1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

পুনশ্চ

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

পুনশ্চ
অর্পিতা বসু

অলস দুপুরে বিছানায় বসে বসে কত কথাই না ভাবেন মহামায়া। তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে। এখন শুধু বসে বসে মৃত্যুর জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া বিশেষ কিছু করার নেই। ঘরমোছা-বাসন মাজার লোক, বাজার করা-রান্না করার লোক আছে। ছেলে পাশে না থাকলে কি হবে! এ সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। এখন তো ফোনেই সব হয়। মহামায়া মাঝে মাঝে ভাবেন, ফোন দিয়ে যদি মনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত, যদি আবেগ-অনুভূতিকে দমিয়ে রাখা যেত তাহলে ভালোই হত।

    সেই যে বিয়ের পর তার একমাত্র ছেলে বৌমাকে নিয়ে বিদেশে গেল আজ বারো বছর হয়ে গেল। মাঝে এল বাবার শেষকৃত্য করতে। তাও বৌমা নাতনি কাউকে আনল না। নিজের নাতনির মুখ শুধু ফোনে দেখেই তুষ্ট হতে হয়েছে মহামায়াকে। ছোট নরম শরীর, তুলতুলে হিয়াকে কোলে নেওয়ার ইচ্ছাটা এখন অসম্ভব স্বপ্ন। হিয়া যখন হল তখন বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল মহামায়ার। কিন্তু তখন স্বামী শয্যাশায়ী। বাথরুমে পড়ে গিয়ে শরীরের একটা অংশ অসার। তা জেনেও ছেলে শুধু মাকে নিয়ে যেতে চাইল কয়েক মাসের জন্য। বাবাকে কয়েক মাসের জন্য ডাক্তার বন্ধুর নার্সিংহোমে রেখে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। কিন্তু স্বামীকে ভাগ্যিস ওভাবে মহামায়া ছেড়ে যায় নি। তাহলে সারা জীবনের আপসোস থেকে যেত। কিছুদিনের মধ্যেই মানুষটা ঘুমের মধ্যে দিয়ে পরলোকে পারি দিল নিঃশব্দে। পাশে শুয়ে থেকেও মহামায়া বুঝতে পারলেন না যে মানুষটা তাঁকে একা করে চলে যাচ্ছে। যদি সজাগ থাকতেন, শক্ত করে হাতটা ধরে আগলে রাখতেন, এমন নীরবে চলে যেতে দিতেন না।

    একটা সময় ছিল যখন সংসারের কাজ, ছেলের পড়াশোনা, স্কুল, সাঁতার, আঁকা, গিটার স্কুল নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলেন যে নিজের দিকে তাকানোর সময় পেতেন না মহামায়া। রাতে বিছানায় পিঠ পেতে একটা দীর্ঘশ্বাস আর অতল ঘুমে রাত  নিমেষে কেটে যেত। আর এখন শুধু বসে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলা আর ঘুমহীন চোখে রাতের প্রহর গুনতে গুনতে তিনি ক্লান্ত।  

তাও শেষসময়ে মানুষটা সারাক্ষণ মহামায়াকে পাশে চাইত। মহামায়া অভিমান করে বলতেন , "বয়স থাকতে এমন চোখে হারাও নি আর এখন…"

এখন তো সে কাজটুকুও নেই। বয়স দিন দিন বাড়ছে। এখন তো ভয় লাগে তিনিও যদি কখনো পড়ে যান তার স্বামীর মত! তাঁকে তো তুলে ধরার ও একটা লোকও নেই। ওখানে পড়েই থাকবেন, কেউ জানতেই পারবে না। আর যদি কোন ভাবে বেঁচে যান তাহলে ছেলে তো আসবেই না। হয়তো ডাক্তার বন্ধু কে ফোন করে আমৃত্যু মাকে নার্সিংহোমে ফেলে রেখে দেবে। এমন করুণ দশা যাতে না হয় তার জন্য মহামায়া বেশ কিছুকাল ধরে একটা পরিকল্পনা করছেন। নিজেকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করছেন কাজটা করার জন্য।

