...দেব চক্রবর্তী
নতুন বউয়ের
উজ্জ্বল সিঁদুর টিপের মতো লেগে আছে পশ্চিমপাড়ের সূর্যটা । এই সময়ের লম্বা বিকেল শেষ বেলার আলো মুছতে
একটু বেশিই সময় নেয় । বড় পুকুর পাড়ের মাঝামাঝি এসে হঠাৎ বাইক থামিয়ে দিল
নরেশ । পেছনে বসা সৈকতের উদ্দেশ্যে বলল, ‘স্যার, সনাতন দাসের বাড়িটা পুকুরের ওই ওপাড়ে ।’
সৈকত বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায় । লোন রিকভারিতে বেরিয়েছে আজ । উপর থেকে ভীষণ চাপ । রিকভারির পারসেন্টেজ বাড়াতে না পারলে পরের ম্যানেজার্স মিটিংয়ে ঝার খেতে হবে । উনিশটা ভিলেজ নিয়ে ব্র্যাঞ্চের সার্ভিস এরিয়া । গ্রামের অলিগলি, এর বাড়ির উঠোন মাড়িয়ে ওর বাড়ি, কারো গোয়াল ঘরের পেছন দিয়ে তার বাড়ি ---এইভাবে লোনীদের বাড়ি খুঁজে খুঁজে যাওয়া সৈকতের একার পক্ষে সম্ভব নয় । একমাত্র ভরসা নরেশ । ব্র্যাঞ্চের সাবস্টাফ । চিলের মতো চোখ ছেলেটার । পঞ্চাশ ষাটজন কাস্টোমারের ভিড়ের মধ্য থেকে লোনীকে
ঠিক আইডেন্টিফাই করে ফেলে । কাজের ফাঁকে সৈকতের চেয়ারের
পাশে এসে টুক করে বলে যায়, ‘স্যার, বৃন্দাবন ঘোষ এসেছে, অনেকদিন লোনের টাকা দিচ্ছে না ।’ ‘স্যার, মাধব হালদারের বউ, সেদিন বাড়ি গিয়েও ওর নাগাল পাইনি
। বহুত ধড়িবাজ মহিলা !’
নরেশ আঙ্গুল তুলে যে বাড়িটা দেখাল, পুকুরপাড় থেকে শুধু টিনের চালাঘরই দেখতে পেল সৈকত । আর সূর্যটা কেমন নির্লজ্জের মতো সেই টিনের চাল চুম্বন করতে করতে নিচে নেমে যাচ্ছে । সৈকত চোখ ফিরিয়ে বলল, ‘ওই বাড়িতে এখনি যাওয়া
কি ঠিক হবে ?’
নরেশ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানায়, ‘না স্যার, আমি এখনি যেতে বলছি না ! শুধু বাড়িটা দেখালাম ।’ একটু থেমে বলল, ‘ওই জায়গাটা একবার দেখতে যাবেন নাকি ?’
