1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

আমার ভারত

 

ছবি : ইন্টারনেট 
                                                                   পল্লব পত্রকার 

    কটু আগে অফিস থেকে ফিরেছি।  ফ্রেস হয়ে চা খেতে খেতে একটা ম্যাগাজিনের পাতা ওল্টাচ্ছি। হঠাৎ শুভ্রর ফোন। ‘খবরটা পেয়েছিস ? ' 

   ' কি খবর?' 

   ' খূবই স্যাড নিউজ!' 

  ' তুই বল না!' 

' আলোক আর নেই।' 

   ' কি বলছিস তুই?' 

   ' টিভি খুলে দেখ! আমি রাখছি এখন। ওদের বাড়ি যাচ্ছি।  তুইও চলে আয়।' … বলতে বলতে ও ফোনটা কেটে দিল।  আমি শশব্যস্ত-এ টিভিতে নিউজটা চালালাম। সেখানে সংবাদ পাঠিকা উত্তেজিতভাবে বলে চলেছেন,  ' জম্মু থেকে কাশ্মীর যাবার পথে আজ দুপুরে সামরিক বাসের কনভয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা।  আর ডি এক্স ভর্তি প্রাইভেট কার নিয়ে আত্মঘাতী এক জঙ্গি গোটা একটা বাস উড়িয়ে দিয়েছে। আরোহী চল্লিশ জন ফৌজের কেউ আর বেঁচে নেই।  আরও কয়েকটা বাসে মারাত্মক ক্ষতি। শতাধিক আহতের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ….'  নিচে স্ক্রোল করে বাঙালি দুই শহীদ সৈনিকের নাম বার বার দেখানো হচ্ছে।  বাঁকুড়ার মনসুর মোল্লা, আর হুগলির আলোক সামন্ত। 

   হায় হায়!  এ কি হলো! 

   কোনওরকমে নিজেকে সামলে,  গিন্নিকে 'একটু আসছি আমি'  বলতে বলতে বাড়ির পোশাকেই বেরিয়ে পড়লাম। 

   আমাদের বাড়ি থেকে আলোকদের বাড়ি মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ।  পাশের পাড়াতেই।  শুনশান রাস্তায় চিৎকার করে খূবই কাঁদতে ইচ্ছা করছিল। আর আলোকের নাকে একটা ঘুসি চালিয়ে মনে হচ্ছিল বলি,  কেন তুই ওরকম বিপজ্জনক চাকরিতে গেলি!  সবাই কত বারণ করল!  এমনকি যে দীপার কথা ভেবে তোর তাড়াতাড়ি চাকরি নেওয়া,  তারও পুরোপুরি মত ছিল না!  তুই ত পড়াশোনায় খারাপ ছিলি না!  আমার মতোই ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি হলি!  আমি গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট  করে কম্পিটিটিভ পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেলাম।  আর তুই ফার্স্ট ইয়ারে পড়তে পড়তেই মিলিটারিতে চলে গেলি!  হায় হায় কেন তোকে সেদিন যেতে দিলাম! 

   আলোকদের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই কাকিমার বুকফাটা কান্না কানে এল।  ' হে ভগবান,  এ কি হল!  কেন এমন হল? সেই কবে গেছে ছেলেটা!  কতদিন বাড়ি আসেনি!  কদিন পর আসবে বলেছিল! ….'  

   বাড়ির সামনে বহু লোক জড়ো হয়েছে। অধিকাংশই চুপচাপ। দু একজন চাপা গলায় কথা বলছে।  জঙ্গিদের নিয়ে জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতাও কিছু কিছু কানে এল। 'শুয়োরের বাচ্চাগুলোকে ধরো,  আর গুলি করে মারো!  ওদের আবার বিচার কি! আর যে দেশটা মদত দিচ্ছে! ওখানে তো গোটা দশেক অ্যাটম বোমা ফেলে দেওয়া দরকার!  এক্ষুনি!' 

