...ডা:দেবানন্দ মুখার্জী
সেই সাত সকালে
পলাশ নেমেছে ট্রেন থেকে,সেখান থেকে সোজা
স্পটে,মানে কলেজের আঙ্গিনায়।আজ
বলতে গেলে বাইশ বছর পর সে রিইউনিয়নে এলো।কলেজটা কত পালটে গেছে।সকাল থেকে তাই দেখে
যাচ্ছে।স্টার হোটেলের স্বপনদাকে তো ও চিনতেই পারেনি।অথচ এককালে ওটাই ছিল ওদের কফি
হাউস।কত কি মনে পড়ছে পলাশের।
ঘ্যাঁচ করে একটা
গাড়ি এসে দাঁড়ায় ওর সামনে।গাড়ি থেকে একজন স্যুটেড বুটেড লোক নেমে ওকে জিজ্ঞেস
করে" রিইউনিয়নটা এখানেই তো?"
"হ্যাঁ "।
"আপনি কি
এক্সস্টুডেন্ট? "
"হ্যাঁ।আপনি?"
"আমিও।পাস আউট
পঁচাশি"
"আমিও তো,কি নাম আপনার,সরি তোমার?"
"সঞ্জয়,সঞ্জয় সেন"।
"দুর **** , আমাকে চিনতে পারলি না? আমি পলাশ,পলাশ চৌধুরী।
তোর রুমমেট।"
"বাবা পলু তোর কি
দশা রে? তোর সেই বিখ্যাত ফিরোজ
খান মার্কা চুল কই রে?চেহারাটাও যেনো
একটু টাল খেয়ে গেছে।কি হোলো শরীর টরীর খারাপ নাকি? কোথায় আছিস?"
"বলছি দাঁড়া,কতদিন পর তোকে দেখছি একটু সামলে নিই।আমি এখন
একটা বি পি এইচ সি তে আছি,কাছেই।বি এম ও
এইচ হিসেবে।তুই কোথায় আছিস?"
"আমি তো কানাডায়
সেটলড্ হয়েছি বছর পনেরো আগেই।ওখানের একটা হসপিটালের ইনচার্জ। এই তো দিন পনেরো আগে ভাইপোর বিয়ে উপলক্ষে
কলকাতা এসেছিলাম।তা সেই ভাইপোই বললো কাকা তোমাদের কলেজের রিইউনিয়ন হচ্ছে,যাবে না? তা ভাবলাম আসা তো হয়না,একবার ঘুরেই আসি।
দেশেই আসতে
পারিনা,তার রিইউনিয়ন! খুবই
ব্যাস্ত থাকতে হয়।যাক্ সে সব কথা না হয় থাক্।আমি যাই, ওই যে তো হোটেল ম্যাডোনা বলে যে থ্রিস্টার
হোটেলটা আছে তার ৩০২ এ আমি আছি।সন্ধ্যায় চলে আয় ভালো স্কচ্ এনেছি,চলে তো? "
তা চলে,কিন্তু তুই এখন থাকবি না?"
না রে,এ সব পোষায় না,আমি এসেছি জাস্ট বিশ্রাম নিতে।সন্ধ্যায় একবার
আসবো যদি আর কেউ আসে দেখা হবে।যাই ফ্রেশ হয়ে নিই,যা ধুর হোটেল একটা,কাল সকালেই কেটে পড়বো। আসি রে।"
ড্রাইভার গাড়ি
স্টার্ট দেয়,কাঁচ নামিয়ে হাত
নাড়ে সঞ্জয়।
তার চলে যাবার
দিকে ফ্যাল্ ফ্যাল্ করে তাকিয়ে থাকে পলাশ।
হঠাৎই পলাশের মনে পড়ে যায় তার সেই ভোলেভালা রুমমেটের
কথা।কত
আগলে আগলে তাকে
রাখতো,বন্ধুর ভালোবাসা দিয়ে,ভাই এর স্নেহ
দিয়ে।
স্বপনদার হোটেলে
কতদিন একটা বানরুটি তারা আদ্ধেক করে ঘুগনি দিয়ে খেয়েছে,আর আজ? আজ দুটো দেশ দুজনকে ভাগ করে দিয়েছে,
যা সেই স্বপনদার দোকানের
বানরুটির মতই কখনও জোড়া লাগবে না!
iamdebananda@gmail.com
No comments:
Post a Comment