1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Tuesday, October 20, 2020

ক্যাপ্টেন ভেড়ি

(ধারাবাহিক রহস্য কাহিনী )

ছবি : ইন্টারনেট
                                                             তরুণ চক্রবর্তী

পূর্ব কথন -   ক্যাপ্টেন ভেড়িতে সম্প্রতি এক অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা খুন হয় । অঞ্চলটা পরমা আইল্যান্ড থানার মধ্যে পরে । পোস্টমর্টেম রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলাকে শ্বাসরোধ করে  খুন করা হয়েছে । থানার বড়বাবু দিবাকর , সেকেন্ড অফিসার নকুরকে দায়িত্ব দেয় ইনভেস্টিগেসানের জন্য । দিবাকর ও নকুর বড়বাবুর ঘরে জরুরী কথা বলছিল , এইসময় হঠাত ঘরে ঢোকে প্রাক্তন সিভিক ভলেন্টিয়ার সতু ওরফে সত্যবান চৌধুরী ।

———  
( চার ) 
——— 
     সতুকে এইভাবে হঠাত দেখে দিবাকর ও নকুর দুজনেই যারপরনাই চমকিত ।
-- কি ব্যপার সতু , হঠাত কি মনে করে । দিবাকরই  জিগ্যেস করে । 
--আজ্ঞে স্যার , একটা জরুরী কথা ছিল । সতু সংশয়ের দৃষ্টিতে নকুরের দিকে তাকায় । দিবাকর বরাভয়ের ভঙ্গিতে সতুকে বলে , 
--তুই  নিশ্চিন্তে নকুরের সামনে সব কথা বলতে পারিস  । ওকে তো তুই  চিনিস । বোস , বোস  ,অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে আছিস । দিবাকর সতুকে সামনের চেয়ারে বসতে বলে । সতু বসার পরে দিবাকর সামনে রাখা জলের গ্লাস তার দিকে বাড়িয়ে দেয় । সতু জলটা  ঢক ঢক করে খেয়ে নিয়ে একটু ধাতস্ত হয় । দিবাকর ও নকুর দুজনেই বুঝতে পারে সতু খুব উত্তেজিত হয়ে আছে । ওরা অপেক্ষা করে সতু  নিজের  থেকে কখন কথা শুরু  করবে তার জন্য । 
--স্যার , কেসটা কিছু এগোল ? সতু জিজ্ঞেস করে । 
--কোন কেসটার কথা বলছিস ? নকুরের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে  দিবাকর জিজ্ঞেস করে ।চোখে বিস্ময় ।
--ওই যে স্যার , ক্যাপ্টেন ভেড়ির মার্ডার কেসটা । সতুকে বেশ উত্তেজিত লাগছিল । 
--তুই জানলি কি করে ? আর তোর এতো কৌতুহলই বা কেন ? তুই তো এখন থানার স্টাফ ও নয় । তাহলে ? দিবাকর মোক্ষম প্রশ্ন করেন ।এরপরে সতু যে কথাটা বলে তার জন্য নকুর আর দিবাকর , কেউই  প্রস্তুত ছিল না ।  
--স্যার লাশটা তো প্রথম আমিই দেখি । 
     ঘরময় অপার স্তব্ধতা । পিন পরলেও শোনা যাবে । দিবাকর চোখ বুজে কিছু একটা ভেবে নিলেন । তারপর সতুর দিকে  তাকিয়ে বললেন , 
--পুরো ব্যপারটা গুছিয়ে বল । যেখানে  দরকার হবে , আমি প্রশ্ন করবো । ঠিকঠাক উত্তর দিবি । সতু সম্মতির মাথা নাড়ে । তারপর গড় গড় করে বলে যায় ও কি দেখেছিল , কি ঘটেছিল ।
-- তুই যখন রাত্রেই দেখলি , তখনই এলি না কেন ? এখন তো তুইই প্রাইম সাস্পেক্ট হয়ে গেলি । 
--কি বলবো স্যার , খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম । ভেবেছিলাম এক , হয়ে গেল আরেক । মাথা কাজ করছিলো না স্যার । খুব ঘাবড়ে গেছিলাম । 
--ছেলেটাকে একদম দেখতে পাসনি ? ঠিক করে ভেবে দেখ । যদি মনে করতে পারিস , তাহলে কেস কিন্তু আর্ধেক সল্ভড্ । আর্টিস্টকে দিয়ে ছবি আঁকাব , থানায় থানায় দিয়ে দেব , সোর্সদের লাগিয়ে দেব , ব্যাটা যদি মায়ের গর্ভেও থাকে , সেখান থেকে বার করে আনব । তুই শুধু ভালো করে একবার ভেবে দেখ । সতু গুম হয়ে যায় । কি করে বোঝায় , অত কুয়াশার মধ্যে , জ্যাকেট , মাফলার পরা ছেলেটার মুখ একদম দেখতে পায়নি । 
   দিবাকর বুঝতে পারে সতু সত্যি কথাই বলছে । শালা , কি অদ্ভুত সিচুয়েসান। খুনিকে দেখা গেছে , আবার দেখা যায়নি । খুন করে একজন মানুষ চোখের সামনে দিয়ে হাওয়া হয়ে গেল । দিবাকরের নিজেরই হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছিলো । হতাশ দিবাকর নকুরকে তিন কাপ চায়ের অর্ডার দিতে বলল । 
    চা খেতে খেতে দিবাকর আবার সতুকে নিয়ে পড়লো ।
-- মেয়েটাকে তো দেখেছিস । চেনা মনে হয়েছে ? 
--না স্যার , তবে লাইন এর মেয়ে । আর আপনি তো জানেন , মেয়েছেলের দোষ আমার নেই । সতু বলে । 
--সে তো জানি ।এ থানায় সে দোষ তো একমাত্র জনার্দনের আছে । সেও তো চেনে না বলল । কি যে করি । দিবাকর হতাশায় ঘাড় নাড়ে । 
--সতু এতক্ষণ দিবাকরের কথা মন দিয়ে শুনছিল । কোন কথা বলেনি । দিবাকরের কথা শেষ হতেই সতু বলল , 
--বিশ্বাস করুন স্যার , কোন ধস্তাধস্তি , চিৎকার চেঁচামেচি কিচ্ছু শুনিনি । লোকটা মনে হয় মেয়েটাকে কোন ঘুমের ওষুধ টোশুধ দিয়েছিল । 
দিবাকর সতুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল , 
--আমরাও তো তাই ভাবছি । এখন ভিসেরা রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করা ছারা কিছু করার নেই । 
এই সময় সনাতন এসে ঢুকল । লম্বা স্যালুটে মেরে বলল , 
--ফরেনসিক থেকে ফোন এসেছিল । বলেছে ঘটনাস্থলে কোন ফিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায়নি । 
--লাও ঠ্যালা । শেষ আশাটাও গেল । নকুর , ক্রাইম  সিন থেকে কর্ডন আর গার্ড তুলে নেও । ওসবের আর দরকার নেই । আর , যেহেতু এখনো কেউ বডি আইডেন্টিফাই করেনি , আন-ক্লেইম্ড বডি হিসেবে মর্গে পাঠিয়ে দাও। চোদ্দদিন দেখে  ডিস্পোস করে দিও । 
--ইয়েস স্যার , বলে নকুর বিদায় নেয় । ঘরে তখন শুধু সতু আর দিবাকর। দিবাকরই প্রথম মুখ খুলল , 
--দেখ সতু , তুই যে আমার এলাকায় তোলাবাজি করিস আমি জানি । এ থানার সাথে তোর পুরনো সম্পর্কের জেরে আমি কিছু বলিনা । এই এলাকায় খুন খারাবি হয় , ঠিক কথা । কিন্তু সেগুলো সবই রাজনীতি বা এলাকা নিয়ে দলাদলির জন্য । কোন সাধারণ মানুষ , আমি থানায় আসার পর খুন হয়নি । আমি দায়িত্ব নিয়েছি , নিজের হাতে কেসটা সল্ভ্ করবো। এবং তাড়াতাড়ি । নাহলে যত দেরি হবে ডিপার্টমেন্টে আমার অবস্থা ঢিলে হবে । মিডিয়াও হইচই শুরু করবে । সবে তো কালকের ঘটনা । মিডিয়া তো এখনো সেরকম গন্ধই পায়নি । তুই কিন্তু কিছু চেপে যাস না । যদি দেখি তুইও এর মধ্যে ইনভল্ভড্ , তাহলে আমিও কিন্তু ছেরে কথা বলবনা । ফর্সা দিবাকরের রাম খাওয়া গাল উত্তেজনায় আরও লাল লাগছিল ।   
সতু বুঝতে পারছিল , দিবাকরের তার ওপর পুরনো রাগ এখনো যায়নি । তা বলে দিবাকর যে ঠারে ঠোরে তাকেই দোষী ঠাওরাবে এতোটাও ভাবেনি । 
--আপনি কি আমাকেই  খুনি ভাবছেন ? সতু সরাসরি দিবাকরকে জিজ্ঞেস করে । 
--না , সে কথা এখনি বলছিনা । তবে মাথায় রাখছি ।যদি অপরাধী ধরা না পড়ে , তুই তো আছিস ।দিবাকরের মুখে ক্রুর হাসি । 
--মানে ? 
--এতদিন থানায় কাজ করেছিস , এটার মানে জানিস না । অপরাধী ধরা না পরলে , কি করে অপরাধী বানাতে হয় , আমার ভালোই জানা আছে । তার চেয়ে ভালো করবি , খুনিকে ধরতে সাহায্য করলে । যা লেগে পর ।   
সতু ঠিক বুঝতে পারেনা , এটা অনুরোধ , আদেশ না হুমকি । দিবাকরের ঘর থেকে বেড়িয়ে আসার সময় , জনার্দনের সাথে দেখা । 
--কি সতুদা ভালো আছো ? 
 সতু বিমর্ষ বদনে ঘাড় নাড়ে । জনার্দন ঠিক বুঝতে পারে না , ভালো না খারাপ । ও থানার লম্বা করিডর দিয়ে অফিস ঘরের দিকে চলে যায় । সতু পেছন থেকে জনার্দনের চলে যাওয়া দেখে । 
 থানা থেকে বেরোলেই বাইপাস । বাইপাসের ওপারে , হাইরাইসের মাথায় সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে। সূর্যের আরেক নাম দিবাকর । কথাটা মনে আসতেই সতুর মুখে হাল্কা বিদ্রূপের হাসি খেলে যায় । বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোতে ওঠার সময় , সতুর পেছন থেকে দেখা জনার্দনের হাঁটার ভঙ্গিটার কথা মনে আসে । দুতিন দিনের মধ্যে এরকম ভাবেই যেন কাকে হেঁটে যেতে দেখেছে । ভঙ্গিটা যেন খুব চেনা । ক্লান্ত , বিধ্যস্ত সতু ঠিক মনে করতে পারেনা । অটো, যাত্রী বোঝাই হয়ে সতুকে নিয়ে এগিয়ে চলে সতুর বাড়ির দিকে । 


3 comments:

  1. বেশ ইন্টারেস্টিং।

    ReplyDelete
  2. তরুণ চক্রবর্তীOctober 21, 2020 at 12:40 PM

    ধন্যবাদ।রহস্য আরও জমবে।দেখা যাক।

    ReplyDelete
  3. দারুণ লাগছে পড়তে। এর পর কি হয় তাই ভাবছি ...

    ReplyDelete