   তৃতীয়ার ভুতুড়ে চাঁদের আলোয় চারপাশটা কেমন ভৌতিক! গা ছমছমে!  আলোকদের বাড়ির চারপাশে প্রচুর গাছপালা। পিছনে পুকুর। সামনে সুভাষ সংঘের বিশাল মাঠ। ছোটবেলায় এই মাঠে কত না খেলেছি!  ফুটবল ক্রিকেট ভলিবল! চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে আমি আর খেলাধুলা করি না! অলোক কিন্তু দেশের বাড়ি ফিরে এখনও ছোটদের সঙ্গে মেতে ওঠে। ও তো আমার মতো অন্তর্মুখী নয়! বরাবর খোলামেলা, আড্ডাবাজ। সবার সঙ্গে স্বছন্দ। ওরই উদ্যোগে মাঠের ধারে গত বছর একটা স্থায়ী মঞ্চ করা হয়েছে। মঞ্চ তৈরির সময় আলোক বলেছিল, ' আমাদের বাৎসরিক রবীন্দ্র জন্মোৎসব এবার থেকে এখানে হবে।  এছাড়াও ক্লাবের ছোটখাট অনুষ্ঠান ...! ' আমি বলেছিলাম,  ' ক্লাবের অনুষ্ঠান টনুষ্টান বাদ দে, তোর বউ ভালো রবীন্দ্রসংগীত গায়, তাকে ফাংশনে গাওযবি, সেটাই বল! ' আলোক সঙ্গে সঙ্গে রেগে গিয়েছিল। ' কি যা তা বলছিস! ' অনেক চেষ্টায় তাকে তখন শান্ত করেছিলাম। 

   আর রবীন্দ্র জয়ন্তী!  কিচ্ছু করব না! কোনওদিন না! … মনে মনে বিড় বিড় করতে কাকিমা আর দীপার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। ঘরে ঢুকতে পারলাম না। ঠাসাঠাসি মানুষের ভিড়! বুকফাটা আর্তনাদ! পরস্পরকে সান্ত্বনা দেবার ব্যর্থ চেষ্টা! 

   ফিরে এসে মাঠের ধারের বাঁধানো মঞ্চে ঠায় বসে থাকলাম। চেনা অচেনা বেশ কিছু মানুষ। আলো আঁধারিতে সবাইকে অশরীরী মনে হচ্ছে। শুভ্র একটু পরে এসে আমার পাশে বসল। আলোক আর আমার ও কমন ফ্রেন্ড। দুর্ঘটনার আকস্মিকতায় দুজনেই মুষড়ে পড়েছিলাম। কোনো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। অস্থিরতা কাটাতে শুভ্র মাঝে মাঝে সিগারেট ধরাচ্ছিল। আমার সিগারেট চলে না। সেলফোনটা বের করলাম। গিন্নিকে একটা ফোন করা দরকার। সে তো শোনা মাত্রই আকাশ থেকে পড়ল। ' ছি ছি এ কি বলছ তুমি! না না এটা হতেই পারে না!' বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে লাগলো। একটু সামলালে বললাম, ' তোমরা খেয়ে নিও। এই অবস্থায় কিছুতেই এখন ফিরতে পারব না! ' ও কিছু বলল না। 

   গভীর রাতে বাড়ি এলাম। কিন্তু একটুও ঘুমাতে পারলাম না। হাজার স্মৃতি ভেসে উঠতে লাগলো মনের আয়নায়। কলেজমাঠে  ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আলোকের ছক্কা হাঁকিয়ে দীপাদের বাড়ির জানলার কাচ ভেঙে দেওয়া, ক্ষমা চাইতে গিয়ে দীপার সঙ্গে পরিচয়, মন দেওয়া নেওয়া। ওদের প্রেমের খবর পাঁচকান হওয়া, দীপার বাবার বাধা। দীপাকে পাত্রস্ত করার চেষ্টা।  আলোকের চাকরি পাবার বছর দুয়েকের মধ্যেই দীপা আলোকের তড়িঘড়ি রেজিস্ট্রি বিয়ে। পুনেতে আলোকের কোয়াটারে  দীপার সংসার পাতা। বছর তিনেক পরে শাশুড়ির সংসারে দীপার ফিরে আসা। দীপনের জন্ম।  সে একটু বড় হতেই দীপার নতুন করে পড়াশোনা!  

