1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

সময়ের ডাক

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

সময়ের ডাক 
দেবানন্দ মুখোপাধ্যায়

১.

রবিবার ছুটির দিন,আমার বইপত্র গোছানোর দিন।তা এই গত রবিবারের কথা,বিকেলে বইয়ের তাক গোছাচ্ছি, হঠাৎই একটা পুরোনো বইয়ের মধ্য থেকে একটা আরও পুরোনো ডাকটিকিট পেয়ে গেলাম,কম নয় একদম দশটাকা দামের ডাকটিকিট।হালকা নীল রংএর টিকিট,সারস উড়ছে,ভরতপুর পক্ষী শরণস্থলের ওপর ভারতসরকার বের করে ছিল। প্রকাশের সালটা ১৯৭৫, আমার জন্মের ঠিক পাঁচবছর পরে,আর সমস্যার শুরুটা সেখান থেকেই।

চিঠি লেখার পাট তো কবেই চুকে গেছে, মোবাইল আসার পর থেকেই,বিশেষ করে এই এ্যন্ড্রয়েড ফোনের কল্যানে।এস এম এস,হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভিডিও কল,অনলাইন বুকিং আরও কত কি! আর কে কষ্ট করে, যখন এসবেই কাজ হয়ে যায়।সময় কোথায় মানুষের? কেউ কি আর আগের মত চিঠি  লেখে? আগে আমিই তো কত চিঠি  লিখতাম, এখন কবে শেষ চিঠি লিখেছি মনেই পড়েনা।হ্যাঁ, কাজের ক্ষেত্রে চিঠি লিখতে হয় ঠিকই তবে তাতে ডাকটিকিট লাগেনা।বেশ কয়েকবছর আগেও চিঠির বাজার রমরমা ছিল,ডাকটিকিটেরও।কতরকম চিঠি,কত বাহারি ডাকটিকিট,কত রকম বয়ানের চিঠি।বিশ্বজুড়ে তখন চিঠির যুগ।কোনোটা বাবা ছেলেকে লিখছে,কোনোটা ছেলে বাবাকে,আবার কখনও বা নববধূ বহুদূরে চাকুরিরত  স্বামীকে লিখছে।কোনোটা বা প্রেমিক প্রেমিকার ভালোবাসার সাক্ষ্য বহন করে, বুকে টিকির এঁটে, দূরদূরান্তে পাড়ি দিতো।সে সব দিন গেছে,সাথে সাথে ডাকটিকিটের কদরও।যাক্ আমরা মোবাইল নিয়েই বেশ আছি।গোপন,ওপেন সব খবরই এখন নিমেষে পাঠিয়ে দিচ্ছি, কাকপক্ষীকেও না জানিয়ে,এমনকি ছবিও পাঠাচ্ছি। এখন তো ধরাছোঁয়ার বাইরের মানুষের সাথেও দেখাসাক্ষাৎ, কথাবার্তা সব এক আংগুলের ছোঁয়াতেই হয়ে যায়!

সে যা হয় হোক্,আপাততঃ এই ডাকটিকিটটা পাওয়ার পর থেকেই মনটা কেমন যেন হয়ে গেছে। এর যে কিভাবে সদ্ব্যাবহার করবো ভাবতে ভাবতেই আর কোনো কাজেমন বসছেনা,দিনের পর দিন এইভাবেই কাটতে লাগলো।একবার মনে হলো রেখেই দিই,মন থেকে মুছে ফেলি,কিন্তু ভবী ভোলার নয়।ঘুরেফিরে সেই একই ভাবনা মনেচলে আসে।টুকটাক যা চিঠি পত্র পাঠাতে হয় রেজিস্ট্রিডাকেই বা স্পীডপোস্টেই পাঠাই,তা সেখানেও তো টিকিটের কোনো জায়গা নেই,কি একটা বারকোড লাগিয়ে দেয়।কাজেই বলতেই হয় ' হায় ডাকটিকিট তোমার দিন গিয়াছে'

মনটা আর আগের মত থাকছেনা বুঝতে পারছি। বন্ধুবান্ধবদের কাছে সমস্যাটা বলতে গিয়ে বুঝলাম খুব ভুল করে ফেলেছি।সবাই তো খুব একচোট হেসে নিলো।

নীল বললো " তোর সেই ল্যাংমারা পুরোনো প্রেমিকা,কি যেনো নাম ছিলো,সেই যে রে কলেজলাইফে যার জন্য একেবারে পাগল ছিলি,ওহো মনে পড়েছে,ববিতা,ওকে একটা চিঠি লেখনা,অবশ্য ঠিকানা আছে তো? না থাকলে বল একবার চেষ্টা করে দেখি।"

আশীষ বললো " ওটা কোনো আশ্রমে দান করে দে,বহুত পূণ্য হবে তোর,এতো দামী জিনিস তো কেউ দান করেনা। শালা পেয়েছিস একটা দশটাকার ডাকটিকিট তার জন্য চিন্তায় ঘুম হচ্ছেনা।"

সবচেয়ে জ্বালাধরানো বক্তব্য রাজের,চিরকালের মত নির্লিপ্ত মুখ করে বললো " ওটা তোর কপালে ভালো করে চিটিয়ে রাখ,আর স্নানের সময় সাবধানে থাকিস।, পারলে ল্যামিনেট করে চিটাস।"

গা পিত্তি জ্বলে ওঠেনা এ সব শুনলে?কোথায় ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভাববে, কি ভাবে টিকিটটার সদ্ব্যাবহার করা যায়,তা নয় স্রেফ খিল্লি করে গেলো মশাই!

আমি যে কিপটে তা আমার অতি বড় নিন্দুকেও বলবে না।তবুও বুঝতে পারছি এই টিকিটটা নিয়ে আমার একটা রোখ চেপে যাচ্ছে, আমার মধ্যে একটা পরিবর্তনও আসছে।কেউ কেউ সেটাকে পাগলামির লক্ষণও বলছে আড়ালে আবডালে,তাও শুনতে পাচ্ছি। মাঝেমধ্যে মনে হয় ছিঁড়ে ফেলে দিই,ল্যাঠা চুকিয়ে দিই,কিন্তু বিশ্বাস করুন তখন কেউ যেন হাতদুটো ধরে টানে।হাজার  পাঁচশো' র বাতিল নোট পেলেও মনে হয় এর থেকে ভালো ছিলো,এত মানসিক উচাটন হোতোনা।জানতাম ওটা চলবে না,কিন্তু এটা তো সচল, আর কেনা জানে সচল জিনিসের কদর অচলের থেকে চিরকালই বেশী,তা অচলটি এককালে যত মূল্যবানই থাকুকনা কেনো।কাজেই যে চলবে অথচ চালাবার সুযোগ নেই,তাকে নিয়ে বিব্রত বোধ করে আমার নাওয়াখাওয়া সব মাথায় উঠলো।মাথার মধ্যে খালি ঘুরপাক খেতে লাগলো ডাকটিকিটটার একটা সদ্গতি করতে হবে।কিন্তু কি ভাবে?

ক্রমশঃ বুঝতে পারছি আমার কোনো কাজে মন লাগছে না,কিছুই ভালো লাগছে না,কারোর সাথে কথা বলতেও না।মাথার মধ্যে শুধু ঘুরছে সেই ডাকটিকিট! ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও দেখছি হালকা নীল আকাশ,তার বুক চিঁড়ে দুরন্তবেগে ধেয়ে আসছে এক শ্বেতশুভ্র সারস,এসে সোজা আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে,ধড়ফড় করে আমি ঘুম ভেঙে উঠে পড়ছি।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। কি ফ্যাসাদ বলুন তো?

প্রায় মাসখানেক এরকমভাবে কেটে যাওয়ার পর একদিন হঠাৎ মনে হোলো নাঃ এরকমভাবে চলতে পারেনা,একটা এসপারওসপার করতেই হবে।ইতিমধ্যে আমার পরিচিতজনেরা আমাকে এড়িয়ে চলছে, কেউ কেউ মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাবার কথাও বলেছে,এখন আর আড়ালে নয়,সামনাসামনি। এমনকি আমার বৌএরও তাতে পূর্ণ সমর্থন আছে বুঝতে পারি।জানি এরা আমার ভালোই চায়,তবু কথাগুলো শুনলেই মনে হয় যেনো আমাকে নিয়ে মজা করছে,আর মেজাজ ততই সপ্তমে চড়ে যাচ্ছে।নাঃ, ডাক্তারের কাছে যাওয়াটাই আমার ভবিষ্যৎ, আস্তে আস্তে মনটাকে তৈরী করছি।ঘরে বাইরে এি ঝামেলা আর সহ্য করা যাচ্ছেনা।

তা সেদিন হোলো কি,একটা কাজে কিছুটা জোর করেই বের হলাম,হাঁটতে হাঁটতে কলেজস্ট্রীটের দিকে যাচ্ছি, এমনসময় ছোটোবেলার বন্ধু সমরেশের সাথে দেখা হয়ে গেলো।ও নাটক টাটক নিয়ে আছে,লেখে,পরিচালনা করে।কলকাতায় ওর একটু নামও হয়েছে,মানে উদীয়মান নাট্যব্যক্তিত্ব যাকে বলে আরকি।

"কি রে এদিকে কোথায় চললি? চেহারাটা এতো খারাপ  হয়েছে কেনো?কেমন আছিস?" সমরেশ জিজ্ঞেস করে।

আর থাকা,ওই চলে যাচ্ছে আর কি!" যদিও কথা বলতে আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছিলোনা,তবুও জবাব দিই,উপায়ও নেই, একদম ছোটবেলাকার এই একটি বন্ধুর সাথে এখনও ভালোই যোগাযোগ আছে।

" না,না,তুই কিছু লুকাচ্ছিস মনে হচ্ছে। কি ব্যপার বলতো? এইতো মাস খানেক আগে তোর সাথে দেখা হোলো,এর মধ্যে চেহারাটা এমন হোলো কি করে?"

সাধারণত আজকাল এইরকম পরিস্থিতিতে আমি চুপ করেই থাকি,কিন্তু সেই ক্লাসওয়ান থেকে একসাথে পড়া বন্ধু ও,ওকে এড়ানো খুব মুশকিল।

"খুব সমস্যার মধ্যে আছি রে সমরেশ।"

"নিশ্চয়ই বৌদির সাথে ঝামেলা?"

" না রে।এটা অন্যরকম সমস্যা।মানে উটকো সমস্যা বলতে পারিস।তোর একটু সময় হবে?"

" আলবাত হবে।তোর জন্য হবেনা তো কার জন্য হবে? চল তোর বাড়ি তো কাছেই,বাড়ি গিয়ে বৌদির হাতে এককাপ গরমাগরম চা খেতে খেতে তোর সমস্যার কথা শোনা যাবে।তবে এখন আমি একটু ব্যাস্ত আছি,ঘন্টা খানেক তোকে দিতে পারি,ডোন্ট মাইন্ড।"

" আর বৌদি!  আমার বোধহয় পাগল হতে বেশী দেরি নেই।"

" কেনো রে?  এই যে বললি বৌদির সাথে কোনো ঝামেলা হয় নি? দেখ রাজীব ওসব হলে আমি কিন্তু খোলখুলিই বলছি,ওর মধ্যে আমি নেই।শালা ওসব ঝামেলায় যাবোনা বলে সারজীবন বিয়েই করলাম না।বেশ আছি নাটক নিয়ে,অভিনয় করে।সেদিন তো এ্যকাডেমিতে আমার ছিলো,কার্ডও দিয়েছিলাম তোদের,গেলিনা। খুব রাগ হয়েছিল, এখন বুঝতে পারছি গাড্ডায় পরেছিস।তা গাড্ডাটা কি রকম?"

না,না,তুই যা ভাবছিস তা নয়।রুমার সাথে আমার কোনো ঝামেলাই হয়নি,ইনফ্যাক্ট কারোর সাথেই আমার ঝামেলা নেই,ঝামেলা আমার নিজের সাথেই। সমস্যাটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত।বাড়িতে এ সব আলোচনা করা যাবে না।চল কোনো চাএর দোকানে বসে কথা বলি,অসুবিধা নেই তো?"

হুঃ,বুঝতে পারছি।চল,তবে একঘন্টার পর একটা কাজে যেতে হবে রে।"

গরম চাএর পেয়ালাতে চুমুক দিতে দিতে সব ঘটনাটা সমরেশকে আস্তে আস্তে খুলে বললাম।শুনে সমরেশ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

"এটা তোর সমস্যা? এর জন্য তুই শুকিয়ে যাচ্ছিস? তাই বলি তোর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সব বন্ধ কেন! তুই বাপু পারিসও।"

" এই জন্যই তো বলতে চাইনি তোকে।তুইও আমাকে পাগল ঠাওরাবি জানি।"

" কিছু মনে করিসনা রাজীব তোর মত একজন শিক্ষিত লোক যে এরকম করতে পারে ভাবা যাচ্ছেনা রে। "

"ফালতু হাসিস না তো,যদি পারিস এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে তো বল,না হলে তোকে কি আর বলি বল?  "প্রচন্ড  রেগে বলি।

" আহা রাগছিস কেন?  দাঁড়া একটু কথাটা শোন আমার।তোর তো সবই আছে,ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ? "

"হ্যাঁ"।

তাহলে আর কি,ওগুলো চালু কর আবার,মনটাও ভালো হবে।নতুন বন্ধু কর দেখে দেখে,বিশেষ করে মেয়ে বন্ধু। "

"ভাট বকিস না তো।আমি মরছি নিজের জ্বালায় আর তুই এই বয়সে মেয়েবন্ধু জুটাতে বলছিস?"

