![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
অসমীকরণগৌতম বিশ্বাস
-কিরে আলু, তোর যা চুল উঠছে এবার তো দেখছি মাথায় সত্যি টাক পড়ে যাবে, তা বলছি বিয়েটা কি পরচুলা পড়ে করবি?
-তাতে তোর কি?
- আমার কিছুনা, তবে পণের টাকা গুলো বেশী দিতে হবে কাকুকে।
কথা গুলো বলেই খিলখিল করে হেসে ফেললো সৌরভ।
মেয়েটার নাম আহেলি, এতক্ষন ধরে যার লেগ পুল করছিল সৌরভ।
সৌরভ যে স্কুলে চাকরি করে সেখানকার ই এক কলিগ কাম ফ্রেন্ড মুক্তার খুব কাছের বন্ধু আহেলি। মেয়েটা বেশ মিশুকে আর বন্ধুভাবাপন্ন। চেহারাটা একটু মোটাসোটা বলে সেটাকে নিয়ে নিজেই মজা করে। বন্ধুরা মজা করে আহেলি কে কেটে নিয়ে আলু বলে ডাকে।
মেয়েটিকে বেশ পরিণত বলেই মনে হয়েছিল সৌরভের।
এর আগে যদিও আহেলির সাথে ফেসবুকে চ্যাট করেছিল সে, সেগুলো নিছক পোশাকি সৌজন্যতা বা কিছু ফানি টাইপ ফরোয়ার্ড করা মেসেজ। আজ মুক্তার জন্মদিনে এসে মেয়েটির সাথে বেশ হৃদ্যতা হয়ে গেছে। মুক্তা ওর সব বন্ধুদেরকে ডেকেছে
ট্রিট দেবে বলে। গৌরবের ই এক বন্ধু প্রমিতও আসবে যে কিনা মুক্তার ও বন্ধু হয়, আর মুক্তা ওর ওপর একটু চাপ খায়। আহেলি সৌরভকে বলে রেখেছিল যে মুক্তা একা রয়েছে, প্রমিতকে পছন্দ করে তাই একটু কথা বলে এগিয়ে দিস ওদের।
-এই সোশাল মিডিয়া র যুগে আজকাল আর কেউ একা নয় রে, নিজের লাইন ঠিক অন্য জায়গায় করা আছে রে।
কথাটা বলেই খিক খিক করে হাসল সৌরভ।
- তা হতে পারে, ঘাড় নাড়ল আহেলি।
সৌরভ নিজে অলিভিয়া নামের এক মেয়ের সাথে কমিটেড রিলেশনশিপে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। কিন্ত সম্পর্কটি নিয়ে অনেক চড়াই উতরাই এর ফেজ চলে। বন্ধুমহলের কেউ ই এই সম্পর্ক নিয়ে সৌরভকে ইতিবাচক কথা বলেনি। তবুও সৌরভ কেমন যেন পাগলের মতো অলিভিয়া মেয়েটার পিছনে ছুটে বেড়ায়।
-কিরে কি খাবি? বিরিয়ানি না কি রাইস নিবি?
- তোরা যেটা বলবি নে। মাথা নাড়ল সৌরভ।
প্রমিত এসছে, আরো দুজনের কথা ছিল আসবার, আসেনি।
-কিরে আহেলি কবে বিয়ে করবি?
