1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Friday, May 1, 2020

ঝুলনে মায়াপুর নবদ্বীপ যাত্রা

                                                 
                                                                                                                 ...সৌপ্তিক দাস

          নদীয়া জেলার অন্তর্গত মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের জন্মস্থান মায়াপুর। যেখানে জলঙ্গী নদী গঙ্গার সাথে মিশেছে। অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করে শেষে এক রবিবার যাওয়া ঠিক করলাম। আমরা দক্ষিণ কলকাতা থেকে যাব তাই কলকাতা ষ্টেশন থেকে বি-বা-দি বাগ কৃষ্ণনগর লোকালে ১১.০৫ নাগাদ কৃষ্ণনগর স্টেশনে এসে পৌঁছালাম। তবে এতক্ষণ যা সুখযাত্রা করেছিলাম এবার যে তার বিপরীত রূপ দেখার বাকি ছিল তা কে জানতো। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে অটোর লাইন বিশাল। তার কিছুটা অবশ্য পরের দিন শ্রাবণের শেষ সোমবারের জন্য। শোনা যায়, শিব নিবাস বলে এক জায়গায় নাকি পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড়ো শিব লিঙ্গ আছে আর শ্রাবণের শেষ সোমবার রাত ১২ টায় সেখানে জল ঢালা হয়। যাই হোক আমাদের মাথায় হাত দেখে বাবাই এগিয়ে গেলো অটোর খোঁজে। তবে আমরা অনেকে ছিলাম বলে অটো পেতে সমস্যা হলনা। চাপাচাপি করে বসলাম বটে কিন্তু একে রাস্তা বাজে তার উপর প্রায় ১৪ কিমি দূরত্ব। এতোটা আসতেই কোমর ব্যাথা হয়ে গেলো সবার। যেখানে অটো নামালো সেখান থেকে ফেরি করে নদীর উল্টোদিকে হুলোরঘাটে নামলাম। ঘাটের কাছেই টোটো স্ট্যান্ড।

          মন্দিরের ভিতরে থাকাই সবচেয়ে ভালো বলে আমরা সেখানেই ঘর নিয়েছিলাম। এখানে অনেক গুলো ভবন আছে। অন্যান্য ভবনের বুকিং অনলাইনে হয় তিনমাস আগে থেকে, তবে গীতা ভবনের বুকিং হয় একমাস আগে ফোনের মাধ্যমে। তাই আমরা গীতা ভবনে বুকিং করেছিলাম। ভাগ্যিস আমাদের বুকিং ছিল নয়তো এই ঝুলনের সময় ঘর পাওয়া সত্যিই দুষ্কর। যাই হোক, ঘাটের কাছ থেকে টোটো ভাড়া করে সোজা গীতা ভবন পৌঁছাতে প্রায় একটা পার। এদিকে খাওয়ার সময় হয়ে যাওয়ায় ব্যাগ ঘরে রেখেই খেতে যাওয়ার জন্য দৌড়ালাম। এসে শুনি সেদিন একাদশী তাই ভাত পাওয়া যাবেনা। আমাদের ও একাদশী করতে হবে।

          কি আর করা যাবে, জুতো খুলে গেলাম খাওয়ার জায়গায়। অনেক কষ্টে দুপুরের খাওয়া সাঙ্গ করে ঘরে ফিরেই সোজা বিছানায়। ঘুম ভাঙল পাঁচটার পর। সবার সাথে দেখতে যাওয়া হোল আরতি, আরতি দেখার পর চা খেতে যাওয়ার আগেই বাবা বললো গদা ভবনে খাবারের খোঁজ করতে হবে। সেখানে গিয়ে শুনি, ভাত ডাল পাওয়া যাবে। বাঙালি মন বলল দশটাকা বেশী লাগলেও ভাত ডালই খাব। সেইমতো কুপন কেটে নেওয়া হোল। ভেতরের কম্পাউন্ডে বসে আড্ডা দিতে দিতে হটাৎ দেখি ৮.৩০ বেজে গেছে। তাই আর ঘরে না ফিরে খাওয়ার লাইনে দাঁড়ালাম। গদা ভবনের মেনুতে ছিল ভাত ডাল আলুর আর পনিরের তরকারি, সাথে পাঁপড় ভাজা। তারপর এল গরম গরম রসগোল্লা। নিরামিষ হলেও সত্যিই সুস্বাদু। 

          পরদিন সকালে নবদ্বীপ যাত্রা। টোটো করে ঘাটে এসে শুনলাম এবার লঞ্চ। তাই টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। কিছু পরে এসে গেলাম নবদ্বীপ। শোনা যায় এই নামের পিছনের গল্প। নব অর্থাৎ নয়টি দ্বীপ নিয়ে তৈরী এই গ্রাম। ঘাটে পা দিয়ে অতিকষ্টে দরদাম করে দুটো টোটো ঠিক হোল। কাছের একটা দোকান থেকে পুরি খেয়ে টোটো এ উঠে আমাদের মন্দির ঘোরা শুরু হোল। পথে পড়লো রাধারানীর মন্দির, শ্রী গৌরাঙ্গের জন্মস্থান। একে একে সব মন্দির দেখে  ফিরে এলাম নবদ্বীপের বড়াল ঘাটে। আবার লঞ্চে করে মায়াপুর ফিরলাম।

          এদিকে একটা বেজে গেছে প্রায়, তাই গদা ভবনে দুপুরের খাবার খেয়ে একেবারে ঘরে ফিরলাম। সন্ধ্যেবেলায় মন্দির লাগোয়া মাঠে বসেই সময় কেটে গেলো। ঠিক ৮.৩০ নাগাদ খাবারের জন্য লাইন দিয়ে খেয়ে নিলাম।

          পরদিন খুব সকালেই মনখারাপ নিয়ে আমরা কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দি। লক্ষ্য ছিল কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ী কিন্তু সরভাজা ও সরপুরিয়ার প্রেমে পড়ে সেই কাজকে বিসর্জন দিতে হোল। আশা করি কোনও একদিন সেই রাজবাড়ীও ভ্রমণ হবে।


হরিনাভী।কোলকাতা
 souptik.25@gmail.com 

No comments:

Post a Comment