    রাতে ঘুম আসে না বলে যে ঘুমের ওষুধ খেতেন, এখন বেশ কয়েক মাস তা না খেয়ে কয়েকটা কৌটো ঘুমের ওষুধ জমিয়েছেন। একদিন মনের জোড় করে শুধু খাওয়ার অপেক্ষায়। স্বেচ্ছা মৃত্যুই একমাত্র তাঁকে সসম্মানে এ পৃথিবী থেকে মুক্তি দিতে পারে। সত্যিই তো, ছোট বেলা থেকেই তিনি শুনে এসেছেন, প্রত্যেক মানুষের জন্ম কোন না কোন উদ্দেশ্য সফল করার জন্য। আর তাঁর তো সেসব কাজ হয়ে গেছে। আজ তো অর্থহীন, উদ্দেশ্যহীন শ্লথ জীবন। তাও ভেবেছিলেন স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে হয়তো তাঁকে ওদেশে যাওয়ার কথা বলবে। কিন্তু না, ততক্ষণে নাতনি একটু বড় হয়ে গেছে, ক্রেশে যায়। আর মাকে প্রয়োজন নেই।

   মহামায়ার প্রথম থেকেই একটা মেয়ের শখ ছিল। বেশ পুতুলের মত সাজাবে, সুন্দর সুন্দর জামা পরাবে….।তা তো হল না। কিন্তু যখন নাতনি হল তখন আবার মনের ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছাটা জেগে উঠেছিল। কিন্তু সে সুখ বিধি হয়তো তাঁর ভাগ্যে লেখেন নি। তাই বাবার শেষ কাজ করে ছেলে নিঃশব্দে চলে গেল। দুটো কাজের লোকের হাতে মায়ের দায়িত্ব দিয়ে অনেক বড় কর্তব্য করে গেল - এমন একটা ভাব নিয়ে চলে গেল। আর কোন যোগাযোগ ও করল না।

কি করে পারে? যে মাকে না হলে ছেলেবেলায় চলতো না, তাকে এভাবে ভুলতে পারে?

তবু মহামায়া প্রতিদিন ফোনের আশায় বসে থাকতেন।

 কিন্তু যেদিন ফতেমা ঘর মুছতে মুছতে বলল, দাদা বাবু কাল ফোন করেছিল। বলল, তোমার ফোনে লাইন পায় না, নাকি বেজে যায় তুমি ধরো না? যাইহোক তোমার খবর নিয়ে বলল আমার, তোমার আর রান্নার মাসির টাকা তোমার ব্যাঙ্কে পাঠিয়েছে।

তুমি তোলার ব্যবস্থা করো।

মহামায়ার খুব অপমানে লেগেছিল। এমাসেও ঠিক একই কাজ করল, রান্নার দিদিকে ফোন করে এসব কথা বলেছে।

কী বিশ্রী রকম অপমান। কিন্তু কিছু বলার সুযোগ নেই, চুপ করে সহ্য করছেন কিন্তু আর ভালো লাগছে না।

না! এবার নিজের ইহলোকের পাট চুকিয়ে ফেলাই উচিত। এ অপমানের অহেতুক জীবন বয়ে যাওয়ার কোন মানেই হয় না।

   মহামায়া আস্তে আস্তে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালেন। বের করলেন তাঁর সঞ্চিত ওষুধের কৌটো গুলো। এক বোতল জল আর ওষুধ গুলো নিয়ে স্বামীর ছবির সামনে বসলেন ।

বললেন , "ওগো আমি আর পারছি না এই একাকীত্বের যন্ত্রণা সহ্য করতে। তুমি আমাকে ডেকে নাও তোমার কাছে। আর এই অর্থহীন জীবনের ভার টানতে পারছি না গো।

আমি পলায়নী মনোবৃত্তি কখনোই রাখি না তুমি তো জানো। চিরটা কাল মাথা উঁচু করে বেঁচেই, লড়াই করেছি অনেক অনেক কঠিন পরিস্থিতির সাথে।

কিন্তু বার্ধক্যের একাকীত্ব বড় সাংঘাতিক। অনেক ভেবে দেখলাম জানো! আমি চলে গেলে আমার সাথে সাথে আমার ছেলেটাও এ পিছুটান থেকে মুক্তি পাবে।

 ওতো ফেলতে পারছে না, গিলতেও পারছে না। তাই অনেক ভেবেই আজ এই সিদ্ধান্ত নিলাম। "-

  কলিং বেলের শব্দ।

মহামায়া অবাক হয়ে গেলেন।

 এসময় তো কারোর আসার সম্ভাবনা নেই। নিশ্চয়ই সেলস ম্যান। বাজুক বেল।

 বেশ কয়েকবার বেল বাজার পর চেনা গলায় মহামায়া শুনলেন, বৌঠান! ও বৌঠান!

আঁতকে উঠলেন মহামায়া।

তাড়াতাড়ি ওষুধ গুলো লুকিয়ে রেখে বারান্দার দিকে ছুটলেন।

 আবার কার কী হল কে জানে! উদ্বেগে বললেন , কীহল গো ঠাকুরপো?

এই যে বৌঠান। দুপুরের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম বুঝি?

না। না। ঠাকুরপো, একটু কলঘরে গিয়েছিলাম, তাই….

তা কার কী হল?

বৌঠান তুমি তো জানো এ পাড়ার লোক বিপদে পড়লে বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের জন্য তোমার কাছেই আসে।

তুমি কষ্ট করে একবার নিচে এসো।

নিচে নেমে মহামায়া দেখলেন, ঠাকুরপোর সাথে একটা অল্প বয়সী ছেলে আর একটা অল্পবয়সী মেয়ে কোলে একটা দুধের শিশুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে যেন অসহায় কারুণ্য মাখানো।

মহামায়ার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে বলরাম বাবু বললেন, বৌঠান এ হল আমার পিপতুতো বোন বুলার ননদের বড় জায়ের ছেলে, ছেলের বৌ আর একমাত্র নাতনি।

 ওরা বড় বিপদে পড়ে এসেছে আমার কাছে। অনেক দিন ধরেই ওদের সঙ্গে পারিবারিক অন্যায় চলছিল নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে বলে। কিন্তু পলাশ পরিবারের বড় ছেলে তাই  সব দায়িত্ব পালন করত নীরবে। ভালবাসা দিয়ে ভালবাসা জয় করতে চেয়েছিল দুজনেই। কিন্তু কন্যা সন্তান হওয়ার পর ওদের ওখানে থাকা দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

গতকাল বাবা-মা, ছোট জা মিলে এই দুধের শিশুকে জলে ডুবিয়ে মারতে গিয়েছিল।

 ভাবতে পারেন বৌঠান! এমন ফুলের মত বংশধরকে তাদের মনে ধরল না। কী পাশবিক! ওদের ছেলে দরকার। ছোট বৌ নাতি দিয়েছে তাই সে প্রিয় আর এ চক্ষুশূল।

মহামায়া দেখলেন, বৌটা এখনও কাঁপছে ভয়ে আর কোলের শিশুকে আঁকড়ে রয়েছে বুকের মধ্যে।

কী সাংঘাতিক ঠাকুরপো! আজকের দিনেও মানুষ এমন বিকৃত মানসিকতার শিকার।

হ্যাঁ বৌঠান। তাই ওরা সন্তানের জীবন বাঁচাতে বেরিয়ে এসেছে কোনরকমে।

বুলা ফোন করে বলল, একটা থাকার জায়গার কথা। তাই আমার মনে হল, তোমার বাড়ির এক তলাটা তো এখন ফাঁকা। নতুন ভাড়া পাও নি তো?

না। কয়েক জনকে বলা আছে। তবে এখনও কেউ আসেনি ভাড়ার জন্য।

তুমি নিশ্চিন্তে এদের ভাড়া দিয়ে দাও বৌঠান।  বিপদে পড়েছে বুঝতেই পারছো। ভালো মানুষ। তুমি ঠকবেনা। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

তা তো বুঝলাম। কিন্তু ভাড়া দেওয়ার কিছু পদ্ধতি, কাগজ পত্র…

পলাশ শক্ত করে মহামায়ার হাত ধরে বলল, মাসি, একটু ভরসা করে আমাদের থাকতে দাও। তারপর তোমার কাগজ পত্র দিও সময় নিয়ে। আমি কোন ভাবে তোমায় বিপদে ফেলবনা। বরং পাশে থাকব আমার সাধ্য মত।

কেমন যেন শরীরের মধ্যে একটা শিহরণ জাগল। মহামায়া বললেন, ভিতরে এসো। ঘর দুটো একটু পরিষ্কার করে নিতে হবে বাবা। মাসখানেক বন্ধ পড়ে আছে।

পলাশ প্রণাম করে বলল, তুমি আমাদের নিরাপত্তা দিলে। মাথার উপর ছাদ দিলে। আমার কাছে তুমি দেবী, মাতৃ তুল্য। আমি এ ঋণ কখনো ভুলব না, পারলে শোধ করব দেখো মাসি।

আমরা দুজনেই পরিষ্কার করে নিতে পারব তুমি চিন্তা করো না। তুমি শুধু মেয়েটা কে একটু তোমার কাছে রেখো কিছু ক্ষণ।

  পলাশ বলল, কি গো রাণু, খুশিকে মাসির কোলে দাও!

