1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Saturday, September 28, 2019

চক্ষুদান


ছবি-আন্তর্জাল









"....পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব
প্যারামাউন্ট হলে
মাঝে মাঝে মুখ
বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে……"   
-        দাদাবাবু, হল তোমার? কিসব পড়ছ, কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। এদিকে যে বেলা গড়িয়ে এলো, রান্না চাপলো না এখনও!
-        আহ্‌, থামবি তুই! দিলি তো সমস্ত তাল ছন্দ ঘেঁটে?
-        তোমার এ ভারী আজব বায়না দাদবাবু। রোজ সকালে একি ফাঁপরে পরতে হয়গো ঠাকুর!
-        থামবি তুই? চুপ করে শেষটুকু শোন।
-        তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদবাবু, এসব মাথামুণ্ডু কিছুই আমি বুঝছিনা। ওসব কবিতা-তবিতায় পেট ভরবেনা বুঝলে। আমি বরং যাই।
ধুত্তোর! গাধা পিটিয়ে কি আর ঘোড়া করা যায়!- এই বলে কবিতার বইটা বন্ধ করে টেবিলের ওপর শব্দ করে রেখে খানিকটা রাগ উগরে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিনয়বাবুর পিছুটান বলতে একমাত্র মাস্টারিটাই সম্বল ছিল। ছাত্র-ছাত্রীরাই তার কাছে সন্তানসম ছিল। তার ব্যবহার আর নামের মধ্যে চিরকালই ভারসাম্য বজায় থাকত। চাকরী জীবনের অবসানের পর বিনয়বাবুকে এক অন্যরকম নেশা পেয়ে বসে। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরোনো প্রায় বন্ধ হতে থাকে ধীরে ধীরে। ঘরময় খালি কবিতা-বই। আর মানুষ বলতে দুজন, বিনয়বাবু নিজে আর কাজের মেয়ে বিমলা। বিমলা মানুষটাকে শ্রদ্ধা করে। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও সেভাবে প্রকাশ করতে পারেনা। মানুষটার গলা সে মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে। তবু সে কাজ ফেলে বসে থাকার মেয়ে মোটেই নয়। মাঝে মাঝে একরকম প্রায় জোর করেই বিনয়বাবুকে থামিয়ে দিতে হয় তাই।
বিমলা পিছুটানহীন। আগে তার পরিচয় ছিল, সে একজন চোর। মানিব্যাগ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় বিনয়বাবুর হাতে, এক মুহূর্ত ভেবে পুলিশে না দিয়ে নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসেন তিনি। বিমলা যেদিন থেকে এই বিনয়বাবুর বাড়ীর কাজটা ধরেছে সেদিন থেকেই লোকটার প্রতি এক অদ্ভুত টান অনুভব করে, লোকটাকে দেখলে মায়া হয় তার। লোকটার কোনো ঝামেলা নেই। চাইলে কাজে অনায়াসে ফাঁকি দিতেই পারে বিমলা, কিন্তু সে তা পারেনা। বিমলা এখানে দুবেলা খেতে পায়, সাথে মাইনে, আশ্রয় আর অগাধ বিশ্বাস। বিনয়বাবুর বাড়ীর সর্বত্র বিমলার অবাধ যাতায়াত। মাঝে মাঝে বিমলা নানারকম আব্দার করে বসে বিনয়বাবুর কাছে, আর বিনয়বাবু কখনোই তাকে নিরাশ করেননা।
দুপুরবেলায় টেবিলে খাবার দিতে দিতে বিমলা জানালো তার একটা দিন ছুটি লাগবে। বিনয়বাবু কারণ জানতে চাইলে বিমলা বলল-
ওসব কারণ-টারণ জানাতে পারবোনা। রান্না করে রেখে যাব ফ্রিজে। তুমি শুধু একটু গরম করে খেয়ে নিয়ো ক্ষণ। একটা দিনের তো ব্যাপার!
বিনয়বাবু আর কিছু বললেন না। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে ঘরে ঢুকে গেলেন। বিমলা যাবার আগে বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলে গেল- ওষুধগুলো সব মনে করে খেয়ে নিওগো দাদাবাবু।
গতকাল একটাও কবিতার বইয়ের পাতা উল্টে দেখেননি বিনয়বাবু। মন লাগছে না। সকাল থেকে রাত, পুরো সময়টাই তার বড় পানসে লাগছে। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে টেবিলের ওপর থেকে চশমা নিতে গিয়ে বিনয়বাবু অবাক, সামনে একটা নতুন রেডিও! দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে বিমলা বলল- কি দাদাবাবু, বলেছিলাম না আমি থাকতে তোমার মহালয়া শোনা কেউ আটকাতে পারবে না, দেখলে তো কেমন চমকে দিলাম!
বিনয়বাবু সত্যিই চমকে গেছেন, তিনি যে অন্তত একজন বিমলার চক্ষুদান করতে পেরেছেন! এবার তবে প্রতিমার প্রান প্রতিষ্ঠার পালা…
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ “পাগলী তোমার সঙ্গে”- জয় গোস্বামী।

লেখিকা :ইন্দ্রানী দলপতি


3 comments:

  1. আহঃ! কি অসাধারণ অনুভূতিপূর্ণ লেখা।😌

    ReplyDelete