   পরের দিন সকালে আবার গেলাম আলোকদের বাড়ি। কাল থেকে একবারও দীপার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাইনি।  এই প্রথম পেলাম।  ও ঝর  ঝর করে কেঁদে ফেলল। ' এ কি হল কৌশিকদা!'  আমি কোনো উত্তর খুঁজে পেলাম না।  আনত চোখে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম। চেষ্টা করলাম উদ্গত কান্না চাপতে।  পারলাম না। ছেলেমানুষের মতো কাঁদতে লাগলাম। 

   বিশেষ ফ্লাইটে আজ আলোকের মরদেহ দমদম বিমান বন্দরে আনা হচ্ছে। সেখান থেকে আমাদের জগদীশপুর গ্রামে।  দুপুরের মধ্যেই বডি এসে যাবার কথা। 

   গোটা গ্রাম এখন থমথমে, শ্মশানের শান্তিতে। দীপা আর কাকিমা সারাক্ষণ চোখের জল মুছছেন। বছর আটেকের দীপন সবকিছু না বুঝলেও মা ঠাকুমার কান্না দেখে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে। তাকে থামাবর ভাষা কারও জানা নেই। তবু সাধ্যমত চেষ্টা করছে সবাই। 

   আমিও দীপনকে কাছে টানতে গেলাম। কিন্তু ও এলো না। মা ঠাকুমা ছাড়া সবাই যেন ওর আজ অচেনা। অথচ অন্য সময় কি ভালো বাসে আমায়!  আমার সঙ্গে প্রায়ই যায় আমাদের বাড়ি। আমার মেয়ের সঙ্গে খেলা করে।  আমার বউও খূব ভালবাসে ওকে। ও যা খেতে চায় খাওয়ায়। নানা রকম খেলনা কিনে দেয়। দীপা আর দীপনকে নিয়ে আমরা এদিক ওদিক বেড়াতেও গেছি। নাটক সিনেমা দেখেছি। বইমেলা ঘুরেছি। 

   আলোকের পরিবারের সঙ্গে আমার এই ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অনেকে টিকা টিপ্পনি করে।  বন্ধুদের মধ্যেও কেউ কেউ বলে,  ' আলোক তো এখানে থাকে না, তাই তার বউ-এর সব দায়িত্ব আমাদের কৌশিক স্যার নিয়েছেন।'  আমি ওদের কথার কোনো উত্তর দিই না। হেসে উড়িয়ে দিই। ওরা তো জানেনা দীপা আলোকের শুধু প্রেম করে বিয়ে হয়নি,  তাদের প্রণয় প্রবাহে এখনও জোয়ারের উত্তাল রোমাঞ্চ!  আলোকের হার্ড পোস্টিং বলে দীপা এখানে থাকত বটে,  কিন্তু তার দেহমন পড়ে থাকত আলোকের পাশে। দরকার অদরকারে ফোনাফুনি, ভিডিও মেসেজিং,  নিউ ইয়ার বিবাহবার্ষিকী জন্মদিনে গিফট আদান-প্রদান -- এসব তো ছিলই, অতিরিক্ত যা ছিল তা খু্ব কম দম্পতিরই থাকে!  পারস্পরিক গভীর  শ্রদ্ধা। 