দ্বিধা আর বয়সের জড়তা কাটিয়ে মহামায়া দুহাত বাড়িয়ে নরম তুলতুলে মেয়েটাকে হাতে নিতেই নিজের অজান্তেই তাঁর মুখে নির্মল হাসি চলে এল।

বলরাম বাবু বললেন, বৌঠান বড় মায়ার জিনিস এ শিশু। দেখো, তোমার মুখটা কেমন হাসিতে ঝলমল করে উঠেছে।

মহামায়া বললেন , ওর নাম ও সার্থক করবে, সবাই কে খুশি রাখবে।

বুকের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, এখনো কোল বিচার আসেনি।

রাণু বলল, সবে তো দুমাস বয়স মাসি।

মহামায়া আঁতকে উঠল, এইটুকু প্রাণ! ওর ঠাকুমা শেষ করতে চেয়েছিল!

পলাশ আর রাণুকে ঘর দেখিয়ে দিয়ে মহামায়া দোতলায় গেলেন।

 বলরাম বাবু শিশু টাকে কোলে করে মহামায়ার ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিলেন ।

বিছানায় কোলে নিয়ে বসে মহামায়া ভালো করে ওই নিষ্পাপ শিশুটার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।

যাওয়ার আগে বলরাম ঠাকুরপো বলে গেলেন, পলাশ কলকাতায় ভালো অফিসে চাকরি করে। সেহেতু ভাড়া নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। আর ভালো মানুষের সঙ্গও পাবে মহামায়া।

  একটু হেসে মহামায়া বলল, ঠাকুর পো এখনই বুলাকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হতে বলো।

   হ্যাঁ। ফোন করে দিচ্ছি। আর ওরা তো শুধু বাচ্চার জিনিস আর শুধু জামা কাপড় নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তাই আমার বাড়ি থেকে লোক দিয়ে বাবা-মার খাট, বাসনপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওনারা চলে যাওয়ার পর থেকে ও খাট তো পড়েই রয়েছে। ওদের কাজে লাগলে বাবা-মা খুশিই হবেন।আর বাকি সব আস্তে আস্তে ওরা গুছিয়ে নেবে।

  ঠাকুরপো চিন্তা করো না। আমি আছি তো। ওদের কোন অসুবিধা হবেনা।

 হ্যাঁ। তা আমি জানি বৌঠান। তুমি চিরকাল বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে থেকেছো। আর এরা তো তোমার চোখের সামনে থাকবে। তুমি তো ওদের কিছু অসুবিধা হতে দেখতে পারবেনা।

এখন যাই। আবার পরে আসব।

নির্জন, নীরবতা যা মহামায়াকে তাড়া করত এখন তা ই ভালো লাগছে। নিঃশব্দে কোলে এই নরম, তুলতুলে শিশুর অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করলেন ।

 হাতটা দিয়ে আলতো করে ওর সারা শরীরটায় হাত বোলাতে লাগলেন।

হাত, পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে খুশি  মহামায়ার আঙুল শক্ত করে ধরে ফেলল। আর তার সে ফোকলা নিষ্পাপ হাসি দেখে মহামায়ার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

 তাঁর যেন আবার হাসতে ইচ্ছা করছে, বাঁচতে ইচ্ছা করছে। খুশিকে নিয়ে সময় কাটাতে ইচ্ছা করছে। 

 নতুন করে সোয়েটার বুনতে, কাঁথা বানাতে ইচ্ছা করছে।

 আস্তে আস্তে উঠে আলমারি থেকে ছেলের ছোটবেলার খেলনা ঝুমঝুমি বের করে দিলেন খুশিকে। খুশি ঝুমঝুম বাজাচ্ছে।

মহামায়া লুকিয়ে রাখা ঘুমের ওষুধ গুলো হাতে নিয়ে স্মিত হাসি হেসে স্বামীর ছবির দিকে তাকালেন।

তুলে রেখে দিলেন ওষুধের কৌটো গুলো।

খুশিকে কোলে নিয়ে গুন গুন করে গাইতে শুরু করলেন "আলো আমার আলো ওগো আলোয় ভুবন ভরা……"।


basu.ar28@gmail.com
কলকাতা

2 comments: