1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, January 1, 2020

দাগ



                                              ...মৌসুমী চক্রবর্তী 

          ক্লাসে জিওগ্রাফি খাতায় নিজের নম্বর দেখে খুশি হয় রিয়া। এবার ঠিক সেকেন্ড হবেই। বাংলায় কাঁচা না হলে ফার্স্ট হতো।লাস্ট পিরিয়ড, ছুটির ঘন্টা বাজল। ব্যাগ কাঁধে রিয়া ছুটলো মেন গেটের দিকে। ওদের আবাসনের সব মেয়েরা একসাথে বাড়ি ফেরে। আজ রিয়া মনাদির সঙ্গে গল্প করতে লাগল। মনাদি পরের বছর ফাইন আর্টস নিয়ে শান্তি নিকেতনে পড়তে যাবে। রিয়া সবে ক্লাস এইট। কিন্তু ফাইন আর্টস ওরও ভালো লাগে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরা, এটুকু রিয়ার স্বাধীন চিন্তার সময়। বাড়ি ফিরলেই সব কিছু অন্যরকম হয়ে যায়। মায়ের বিষাদ জড়ানো জীবনে রিয়াই একমাত্র মানুষ, যাকে ঘিরে মা মুক্তির খোঁজ করে। মা বাবার বিয়েটা না হলেই ভালো হতো। অন্তত রিয়াকে এই বিষাদপুরীর বাসিন্দা হতে হতো না। আজকাল মা আবার তাকে সন্দেহ করছে। বাড়ি থেকে বেরতেও দেয়না সে ভাবে। স্কুলের জন্য বেরুলেই তার বইয়ের তাক, খাতার ভিতর চেকিং চলে মায়ের। রিয়ার বিশ্রী লাগে। মা কে মানসিক রুগি বলে মনে হয় তার।কিন্তু কিছু করার নেই। এই অসুখী দম্পতিই তার জগৎ।
          অঙ্কের স্যারের কাছে দুদিন পরপর কামাই হয়ে গেল রিয়ার। টনসিল ফুলে জ্বর। প্রতি মাসেই কয়েকদিন এমন হয়। এবার দুটো ক্লাসেই খুব ইম্পরট্যান্ট কিছু অঙ্ক করিয়েছেন স্যার। আজ টিউশনে গিয়ে রিয়া মনিকার কাছে খাতাটা চাইল।কালকে ফেরৎ দিয়ে দেবে। মনিকা ঠোঁট উল্টে এমন ভাবে মানা করল যেন এই খাতাটা পড়েই ও নাসা য় চাকরি পাবে। বিদিশাও দিতে পারবে না। সুস্মিতা নাকি আজ আনতেই ভুলে গেছে খাতাটা । মানে কেউই দেবে না। রিয়া কি করবে ভাবতে লাগল। ছেলেদের সাথে ও কথা বলে না। মা বারণ করে দিয়েছে। কি আর করা! হঠাৎ দেবমাল্য বলে শান্তশিষ্ট ছেলেটি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, যদি কালকে ফেরত দিস তবে আমার খাতা দিতে পারি। রিয়া তো খুব খুশী , বললো , একদম কালকেই তোকে দিয়ে দেবো। টিউশন থেকে ফিরে , ক্লাসের রুটিনের বইখাতা গুছিয়ে ,টিউশনির খাতাগুলো বইয়ের আলমারিতে রেখে জলদি তৈরী হয়ে স্কুল চলে গেল রিয়া। 
মা কে দেবমাল্যর খাতার কথা বলতে মনে থাকল না রিয়ার। চুক্তি অনুযায়ী মা কে তার 
সব বলার কথা, স-ও-ব।
          তারপর, স্কুলের জিওগ্র্যাফি খাতা নিয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরল রিয়া। তাদের চারতলার ফ্ল্যাটের দরজা আধখোলা, রোজই তাই থাকে। মা রিয়া কে দূর থেকে দেখতে পায়। গরম গরম রুটি বা পরোটা করে দেয় । বিকেল বেলাতে রিয়া মোটেই ভাত খেতে পারেনা। দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে রিয়া। হঠাৎ দরজার পাশ থেকে কাঠের বাটাম দিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে মা! রিয়া আর্তনাদ করে ওঠে, বইয়ের ব্যাগটাকে ঢালের মতন ব্যবহার করতে চায় রিয়া , কিন্তু পারেনা। ঘাড় মাথায় অসহ্য যন্ত্রনায় মেঝেতে পড়ে যায় রিয়া, অবাক হয়ে নিজের মায়ের খুনি দৃষ্টি দেখে রিয়া। মা কি যেন বলছে , ছেলে বন্ধুর খাতা... মায়ের স্বপ্ন.. ঠান্ডায় ডুবে যাচ্ছে রিয়া, চোখে রাতের অন্ধকার নামে রিয়ার। মা কে জানানো হয়না আর কোনো কিছুই।
        পুলিশ ইন্সপেক্টরসহ চারজন অনুভা দেবীকে জেরা করে চলেছেন । অনুভা দেবী ভুলে যাচ্ছেন তার আগের বলা গল্প। মেয়ে স্কুল থেকে ফিরেই মেঝেতে পড়ে মারা গেছে, তিনি রুটি করছিলেন। নানা, তাকে রিয়া বলেছিল ঘাড়ে পিঠের ব্যথার কথা। পুলিশ মৃতদেহের ঘাড়ের নীল্চেসবুজ ঘন দাগটা দেখালে অনুভা দেবী বলতে থাকেন, আজকাল বাচ্চাদের এত ভারী ব্যাগ ক্যারী করতে হয়! সদ্যমৃত রিয়া ভাবে,’ মনরোগী বাবামায়েদেরও ভার বইতে হয় কিনা!!’


mousumichak74@gmail.com

No comments:

Post a Comment