1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

একটু উষ্ণতার জন্য

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

একটু উষ্ণতার জন্য 
 গোবিন্দ মোদক 

                                   (এক)

             বেশ কিছুদিন ধরেই বেঁচে থাকবার কোনও মানে খুজে পাচ্ছিলাম না। একটা সীমাহীন অলসতা আর সর্বগ্রাসী উদাসীনতা আমাকে ক্রমশঃ গ্রাস করে ফেলছিল। বস্তুতপক্ষে একটা নৈব্যক্তিক ব্যাপার-স্যাপার আমার সমস্ত চেতনাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে ফেলছিল আষ্টেপৃষ্ঠে। যদিও আমি তার প্রকৃতি এবং ক্ষমতা সম্বন্ধে সম্যকভাবে ওয়াকিবহাল ছিলাম না তথাপি আমার মনে হচ্ছিল এ থেকে পরিত্রাণের কোনও উপায় নেই। অবশ্য পরিত্রাণ পাওয়ার মতো বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টাও আমি করিনি, কেননা কি যেন এক অজানা কারণে আমার মনে হয়েছিল এর থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার সহজ বা কঠিন --- কোনও উপায়ই নেই। প্রকৃতপক্ষে আমি বিষয়টির হাতের এক ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছিলাম আর আমার সত্বাকে একটু একটু করে হারিয়ে যেতে দিচ্ছিলাম কোনো বাধা প্রদান ছাড়াই। আর তাছাড়া কোনও বাধা যে দেওয়া যায় বা নিজেকে এর থেকে সরিয়ে আনা যায় --- এই সহজ কথাটা চিন্তা করবার মতো মানসিক সামর্থ্য আমার ছিল না। আমি একটা সচল ও জীবন্ত জড়পদার্থে পরিণত হচ্ছিলাম। পদার্থবিদ্যার ও জীববিদ্যার নিয়ম-কানুনের প্রাথমিক পর্যায়গুলো বোধহয় আমার শরীরের উপর সঠিকভাবে কাজ করছিল না। একটা জীবন্ত মাংসপিণ্ডের মতো আমি চলাফেরা করছিলাম আর যা কিছু ঘটছিল তা সবই ছিল আমার আয়ত্ত্বের বাইরে।

           সেই মুহূর্তে নিজেকে নিয়ে আমার এতোটুকু চিন্তার অবকাশ ছিল না --- কেননা চিন্তা করবার মতো সংজ্ঞা-যুক্ত অবস্থায় তখন আমি ছিলাম না। পরিবারের অন্য সব চিন্তাশীল মানুষগুলো যে আমার বিষয়ে ক্রমাগত অস্বস্তি নিয়ে ফিরছে --- এটা দেখে বোঝার মত শক্তি আমার এতটুকুও ছিল না। বোধহয় আমার ভাবলেশহীন তাকানো আর শূন্য দৃষ্টিতে এমন কিছু ওরা দেখেছিল যাতে ওদের মধ্যে উদ্বিগ্ন হবার মতো যথেষ্ট কারণ সঞ্চারিত হয়েছিল।  ওরা এই ব্যাপারটাকে ওদের সহজাত ক্ষমতা দিয়ে বুঝতে পারছিল না, তাই আতঙ্কিত হবার মতো একটা কারণ ওদের সবার জীবনে দেখা দিয়েছিল। মোটের উপর আমার অবস্থানটিকে ওরা যে কিভাবে দেখছিল বা দেখতে চাইছিল বা দেখা উচিত ছিল এই চিন্তায় ওরা বেশি বিব্রত হচ্ছিল। অথচ ওদের কথামতো খাওয়া-দাওয়া, বসা-শোয়া, বাথরুম যাওয়া, পোশাক পরা ইত্যাদি শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপগুলো আমি নিয়মিতই পালন করতাম। সেক্ষেত্রে ওদের মনের জিজ্ঞাসা চিহ্নটা আরও ধারালো আর তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছিল। কেননা ওরা আমাকে ঠিক বুঝতে পারছিল না।

