1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 1, 2020

স্মোকার



                                                                                              ...মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী
          ওপাশ থেকে প্রায় ধমকে উঠল মৃন্ময়ী!
-ফোন ধরছিলে না কেন?
-সরি, টের পাইনি, রাস্তায় গাড়িঘোড়ার এত শব্দ!
-ট্রেনে উঠেছ?
-না, এখনো এসে পৌঁছায়নি ট্রেন। ঘণ্টাখানেক দেরি হবে বলল স্টেশন মাস্টার
-কেন?
-আমি ঠিক জানি না
-সিগারেট খাচ্ছ?
-সিগারেট আর আমি? মজা করছ?
-আচ্ছা, রাখছি। পৌঁছে ফোন করবে
-আলবাৎ করব
          বিরান স্টেশন। কোথাও কেউ নেই আমি ছাড়া। শীতের রাত। মফস্বলের স্টেশন। কিছু আন্তঃনগর ট্রেন যে এখানে থামে, ভরসার কথা! নইলে এক শহর থেকে আরেক শহরে ভ্রমণ করা আমার মতো মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হতো
শীত বেড়েছে। আমি কানটুপিটা টেনে আরেকটু নিচে নামালাম। স্টেশনের সঙ্গে লাগোয়া একটি টি স্টল রয়েছে স্টলের সামনে বেঞ্চ পাতা যাত্রীদের জন্য। আমি ব্যাগটা বেঞ্চে রেখে বসলাম পাশে। টি স্টলের দিকে তাকালাম একবার। প্রথমেই চোখে পড়ল সামনের দিকে সাজানো সারি সারি সিগারেটের প্যাকেট। কেমন হয় একটা ধরালে? মৃন্ময়ী মানা করেছে বলেই কি? নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের চিরন্তন আকর্ষণ?
          ভারী জ্যাকেট পরা এক ভদ্রলোক উদয় হলো হঠাৎ করেই। টি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে ভীষণ পুরুষালী গলায় বলল, মার্লবোরো দাও একটা
ঠোঁটে সিগারেট ঠেকিয়ে আমার পাশে বসল সে। বলল, লাইটার হবে ভাই?
দোকানেই লাইটার ছিল। আমাকে কেন জিজ্ঞেস করা কে জানে
আমি পকেট থেকে লাইটার বের করে দিলাম। লোকটা ঠোঁট এগিয়ে ধরিয়ে নিল সিগারেট। চুপচাপ ফুঁকে যেতে লাগল বসে বসে। আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম তার দিকে
-হ্যালো ভাই। আমি জামশেদ। আপনি?
ভদ্রলোক কোন তাড়া দেখাল না হাত ধরার। বুক ভরে ধোঁয়া নিয়ে ধীরস্থির ভাবে ছাড়ল। তারপর ধরল আমার বাড়িয়ে ধরা হাত। ভরাট কণ্ঠে বলল, জুলফিকার
-জুলফিকার ভাই। আমি সিগারেট খাই না। খাইনি কখনো জীবনে
আমার দিকে ভাবলেশ দৃষ্টিতে চাইল একবার সে, তারপর নির্বিকার ভঙ্গীতে বলল,
-আপনার কাছে অবাক লাগল না ব্যাপারটা?
-কোনটা?
-এই যে আমি সিগারেট খাই না!
-না তো!
-তাহলে আমার কাছে লাইটার এলো কি করে?
-আসতেই পারে
-কেন? কি কারণে?
          জুলফিকার ঢুলু ঢুলু চোখে আমার দিকে তাকাল। সাধারণত আলোচনার এই পর্যায়ে এসে সবাই বিরক্ত হয়। অপরিচিত মানুষের সাথে বেহুদা কথা প্যাঁচানো কেই বা পছন্দ করে! তবে জুলফিকারের চেহারা দেখে বোঝা গেল না সে আসলেই বিরক্ত হয়েছে কিনা। আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গীতে বলল, কে জানে! হয়তো মাত্র কিনেছেন দোকান থেকে, তাই
-উহু, লাইটারটা দেখেছেন আপনি। পুরনো লাইটার। অর্ধেকটা খালি। তার মানে বহুল ব্যবহৃত। সম্ভাব্য কারণ হতে পারে আমি একজন ধূমপায়ী। কিন্তু তা সত্য নয়। আমি ধূমপায়ী নই। সেক্ষেত্রে আমার কাছে লাইটার থাকার ব্যাখ্যা কি হতে পারে, বলুন তো জুলফিকার ভাই!