   একদিন আলোক বলেছিল,  ' দীপা যে আমায় বিয়ে করবে এটা ভাবতেই পারিনি।  ওর কত গুন! পড়াশোনায় ভালো। গান গায় ভালো...' ' আর ও যে অত রূপসী, মাধুরী দীক্ষিতকে হার মানায় তা তো বলছিস না! ' হি হি করে হাসতে হাসতে আলোক বলে,  ' আমাকেও কি দেখতে খারাপ! ' ' না তুইও টল ডার্ক হ্যান্ডসাম -- মেয়েরা যেমন চায়! ' 

   অন্য আর একদিন আমি  বলেছিলাম, ' তোর চোখে ও দেবী,  তাই না!'  আলোক বলেছিল, ' তা যা বলেছিস! ওর বাবা কত বড় ডাক্তার! মা অধ্যাপিকা!  আর আমি সেই ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি!  মা প্রাইমারি স্কুলে টিচারি করে!'  ' দ্যাখ প্রেমে পড়লে মানুষ অত বাছ বিচার করে না!'  আবার আলোকের হাসি।  হো হো করে, হা হা করে। বীরের মতো, বিজয়ীর মতো! 

   সারা দুপুর অপেক্ষা করেও লাভ হল না। আলোকের বডি আসতে প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেল। প্রত্যেক মোড়ে শত শত লোক অপেক্ষায়। কিছু কিছু জায়গায় শহীদবেদী তৈরি করে আলোকের ছবি টাঙিয়ে মোমবাতি ধুপ ইত্যাদি দেবার ব্যবস্থা।  ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের পদস্থ অফিসারদের কয়েকজন এসে গেছেন আলোকদের বাড়ি। সেইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সামরিক বাহিনীর দু একজন। আর এসেছেন অজস্র সাধারণ মানুষ। সামনের মাঠে জন সমুদ্র। যেন মেলা বসে গেছে! টুকটাক খাবার দাবারও বিক্রি হচ্ছে। আর মাঝে মাঝে ' দেশপ্রেমী'দের স্লোগান। ' আলোক সামন্ত অমর রহে!'  ' তোমায় আমরা ভুলছি না,  ভুলব না !' এ পর্যন্ত তবু ঠিক ছিল!  কিন্তু এর সঙ্গেই যুক্ত হচ্ছিল,  ' অমুক দেশ তমুকের ছেলে' ' অমুক দেশ নিপাত যাক! '

   দীপা আর কাকিমাকে মিডিয়ার লোক ঘিরে রেখেছে।  কাছে এগোনো যাচ্ছে না। জরুরি একটা কাজে আটকে গিয়ে শুভ্র আজ আসতে পারেনি।  বড্ড একা লাগছিল। অগত্যা বাড়ি ফিরে এলাম।  জানি মানুষের শেষ যাত্রায় সঙ্গে থাকতে হয়। কাছের মানুষের ক্ষেত্রে তো হয়ই ।  কিন্তু শ্রদ্ধা নিবেদনের এই শ্রাদ্ধ মুহূর্তে আমার মন কিছুতেই টিকছিল না। বড় রাস্তার ধারেই আমাদের বাড়ি। এখানে দাঁড়ালেই শববাহী গাড়িটা দেখা যাবে। কিছুই ত দেখার নেই!  শুধুমাত্র বাক্সবন্দী কাপড় জড়ানো একতাল দলাপাকানো মাংসপিণ্ড! 