‘কোথায় ?’ জানতে চাইল সৈকত
।
নরেশ নিচু স্বরে বলল, ‘সেই নিমগাছটা স্যার, সনাতন যেখানে----।’ মাঝপথে থেমে যায় নরেশ । সনাতন দাস যে গাছের ডালে গলায় দড়ি দিয়েছে, সেটি এখন দর্শনীয় স্থান হয়েছে গ্রামের মানুষের কাছে ।
এই পড়ন্ত বিকেলে নতুন করে কোথাও আর যেতে ইচ্ছে করছে না সৈকতের । ব্র্যাঞ্চে ফিরতে হবে । অনেক কাজ পড়ে রয়েছে । অন্য স্টাফরা পাঁচটা সাড়ে পাঁচটায় বাড়ি চলে গেলেও সৈকত বেশ রাত পর্যন্ত থেকে যায়
। তার ঘরে ফেরার তাড়া নেই । প্রমোশন নিয়ে জেলা ছাড়িয়ে অনেক দূরের রুরাল ব্র্যাঞ্চে
পোস্টিং পেয়েছে । কাছেই ঘর ভাড়া নিয়ে একা থাকে । লোকাল ছেলে নরেশই তার বল ভরসা, সব ।
‘আজও কি দেরি করবেন স্যার ?’ ব্র্যাঞ্চের সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে জানতে চাইল নরেশ ।
‘হ্যাঁ, একটু দেরি হবে আজ । এক কাজ কর , তুমি চলে যাও, আমি তালা-ফালা লাগিয়ে সাটার নামিয়ে দেব ।’
নরেশ ইতঃস্তত করে, ‘না না , আপনার কাজ হয়ে গেলে একটা ফোন করে দেবেন, আমি এসে বন্ধ করে দেব ।’
সৈকত জানে, কাজের ব্যাপারে নরেশের কখনো না নেই । তাই বলল, ‘থাকনা, তোমাকে আর আসতে হবে না । তুমি বরং এক কাজ কর, কৃষিলোনের সবকটা ফাইল নামিয়ে দিয়ে যাও ।’
সৈকত কম্পিউটার খুলে দেখে নিল, “কৃষাণ ক্রেডিট কার্ড” দেওয়া আছে মোট তিনশো এগারটা
। এর মধ্যে বেশির ভাগই ডিফলটার , সময়ে লোন শোধ দেয়নি । এক মরশুমে লোন নিয়ে চাষ কর, ফসল তুলে লোন শোধ কর, পুনরায় পরবর্তী চাষের জন্য লোন নাও । এইতো চক্রাকার লেন আর দেন ! গ্রামের মানুষগুলো কেন যে এই সহজ সুযোগটাকে ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারে না ! সৈকত এক একটা আ্যকাউন্ট খুলে দেখে আর অবাক হয় । কেউ কেউ একবার লোন নিয়ে আর এমুখোই হয় নি! চার পাঁচটা চাষের মরশুম পার হয়ে গেছে । লোকগুলো কি বোকা নাকি ! আরে বাবা, সুদ বাড়ছে না ! সময়ে শোধ করলে তো
সুদেরও ছাড় মেলে । এই জন্যই বোধহয় কথায় বলে, চাষার বুদ্ধি ।
সৈকত ফাইল খোলে । একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে, কার কত জমি, কোন মৌজায়, কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, সুদে আসলে এখন কত হয়েছে । শনিবারের মধ্যে লিস্ট পৌঁছানো চাই রিজিওনাল অফিসে
। এইরকম ফাঁকা সময়েই এইসব কাজ করার সুযোগ । বাজারের মধ্যে দোতলায় ব্র্যাঞ্চ । নীচের তলায় ল্যান্ডলর্ড অধীরবাবু
থাকেন । গ্রীলের গেটে ভেতর থেকে তালা দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে কাজ করছিল সৈকত । হঠাৎ গেটের আওয়াজ পেয়ে মাথা
তুলে দেখে, গ্রীলের ফাঁক দিয়ে চায়ের গ্লাস বাড়িয়ে দিয়েছে পাশের
চায়ের দোকানের মন্টু, ‘ম্যানেজারবাবু, আপনার চা ।’
‘কে পাঠাল ?’
‘যাবার সময় নরেশদাই বলে গেছে, আধা ঘন্টা বাদে যেন মনে করে আপনাকে চা দিই । একটুখানি দেরি হয়ে গেল স্যার !’
চায়ের গ্লাস নিয়ে টেবিলে ফিরে এসে দেখে মন্টু তখনো দাঁড়িয়ে আছে
। জানতে চাইল, ‘এখনি পয়সা নেবে ?’
‘না স্যার, একটা কথা জানতে চাইছিলাম । আমাদের গ্রামে রটে গেছে, কৃষিঋণ ফেরত দিতে হবে না । সব নাকি মুকুব হয়ে রাবে এবার ?’
সৈকত দু’তিনবার ঘনঘন চায়ে চুমুক দিয়ে
প্রায় স্বগতোক্তি করল, কারা যে এসব রটাচ্ছে !
