1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

বিষবৃক্ষ

 (ধারাবাহিক রহস্য কাহিনী )



ছবি : ইন্টারনেট

শঙ্খ চৌধুরী ও চিরঞ্জিত ঘোষ

আগে যা ঘটেছে : উত্তরবঙ্গের  চিলাপাতার জঙ্গলে পুলিশ একটি ক্ষতবিক্ষত লাশ পায়। ময়নাতদন্ত পর বেওয়ারিশ লাশটার সৎকার করে দেয় তারা। পরে খবর কাগজের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে যে কলকাতার  নামী হীরক ব্যাবসায়ী ‘সরকার এন্ড সন্স' পরিবারের  জৈষ্ঠ পুত্র শান্তনু সরকারের লাশ ওটি। কেসের তদন্ত ভার এসে পড়ে ইন্সপেক্টর রুদ্রর উপর। যেহেতু এটি হাই প্রোফাইল কেস তাই ইন্সপেক্টর রুদ্র পুলিশের বড় কর্তাদের আদেশ অসুসারে  দুজন শখের গোয়েন্দা হিমাংশু ও অর্ঘ্যর সাহায্য চায়। কথামতো তারা জঙ্গলের গভীরে ঘটনা স্থলে তদন্ত করতে যায়। সেখানে তারা ফরেস্ট অফিসারদের থেকে  জঙ্গলের কিছু পশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর জানতে পারে। পশুগুলির দেহাবশেষগুলির ময়না তদন্তের কথা বলে তারা কলকাতা যাবে বলে মনস্থির করে।

          গহর্ন এর তীব্র আওয়াজ করে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চ এইসবে বালি ব্রীজের দিকে এগিয়ে গেলো। অর্ঘ অনেকক্ষন ধরে  সিগারেটের ধোঁয়ার রিং বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু আজ গঙ্গার যা হাওয়া! সে আর হিমাংশু এখন গঙ্গার ঘাটে বসে আছে। তারা হাসপাতালে সুপার সাহেবের হাতেপায়ে ধরে দিন দশেকের ছুটি বাগিয়েছে। কোলকাতায় এলে  তারা হিমাংশুর বালির বাড়িতে আস্তানা গাড়ে। গঙ্গার ধারে হিমাংশুদের পৈতৃক বাড়ি। তার বাবা এখানকার একজন নামকরা ডাক্তার। এখন অবশ্য বয়সের ভারে প্র্যাক্টিস ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকদিন পর ছেলে বাড়ি ফিরেছে দেখে হিমাংশুর মায়ের সেকি আপ্যায়ন। আজ তারা দুপুরের ভুঁড়িভোজ সেরে গঙ্গার হওয়া খেতে বেরিয়ে পড়েছে। "এরপর কি করবে ভেবেছো?", অর্ঘর উদ্দেশে হিমাংশু জিজ্ঞেস করলো। "বিকেলে চা আর চিংড়ির চপ, আর রাতে মাটন। আহা গেলোবার জেঠিমার হাতের মাটন কষা এখনো আমার মুখে লেগে রোয়েছে" অর্ঘ্য বললো।"আরে ধুর, আমি কেসটার কোথা বলছি। ওর বিষয়ে কিছু এগোলে?" সিগারেটের শেষ অংশটা গঙ্গায় নিক্ষেপ করে হিমাংশু বললো।"ও তাই বলো!" আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে অর্ঘ্য বলে চললো " রুদ্র ফোন করেছিল । ও জানালো যে আমাদের আসার খবর ও  পাকড়াশী কে দিয়ে দিয়েছে। কাল থেকে কাজে লেগে পড়তে হবে।" "সৌরভ পাকড়াশী? লালবাজার ক্রাইম ব্রাঞ্চ?" হিমাংশুর এই প্রশ্নের উত্তরে অর্ঘ্য শুধু "হু" বলে একটি রবীন্দ্রনাথের গানের কলি গুণগুন করতে লাগলো।

         পরদিন সকালে তারা পুলিশ জীপ করে সরকার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলো। সাথে ইন্সপেক্টর সৌরভ পাকড়াশী। আগের কটা জটিল কেসের সুবাদে ইন্সপেক্টর সৌরভ তাদের পূর্ব পরিচিত। সে কলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চএর একজন ব্রিলিয়ান্ট অফিসার। পথে কিছু  সৌজন্যতামূলক কথার পর সে কেসের বিষয়ে কিছু তথ্য দিলো। যা জানা গেলো যে বিভিন্ন মহল থেকে পুলিশের ওপর খুব চাপ পড়ছে দ্রুত কেসটাকে কিনারা করার জন্য। কিন্তু এখনো খুব বেশি এগোতে পারেনি তারা। বাড়ির লোক আর মৃতক সান্তনুর বন্ধুবান্ধব ও ব্যবসার লোকজনদের জেরা করে খুব বেশি লাভ হয়নি। তবে ব্যবসায়িক ঈর্শাই যে এই অপমৃত্যুর কারণ তা পুলিশ প্রায় নিশ্চিত। এই কথা সেই কথা হতে হতে তারা পৌঁছে গেল সরকার ভিলা'। তোরণ যুক্ত প্রকান্ড ফাটক পেরিয়ে পুলিশ এর গাড়ি পৌঁছলো গাড়ি বারান্দার নীচে। বাড়ি তো নয়, এ যেন কলকাতার বুকে এক প্রাসাদ। বাড়িটা উঁচু প্রাচীর আর ফল ফুলের বড়ো বাগান দিয়ে ঘেরা। চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক গুলো  ছোট বড়ো ফোয়ারা আর শ্বেত পাথরের নারী মূর্তি।একটা সুইমিং পুলএর কিছুটা অংশ গাড়ি থেকেই দেখা যাচ্ছিল। যত্র তত্র লাগানো আছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা আর  বাড়ির প্রাঙ্গনে বেশকতক সশস্ত্র প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড। গাড়ি থামতেই বাড়ির থেকে তাদের দিকে এগিয়ে এলেন  এক ভদ্রলোক। তিনি ইন্সপেক্টর সৌরভএর সাথে করমর্দন সারলেন। সৌরভ হিমাংশু আর অর্ঘ্যর পরিচয় দিলো আর এখানে আসার অভিপ্রায় জানালো। আমরা ডাক্তার শুনে উনি খুব অবাক হলেন। সেটাই স্বাভাবিক। ইনি মিস্টার উমানাথ ঘোষাল, সরকারদের খাস ম্যানেজার। বয়স প্রায় ষাট। বয়েসের ছাপ পড়লেও চোখ দুটো যেন তার অফুরন্ত অভিজ্ঞতার কাহিনী বলছে। তিনি তাদের বেশ সহাস্য অবর্থনা করছেন বটে কিন্তু কীসের যেন এক চিন্তার বলিরেখা তার চেহারায় স্পষ্ট। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে তো হিমাংশু আর অর্ঘ্যর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। যেখানে তাকায়ে সেখানেই প্রাচুর্য আর আভিজাত্যর ছাপ। দামি শ্বেত পাথরের ফরাস, ছাদে বিশাল ঝাড়বাতি, দামি সব আসবাবপত্র, আরো কত কি। এরা যে জাত ধনী তা ভালোই বোঝা যায়। ঘোষাল বাবু তাদের নিয়ে বৈঠকখানায় বসলেন। এই ঘরটা বেশ প্রসস্থ আর একই ভাবে সুসজ্জিত। ঘরের এক প্রান্তে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত বইয়ের থাকে সারি সারি বিভিন্ন ধরণের বই সাজানো। ' এই বইগুলো কে পড়ে? এ তো দেখছি বিভিন্ন বিষয়ের বই', হিমাংশু জিজ্ঞেস করলো। ' আগে এই বইয়ের বহর ছিলোনা এই ঘরে। এবাড়িতে বই পড়ার শখ বা সময় কারও নেই। এত বড় ব্যবসা সামলাতে গিয়েই সবাই আমরা হিমশিম খাই। তবে বই পড়ার শক বড় ম্যাডামের, মনে মিস্টার স্বপন সরকারের স্ত্রী। তিনিই এই বই এর সংগ্রহ তৈরি করেছেন। ওনার তো একটা আস্ত লাইব্রেরি আছে এই বাড়িতে, যেখানে এরচেও তিন-চার গুন বেশি বই আছে ' বলে চললেন ঘোষাল বাবু,'কিন্তু এখন একা হাতে ব্যবসার সব কাজ সামলে উনি আর নিজের প্রিয় লাইব্রেরীতে যাওয়ার সময় পাননা।' কথা হতে হতেই দুজন বেয়ারা চা আর জলখাবার দিয়ে গেল। 'সান্তুনু বাবুর মৃত্যুর বিষয়ে আপনার কি মত?',চায়ের পেয়ালা হাতে নিতেনিতে ঘোষাল বাবুকে প্রশ্ন করলো অর্ঘ্য। একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ঘোষাল বাবু বললেন,' দেখুন আপনাদের থেকে কিছুই লুকোবনা। সন্তু মনে সান্তুনু কে ছোটবেলা থেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছি, ব্যবসা শিখিয়েছি। নিজে সংসার করিনি তাই তাকে পুত্র স্নেহে দেখতাম। তার মা  মারা যাবার পর তার সব দায়িত্বই কর্তা মশাই আমাকে দিয়ে ব্যবসায় মন দিলেন।' 'তার মানে  ইন্দ্রানী দেবী স্বপন বাবুর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী?', ঘোষাল বাবুকে বাঁধা দিয়ে হিমাংশু জিজ্ঞেস করলো। 'হা তাই। ইন্দ্রানী ম্যাডামের সাথে স্যার এর পরিচয় হয় আমাদের গুজরাত এর মাইনিং ইনস্টিটিউটে। সেখানে ম্যাডাম বিদেশ থেকে গবেষণা শেষকরে এসে শিক্ষকতা করছিলেন। তাদের সন্তান রণধীর এখন দুন স্কুলের ছাত্র। এই ঝামেলা মধ্যে তাকে আর বাড়ি আনা হয়নি। শান্তনু  যেমন ভালো ছাত্র ছিল,তেমনি ছিল তার ভালো ব্যবহার। খুব তাড়াতাড়ি পারিবারিক ব্যবসাটাকে বুঝে ফেলেছিলো। কর্তার শরীরটাও ভালো যাচ্ছিলনা। তাই শান্তনু  একাই সব সামলাচ্ছিলো। তার পর কর্তার স্ট্রোক হলো। তখন থেকেই যেন কার নজর লাগলো এই পরিবারে।' এই বলে থামলেন ঘোষাল বাবু। অর্ঘ্য আর হিমাংশু একে অপরের দিকে আড় চোখে একবার তাকালো।


sankha.chowdhury799@gmail.com/
chiranjit.dr@gmail.com
কলকাতা 


No comments:

Post a Comment