   আমাদের বাড়ির সামনেও বেশ কিছু লোক।  যথারীতি ইতস্তত গুঞ্জন।  হা হুতাশ। সন্ত্রাসবাদীদের তথা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গুষ্টির তুষ্টিসাধন। আমি বার কয়েক সবাইকে অনুরোধ করলাম,  যাতে তারা একটু চুপ করে।  কিন্তু কেউ আমার কথা গ্রাহ্য করল না।  মশগুল থাকল নিজেদের কথায়। 

   হঠাৎ আর্মির দুটো পাইলট মোটরবাইক রাস্তা দিয়ে চলে গেল। তারপরেই দেখা গেল বেশ কয়েকটা ছোট বড় গাড়ি।  সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের মধ্যে সোরগোল। ' ওই তো আসছে' ওই তো আসছে'!  দেখলাম খু্ব ধীর গতির বিশাল একটা পুলিশভ্যান এগিয়ে আসছে। তার পিছনে শববাহী গাড়ি। তারও পিছনে উচ্চপদস্ত অফিসার, রাজনৈতিক নেতাদের দশ বারোটা মোটরগাড়ি। একেবারে পিছনে বিশাল বাইকবাহিনী। প্রায় দেড় দুশো জনের। শেষ আর হতেই চায়না। আলোকের বাড়ির সামনে থাকা ' দেশপ্রেমী'দের মতোই তাদের গলায় হিংস্র চিৎকার। অশ্রাব্য খিস্তিখেউড়। 

   আর দেখতে পারছিলাম না। চুপচাপ ঘরে ঢুকে টিভি খুললাম। একটা চ্যানেল দীপার ইন্টারভিউ নিতে শুরু করেছে। 

   ' আপনি কি চান অপরাধীরা শাস্তি পাক?' 

   কাঁদতে কাঁদতে দীপা বলল, ' হ্যাঁ অবশ্যই চাই প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়ুক বিচারের পর তাদের শাস্তি হোক।' 

   ' এই হামলার পিছনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাত আছে বলে সবাই মনে করছেন।  আপনারও কি তাই মত?' 

   ' জানিনা। '

   ' আপনি কি চান প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হোক? ' 

   '  না আমি যুদ্ধ চাই না।' 

   ' কেন চান না! এতগুলো তরতাজা প্রাণ চলে গেল! আমরা প্রতিশোধ নেব না?' 

   আবার কাঁদতে লাগলো দীপা।  কাঁদতে কাঁদতেই বলল,  ' যাঁরা যুদ্ধ চান, তাঁরা তো যুদ্ধ করেন না। যাঁদের যুদ্ধে যেতে হয়,  তাঁরা কখনোই যুদ্ধ চান না।  আর এভাবে প্রতিশোধ হয়না। এতে শুধু দু দেশের কিছু প্রাণ যায়। মহিলারা স্বামী হারান, সন্তান হারান।' 

   ' কি বলছেন আপনি?' 

   ' হ্যাঁ এটাই আমার বিশ্বাস। আমাদের দেশ বুদ্ধের দেশ, রবীন্দ্রনাথের দেশ। গান্ধীজির দেশ।  আমরা তো যুগে যুগে দেশে দেশে শান্তির বাণী শুনিয়েছি! আমরা যুদ্ধ করব কেন? 

   আমার ইচ্ছে করছিল দৌড়ে দীপার কাছে যাই। ওর পা দুটো চোখের জলে ধুইয়ে দিই! আলোক তুই স্বর্গে আছিস,  জানি। ওপর থেকেই তুই দেখ!  তোর দেবী কি বলছে! সে আমাদের শুভবোধ! সে আমাদের বিবেক!  সে আমাদের ভারতবর্ষ! 

   আর কদিন পরেই পঁচিশে বৈশাখ।  অবশ্যই রবীন্দ্রজয়ন্তী হবে। আলোকের গড়া মঞ্চেই হবে। সশরীরে সে নাই বা থাকল!  অন্যভাবে থাকবে। তার নিশ্বাস মিশে থাকবে বাতাসে।  দীপন ' বীরপুরুষ' আবৃত্তি করবে। দীপা তার হৃদয় মন্থন করে সুরেলা কন্ঠে গাইবে, ' হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব …' 

   আমি কাঁদতে লাগলাম।  আমি হাসতে লাগলাম। 

pallabkumarparui@gmail.com
কলকাতা



No comments:

Post a Comment