বকর্মা-অতি উন্নত প্রযুক্তিবিদ্-যাঁরা দীপ্তাংশুকে বেছে নিয়েছেন মুমূর্ষু
পৃথিবীর অধিবাসীদের বাঁচাতে, ‘ওয়ার্ম-হোলের’ মধ্যে দিয়ে এক নতুন বিশ্বের সন্ধান দিয়ে।
দীপ্তাংশু আবার উঠে পড়লেন, পরবর্তী মহাকাশ অভিযানের জন্য। ড. রাধিকা ও গৌতম লাল তো
তাঁর জন্য প্রতীক্ষা করে আছেন ‘ক্রোররেখ’ গ্রহে, সেখানে নতুন মানব উপনিবেশ তৈরীর
কাজ হয়তো তাঁরা শুরুও করে দিয়েছেন! নতুবা তাঁরা দীপ্তাংশুর প্রতীক্ষায় এক অতিদীর্ঘ
নিদ্রায় রত।।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment