1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

লাল পলাশের ধবণী

 

ছবি : লেখকের তোলা                                                                                          সৌপ্তিক দাস

          বসন্ত এসে গেছে, আর পলাশ ফুলের আগুন ঝরানো রূপ দেখবনা তা কি হয়? তাই দোলের সপ্তাহে আমরা চারজনে বেড়িয়ে পরলাম পুরুলিয়ার হুড়া থানার ধবণী গ্রামের উদ্দেশ্যে। শহরের ব্যস্ত জীবন ও কংক্রিটের জঙ্গল থেকে বহুদূরে অবস্থিত এই অখ্যাত গ্রামের কথা শুনতে পাই আমার এক বন্ধুর মুখে। আমার বন্ধুর কাছেই সেখানকার হোমস্টের কোথাও জানতে পারি। আজকের দিনে এইসব অফবিট জায়গায় হোমস্টের দৌলতে থাকা খাওয়ার কোনো সমস্যা হয়না।

ছবি : লেখকের তোলা

বন্ধুর মুখে রাস্তার বর্ণনা শুনে আদ্রা চক্রধরপুরের রিজার্ভেশনের টিকিট কাটতে গিয়ে দেখি ওয়েটিং লিস্ট। তাই নির্দিষ্ট দিনে পুরুলিয়ার জেনারেল টিকিট কেটেই উঠে পরি ট্রেনে। ভালোভাবে শুতে না পারার জন্য প্রথমে মনটা খিটখিট করলেও পরে বুঝতে পারি তা আমাদের কাছে সাপে বড় হওয়ার মতোই হয়েছে। কারণ ট্রেন প্রায় চার ঘন্টা দেরীতে চলছে। তাই আর সাতপাঁচ না ভেবে ঠিক হলো আমরা বাঁকুড়া স্টেশনেই নামবো। কারণ বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া দুই দিক দিয়েই যাওয়া যায় ধবণীতে। সেইমতো সাড়ে চারটে নাগাদ যখন আমরা বাঁকুড়া স্টেশনে নামলাম তখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্ল্যাটফর্মেই হাত মুখ ধুয়ে স্টেশনের বাইরে এসে চোখে পড়লো দুটো চায়ের দোকান। চায়ের ভাঁড়ে চা খেতে খেতে দোকানের মালিকের থেকেই জানতে পারলাম সকাল ছ’টা নাগাদ পুরুলিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যাবে। দোকানের পাশে বসে গল্প করতে করতে দেখি ঘড়ির কাঁটা ছ’টা ছুঁইছুঁই। তাই আর দেরী না করে বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি ছ’টা পনেরো নাগাদ পুরুলিয়ার বাস আছে।

ছবি : লেখকের তোলা

সেইমতো বাসে উঠে টিকিট কেটে নিলাম। আমাদের গন্থব্য বিশপুরিয়া বাসস্ট্যান্ড। বাস নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে প্রায় এক ঘন্টা পনেরো মিনিট পর আমাদের বিশপুরিয়াতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো পুরুলিয়ার দিকে। বিশপুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে প্রথমেই আমাদের হোমস্টের মালিক আশিষ মাহাতো বাবুকে ফোন করায় তিনি বললেন একজন অটো ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দেবেন। প্রায় পনেরো মিনিট পর অটো আসবে শুনে আমরা প্রাতরাশ করে নিলাম। তারপর অটো এসে গেলে তাতে চড়ে রওনা দিলাম আমাদের হোমস্টের উদ্দেশ্যে। গাড়িতে করে প্রায় পাঁচ কিমি চলার পর এসে গেলাম ধবনী গ্রামে।

ছবি : লেখকের তোলা

গ্রামের কাঁচা রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ চলার পরেই এসে পৌঁছালাম আমাদের হোমস্টে তে। অটোতে করে গ্রামের মেঠো পথ ধরে আসতে আসতে দুধারের লাল পলাশ চোখ জুরিয়ে দেয়। হোমস্টেতে পৌঁছে দেখি এ যেন গ্রাম্য পরিবেশের ছোঁয়া। টালির চাল দেওয়া বাড়িতে একটা ঘর বুক করা ছিল। পাশাপাশি দুটি বিছানায় আমাদের চার জনের থাকার ব্যাবস্থা। বাড়ির সামনেই সারি সারি পলাশের বাগান। ফ্রেস হয়ে বিছানায় শুয়ে গড়াচ্ছি এমন সময়ে দুপুরের খাবারের ডাক এলো। খেয়ে উঠে ঘুরতে যাব বলেই একটু তাড়াতাড়িই খেতে বসে গেলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমরা চারজন একটা অটো ভাড়া করে চললাম সোজা শিলাবতী নদীর উৎস দেখতে।রাস্তার চারপাশে পলাশের অপরূপ শোভা দেখতে দেখতে পৌছে গেলাম শিলাবতীর উৎসের কাছে। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সোজা চললাম ফুটিয়ারি ড্যামের দিকে। তিলাবনি পাহাড়ের কোলে এই ড্যাম দেখে আমরা যাবো সোজা আদিবাসীদের গ্রাম হাতিমারাতে দেওয়াল চিত্র দেখতে। আদিবাসীদের এই অপরূপ দেওয়াল চিত্র দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। সেখানে কিছুক্ষণ কাটানোর পর পলাশের রুপ দেখতে দেখতে ফিরে এলাম আমাদের হোমস্টে তে। সেদিন রাতে কাঠের চুলায় তৈরী খাবার খেয়ে শুতে গেলাম। পরদিন সকাল সকাল লুচি আলুর তরকারী দিয়ে প্রাতরাশ করে ধবণী গ্রামের এই প্রাকৃতিক রুপ আর গ্রামের মানুষদের সরল সাদামাটা জীবনযাত্রাকে বুকে নিয়ে ফিরে চললাম আমাদের কংক্রিটের জঙ্গলের উদ্দেশ্যে।


ছবি : লেখকের তোলা

যাওয়া আসা -

পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া দুই দিক দিয়েই যাওয়া গেলেও আমার মনে হয় বাঁকুড়া হয়ে যাওয়াটা বেটার।


souptik.25@gmail.com
হরিনাভী,কলকাতা



1 comment:

  1. পুরুলিয়া শহরে একটা কাজে গিয়ে , মার্চ মাসের ১১ তারিখ , সকালে খন্টা দেড়েকের জন্য একটা গাড়ি করে গ্রামের দিকে চলে গেছলাম, পলাশ দেখতে। খুব সুন্দর । এই লেখায় " শাপে বর" বানানে " বড়" লেখা হয়েছে ; কেন ?

    ReplyDelete