ভোট এলেই রাজনৈতিক নেতাদের এই এক খেলা, ঋণমুকুব ! ভোটবাজারে এখন বড় পণ্য হয়েছে ঋণমুকুব । সাধারণ মানুষের আর দোষ কি ! তারা তো লোভে পড়বেই । মাধব ঘোষ, যাদব ঘোষ, সহদেব ঘোষ--- তিন ভাইয়ের পঞ্চাশ হাজার করে লিমিট । গেল তিন বছরের রেকর্ড দেখল বেশ ভালো । নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শোধ দিয়ে আবার নিয়েছে । কিন্তু এবার এখনো দেয়নি । নিশ্চয়ই ভোট চক্করের মধ্যে পড়েছে । ঘড়ি দেখল আটটা দশ । আর ভালো লাগছে না । কৃষিঋণই দেখছি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াল ! সবকিছু গুছিয়ে, সাটার নামিয়ে পেছন ফিরতেই দেখে
ল্যান্ডলর্ড অধীরবাবু হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে তার দিকে, ‘এতক্ষণে ছুটি হল আপনার ? আর কত খাটবেন ব্যাঙ্কের
জন্য !’
সৈকত জানে এইসব কথার কোন উত্তর হয় না । তাই একগাল হেসে বেরিয়ে যাচ্ছিল ।
‘ম্যানেজারবাবু !’ বলে বেশ কৌতূহলী স্বরে পেছন থেকে ডাকলেন অধীরবাবু ।
এতদিনের ব্যাঙ্কের চাকরির অভিজ্ঞতায় বুঝেছে, ‘ম্যানেজারবাবু’ সম্বোধনের বিভিন্ন ক্যাটাগরি
আছে । কোনটা আবদার, কোনটা তোষামোদ, আবার কোনটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার
। তার থার্ড সেন্সে মুহূর্তে এলার্ম বেজে উঠল । অধীরবাবু গত রবি মরশুমে ষাট হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়েছিলেন । তিন মাস হল শোধ দেবার সময় চলে গেছে । নেহাৎ বাড়িওয়ালা বলে তাগাদা
দিতে পারছে না ।
অধীরবাবু সৈকতের মুখের কাছে ঝুঁকে এসে বললেন, ‘ম্যানেজারবাবু ! যা শুনতে পাচ্ছি–-!’
‘ঋণমুকুব ?’ সৈকত অধীরবাবুর মুখের
কথা কেড়ে নেয়, ‘ভুলে যান, ভুলে যান অধীরবাবু ! ওসব ভোট-ভিখিরির বাহানা । আপনাদের গ্রামাঞ্চলে একটা কথা আছে না, কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালেই পাজী ! ভোটটা মিটে যাক, দেখবেন সব ভো-ভা ! দেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখতে পারছেন না ! আপনার হয়ে সরকার টাকাটা ব্যাঙ্কে জমা করবে, তবেতো আপনার মুকুব ! সেই টাকাটা আসবে
কোথা থেকে বলতে পারেন ?’
(২)
নরেশকে নিয়ে আজ সকালেই বেরিয়ে পড়ল সৈকত । গ্রামের মানুষকে বোঝাতে হবে, ঋণমুকুবের আশায় বসে থাকলে ক্রমশঃ
ঋণের গর্ভেই তলিয়ে যেতে হবে । পরিণতি হবে সনাতন দাসের মতো ।
আজ তাই সনাতন দাসের বাড়ি দিয়েই শুরু করবে ঠিক করল । নরেশকে বলতেই বলল, ‘স্যার, সনাতনের বিধবা বউ ছোট ছোট তিনটে বাচ্চা নিয়ে অথৈ জলে পড়ে আছে । এই শোকের মধ্যে লোনের টাকা চাইতে গেলে গ্রামের লোকজন হয়তো অন্য রকম, মানে ঝামেলা টামেলা যদি করে ! রিক্স হয়ে যাবে স্যার ।’
সৈকত হাসতে হাসতে বলল, ‘ভয় নেই, লোন আদায়ের জন্য যাব না । তুমি চল না!’