         ওরা প্রকাশ্যে বা আড়ালে আমার সম্বন্ধে উদ্বেগপূর্ণ আলোচনা করছিল, আর তাতে ওদের নতুন করে উদ্বিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণও ছিল। মোটের উপর ওরা আমাকে সম্পূর্ণ  প্রকৃতিস্থ যেমন ভাবতে পারছিল না, তেমনই আমাকে পাগল ভাববার মতো বিন্দুমাত্র অভিপ্রায় বা সাহসও ওদের ছিল না। মূলতঃ সেই কারণেই ওরা আরও বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করছিল এবং সমস্ত পরিবার জুড়ে নেমে আসছিল এক উদ্বেগপূর্ণ অস্বস্তিকর বাতাবরণ।

         আমি এ সমস্ত কিছুর উর্ধে ছিলাম এবং এগুলোর কোনও কিছুই আমাকে স্পর্শ বা বিচলিত করতে পারছিল না। আমার এরূপ বৈকল্যের কোনও কারণ আমার জানা ছিল না, বা জানবার কিংবা ভাববার মতো মানসিক অবস্থায় আমি ছিলাম না। অন্যসময় হলে আমার এরূপ মানসিকতার কারণে আমি নিজেই বিচলিত হতাম, কিন্তু এই মুহূর্তে যে সমস্ত উৎসেচক বা হরমোনের প্রভাবে মানুষ সাড়া দেয় সেগুলি সার্বিকভাবে আমার শরীরে অনুপস্থিত ছিল এবং স্বাভাবিকভাবেই সেজন্য আমার কোন মাথাব্যথা ছিল না। 

           কিন্তু কারণগুলি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের যথেষ্ট শিরঃপীড়ার কারণ ছিল, এবং তারা আমার এরূপ মানসিক অবস্থার সম্ভাব্য কারণগুলি আলোচনা করতে করতে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছেছিল যেখানে হতাশ হয়ে পড়বার মতো অনেকগুলো প্রশ্নচিহ্ন তাদেরকে ঘিরে ধরেছিল এবং প্রায় সবাই হাল ছেড়ে দেওয়ার অবস্থার প্রাক্ পর্যায়ে পৌঁছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিল। অবশেষে আমি যে তাদের চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু একথা তারা নানাভাবে আমাকে বোঝাবার চেষ্টা করেছিল এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই একশো শতাংশ ব্যর্থ হয়েছিল। কেননা দু'একটি উত্তেজিত কথাবার্তা (যদিও সেটা উত্তেজিত কথাবার্তা  'কথা বোঝবার মতো অবস্থায় আমি ছিলাম না) আমার কানে প্রবেশ করলেও এবং সেসব কথাবার্তার প্রায় সবগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ সম্যকভাবে জানলেও আমার মস্তিষ্ক সেগুলো নিয়ে মোটেই বিচলিত ছিল না, বরং আমার বর্তমান নিরাসক্ত, নিরালম্ব অবস্থাকে টিঁকিয়ে রাখতেই বোধহয় বেশি ব্যস্ত ছিল আমার মস্তিষ্ক।

                                     (দুই)

            অল্প কিছুদিন আগে থেকেই সমস্ত বাড়ি জুড়ে একটা চুপচাপ-ফিসফাস অবস্থা চালু হয়েছে, ধূপের ধোঁয়ার মতো একটা উদ্বেগের ধোঁয়া বাড়ির সর্বত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে সবসময়। পার্থিব কোনও কিছু যে আমাকে আর স্পর্শ করছে না --- একথা সম্যকভাবে জানবার পর থেকে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া বাড়িটায় বিরাজ করছে নতুন করা চুনকামের মতো --- পুরোনো দাগ-ছোপ মিলিয়ে গিয়ে যেন নতুন একটা 'লুক'-এর মতো। আমার প্রতি সবার তাকানোতে একটা অপার্থিব করুণা ছড়িয়ে পড়ছে আজকাল, যদিও সে ব্যাপারটা বোঝবার মতো অবস্থায় আমি নেই। আর সেই কারণেই বেশ কয়েকবার মোটা চশমার ফ্রেমের ততোধিক মোটা চেহারার গম্ভীর ডাক্তার বাড়িতে এসেছেন এবং সবার উদ্বিগ্নতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে দু'দিকে মাথা নাড়িয়ে বিদায় নিয়েছেন তার পাওনা-গন্ডা বুঝে নিয়ে।