-আপনিই বলে দিন না
-অনুমান করার চেষ্টা করুন। এমনিতেই এক ঘন্টা স্টেশনে বসে থাকতে হবে শুধু শুধু, আমার ধূমপানের গল্পটা করা যাক এই সময়ে
জুলফিকার সিগারেটে শেষ টান দিয়ে পা দিয়ে পিষে ফেলল সিগারেটটা। বলল, ধূমপানের গল্প?
-হ্যা, ধূমপান নিয়ে আমার একটা গল্প আছে
-আমি আগ্রহ বোধ করছি না
-আহা ভাই, রাগ করলেন! আচ্ছা যান, আরেকটা সিগারেট খাওয়াচ্ছি আমি আপনাকে। আমি আসলে গল্পবাজ মানুষ। গল্প করতে না পারলে হজম হয় না পেটের ভাত। এক ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকলে মরেই যাব
জুলফিকারকে একটু নরম মনে হলো এবার। বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। এমনি শুনছি আপনার গল্প। সিগারেট খাওয়াতে হবে না
-থ্যাংক্স ভাই। এবার তাহলে অনুমান করুন কেন আমার কাছে লাইটার আছে। শ্রোতার অনুমান শুনলে গল্প বলার আগ্রহ বেড়ে যায়
-আচ্ছা। এখানে অনুমান করার কিছু নেই আসলে। একটু আগে আপনি ফোনে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। তাই না? তিনি আপনাকে সিগারেট খেতে নিষেধ করেছে। আপনি সিগারেট না খাবার কথা বলেছেন, শুনেছি আমি পাশ থেকে। তার মানে আপনি সিগারেট খান এবং আপনার স্ত্রী সেটা পছন্দ করে না। সেক্ষত্রে আপনি আমাকে মিথ্যে বলেছেন যে, আপনি সিগারেট খান না
-বাহ, বেশ ডিডাকশন ক্ষমতা আপনার! তবে ভাই, আমি আসলেই সিগারেট খাই না। কিন্তু নিজের কাছে লাইটার রাখি। তাই স্ত্রী সন্দেহ করে আমি খাই। তার সন্দেহ অমূলক
-কেন রাখেন তাহলে লাইটার?
-সেটা জানতে হলে আপনাকে আশরাফ ভাইয়ের গল্প শুনতে হবে। শুনবেন?
-জ্বী, বলুন
-ওয়েল, গল্পটা খুব আনইউজাল। শুনলে আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। আমি আপনাকে বিশ্বাস করতে জোরাজুরিও করব না। তবে শুনে দেখুন। ইন্টারেস্টিং গল্প
-আমি শুনছি
-ধন্যবাদ। আশরাফ ভাই ছিল আমার কলিগ। আমি আগে একটা বিদেশী ফার্মে কাজ করতাম। মস্ত অফিস। অসংখ্য কিউবিকল। আমার পাশের কিউবিকলেই আশরাফ ভাই বসতেন। ভীষণ ধূমপায়ী ছিলেন ভদ্রলোক। যেন জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। সারাক্ষণ ঠোঁটে সিগারেট ধরত। আমার পাশেই বসত বলে খুব কটু গন্ধ এসে লাগত নাকে। আমি সারাজীবনে কখনো সিগারেট ছুঁইনি। কাজেই আমার কাছে খুব বাজে লাগত ব্যাপারটা। আমি প্রথমে ওনাকে রিকোয়েস্ট করলাম অফিস টাইমে ধূমপান না করতে। উনি আমলেই নিলেন না। আমি কমপ্লেইন করলাম বসের কাছে। কিন্তু তিনি বসের বেশ প্রিয় পাত্র এবং কাজেও আমার চেয়ে অনেক বেশি চৌকস, তাই বস এ নিয়ে গা করলেন না। এমনিতেও আমাদের অফিসে ধূমপায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই আমার কথা ধোপে টিকল না কোথাও। এক বছর