-আরে জানু, তুমি তো কমিটেড হয়ে বসে আছ, আমাকে চান্স দিচ্ছ না। চান্স দাও, কাল ই বিয়ে করছি তোমাকে।
চিমটি কাটলি আহেলি।
-হা হা, আমার বৌয়ের এরকম চুল পাতলা হলে বিয়ে ই হবে না। আর আমি শ্বশুর মশাইয়ের থেকে রেলগাড়ি নেব যৌতুকে।
এই রকম অনেক ইয়ার্কি ঠাট্টা হাসি করেই মুক্তার বার্থডে সেলিব্রেট করছিল সৌরভ, আহেলি, প্রমিতরা।
রিং! রিং! একটা কল আসল সৌরভের।
মোবাইল বের করে একটু বাইরে গেছিল সৌরভ, একটা জিনিস নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছিল প্রেমিকা অলিভিয়ার সাথে। ফিরে এসে আবার টেবিলে বসল সে। ওরা হাসাহাসি করছিল। প্রমিত কথা বলছিল মুক্তার সাথে। সৌরভের মনে হয়েছিল ওদের একটু স্পেস দেওয়া দরকার, ওরা কথা বলুক। তাই আহেলিকে ডেকে নিল।
-কিরে ঝগড়া হয়েছে নাকি তার সাথে? আহেলির গলায় কৌতুহল।
-ওই একটু টুকিটাকি আর কি।
-দেখ অনেক খবর আমিও পাই জানিস তো, তুই বন্ধু বলেই বলছি রে এই সম্পর্ক নিয়ে আরো একবার ভাবিস ভালো করে। বোথ ওফ ইউ আর ডিফারেন্ট ইন কালচার, আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর সোশিও-ইকোনমিও আলাদা, ভাল থাকাটা কিন্ত অনেকটা চ্যালেঞ্জিং।
- উই মে হ্যাভ ডিফারেন্ট কালচার, বাট লাভ উইল কনকুওর ওয়ানডে। তুই এত শত ভাবিস না।
বলেই মৃদু হাসল গৌরব।
- কি হয়েছে আমাকে বলতে পারিস।
- নারে আহেলি! সেরকম কিছু না।
-অবশ্যই কিছু, তোর হোয়াটস অ্যাপ ডিপি অফ, এখন এরকম মুখ শুকনো। বল তুই, আমি শুনব।
- দেখ অনেক কিছু আছে, অলির বাড়িতে বিয়ের চাপ আসছে, আমার যা চাকরি তাতে ওদের পরিবার কিন্তু কিন্তু করছে, আবার এদিকে কাস্ট কমিউনিটি আলাদা। তাছাড়া আমাদেরকে একসাথে দেখতেও নাকি মিসম্যাচ, ওর বাবা মা এটাই বলেছে। এই নিয়ে ঝামেলা চলছে ওদের পরিবারে আর আমাদের নিজেদের কিছু ঝগড়া ঝামেলা প্রায়শই হচ্ছে। এই সব মিলিয়ে একটা খারাপ সময় যাচ্ছে।
- এগুলো কিচ্ছুনা গৌরব, আজ এত কিছু আসছে, কাল তুই ওই হাই স্কুলের চাকরি টা কিম্বা কলেজ সার্ভিসের প্রফেসর পদের চাকরিটা পা, দেখ পুরো উল্টো হয়ে যাবে সব। আর ভালোবাসায় দুটো মানুষ নিজেরা ঠিক থাকলে কোন কিছু আটকায় না।
পরিস্থিতি একটু গম্ভীর হয়ে আসছিল, কিন্তু এসব এখন মাথায় ঢুকছে না দেখে সৌরভ ইয়ার্কিচ্ছলে পরিবেশ হালকা করার চেষ্টা করল
- জানু চলো বিয়েটা সেরে ফেলি। তা কবে যাবো বলো তোমার বাবাকে বলতে?
-আমার বাবাও গেজেটেড সারভিস ছাড়া বিয়ে দেবে না। হা হা হা, হেসে উঠল আহেলি।
- ইসস কত সখ। আয়নায় মুখ দেখেছিস? এক কাজ কর
তুই একটু রোগা হ বুঝলি আমি প্রোপোস করছি তাহলে।
- কেন রে? মোটা মেয়েদের কি একটু ভালোবাসা পেতে নেই? নাকি কালো মেয়েদের ফর্সা বর পেতে নেই? বাইরের লুক টা ই কি ম্যাটার করে তোদের ছেলেদের চোখে?
এই কথা বলার সাথেই আহেলির চোখে একটা পরিবর্তন এসছিল, এটা লক্ষ্য করতে ভুল হল না সৌরভের।
- আমি মজা করেছি রে, গায়ে নিস না প্লিজ।
মার্কেট প্যালেসের এই ভীড়ে খুব জোরে পা চালাচ্ছিল সৌরভ। আহেলি মুক্তা রা ট্রেনে উঠে গেছিল।
আকাশের অবস্থা ভালো নয়, যেকোন মুহুর্তে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে।
আহেলির সেই চাহনির সাথে ও নিজে খুব করে পরিচিত।
বছর পাঁচেক আগে কলেজে নিজের সাথে হওয়া অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল তার।
এটা যেন ভুল হয়, এটা যেন ভুল হয়। মনে মনে বিড় বিড় করছিল সৌরভ।
এসব কি হচ্ছে মনের মধ্যে, হঠাৎ কিছু পুরনো স্মৃতি...
অফক্লাসে সুচেতার সেই বৃষ্টির ছাঁট লাগানো দেখে বুকের মধ্যে একরাশ ফড়িং এর উড়ে গেছিল সদ্য যৌবনে পা রাখা ছেলের, হৃদ স্পন্দনের গতি বেড়ে গেছিল নিদারুণ..কিন্ত সুচেতা তার প্রিয় বন্ধু এবং সে অন্য একটি ছেলেকে ভালবাসে।
সেই মুহুর্তে ভেঙে পড়ল আকাশ, ঝম ঝম করে নেমে এল বৃষ্টির ফোটা, মোবাইল টা কে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে জড়িয়ে একটা গাছের তলায় আশ্রয় নিল সৌরভ।
তারপর বৃষ্টি ভেজা সেই শুনশান রাতে বড় শিমুল গাছতলায় দাড়িয়ে কত কি চিন্তা ঘুরে বেড়াল তার মাথায়।
তাড়াতাড়ি মাথা মোছ, ঠান্ডা লাগবে, তোর এমনি সর্দিকাশির ধাত। আর বোকার মতো ভিজলি তুই? মা এর বকুনি কানে ঢোকে, মাথায় না।
কোথাও যেন সেই বৃষ্টি অনেক জমাট বাঁধা বরফ স্মৃতি কে তরল করে দিয়েছিল। একলা বৃষ্টি ভেজার অনাবিল আনন্দ তারাই পারে নিতে যারা এর মর্ম বোঝে। প্রেমিক হৃদয় ছাড়া এই বৃষ্টির মাহাত্ম্য সাধারণ চোখ কখনোই নিতে পারবেনা।
মোবাইলে ৫ টা মিস কল। ২ টো সৌরভের প্রেমিকা অলিভয়ার আর ৩ টে আহেলির, একটা মেসেজ ও এসছে, ডিপি তে নিজের পিকচার দিস। আমরা বাড়ি চলে এসছি।
বন্ধু সুমন্তকে বলেছিল সেদিনের ঘটনা। সুমন্ত সাবধান করেছিল যে তুই যেটা ভাবছিস সেটা হলে কিন্তু খারাপ হবে। পাত্তা দিস না এসব কে। তুই নিজে বুঝিস তো সব।
-আরে আমি কি করলাম?
-তুই করিসনি। কিন্তু সময় অনেক কিছু করিয়ে দেয় আমরা বুঝতেও পারি না।
বেশ বিজ্ঞের মতো হাসল সুমন্ত।
এই প্রাইমারী স্কুলের চাকরি জীবনে সৌরভের কয়েকটি পাওনার লিস্ট করলে বন্ধু সুমন্তের নাম সবার আগে আসবে।
রীতম নামে আর এক বন্ধুও আছে সৌরভের, বেশ ফানি টাইপ কথা বলে৷ একটু ফক্কর ও বটে,বেস হাসি খুশি থাকে, সবার সাথে মজা করে।
বন্ধুত্ব নাকি ভাগ্যের সেরা গিফট। আর গৌরবকে এই গিফট দিতে কার্পণ্য করেনি উপরওয়ালা। সেদিনের ঘটনা শুনে সৌরভের একটু লেগ পুল ও করেছিল সুমন্ত আর রীতম। রীতম রীতিমতো রাগিয়েও দিয়েছিল এই বলে যে বার্থডে তে গিয়ে কাকে উইশ করতে কি তেল নিয়ে গেলি ভাই, যে অন্য কেউ পিছলে গেল?