মাথায় টুপি পড়ে নিল । গ্রামের রাস্তায় যা ধূলো ! এখনো পর্যন্ত যে কটা গ্রামে গেছে, প্রায় সবখানেতেই বড় রাস্তা থেকে কয়েকশো মিটার করে ঢালাই রাস্তা হয়েছে । তার পর থেকে সেই পুরানো এবড়ো-খেবড়ো , নয়তো সাবেকি ধূলোমাখা পথ । চারটে গ্রাম পার করে পৌঁছালো
‘সনাতন দাসের কয়রা’ গ্রামে । তার অস্বাভাবিক মৃত্যু কয়রাকে নতুন পরিচিতি দিয়েছে । লোকের মুখে এখন গ্রামের নাম শুধু কয়রা
নয়, ‘সনাতন দাসের কয়রা’ ।
এই অঞ্চলে পাট চাষের প্রাচুর্য খুব বেশি । বাস্তবিক চিত্রও তাই চোখে পড়েছে সৈকতের । মাঠে ঘাটে হিলহিলে লম্বা গাছগুলো কোন্ সুখের দোলায় যে দুলছে সর্বক্ষণ ! অন্য ফসল চোখে পড়েনি বিশেষ । খাল বিলে তেমন জলও নেই । অনেকদিন বৃষ্টি হয়নি যে ! জল না পেলে এত পাট পচাবে কোথায় ? সৈকতের মনে প্রশ্ন
জাগে, ‘আচ্ছা নরেশ, এই যে হাজার হাজার বিঘে জুড়ে পাট চাষ, এগুলো কেটে জলে ফেলতে হবে, পচিয়ে আঁশ তুলতে হবে, শুকোবে, তবেইতো চাষটা কমপ্লিট হবে ! কিন্তু এত জল কোথায় ? যে ক’টা পুকুর দেখলাম, তাতে তো জল বিশেষ নেই !’
‘যাদের নিজস্ব পুকুর তারা হয়তো শ্যালো চালিয়ে পুকুর
ভরাবে । কেউ বা ট্র্যাক্টরের পেছনে ট্রলি লাগিয়ে ময়নার বিলে নিয়ে ফেলবে ।’
নরেশের এই ক্যাজুয়াল সমাধান সৈকতের মনে ধরল না । এতে যে চাষের খরচ বেড়ে যায় অনেক । তারপর আছে সঠিক দাম না পাওয়া
।
‘তবে স্যার, এবার যা পাট চাষের বহর দেখছি, এর অর্ধেকও হয়তো জলের নাগাল পাবে না । বাকিগুলো শুধু জ্বালানিই হবে ।’
সৈকত প্রায় আঁতকে ওঠে, ‘সে তো বিশাল লস্ ! চাষিরা জেনেবুঝেও-!’
শহরে বাস করা ম্যানেজারবাবুর এসব কথার যথাযত উত্তর দেবার দায়
যেন গ্রামের ছেলে নরেশেরই, ‘কয়েক বছর আগে কিন্তু অবস্থাটা এতটা খারাপ ছিল না
স্যার । আমাদের গ্রামের পাশে ময়নার বিল, প্রতি বর্ষায় ভেসে যেত । এখন প্রায় সারা বছরই হেঁটে পারাপার করা যায় । গ্রামের পুকুরগুলো তো জলে টইটুম্বুর
থাকত সারাবছর । আসলে বর্ষাটা অনেক কমে গেছে যে । আগের মতো বৃষ্টিই নেই !’
‘এই একটা দামী কথা বলেছ । আগের মতো বৃষ্টি নেই । কিন্তু কেন নেই বলতো ?’
নরেশের সহজ উত্তর, ‘সূর্য নাকি কাছে চলে আসছে । পৃথিবী তাই গরম হয়ে যাচ্ছে তড়াতাড়ি ।’
‘গ্লোবাল ওয়ারমিং’ ব্যাপারটা বোঝান বোধহয় একটু বাড়াবাড়িই হয়ে যাবে । সে ক্ষেত্রে নরেশ বলতেই পারে, এখানে তো প্রচুর গাছপালা, পুরো গ্রামটাই সবুজ প্রায় । প্লাস্টিকের চল থাকলেও শহরের মতো ততটা ব্যাপক নয়। সারাদিনে গাড়ি ক’টা আর চলে ! ওতো আপনাদের শহরের লোকের সমস্যা ! সৈকত নরেশকে যে কথাটা বলতে পারল না, সেটা হল, শহরের মানুষের সবরকম সুখ-সাচ্ছ্বন্দের সাইড এফেক্টগুলো গ্রামের দিকে ধেয়ে আসছে ক্রমশঃ ।
‘নামুন স্যার!’ নরেশ বড় পুকুর ধারের মাটির রাস্তায় বাইক থামায় । সৈকত আজ লক্ষ্য করে দেখল, পুকুরটাতে অর্ধেক জল । সদ্য কচুড়িপানা পরিষ্কার করা হয়েছে । পুকুরপাড়ের পথ ধরে সনাতন দাসের বাড়ির উঠোনে এসে দাঁড়াল সৈকতরা । তাদের দেখে হাতের কাজ ফেলে ছুটে এল কয়েকজন প্রতিবেশী । হাতে হাতে এসে গেল দুটো ফাইবারের চেয়ার । এক গলা ঘোমটা টেনে সামনে এসে দাঁড়াল সনাতনের বিধবা বউ, যাকে দেখে মনে হল, জীবনের সব রঙ মুছে গেছে তার
শরীর থেকে, পড়ে রয়েছে রক্তহীন ফ্যাকাসে শুকনো পাটকাঠির মতো
একটা অবয়ব । উপস্থিত সবার মুখের উপর চোখ বুলিয়ে সৈকত কৈফিয়ত দেবার
মতই বলল, ‘ব্যাঙ্ক থেকে তো ওনার নামে কোন নোটিশ পাঠান হয়নি !’
মৃদু গুঞ্জন উঠল সৈকতের কথায় । একটু সময় নিয়ে সনাতনের বউ বলল, ‘উদের বাপ কেন মরল
তা আমি জানিনা । তবে, ইবারে খুব চিন্তায় ছিল ।’
‘কীসের ?’
‘এত পাট জাগ দিবে কোথায় ! পঞ্চায়েত বলেছে, ই বচ্ছর থেকে পুকুরে আর পাট
ফেলান যাবে না । পুকুরে কাজ হবে, পাড় বাঁধাবে ।’
‘সেতো গ্রামের উন্নয়নের কাজ ।’ এতক্ষণে কথা খুঁজে পেল নরেশ, ‘পুকুর বাঁধালে সবারি
কাজে লাগবে !’
নরেশের কথা সে যেন শুনতে পায়নি। মাটিতে তার দৃষ্টি স্থির । খুব নরম সুরে আবার বলল, ‘থেকে থেকে আকাশপানে তাকাত, জলের মেঘ খুঁজত । কিন্তু আকাশে তো মেঘ নাই, জলও নাই । তাই গুম ধরে থাকত । বলত, ইবারে আর ঋণ শোধাতে পারবনা । এতগুলান টাকা !’
হঠাৎ এক প্রতিবেশী বলে উঠল, ‘সনাতন এটা বড় বোকার মত কাম করল । সারা গ্রাম জানে, ইবার ঋণ মুকুব হয়ে যাবে । কী ম্যানেজারবাবু ! হবে না ?’
পুকুরপাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে ফিরে আসছে সৈকত । সূর্য প্রায় মাথার উপর । টলটলে পরিষ্কার জলে তার নির্মম তেজ বিকিরণ করছে । পেছন পেছন চলে আসা গ্রামের সহজ সরল লোকগুলো আবারও জানতে চাইল, ‘ম্যানেজারবাবু ! ঋণমুকুব হবে তো ?’
নরেশ বাইক স্টাট দিলে সৈকত অসহায়ভাবে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়, ‘জানি না----!’
tapanchk@yahoo.com
No comments:
Post a Comment