চাকরী করলাম আমি সে অফিসে। এক রাতে আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। সেদিন রাত হয়ে গিয়েছিল কাজ করতে করতে। শীতকাল ছিল, এমনিতেও তাড়াতাড়ি রাত নামে। অফিসের অনেকেই চলে গিয়েছে সেদিন ততোক্ষণে। পার্কিং লটে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে আশরাফ ভাই। আমাকে দেখে কাছে ডাকলেন তিনি। বয়সে আমার চেয়ে তিনি বড় হবেন বেশ। তাই তুমি করে বলতেন কিন্তু ঐদিন তুই তুকারি শুরু করলেন। বললেনএই শালা বানচোত! তোর প্রবলেম কি বলতো! রোজ রোজ শুয়োরের বাচ্চা তুই আমার নামে নালিশ করে বেড়াস এর কাছে ওর কাছে বিড়ি খাই বলে! পুরান ঢাকার ছেলে আমি। মেরে হাত পা গুড়ো করে দেব। তার কথা শুনে মেজাজটা বিগড়ে গেল আমার। গায়ের শক্তি দিয়ে চড় দিলাম তাকে। চড় খেয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলেন তিনি ছিটকে। কিসের সাথে যেন পা বেঁধে গেল। মাটিতে পড়ে গেল দেহটা। পার্কিং লটের একটা অংশে মেরামতের কাজ চলছিল। অনেক রড বিছানো ছিল এখানে ওখানে। আশরাফ ভাইয়ের মাথা একটা রডে গিয়ে লাগল। জ্ঞান হারালেন তিনি এবং গলগল করে রক্ত বেরোতে লাগল
-বলেন কি! সর্বনাশ!
-হ্যা, আমি ভড়কে গেলাম। আশরাফ ভাইয়ের গাড়ি ছিল। আমার ছিল না। তার পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে আমি তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। ড্রাইভিং জানতাম। সাঁই সাঁই করে গাড়ি চালিয়ে যেতে লাগলাম সবচেয়ে কাছের হাসপাতালের দিকে। জায়গাটা একটু নির্জন ছিল। ফাঁকা রাস্তায় তুমুল গতিতে চালাতে লাগলাম গাড়িটা। হঠাৎই একটা চিন্তা অসার করে দিল আমার দেহ। আশরাফ ভাই বেঁচে আছে তো? গাড়ি থামালাম। পালস দেখলাম তার। নেই। নাকের সামনে আঙুল নিয়ে গেলাম। না, নিঃশ্বাস চলছে না। বুকে কান পেতে হার্টবিটও পেলাম না। মৃত সে। ভয়ের একটা স্রোত নেমে এলো আমার মেরুদন্ড দিয়ে। তবে দ্রুত মাথা কাজ করল। ধরা পড়া যাবে না। মার্ডার কেসে ফাঁসতে চাই না। লাশটা লুকিয়ে এখান থেকে সরে পড়া যায়। কেউ দেখেনি পার্কিং লটের ঘটনাটা। আর আমার কোন মোটিভ নেই তাকে খুন করার। শুধু সিগারেট খায় বেশি, এ কারণে তো কেউ আর কাউকে খুন করে না। পুলিশ সন্দেহ করবে না আমাকে। প্ল্যান করে ফেললাম। লাশ লুকানো ঝামেলার, গাড়িটা বরং জঙ্গলে রেখে আসি। কাছেই একটা বন আছে ছোটখাট। গাড়ি চালিয়ে সোজা বনে ঢুকে পড়লাম। স্টিয়ারিং সহ অন্যান্য সব জায়গা থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মুছে ফেললাম সাবধানে তারপর উর্ধ্বশ্বাসে  দৌড় লাগালাম বাসার দিকে
-এক মিনিট, আপনি বলতে চান, আপনি একজন খুনী? খুন করেছেন আপনি?
-জানি না।      
-অর্থাৎ?