আহেলি কে একটু একটু এভয়েড করতে শুরু করেছিল সৌরভ, কিন্তু চাকরিসুত্রে একই গন্তব্য স্টেশন তাদের। ভীড়ের মধ্যেও আহেলির চোখ কোথাও যেন সৌরভকে খুঁজত। সৌরভ যে ধরা দিতে চায়না সেটা সে ও বোঝে। তবু মন বোঝানো দায়।
নিস্তব্ধতা ভেঙেএকদিন সৌরভ নিজেই মুখ খুলল
-এগুলো কি করছিস তুই আহেলি। এটা ঠিক নয়, তুই আমার বন্ধু হোস। আমার সবটা জানিস। তাও?
- আমি তো তোকে কিছু বলিনি। তোর কাছ থেকে কিছু রিটার্ন ও চাইনি। তোর প্রব্লেম হলে কথা বলিস না। কেউ মাথার দিব্বি দেইনি কথা বলার। ওকে।
কারো কাউকে ভালো লাগলে এতে তার দোষ কোথায়? জীবন এটা, ভাল লাগতেই পারে, তাই বলে সে তোর কাছে সময়ও দাবী করেনি, কথাও বলতে বলেনি বা কিছু।
-কাটিয়ে ওঠ প্লিজ। এভাবে নিজেকে কষ্ট দিস না।
- দেখ সৌরভ তুই মান বা না মান তোর সাথে আমার একটা সম্পর্ক আছে আর সেটা কি জানিস?
সেটা মন খারাপের সম্পর্ক।
-আমি তোর সাথে কথা বলি বা না বলি তুই জানবি আমি যেখানেই থাকি না কেন? তোর জন্য আমার ভালো থাকার প্রার্থনা থাকবে, বলেই হাঁটা দিল মেয়েটি।
"কয়েকদি খারাপ থেকেও যদি বেশি দিন ভালো থাকা যায় তো সেটা কি ভালো না? তাহলে বিরত থাক, "এই রকম ই কিছু যুক্তি সাজিয়ে বসেছিল সৌরভ। আজ আহেলির বার্থডে, ও হয়ত একটা মেসেজের অপেক্ষা করছিল, কিন্তু সে মেসেজ করবে না, মনে মনে এইসব ই ভাবছিল সৌরভ। "আমি এক জায়গায় রিলেশনশিপ এ কমিটেড, এসব ঠিক নয়, এগুলোর জন্য আমাকেও কর্মফল ভুগতে হবে। কিন্তু কিছু করার নেই। কারো মনে আশা দিতে নেই এসব নিয়ে।" অবশেষে নিজের যুক্তিতে অটল থাকল সৌরভ।
এমন সময় ই ফোন এল, " একটা ফোন বা মেসেজ এলে খুশি হতাম খুব, তুই আমাকে সেটা ও দিতে পারলি না।
আমি একটু বেশি আশা করে ফেলেছি হয়ত।"
ফোনের এপারে থাকা মানুষটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিল শুধু।
স্বার্থপর হোক বা যা কিছু কিন্তু ইগনোর করলেই মেয়েটি ভাল থাকবে আর এটাই করতে হবে।
পুজোর সময় কিভাবে আহেলি একদিন ঘুরতে যেতে বলেছিল জাস্ট এক ঘন্টার জন্য হলেও কিন্তু না করে দিয়েছিল সৌরভ। বন্ধুত্ব থেকে এক কদম পেরিয়ে গেলে কিছু সময় শক্ত হাতেই তা বন্ধ করতে হয়।
জীবনের সমীকরণকে জন্ম মৃত্যুর একটা লিমিট দিয়ে বেধে দেন ভগবান আপার আর, কিন্তু সম্পর্কের সমীকরণ হয়ত উলটো হয়, যেখানে হায়ার লিমিট ইনফিনিটি তে চলে যায়। কখন যে ইকুয়েশনের ভ্যারিয়েবল গুলোর ভ্যালু চেঞ্জ হয়ে সমীকরণটা মেলানো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে বুঝে ওঠা যায় না। সৌরভ বুঝতে পারেনি তার জীবনের সম্পর্কের সমীকরণ গুলো এভাবে টার্ণ নেবে।
যে মানুষটা র জন্য সে পাগলের মতো ঘুরে বেড়ায় সেই মানুষটার জীবনে তার ব্যাপ্তি টা অনেক ঠুনকো। জীবনের দাম হয়তো এচিভমেন্টের নিরিখেই হয়, মনের নিরিখে নয়। কিন্তু ভালবাসা আর আবেগের কাছে যুক্তি ধোপে টেকে না।
গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে সেদিন সে জোর করেই একটা রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেছিলো আসলে সৌরভ তার সঙ্গতা চাইছিল। এর আগেও একটা চাকরির ইন্টারভিউয়ের চুড়ান্ত বাছাইয়ে তাকে রিজেক্ট হতে হয়েছে। আর সৌরভ জোর পায়নি একটা মেয়ের দায়ভার নিতে চাওয়ার প্রস্তাব রাখতে।
ফিরে আসবার পর সেই সন্ধ্যেবেলাতে ফোন এসছিল আহেলির যে এক্ষুনি ওয়েবসাইট দেখ ওর এক বন্ধু চাকরি পেয়ে গেছে সেই কলেজ সার্ভিসের চাকরির পরীক্ষায় যেটা সৌরভও দিয়েছিল।
মিলে গেল রোল নাম্বার, লাল হয়ে উঠল পিডিএফ ফাইলের সার্চ অপশন টা,.. চাকরি টা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ এখন আর কেউ আটকাতে পারবেনা...
রিং।রিং।রিং। রিং। তিন বার কেটে দেওয়ার পর ফোন ধরল অলিভয়া,
-উফফ, একটু ঘুম এসেগেছিল আর তুই, কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বল?
-এই। কলেজের চাকরি টা হয়ে গেছে নাম বেরিয়েছে আমার।
- কি? কি করে হল? এত লোকের এত হাই কোয়ালিফিকেশনের পি এইচ ডি নিয়ে হচ্ছে না? শুধু নেট পাশ কি করে হল তোর?
আনন্দের প্রথম এক্সপ্রেশনে এ এরকম রিয়াকশন পেয়ে হতবাক হয়ে গেছিল সৌরভ। সে নেট পাশ করে সংসারের হাল ধরতে প্রাইমারী স্কুলের চাকরি নিয়েছিল শুধু।
- না রে পেয়ে গেছি। রাখি রে, স্যারকে ফোন করব।
বলে ফোন রাখল সে।
-হ্যালো আহেলি! আমি চাকরি টা পেয়ে গেছি রে, ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।
-আমি জানতাম তুই ঠিক পারবি, উফফ দারুন খবর আমার গিফট পাওনা রইল। কবে দিবি? তাড়াতাড়ি বল।
আর আজ ই পারলে যত রাত ই হোক আমার সাথে দেখা করতে আসবি..কেটে গেল ফোন টা।
শেষ লাইনের শব্দ গুলো কানে বাজছিল গৌরবের। চটপট রেডি হয়ে গেল সে।
রিং রিং, অলিভিয়া র
কল আসলো মোবাইলে, স্ক্রিনশট দে রেজাল্টের। কিছুটা মনোক্ষুন্নতার সাথেই চ্যাটবক্সে চলে গেল স্কৃনশট।
তখন রেল স্টেশনে সৌরভ,
হ্যালো, এই এখানে তো গভর্নমেন্ট এর নাম টা নেই লোগো নেই, আসলে বাবা কে বললাম, বাবাও খুব খুশি, জিজ্ঞেস করল যে গভঃ নাম বা লোগো টা নেই কেন? তাই বলছি।
