...অভ্র ঘোষ
“সার, আমার ভোট অয় নাই।”
“এতক্ষণ কোথায়
ছিলেন!?’’
“সিলিপ ল'য়া বাড়ি গিয়াসিলাম।“
“সবাই লাইনে
দাঁড়াল, আর আপনি বাড়ি চলে গেলেন?!
আর হবেনা। ভোট শেষ।“
“দ্যান না সার,
এই প্রথম ভোট দিব। এই
দ্যাখেন আমার সিলিপ।“
“দেখি। আরে এটাতো
আমার ইস্যু করা স্লিপ নয়। এটা রাখুন, ভেতর থেকে এনে দেখাচ্ছি।
এই যে দেখুন,
আমার ইস্যু করা স্লিপে
সিরিয়াল নাম্বার, আমার সই আর আমার
সীল।
আপনারটায় এটা
আমার সই নয় আর সীলও তো নেই।“
“আপনি কি বলতাসেন
এই সিলিপ আমি বানাইয়া আনসি?”
“তাতো আমি জানিনা।
কিন্তু ভোট আর দেওয়া যাবেনা। সময় শেষ।“
“দিতে দিবেন না?”
“প্লিজ, কিছু মনে করবেন না, পারবোনা।“
“চইলা যাবো?“
“হ্যাঁ, সরি।”
ন্যাশানাল হাইওয়ে
থেকে ডানদিকে ঢুকে ঝাড়া পঁয়তাল্লিশ মিনিট কাঁচা রাস্তা দিয়ে বাস চলার পর বিকেল
শেষের মুখে বুথে পৌঁছালাম। অজ পাড়া গাঁ। স্কুল চত্বরে একটা বাঁধানো গাছতলা।
টিউবওয়েল। কুয়ো। কাগজপত্র রেডি করে খেয়ে শুতে শুতে রাত দশটা। মাঝ রাতে লোড শেডিং।
মশার কামড়। সকালে উঠে সব বিধি বন্দোবস্ত করে, সারাদিন টেনশানে কাটিয়ে, চাপ সামলে, সীল করার আগে ইভিএম বাকি পোলিং অফিসারদের
জিম্মায় রেখে একটু বাইরে এসে দাঁড়ালাম।
অবসার্ভার চলে যাওয়ায় পাহারা একটু হালকা হয়েছে। গাছতলায় একটা দুটো জটলা। সেখান
থেকে একটি মেয়ে এদিকে আসছে চোখে পড়লো।
কাছে আসতে দেখলাম, চোখে লাগার মতই।
আঠারো উনিশ বছর বয়েস, পূর্ণযৌবনা,
কালো আর গোলাপী
কম্বিনেশানের জামাটা কি মানিয়েছে, আহা! চোখ নামিয়ে
হেসে বলল, “সার, আমার ভোট অয় নাই।” খুব ইচ্ছে করছিল অ্যালাউ করি
কিন্তু আইন। বুথের ভেতর থেকে ফেলে দেওয়া স্লিপ এনে দেখানোর সময় আমারই বয়সী ফার্স্ট
পোলিং প্রাইমারি টীচারটি কিছু বলার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আইন সবার ওপরে। বাইরে এসে
দেখলাম জটলা আর ভীড় যেন কিছু বেড়েছে। মেয়েটি চলে যেতে যেতে একবার পেছন ফিরে দেখলো
কিন্তু আমি আইনের দাস, যৌবনের ডাকে সাড়া
দেওয়া এখানে অসম্ভব। মেঠো রাস্তার বাঁকে মেয়েটি আড়াল হয়ে যেতে ভীড়টাও হাল্কা হয়ে
গেলো। মোটা গোঁফের ফাঁক দিয়ে থার্ড পোলিং বলল যে আমার ডিসিশানটাই ঠিক।
গেরামের সব ছোঁড়া
গুলান আমার পিছে পরে থাকে দুটা কথা কওনের জন্য আর কলকাতার এই পিসাইডিং অফিসার আমারে ফিরাইয়া দিল! এমনি ইনসাল্ট আমার আগে অয়
নাই। বাবায় বলছিল বটে খুব কড়া লক। বুথের ভিতর সারাদিন কাউরে ঝামেলা করতে দেয় নাই।
কিন্তু আমারেও ফিরাইয়া দিবে তা ভাবি নাই। মায়ে মানা করছিল কিন্তু জিদ চাইপ্যা গেলে
আমি নিজেরে সামলাইতে পারিনা। প্রধান জেঠায় বলতেছিল যে আর কয়েকখান ভোট দিতে পারলে
জিতাটা সিওর অয়। ম্যাম্বার কাকা বলল পিসাইডিং জোয়ান ছোঁড়া, রাণীরে দিয়া একটা সিলিপ চালাইতে পারলে আরও বিশ
পঁচিশটা ভোট করাইয়া দিব নে। সব সিলিপ বানান আছে। কিন্তু সে ত আমার কথা মানলই না!
চোখের ভিতরে তাকাইয়া কথা বলতেছিল। আমারে বারবার চোখ নামাইতে হইতেছিল মিছা কথা
কওনের জন্যে। হাইস্যা যখন সরি চাইল ইচ্ছে হইতেছিল আমিও কই। আচ্ছা, পেছন ঘুরে একবার দেখি যদি ডাকে। ধুর, মানুষটা
একদম পাথর! আরে, চোখে জল আসে
ক্যান! মায়ে আবার এই সময় পিছু ডাকে। ভালো লাগতাছে না। কিসু ভাল লাগতাছে না!
ghoshabhra35@gmail.com
No comments:
Post a Comment