          ইদানিং বাড়ির দু'একজন সদস্য বিদ্রোহী হতে শুরু করেছে এবং আমার সম্পর্কে কটূক্তি ও অসম্মানজনক কথা বলছে, অবশ্য তারাই আবার আমার ভাবলেশহীন মরা মানুষের দৃষ্টি সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছে আমার সামনে থেকে। বাড়ির বয়স্কদের মতে আমাকে কোনোভাবেই পাগলা-গারদে দেওয়া চলে না, কেননা আমি নাকি অপ্রকৃতিস্থ নই, আমার ঘুমও আছে যথেষ্ট। আবার বাড়ির কারও কারও মতে আমি স্মৃতিভ্রংশ রোগীও নই, কেননা কোনও কিছুই আমি ভুলিনি বা ভোলবার কোনও লক্ষণ আমার আচার-আচরণে পরিলক্ষিত হয়নি। তথাপি আমার এই অস্বাভাবিকতাতে সবাই এতো বেশি উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে যে, কি করা উচিত বা অনুচিত হবে তা বোঝবার মতো অবস্থায় ওরা আর নেই। বস্তুতপক্ষে পরিবারের একজন অন্যতম সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এ পরিবারে আমার কোনও অস্তিত্ব নেই অথবা ভীষণভাবেই রয়েছে অস্তিত্ব যা অন্য সবার পক্ষে যথেষ্ট পীড়াদায়ক ও উদ্বেগের কারণ।

                                    (তিন)

           আজ, এখন, এই মুহূর্তে আমি আমার হাঁটু দু'খানি যতোখানি সম্ভব ভাঁজ করে উবু হয়ে বসে আছি। বসে আছি বহুক্ষণ ধরে, বোধকরি সেই সকাল থেকেই। বোধকরি এভাবে হাঁটু মুড়ে নিশ্চুপ বসে থাকবার জন্যই আমার জন্ম। আমি এতোটুকু অঙ্গ সঞ্চালন করছি না, নড়ছি না এতোটুকুও, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিও না। শুধু সময়মতো আমার চোখের পলক পড়ছে মাত্র। জীবন্ত মডেলরা যেমন অনায়াস ভঙ্গিতে অথচ আয়াসসাধ্য দক্ষতায় মডেলের সত্বাকে জাগিয়ে রাখে, তেমনভাবেই আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি। আমার এই নীরবতার মডেলের কোনও নাম নেই,  থাকলেও আমার কোনো লাভ-ক্ষতির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতো না, তবুও  হয়তো "বসে আছি বসে থাকবার জন্যই" শীর্ষক ক্যাপশনটি সুপ্রযুক্ত হতো আমার বসার ভঙ্গিটার নামকরণের ক্ষেত্রে ! না, কোনও সৌভাগ্যবান ক্যামেরাম্যান এক্ষেত্রে উপস্থিত নেই এবং হয়তো তাবৎ আলোকচিত্রীদের কাছে এটা একটা চরম দুর্ভাগ্য যে তারা এতো জীবন্ত ছবিটা তাদের ফ্রেমবন্দি করতে পারল না ! এই যে নিরাসক্ত বসে-থাকা, জাগতিক সমস্ত কিছুর উর্দ্ধে নিদারুণ নির্লিপ্ততা নিয়ে স্থাণু হয়ে থাকা --- এর কোনও সুসংগত কারণ আমার জানা নেই। তথাপি খুবই আশ্চর্যজনকভাবে আমি, শ্রী তাপস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, এক কেউকেটা সওদাগরী অফিসের বড়বাবু, অনন্যোপায় হয়ে বসে আছি একইভাবে। বোধকরি অনন্তকাল এই বসে থাকবার মাঝখানে বেশ কয়েকজন ব্রহ্মা এসেছেন এবং গিয়েছেন ; অনেকগুলো আলোকবর্ষ হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে --- অথচ আমার নির্লিপ্তিতে কোনও ব্যাঘাত ঘটে নি।

         আমি টের পাচ্ছি না বটে, তবুও আমার চারপাশে আমার পরিবারের লোকজন সন্ত্রস্তভাবে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের ফিসফাস, উদ্বেগজনক কথাবার্তা, কটাক্ষ, সরাসরি আক্রমণ, অশ্লীল গালাগাল বা আমার এই অবস্থাকে ভড়ং উপাধি দিয়ে তীক্ষ্ণ বাক্যবাণসহ কটুক্তি --- কিছুই আমাকে স্পর্শ করতে পারছে না। বস্তুতপক্ষে আমি এমন একজন অপার্থিব দেহধারীতে পরিণত হয়েছি যে, আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন নই অথবা স্নায়ু-নিউরোন-মস্তিষ্ক --- এ সমস্ত ব্যাপার-স্যাপার আমার প্রকৃতির সম্পূর্ণ বাইরের কোনও বস্তু হওয়ায় জীবন্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার কোনও উত্তেজনা নেই, উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার ব্যাপার-স্যাপার গুলোও নেই ! মোটের উপর আমি নিজে কি, কেন ও কী জন্য --- এসবের উত্তর যেমন আমার কাছে নেই, তেমনই পরিবারের আর সবাইও আমার ওই ব্যাপারগুলোর কিছুই জানে না ! সব মিলিয়ে আমার অস্তিত্বের এই ভাসমান অবস্থায় ঘড়ির কাঁটা তার নিরবিচ্ছিন্ন কর্তব্য পালন করছিল, আমার হৃদয়ের লাব-ডুপ্ও স্পন্দিত-ছন্দিত হচ্ছিল সঠিক ব্যবধানে, শুধু অস্তিত্বের ব্যাপারে প্রশ্ন চিহ্নটা ক্রমাগত বড়ো হতে থাকছিল। আর আমি পরম নিরাসক্তের মতো হাঁটু দু'টো ভাঁজ করে বিছানার খুব অল্প অংশ দখল করে বসেছিলাম আজন্মকাল --- এ কথা আমার দু'একবার মনে হচ্ছিল যেন ! কিন্তু কেন এ বসে থাকা সে কথা আমার মনে পড়ছিলো না। শূককীট যেমন খোলস ছেড়ে তার ডানা শুকাবার জন্য অনেকক্ষণ ভেসে থাকে খোলসটার উপর, তেমনই আমি বোধহয় কোন অজানা কার্য সমাধা অথবা নিষ্পন্ন করবার জন্য অনাদিকাল আমার অবয়বটাকে সংকুচিত করে অপেক্ষা করছিলাম বৃহৎ কোনও  প্রসারণের জন্য।

          কিন্তু না, কোনও মহাবিস্ফোরণ অথবা প্রলয়ঙ্কর কিছু স্বাভাবিকভাবেই ঘটেনি এবং আমার স্থানুবৎ বসে থাকাতেও কোনও ছেদ পড়েনি।  নিরবিচ্ছিন্ন সময় ধরেই আমি উবু হয়ে বসে আছি হাঁটুদু'টো যথাসম্ভব মুড়ে, যতোটা সম্ভব কম জায়গা দখল করে।

                                   (চার)

           ক্রমশঃ আমি টের পাচ্ছি আমার বসে থাকার জায়গাটিতে একটি সুখকর উষ্ণতা জন্ম নিচ্ছে। বিছানার উপর যে স্বল্প জায়গাটিতে আমার পঞ্চভূতে গড়া দেহ নিস্পন্দ বসে আছে, সেখানে একটা মধুর উষ্ণতা ধীরে ধীরে চারিয়ে যাচ্ছে তোষকের তুলোতে, বিছানার চাদরে, খাটের আবলুশ কাঠে অথবা খাটটির প্রতিটি অণু-পরমাণুতে। একটা অসাধারণ ওম্ আমি অনুভব করছি আমার সমস্ত শরীর জুড়ে। কোমল একটা উষ্ণতা যেমন আমার সর্বাঙ্গ জুড়ে আছে পাতলা একটা আস্তরণের মতো, তেমনই একটা ওম্ আমার পায়ের তলা থেকে সঞ্চারিত হয়ে ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ছে আমার দেহের প্রতিটি কোষে, প্রতিটি অণু-পরমাণুতে। একটা তীব্র ভালোলাগা আচ্ছন্ন করে ফেলেছে আমাকে। মোলায়েম কাপড় টুকরো দিয়ে শরীরে সুড়সুড়ি দিলে যেমন আরামদায়ক অলসতা তৈরি হয়, তেমনই একটা আরাম আমাকে ক্রমশঃ আচ্ছন্ন করে ফেলছে। আমার একটুও নড়তে ইচ্ছা করছে না। নিশ্চুপে বসে থেকে সমস্ত অলসতাটুকু, আরামটুকু নির্ভেজাল উপভোগ করবার তাগিদে যেন বসে আছি নিশ্চুপে এবং নিদারুণ নিশ্চুপে ! আমি একটুও নড়ছি না, মনে হচ্ছে নড়লেই কাঁচের বাসনের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে আরামটুকু, অলস মুহূর্ত-টুকু ! আমি আধবোঁজা চোখে তাই উপভোগ করছি এক অসামান্য প্রশান্তির মতো ভালোলাগা।

         আমি অতি সাবধানে কি একটা বিষয় যেন মনে করতে চাইলাম, কিন্তু "কী বিষয়ে" মনে করতে চাইলাম বহু চেষ্টা করেও তা মনে করতে পারলাম না। বেশ খানিকটা চেষ্টা করেও যখন আমি কৃতকার্য হলাম না তখন ভারী একটা প্রশান্তি এলো মনে, আর আমি ঢুলুঢুলু শরীরে উষ্ণতার আমেজটুকু অনুভব করতে লাগলাম। আমার মস্তিষ্ক ক্রমশঃ শূন্য থেকে শূন্যতর হয়ে এলো।

         কখন যেন টের পেলাম, আমাকে যুগপৎ কটূক্তি করা হচ্ছে ও গালিগালাজ দেওয়া হচ্ছে ! সেগুলির গভীরতা বা তাৎপর্য বুঝতে না পারলেও এ'টুকু টের পাচ্ছিলাম --- কে বা কারা যেন আমার উষ্ণতাটুকু ধীরে ধীরে সরিয়ে নিচ্ছে, আর আমি একটু একটু করে শীতল স্পর্শ পাচ্ছি। কয়েকদিন পূর্বের একটা শীতলতার কথা আমার মনে আসছিলো। কিন্তু সেটা যে প্রকৃতপক্ষে কি তা আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শুধু মনে পড়ছিল একটা নিপাট, নধর নারীশরীর আমাকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণতা দিতে চাইছিল, আর আমি একটু একটু করে শীতলতার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাচ্ছিলাম চরম শূন্যতার গহনে। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছিল সেটা বুঝতে পারছিলাম না। এই মুহূর্তে তেমনই কোনও শীতলতা আমাকে ক্রমশঃ ছুঁয়ে দিতে চাইছিল। আমার ক্রমশঃ ঘুম পেয়ে যাচ্ছিল। নিদারুণ অলসতায় ঘুমিয়ে পড়ার আগের মুহূর্তে টের পাচ্ছিলাম দু'টো ছোট্ট কচি হাত আমার গলাটা জড়িয়ে ধরে "বাবা" বলে ডাকছে, আর অনাস্বাদিত এক চরম উষ্ণতায় ডুবে যেতে যেতে আমি আমার হাত দু'টো বাড়িয়ে দিচ্ছি পরম শিশুটির দিকে।

modakgobinda001@gmail.com
নদিয়া

No comments:

Post a Comment