-পুরোটা শুনুন, বুঝবেন
-বলুন।                          
-আমি খুব স্বাভাবিক রইলাম বাসায় গিয়ে। আমি নিজেই অবাক হলাম নিজের শান্ত থাকার ক্ষমতা দেখে। পরদিন অফিস গেলাম আবার। নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলাম। পাশের ফাঁকা কিউবিকলের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কলজে শুকিয়ে গেল। কতক্ষণ লাগবে জানাজানি হতে যে আশরাফ ভাই নেই! আমি মাথা ঠান্ডা করে কাজে ডুবে গেলাম। দশ মিনিট পেরিয়েছে বোধহয়। হঠাৎ খসখস আওয়াজ শুনলাম আশরাফ ভাইয়ের কিউবিকল থেকে। পার্টিশন পেরিয়ে মাথা উঁকি দিলাম সাবধানে। যা দেখলাম, কেঁপে উঠল অন্তরাত্মা তাতে। সেখানে বসে আছে খোদ আশরাফ ভাই। একদম স্বাভাবিক সে। কোথাও আঘাতের চিহ্নমাত্র নেই শরীরে। পরিপাটি করে আঁচরানো চুল
-মাই গড! কি বলছেন? আসলেই?
-হ্যা, আশরাফ ভাই আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। চোখাচোখি হতে হাসলেন। আমার চেহারা রক্তশূন্য হয়ে গেল, ভীষণ ভয় পেলাম। মাথা কাজ করছিল না। আশরাফ ভাই মরেননি গত রাতে? তাহলে আমাকে বলছেন না কেন কিছু? ভয়ে ভয়ে কাজ করতে লাগলাম আমি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার। এ ব্যাপারে কিছুই বললেন না তিনি সারাদিনে সব কিছু খুব স্বাভাবিক ভাবেই করলেন। সারাদিক ঠিক ঠাক থাকলেন। প্রতিদিনের মতো হাসিঠাট্টা করলেন সবার সাথে। পরদিনও একই ঘটনা ঘটল। আশরাফ ভাই অফিসে এলেন এবং স্বাভাবিক ভাবে কাজ করে গেলেন। এক সপ্তাহ কেটে গেল। কিছুই হলো না। সবকিছু খুব স্বাভাবিক যেন, কোথাও একচুল অসামঞ্জস্য নেই। উহু, ভুল বললাম। একটু অসামাঞ্জস্য ছিল। সেটা হলো সিগারেট। আশরাফ ভাই আর সিগারেট খেলেন না কখনোই। এবং আগের রাতের ব্যাপারেও কিছুই বললেন না যেন কিছুই হয়নি আমাদের মাঝে। সেই রাতে কি হয়েছিল কখনোই জানতে পারিনি আমি
-আপনি ঠিকই বলেছেন জামশেদ ভাই, অবিশ্বাস্য গল্প। তবে একটা ব্যাখ্যা দাড় করানো যায়। সে রাতে আসলে আশরাফ মরেনি। আঘাত পেয়ে জ্ঞান ফিরেছে তার, এবং ফিরে গেছে বাসায়। হয়তো আঘাত পাবার কারণে সাময়িক এমনেশিয়াতেও পেয়ে বসেছিল। ভুলে গেছে আপনার সাথে ঝামেলার কথা। কিংবা আপনাকে ঘাটাতে সাহস পায়নি আর
-ভাল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা শুধু একটাই
-কি?
-আমি বেশিদিন মানসিক চাপ সহ্য করতে পারিনি। সেই ঘটনার ঠিক ১১ দিন পর আমি আবার খুন করি আশরাফ ভাইকে। সেদিনও রাত হয়েছিল। অফিস থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে আসতেই পেছন থেকে একটা নায়লনের রশি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরি আমি তার। সে মরেছে নিশ্চিত হতে পালস পরীক্ষা করি, তারপর তার লাশ নিয়ে যাই বনে। বনের ভেতর একটা পুরনো ডোবা আছে। লাশটা ভারী কিছু রডের সাথে ব্যাগে ভরে সেই ডোবায় ফেলে আসি
-সর্বনাশ!