" আহা রাগিস না।শোন,তোর কতজন বন্ধু আছে ফেসবুকে?"

" তা প্রায় হাজার খানেক।"

" তাহলে তো ফাটিয়ে দিয়েছিস।এক কাজ কর,ডাকটিকিটের ছবিটা পোস্ট করে একটা যুতসই ক্যাপশন দিয়ে দে।সবার মতামত চেয়ে লেখ এটা নিয়ে কি করবো? মনে রাখিস জনগনই এখন তোর শক্তির উৎস, মানে তোর মানসিক শক্তির উৎসের সন্ধান দেবে।"

জলে ডোবা মানুষ খড়কুটো পেলেও যেমন আঁকড়ে ধরতে চায়,আমারও এখন তাই অবস্থা। তবে সত্যি বলতে কি এই আইডিয়াটা খুব একটা খারাপ লাগলো না।জিজ্ঞেস করি" তাতে কাজ হবে?"

"হবেই বলবোনা,তবে চেষ্টা করতে দোষ কি? পোস্ট করে দেখনা,লিখে দেখনা।ফোকটে জ্ঞান দেবার লোকের অভাব নেই আমাদের এই পৃথিবীতে। মনটা চাঙ্গা করতো।সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে ঝিমিয়ে পড়লে চলে? তোকে তো শক্ত মনের মানুষ বলেই জানতাম,এটা কি করছিস?পোস্ট করে সব ভুলে যা,দেখই না কি হয়! চিয়ার আপ রাজীব,একটু তাড়া আছে রাজীব।আজ উঠি।নতিন নাটক নামাচ্ছি,প্রচুর খাটতে হচ্ছে।পরে একদিন তোর বাড়ি গিয়ে বৌদির হাতের চা খেয়ে আসবো।আর হ্যাঁ,ফোন করিস,আর আজ থেকেই যেন ফেসবুক পুরোদমে চালু হয়।চলি।"

সমরেশের কথায় নিজেকে একটু ফিরে পেলাম মনে হচ্ছে। মনে একটু দ্বিধা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।দেখি কি হয়? মোবাইলে ডাকটিকিটের একটা ছবি তুলে রাখলাম। এরপর ছবিটা পোস্ট করে ক্যাপশান দিতে হবে আজকের মধ্যে। রাতে খাওয়ার পর দিলেই হবে।প্রথমপর্ব শেষ হোলো,দেখি সমরেশের উপদেশ কাজে লাগে কি না।

রাতে খাওয়ার পরে বাকি কাজটা সেরে ফেললাম।টিকিটের ইতিহাস, কবে প্রকাশ,কি করে পেলাম ইত্যাদি ইত্যাদি লিখে এটা নিয়ে কি করবো তাই জানতে চেয়ে আবেদন জানালাম।লোকে পাগল ভাবতে পারে,ভাবুক।আমি আর ও নিয়ে ভাববো না।কখন যে ঘুম এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো বুঝতেও পারলাম না।

পরেরদিন যথারীতি সকালে ঘুম থেকে উঠে রোজকার কাজকর্ম সেরে খবরের কাগজটা নিয়ে বসেছি,কাগজ দেখতে হঠাৎ মনে পড়লো গতকাল রাতের কথা।কাগজটা রেখে ফোনটা নিয়ে বসলাম দেখি কেউ কিছু লিখেছে কি না।

ওরে বাবা পেসবুক এ্যকাউন্টে গিয়ে দেখি অনেক কমেন্ট এসেছে।কেউ লিখেছে সুন্দর পোস্ট, কেউ লিখেছে আপনার এই পোস্টের  সাথে আমার ভরতপুরলক্ষী শরণস্থল যাওয়ার স্মৃতি ফিরে এলো।কেউ বা লিখেছে সংগ্রহ করার মতো ডাকটিকিট,ওটা রেখে দিন।আমার আসল সমস্যার দিকে কেউই কর্ণপাত করেনি।কি করে টিকিটটা চালাবো তার হদিশ কেউই দেয়নি।

তারপর থেকে রোজই একবার করে মন্তব্যগুলো পড়ি,কমেন্ট আর লাইকের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।

মনটাও আর আগের মতো নেই।এখন একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করেছে। প্রায় মাসখানেক হতে চললো,একদিন হঠাৎই সমরেশের ফোন।সত্যি ওর কথা ভুলতেই বসেছিলাম।

" কি রে তোর ভরতপুরের কি খবর?”

