1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, September 28, 2019

পেলিং,একাল-সেকাল


ডাঃ বিশ্বজিত ব্যানার্জি
পেশায় চিকিৎসক
নেশায় ফটোগ্রাফার ভ্রমণপাগল
      ১৯৯৬ সাল। সিকিমের নতুন গ্রামের সন্ধান পেলো চিরপথিক তরুণ দম্পতি। কেউই প্রায় শোনেনি জায়গাটার নাম,পেলিং। খুব  ঠান্ডা,থাকার জায়গা বলতে একমাত্র মুদিখানার দোকান লাগোয়া  ঘর ভাড়া।কোনো হোটেল নেই।অত্যুৎসাহী ছেলেমেয়েদুটো ক্ষেপে উঠলো...যেতেই হবে।কারণএতো কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার জায়গা নাকি আর নেই।ইংরেজিতে বললে 'Nearest motorable road to Kanchenjunga'.. 
কিন্তু সমস্যা একটাই... 
তাদের একটি ছানা জন্মেছে তদ্দিনে...বয়স১০মাস।কিন্তু পাগলদুটোকে থামাবে কেবাড়ির লোক বললো 'তোদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে!!!এই দুধের শিশুকে নিয়ে অচেনা পাহাড়ে,তাও আবার হোটেল নেই!!'
পাশের বাড়ির জেঠু বললো 'বাচ্চার নিউমোনিয়া হলে কি হবে?
ডাক্তার দম্পতির সপাটে উত্তর 'পৃথিবীর যতো বাচ্চার নিউমোনিয়া হচ্ছে সবাই বুঝি পেলিং ফেরত?' তো সবাই হাল ছেড়ে দেবার পর একদিন দুগ্গা দুগ্গা বলে ট্রেনে উঠে পড়লাম।সঙ্গে ব্যাকপ্যাক,ক্যামেরা আর দুধের কৌটো। রাতটা ট্রেনে নির্বিঘ্নে কাটলো,শুধু তিনঘন্টা অন্তর দুধের শিশুকে দুধ খাওয়ানো ছাড়া। তারপর নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন,দুবার শেয়ারের জীপ পাল্টে,জোরথাঙে পেটপুরে মোমো আর চৌবাচ্চাটাকে সেরেল্যাক খাইয়ে পেলিং পৌঁছতে বিকেল।
ছবি ঃ ডাঃ বিশ্বজিত ব্যানার্জি
চারদিক নিঝুম,পাতা পড়ার শব্দ,ঝিঁঝির ডাক আর একা পরে থাকা হেলিপ্যাডের মাঠ।ঘরের টিমটিমে আলোয় মনটা একটু দমেই গেলো... আসাটা ঠিক হলো তোরাতের খাবার বলতে রুটি-সবজি।শিশুটার সেই দুধ আর সেরেল্যাক।দিনের শেষে ঘুমের দেশে পৌঁছতে সময় লাগলো না। ঘুম ভাঙলো কান্নার আওয়াজে,সুইচ টিপেও লাভ হলো না।আলো জ্বললো না।অগত্যা লাইটারের আগুনে দুধ গুলে বাছাকে শান্ত করা।ঘড়িতে ভোর সাড়ে চারটে।মা চললো দুধের বোতল ধুতে বারান্দায়।হঠাৎ উত্তেজিত চিৎকার...'তাড়াতাড়ি এসোদেখে যাও'
ধড়মরিয়ে বারান্দায় গিয়ে আমিও স্তব্ধ..চোখ সরে না,পা নড়ে না।
এ আমি কি দেখছি?সত্যি দেখছি?নাকি স্বপ্ন?এতো বিশালত্ব?এ তো ভগবান!!
ছবি - ডাঃ বিশ্বজিত ব্যানার্জি

ভোরের আলো ফোটার আগে একটা আভা থাকে,সূর্যের..তাতে দীপ্যমান নগাধীরাজ হিমালয়,আমার ভগবান কাঞ্চনজঙ্ঘা। মৌসুমী দেখি অপলক দৃষ্টিতে স্তব্ধবিড়বিড় করছে...ভাগ্যিস এলাম,ভাগ্যিস এলাম।
সেই প্রথম দর্শন... তারপর কতবার,কত জায়গা থেকে,কতভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখেছি.. কিন্তু সেদিনের সেই স্মৃতি আজও অমলিন।
আজ আবার আমরা তিনজন পেলিংএ।সেদিনের সেই তরুণ ডাক্তারের মাথায় টাক,মৌসুমীর চুলেও হালকা পাক ধরেছে.. বাচ্চাটা আজ  তরতাজা তরুণী,পেলিং আজ হোটেলের জঙ্গল।
ছবি ঃ ডাঃ বিশ্বজিত ব্যানার্জি
কিন্তু কাঞ্চনজঙ্ঘা আজও স্বমহিমায় বিরাজ করছেন,আজও কেউ না কেউ তাঁকে প্রথম দেখে হতবাক হয়আজও পেলিংএ সন্ধ্যা নামে ঝিঁঝিঁর ডাকে।



লেখক ঃ ডাঃ বিশ্বজিত ব্যানার্জি
biswajit67@gmail.com

12 comments:

  1. সময়র সঙ্গে অনেক কিছু পাল্টেছে, কিন্তু আশা করছি পাগলদুটির পাগলামি একই থেকে গেছে,শুধু দলে আরেকটি পাগল বেড়েছে। 😊

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ, সে আর বলতে!!!!!

      Delete
  2. খুব ভালো। এরকম আরো চাই....

    ReplyDelete
  3. Ei pagol( Vromon) er paglami, dekhte porte r feel korte besh valo lage. R o paglami r opekhhai thaklam
    Kutub

    ReplyDelete
    Replies
    1. This comment has been removed by the author.

      Delete
  4. Ki apurbo...puro byaparta jeno chhobir moto choker shamne bhaschhe...

    ReplyDelete
  5. ফেরারী মনটাকে কনক্রিটের জঙ্গলে বাঁচিয়ে রেখে, আরো নতুন নতুন জায়গার হদিশ দাও।

    ReplyDelete
  6. Khub Sundar. Ei e-patrika amader onek-ke kache tene never. Paritosh Roy

    ReplyDelete