1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Wednesday, October 21, 2020

পজিটিভ

 

ছবি : ইন্টারনেট
                                             
                                                    
ডাঃ নীলাঞ্জন  চট্টোপাধ্যায়     

        কর্তা ও গিন্নী সকালের  চা আর জলখাবার  নিয়ে বসেছেন।বয়স যথাক্রমে আনুমানিক ৬৭ ও ৬০।অনিমেষ ও  সুতপা ।  তারা চা খেতে খেতে কথা বলছেন।

অনিমেষ -   গিন্নী আজ সকালে বাজারে গিয়ে একটা ভাল কাজ সেরে এসেছি। বলতে পারো,একেবারে      গোড়াপত্তন করে এসেছি।

সুতপা  -  কিসের আবার গোড়াপত্তন?  আবার কারো সঙ্গে এই সময়ে আবার নতুন কোন ব্যাবসা ফেদে বসলে নাকি?  দেখ এই ব্যবসা ব্যাবসা করে তুমি এর আগে অনেক লোকসান করেছো, এবার যদি তুমি আবার

            নতুন করে কোন কাজে জড়িয়েছো, তোমার একদিন কি আমার একদিন!  

অনিমেষ -    উঃ তোমাকে নিয়ে আর পারিনা, না শুনেই তোমার বিচার সারা হয়ে, দণ্ডাজ্ঞা হয়ে গেলো। এখন কোতোয়াল ডাকলেই হয়, ষোলকলা পূর্ণ করে ফেলো।

সুতপা   -  (রাগে গজগজ করে) ঠিক আছে কি বলবে বলো। আমি এই চুপ করলাম, আর একটাও 

             কথা  ৷     যদি বলি!!

  অনিমেষ   - বলতেই তো চাইছি, কিন্তু তুমি তো..। বলছি বলছি, ঘোষপাড়ায় বীরেনবাবুর সাথে আজ

    বাজারে দেখা হলো।  একথা, সেকথার পর ওঁর  ছেলে সুব্রতর  প্রসঙ্গ এলো। আমিও আমাদের লীনার ইংরেজি নিয়ে MA পাস করবার কথা জানিয়ে দিলাম বীরেনবাবুকে।  (হাসি)

সুতপা -   কথা না বলেও পারিনা, জানি এইজন্যই তোমার দেরী হয় বাজারে, যেচে পড়ে কথা কে বলতে বলেছে তোমাকে!

অনিমেষ --  যেচে কথা কোথায় দেখলে ! রাস্তায় দেখা হলে যেরকম লোকে বলে আর কি!

সুতপা    -- বলোনি, তবে বীরেনবাবুর ছেলে সুব্রত কি উড়ে এলো।

অনিমেষ -- আরে উড়েই তো এসেছে ব্যাঙ্গালোর থেকে। লকডাউনে বাড়ি এসেছে।  জানো তো ও এখন

         এক বিদেশি কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার।  লকডাউন শেষ হলেই আবার সেখানে ফিরবে।  বুঝলে আমি

      ৷ কথাটা এমন করে সাজালাম..

সুতপা  -- সাজালে?  কি সাজালে?  কার জন্য সাজালে! চিরকালের গুবলেট করা একটা লোক, তিনি নাকি ৷ সাজাচ্ছেন!

অনিমেষ  -  সাজিয়েছি গো, সাজিয়েছি।  একেব্বারে পজিটিভ কেস  বীরেনবাবু..  কথা বলতে বলতে

বাড়িতে নিয়ে গেলেন আমাকে। চা, টা না খাইয়ে ছাড়বেনা, যা বুঝলাম পজিটিভ কেস ছেলেটা..মানে সুব্রত।  লীনার জন্য মোটামুটি আমি ব্যাপারটা পজিটিভ করে নিলাম ( হাসি)

সুতপা  -- ও মাগো কি হল গো আমার , এত মেনে চললাম সেই মার্চ মাস থেকে, উনি শেষে  পজিটিভ কেস