" কি আর খবর,বলবার মত কিছু নয়।সত্যি তোকে আগেই ফোন করা উচিত ছিল আমার।তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমি প্রায় ডুবতে বসেছিলাম রে! এখন ব্যাপারটা এনজয় করছি।তুই ভাগ্যিস ফেসবুকে দেওয়ার কথা বললি।আমার মুল সমস্যার সমাধান মানে টিকিটটার কি করবো,কেউ দিতে পারেনি,তবে রোজ কেউ না কেউ কিছু লিখছে।"

জানি,তোর অজান্তেই আমি তোকে ফলো করছি।তা যাক্ সে কথা।এতবড় বিপদ থেকে তোকে উদ্ধার করলাম তোকে শুকনো ধন্যবাদে তো হবেনা ভাই।এখন আর বৌদির হাতের চায়ে তৃষ্ণা মিটবে না,অন্য কিছুদিয়ে গলাটা ভেজাতে হবে।ভালো জিনিস খাওয়াতে হবে।"

"ঠিক আছে,কবে খাবি বল?"

জানিসই তো এইসব ব্যাপারে দেরি করতে নেই।সামনের রবিবার, আমার এক নাট্যপ্রযোজকের একটা ফ্ল্যাট আছে রাজারহাটে, বাড়িতে বলে আসিস রাতে ফিরবিনা।আমি তোকে সন্ধ্যেবেলায় পিকআপ করে নেবো বাড়ি থেকে।যাক্ তোর ঘাড় থেকে যে ভুতটা নেমেছে এটাতেই শান্তি। তা হলে আগামী রবিবার সন্ধ্যেতে তৈরি হয়ে থাকিস।ঐদিন যা কথা হবার হবে।এখন রাখছি।" ফোনটা কেটে দেয় সমরেশ।

সত্যি কদিন ধরে নিজেকে খুব হালকা লাগছে।কিভাবে যে কয়েকটা দিন কাটলো তা আমিই জানি।সত্যিই সমরেশ আমার যা উপকার করলো।না হলে তো আমি পাগলই হয়ে যাচ্ছিলাম।

আজকে আমার পরিসংখ্যান বলছে পোস্টটাতে লাইক আটশোর মতো আর কমেন্ট সাড়ে চারশো।ভাবা যায়? এর মধ্যে আমার বন্ধু ছাড়াও কত অজানা,অচেনা লোক দেখছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।কেউ কেউ তো আমি ফিলাটেলিস্ট ভেবে আমাকে তাদের গ্রুপে যোগদানও করতে বলেছে।

"বাঃ"এইসব দেখে আমার মুখ দিয়ে শব্দটা বের হয়ে গেলো।

রাতে বিছানায় শুয়ে গতদিনগুলোর কথা ভাবছিলাম।সত্যি যদি কাউকে চিঠি লিখে ডাকটিকিটটা লাগাতাম সে চিঠি একজনই পেতো,পড়তো,সর্বোপরি সে আমার পরিচিতজনই হোতো।আর যেই ফেসবুকে দিলাম কত জানা অজানা বন্ধু সাড়া দিলো,হোক না ভার্চুয়াল তবু তো বন্ধু হিসেবেই সাড়া দিয়েছে মতো রিয়েল।কটা আর সমরেশের বন্ধু হয়? আর সেসব বন্ধুদের সাথে মুখমুখি দেখা না হোক,দুঃখ সুখের গল্পও করা যায়।

একটা টিকিটে একসাথে এতজনকে কিছু বলতে পারতাম?

সবই সময়ের ডাক।সমরেশের প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা নিয়ে কখন যে ঘুম এসে গেলো এবারও বুঝতে পারলাম না।


iamdebananda@gmail
বাঁকুড়া

1 comment:

  1. গল্পটা খুবই ভালো হয়েছে,কিন্তু আমিতো সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আমার কাছে যে অনেক গুলো ডাকটিকিট অনেক দিন যাবৎ পড়ে রয়েছে!এতোদিন ব্যবহারের চিন্তা মাথায় আসেনি। আজ মাথায় ঢুকে গেল। সবগুলো ফেসবুকে দিলেও তো লোকে পাগল বলবে।

    ReplyDelete