- দাঁড়া, আমি পিডিএফ ফাইলটা পুরো সেন্ড করছি। আর হ্যা আমি না একটু সুমন্ত এর সাথে দেখা করে আসছি।
- ওহ! এত রাতে যাবি? সাবধান এ যাস।
বাবা কে দেখাই।
হ্যালো। সুমন্ত আমি সেই চাকরি টা পেয়ে গেছি রে, আমি তোর বাড়ির কাছেই আছি আসছি।
-হ্যা হ্যা আয়। দারুন খবর।
সুমন্তদের বাড়ির দুটো গলির পর আহেলিদের বাড়ি।
হ্যালো আহেলি, এসেছি আমি।
-বিয়ে!বিয়ে!বিয়ে! এবার তোর বিয়ে খাব আমি।
তাহলে গিফট দিবি কবে, বিয়ের আগে ই দিবি, সেরা গিফট টা চাই আমার।
-স্যালারী হোক দেব।
-আহেলির চোখের কোনায় জল।
একটা চকোলেট ছিলো পকেটে, দিয়ে সৌরভ বলল মিষ্টি মুখ করিস।
চলে গেল মেয়েটা।
দেখা হতেই জড়িয়ে ধরলো সুমন্ত,
- ভাই আমি পেরেছি।
-চল। বাইক বের করছি, শ্বশুর বাড়ি চল, মেয়ের বাবার সামনে চল। বলেই এক গাল হাসি দিল সুমন্ত।
-ধুর শালা। তুই ও না। চাকরি পেতে ৪-৫ মাস লাগবে।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট হোক, তোকেই তে নিয়ে যাবই।
বাড়ি ফিরেছিল ছেলেটা, এক বাক্স মিষ্টি নিয়ে। দেখেছিল আহেলি তার চ্যাট বক্স এ মেসেজ করেছে যে প্রোফাইল ডিএক্টিভেট করছে সে। ইনবক্সের কোন মেসেজ রীড হয়নি আর।
নতুন জায়গায় নতুনভাবে চাকরি জয়েন করেছে সৌ ৫ মাস হতে চলল। গতানুগতিক ভাবে সব দিক তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেছে সে। সকালে বেরোনো চাকরি অ্যাটেন্ড করা, বাড়ি ফেরা, রিলেশনশিপে সময় কম দেওয়ার তাগিদে অনেক টানাপোড়েন চলছে তার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।
এইভাবেই দিন কাটে সপ্তাহ মাস পেরোয়।
চ্যাট মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসে হঠাৎ, একটা বিয়ের কার্ডের ছবি, আর নিচে লেখা, আমার বিয়ে তোকে কিন্তু আসতেই হবে এট এনি কস্ট।
আহেলি তার বিয়ের নেমতন্ন করেছে।
যদি ও কিছু কমন ফ্রেণ্ড আর ফেসবুকের দৌলতে সে আগেই জানতো ওর নতুন সম্পর্ক টা নিয়ে।
যেদিন জেনেছিল খুব ভালো লেগেছিলো তার। কোথায় যেন বুকের উপর থেকে একটা পাথর সরানোর মতো।
রিপ্লাই মেসজ করল সে, কনগ্রেচুলেশন।
-তোকে কিন্তু আসতেই হবে।
সুমন্ত বলছিল যে অবশ্যই যাস তুই, মেয়েটা তোর জন্য একটা সময় অনেক হেল্প করেছে যাস কিন্তু।
সৌরভ বলেছিল সে যাবে না। যদি কোন প্রব্লেম হয়।
সারাটাদিন ব্যাস্ত ছিল গৌরব, তবুও কোথাও যেন একটা কাঁটা বেধার মতো কিছু খেয়াল আসছিল তার মাথায়। তবে আমার কি যাওয়া উচিত??