-হ্যা, এবং পরদিন অফিসে গিয়েও দেখি সেই একই অবস্থা। পরিপাটি, হাসিমাখা চেহারা আশরাফ ভাইয়ের। নিজের কিউবিকলে বসে আছেন। পরের ৬ মাসে আরও ৩ বার খুন করেছি আমি তাকে। এবং প্রতিবারই পরদিন ঠিক ঠিক তাকে অফিসে পেয়েছি। সব আগের মতোই ছিল। শুধু একটা পরিবর্তন, সে আর কখনো স্মোকিং করেনি
-ভয়াবহ এবং অবিশ্বাস্য
-হ্যা, আমি চাকরি ছেড়ে দেই এরপর এবং সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাই। ডাক্তার বলেছে আমি নাকি খুনগুলো কল্পনা করেছি মাত্র। আসলে ঘটেনি। জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাহলে আশরাফ ভাই স্মোকিং করা ছাড়ল কেন! ডাক্তার বলল, এটা নাকি কাকতালীয় ঘটনা। অনেক স্মোকাররাই একসময় স্মোকিং ছেড়ে দেয়
-হু, তার মানে আপনি মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন ঐ সময়
-হতে পারে
-আচ্ছা, গল্প বুঝলাম, কিন্তু লাইটারের তো কোন ব্যাপার পাচ্ছি না গল্পে। লাইটার কেন রাখেন সাথে?
-কারণ হলো, এই ঘটনার পর অদ্ভুতভাবে, আমার স্মোকিং করতে ইচ্ছে হতো খুব। কিন্তু কখনো করিনি আগে, তাছাড়া স্ত্রীর নিষেধও ছিল। ধূমপান করার কথা ভাবলেও অপরাধবোধ হতো। তাই একটা উপায় বের করলাম
-কি?
-আপনি সিডনি শিলডানের টেল মি ইওর ড্রিমস পড়েছেন?
-না, কেন?
-উপন্যাসটাতে দেখা যায়, একজন চরিত্র খুন করে কিছু, কিন্তু পরে সে মনে করতে পারে না খুনের ঘটনা কারণ মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজর্ডার ছিল তার মধ্যে। একই সাথে অনেকগুলো মানুষ কল্পনা করত সে নিজের মধ্যে। এবং এই রোগের কারণে চরিত্রটির সাজাও হয় না আদালতে। তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন করা হয় বরং
-এর লাইটারের সাথে সম্পর্ক কি?
-সম্পর্ক হলো, আমিও একই কাজ করি। নিজে সিগারেট খেলে অপরাধবোধে ভুগি তাই সব সময় একটা চরিত্র কল্পনা করে নেই। যে আমার হয়ে সিগারেট খায়। সেই চরিত্রটির জন্যই লাইটার রাখি সাথে
-বেশ বেশ! আজকে কাকে কল্পনা করেছেন?
-আপনাকে
-হোয়াট?
-হ্যা, আপনি আসলে আমার মনের একটা অংশ। আপনি আমার কল্পনা
-হাসালেন জামশেদ ভাই! এই কৌতুকটা বলার জন্যই কি এত বড় গল্প ফেঁদেছেন?
-নাহ! আসলেই যা বলেছি ঠিক বলেছি। আপনি নিশ্চয়ই আমাকে পাগল ভাবছেন। স্বাভাবিক। আপনি আমাকে অবিশ্বাস করছেন কারণ আমি চাইছি আপনি অবিশ্বাস করুন আমাকে। শুধুমাত্র তখনই আপনার কাল্পনিক অস্তিত্বের ক্যামোফ্লেজ বজায় থাকবে
-ট্রেন চলে এসেছে ভাই। আপনার কাল্পনিক চরিত্র, এই জুলফিকারকে বিদায় দিতে হয় যে
হাসতে হাসতে বলল জুলফিকার। আমিও পালটা হাসলাম। বললাম, বিদায় ভাই। আবার হয়তো দেখা হবে কোন স্টেশনে। ভালো থাকবেন
ট্রেন চলে এলো। ট্রেনের কাছে গেলাম আমি বগীর সামনে দাঁড়িয়ে টিকেট চেকার দেখতে চাইল আমার টিকেট। আমি বুকপকেট থেকে বের করে দিলাম টিকেটটা। ভদ্রলোক টর্চলাইট মেরে টিকেটটা পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করল, নাম কি আপনার?
-আশরাফ, আশরাফ হোসেন। 
mmibappybd@gmail.com
বাংলাদেশ

1 comment:

  1. বাঃ! দুর্দান্ত লাগল। আপনার আরও লেখার অপেক্ষায় থাকব।

    ReplyDelete