নিয়ে এলেন বাড়িতে ;ওরে লীনা তাড়াতাড়ি আয়, বাবাকে বাথরুমে নিয়ে ভাল করে wash কর। করোনা

           নিয়ে এলো তোর বাবা, এখন কি হবে , আর ভাবতে পারছিনা।

অনিমেষ -- কি আবোল তাবোল বলছো, কে পজিটিভ, কিসের পজিটিভ? আমাকে এবার পাগলা গারদে

      দিয়ে দাও বরং, বেঁচে যাই। (বিছানার উপর শুয়ে পড়ে)

আগন্তকের নাম তপন (প্রবেশ) - কে পজিটিভ হয়েছে বৌদি, এ পাড়ায় তো তেমন কোন খবর নেই!

সুতপা - জানিনা, আমার মাথা ঝিমঝিম করছে, লীনা ও লীনা একটু হাতপাখাটা দিয়ে হাওয়া কর।

তপন- ও বৌদি, ও দাদা,( কাছে গিয়ে দেখে)শুয়ে আছেন কেন?  দাদার কবে থেকে শরীর খারাপ?

(লীনা এসে দুজনকেই হাওয়া করবে, জল দেবে)

তপন- ও অনিমেষ দা, কথা বলুন। জ্বর,কাশি, আর কি হচ্ছে দাদা, আমাকে বলুন, আমি দেখছি।

সুতপা-( কান্নার সুরে)  এই মাত্র বাজার থেকে এসে বলছে পজিটিভ কেস, বোধহয় টেস্ট করে এসেছে

তোমার দাদা, ও মা গো। কি করি আমার দাদা কে একবার আসতে বলি।

তপন -- না না বৌদি উতলা হবেন না, ডাক্তারের সাথে কথা বলছি, helpline - - এ জানাচ্ছি, কোন ভয়

নেই,

(অনিমেষ লাফিয়ে উঠে বিছানায় বসে)

অনিমেষ - এই তো  তপন এসে গেছো! কোতোয়াল সাহেব! আমার গর্দান নিয়ে নাও এবার

তপন - দাদা, কি বলছো তুমি, মাথার কিছু সমস্যা হচ্ছে মনে হয়!

লীনা - তপন কাকু বাবা এরকম করছে কেন?

অনিমেষ - এতক্ষন মাথার সমস্যা ছিলনা, এখন হচ্ছে,

তপন - কিন্তু দাদা বৌদি যে বললো, কে পজিটিভ!

অনিমেষ - ওরে এ পজিটিভ, সে পজিটিভ সে পজিটিভ নয়, আজ বীরেনবাবুর ছেলে সুব্রতর সাথে

লীনা বিয়ের কথা ফাইনাল প্রায়  হয়ে গেলো, ওদের বাড়িতে। সবার সাথে কথা বলে  পজিটিভ মনে হল, সেটাই এসে বলতেই যত বিপত্তি।

তপন, লীনা, সুতপা ( একসাথে)  - এ্যা এ্যা....

অনিমেষ - হ্যা আ....তবে আর দরকার নেই, আমি ওটা নেগেটিভ করে আসছি এখনই...

  খুব শিক্ষা  হয়েছে আমার! কথা না শুনেই চীৎকার..

তপন - ঠিক কথাই, দাদার কথাটা শুনলে আর এতকিছু হতোনা।

অনিমেষ - না ভাই তপন, আমি এবার নেগেটিভ করে দিয়ে আসছি, আর তোমাদের পজিটিভের

  চিন্তা  থাকবেনা।। 

সুতপা - না গো না, ওটা পজিটিভই থাক, এরকম "পজিটিভ" কে না চায় ( হাসি)

তপন - কি রে লীনা তুই বল, পজিটিভ তো!  ( সবাই, হাসবে)

লীনা - জানিনা যাও, আমি বাবা আর তোমার চা করে আনছি।

তপন - চা এর সাথে দুটো বিস্কুট, আনিস, অনেক টা এনার্জি খরচ হলো।  (হাসি)

nilanjanchatterjee90@gmail.com
কলকাতা


No comments:

Post a Comment