বিবেকের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল সে।
একটু বেশি রাতের দিকেই একটা৷ গিফট হাতে৷ নিয়ে সুমন্তের বাইকে চেপে সে চলে আসে আহেলি র বিয়ের অনুষ্ঠানে।
চমকে গিয়েছিল আহেলি, বলল আমি না ধরেই নিয়েছিলাম তুই আসবি না, তবুও কোথাও যেন একটা বিশ্বাস ছিল যে তুই আসবি।
- পালাবি নাকি বল? এখনো সময় আছে? সেই পুরোনো কায়দায় প্রশ্ন টা ছুড়ে দিল সৌরভ।
- নারে, আমার সে আমাকে একটু বেশী ই ভালবাসে, সইতে পারবে না।
-হা হা হা, আরে তোর মাথায় তো এখনো টাক দেখা যাচ্ছে, তাই তো বিয়ে করলাম না।
- আহেলি আমি খুব খুশি আজ তোর জন্য, প্রথমে ভাবছিলাম আসব না, কিন্ত দেখ এসে গেলাম।
-ভালো থাকিস রে।
জানিস আমি খুব মন থেকে চাই যে... আহেলি হয়ত অনেক কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু বিয়ে বাড়ির ভীড়, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বেশী সময় দিতে দিলো না তাকে।
কানে বিঁধছিল শেষ শব্দ গুলো, ভালো থাকিস।
আহেলি বলেছিল বন্ধুত্বের সম্পর্কের চেয়ে বড় কিছু হয় না, এই সম্পর্কে সব সম্পর্ক মিশে থাকে, ভালবাসা, স্নেহ, যত্ন, আবেগ, কান্না হাসি, দুঃখ, মমতা, সৌহার্দ্য সব। প্রেম সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্ব না থাকলে প্রেম টেকে না। তাই বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করিস আগে।
সম্পর্ক অধিকার করার নয় সম্পর্ক হয় আত্মত্যাগের উপর।
কোথাও যেন কানে বাধছিল কথা গুলো।
সত্যি কিছু সম্পর্কে প্রাপ্তির খাতা শুন্য জেনেও অপরকে দেওয়া যায়, আহেলি তাই দিয়েছিল। জীবনের কিছু চুড়ান্ত মুহুর্তে আহেলির সেই অনুপ্রেরণার গল্প গুলো ভোলেনি সৌরভ তাই আজ যেতে পেরেছিল।
কিছু সমীকরণ চাইলেও মেলানো যায়না। কিছু বন্ধুত্ব চাইলেও ভোলা যায় না, সময় কারো জন্য থেমে থাকেনি। তবে ওই মুহুর্তের ওই সময় টুকু যে তোমাকে দিয়েছিল সেটার প্রাপ্তি স্বীকার করে কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়।
একটা সম্পর্কের দুটো মেরু, আর তার মেরুতা ভ্রামকের মাপকাঠি আমরাই নির্ধারণ করি।
সুমন্ত দাঁড়িয়ে ছিলো। হেটে হেটে তার দিকেই আসছিল গৌরব মুখে হালকা একটা হাসি, কিন্তু নিজের অজান্তেই চোখের কোনায় এক চিলতে রোদ্দুরের আলো চকচক করে উঠেছিল, যার পরিভাষা বোঝা কঠিন।
কিছু বন্ধুত্বে এক পা পেরোলেই সম্পর্কের সমীকরণটা র মান অসংজ্ঞত হয়ে পড়ে, সময়ের ঘুর্ণিপাকে এরকম কত জীবন অসমীকরণ হয়ে দাঁড়ায়, তার হিসেব না রেখে নিয়তি দেবী আবার নতুন অংক সাজাতে থাকেন...

No comments:
Post a Comment