1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, February 21, 2021

প্রতিচ্ছবি

 

ছবি  : ইন্টারনেট 

        প্রতিচ্ছবি 
সমৃদ্ধি চ‍্যাটার্জী

 

চিঠিটা যখন হাতে পেলাম, তখন কিছুটা অবাক হলাম  আর কিছুটা আনন্দিতও। মহেন্দ্রপুর এস্টেট থেকে পাঠানো, খামের গায়ে বড়ো বড়ো হরফে লেখা আমার নাম, যদিও বানানটা ভুল। চিঠিটা পেয়ে একটা অদ্ভূত পাঁচমেশালি অনুভূতি হল। 

আমার নাম অতনু, পেশায় চিত্রশিল্পী। নানা ধরনের, নানা বিষয়ের ওপর ছবি আঁকতে পারি। আমার পড়াশোনা বেশিদূর নয়। মা চেয়েছিলেন ম‍্যাট্রিকটা যেন পাশ করি, কোনক্রমে সেটা করেছি, তার বেশি নয়। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে খুব ভালোবাসতাম। মায়ের কাছেই শোনা, তখন সবে আমি হাঁটতে শিখেছি, ইঁটের টুকরো দিয়ে বাড়ির দেওয়ালে সরল রেখা এঁকেছিলাম, বাবা দেখে অবাক হয়েছিলেন, এই বয়সেই হাতের ওপর এতো নিয়ন্ত্রণ? বাবা সম্পর্কে  এটাই আমার একমাত্র স্মৃতি, বেশিদিন পাইনি বাবাকে তারপর। পড়াশোনা যখন হলোনা তখন ভাবলাম, চিত্রশিল্পীর পথই অবলম্বন করব। প্রায় বছর খানেক ছিলাম এক শিল্পীর শাগরেদ হয়ে। শিল্পী ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরী প্রসাদের ছাত্র, তার কাছেই হাতেখড়ি হলো আমার এক অন‍্য ধরণের আর্টের – কোম্পানি কলম। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্য যখন পতনের মুখে, ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে ইংরেজ শাসন, তখনই নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই প্রকারের আর্টের সৃষ্টি। মুঘল, রাজপুত ধরনের শিল্পশৈলীর সাথে ইউরোপীয় ধরনের আর্টের সংমিশ্রণের ফল, কোম্পানি আর্ট। একসময়ে বহুল প্রচারিত ও বহু পৃষ্ঠপোষকের আশীর্বাদপুষ্ট ছিল, এই আর্ট। তবে ফোটোগ্রাফির আবিষ্কারের ফলে জনপ্রিয়তা হারায়। আজকাল তো একেবারেই চল নেই। 

আমার মতো শিল্পীদের সেইজন‍্য বিশেষ কিছু রোজগারও হয়না। তবে ইদানীং আমার পয়সার প্রয়োজন ছিল বৈকি। মায়ের শরীর কদিন যাবৎ ভালো যাচ্ছিল না। পাড়ার লোকেরাও বলল, কোলকাতায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে, এখানকার থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবা অনেক ভালো কোলকাতায়। কিন্তু কোলকাতায় যাওয়ার খরচ, থাকার খরচ, ডাক্তার আর ওষুধের খরচ অনেক, তাই পিছিয়ে গেলাম। 

এরমধ্যেই হঠাৎ একদিন কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম। লেখা আছে, মহেন্দ্রপুর এস্টেটের মালিক  রথীন লাহিড়ী তাঁর পোর্ট্রেট আঁকার জন‍্য শিল্পী খুঁজছেন। অভিজ্ঞতা থাকা আবশ‍্যিক এবংকাজ ভালো হলে, উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। কপাল ঠুকে একটা তার করলাম, সাথে নিজের বিশেষত্ব জানালাম। এটাও জানালাম যে এই কাজটা পাওয়া আমার কাছে কতটা জরুরী। আর সেই তারের জবাব এলো আজকে। ওরা আমাকে ডেকেছে! মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে একদিনও সময় নষ্ট না করে পাড়ি দিলাম মহেন্দ্রপুরের উদ্দেশ্যে।


                                                   ২

মহেন্দ্রপুর এস্টেট যেমন ভেবেছিলাম তেমন ঠিক নয়। এককালে রাজকীয় হলেও, এখন তার লেশমাত্র অবশিষ্ট নেই তা সে পরিচর্যার অভাবেই হোক বা মালিকের ঔদাসিন‍্যে। গেটে দুজন যমের মতো দারোয়ান। বাড়ির বাইরে একটা বড়ো বাগান, একটা মালি মাথা নীচু করে কাজ করে যাচ্ছে। বসার ঘরটা বেশ বড়ো, নানা পুরোনো আসবাবে ভর্তি। দেওয়ালে তিনটি পুরুষের পোর্ট্রেট সাজানো, বোধকরি এস্টটেটের পূর্বতন মালিকদের।  অপর দেওয়ালে তিনটি বাঘের মাথা ঝোলানো রয়েছে, ঠিক যেমন শিকারের ট্রফি। এইসব দেখতে গিয়ে খেয়াল করিনি, দুটি লোকের আগমন। একজনের চেহারা সম্ভ্রান্ত, বয়সের ফলে চুলে সামান্য পাক ধরেছে, পরণে ধবধবে সাদা ধুতি পাঞ্জাবী আর ঠোঁটে কোণে একটা হাসির রেশ। দ্বিতীয় জন বেঁটে, চাঁপা গায়ের রঙ, চাহনিটা নিষ্ঠুর। সম্বিত ফিরল প্রথম জনের গলায়, “অতনু, আসতে অসুবিধা হয়নি তো?” আমি ব‍্যস্ত হয়ে উত্তর দিলাম, “না, না.. একেবারেই না,”। ভদ্রলোক হাসলেন, “বোসো, বোসো.. তোমাকে তুমি বললাম, তুমি আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট.. আমার যদি ছেলেপুলে থাকত তবে তোমার মতোই হত,” বলে ভদ্রলোকের মুখ কিছুটা ম্লান হয়ে গেল। “যাক সে সব কথা, তোমাকে পরিচয় দিই, আমিই রথীন লাহিড়ী, মহেন্দ্রপুর এস্টেটের মালিক। আমার ঠাকুরদা মহেন্দ্র লাহিড়ী এক পর্তুগীজ সাহেবের কাছ থেকে এই জমি কিনেছিলেন। তাঁর নামেই এই এস্টেট। আমাদের পৈতৃক ব‍্যবসা চায়ের। উত্তরের দিকেই থাকি, খুব শীত পড়লে এখানে আসি। এখানে আমি একাই থাকি, স্ত্রী গত হয়েছেন প্রায় দশ বছর হল, আমার কোন সন্তান নেই। এই দেখো, তোমাকে সেই থেকে আমি আমার বারমাস‍্যা শুনিয়ে যাচ্ছি,” বলে থামলেন। “তোমাকে এখানে ডাকার কারণ, আমার অনেক দিনের শখ, নিজের পোর্ট্রেট বানানো। তাই বিজ্ঞাপন দিলাম। বহু দরখাস্ত পেয়েছি, তবে তোমার দরখাস্তটা আমার চোখে লেগেছে। ছাপোষা বাঙালী ছেলে, যার জীবনের একমাত্র আকুতি তার মায়ের ভালো চিকিৎসা করানো, এটা আমার মন ছুঁয়ে গেছে। ইয়ং ম‍্যান, জীবন যখন সুযোগ দেয়, তখন দুহাত দিয়ে তা গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের কাজ। আমার মনে হয় তুমি তা পারবে। তা ছাড়া, কোম্পানি আর্টের কথাটাও বেশ ইন্টারেস্টং। শোনো, বেশি সময় নেবো না, তোমার যা লাগবে এই আমার ম‍্যানেজার অজিতেশ..,” বলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকালেন, “ওকে বোলো, ও সব ব‍্যবস্থা করে দেবে”। 

ছোটবেলায় পঞ্চতন্ত্রের গল্পে বক-তপস্বীর ছবি দেখেছিলাম, মাছ দেখলেই বকের চোখমুখটা যেমন হত, অজিতেশের মুখটাও ঠিক তেমন লাগল। তবে রথীন বাবুর মতোঅমায়িক আর পিতৃতুল্য মানুষ  যে এখনো  পৃথিবীতে আছেন ভাবলেও অবাক লাগে।

স্টোররুমের পাশে একটা ঘরে আমার ঠাঁই হলো। সারাদিনের যাতায়াতের ধকল ছিল, বিছানায় মাথা দিতেই রাজ‍্যের ঘুম নামল চোখে। তবুও মনে হল যেন শুনতে পেলাম পাশের ঘরে একটি পুরুষের কন্ঠ, কান পেতে যেটুকু শুনলাম তা হলো, “….খালি জিজ্ঞেস করচে নতুন ছেলেটা কে? আমি অবশ‍্য কিছু বলিনি…”। কিছুক্ষণ পর সব চুপচাপ। আমিও ঘুমিয়ে পড়াটাই সমীচীন মনে করলাম।

                          ৩

সকালে ঘন্টাদুয়েক রথীনবাবুকে নিয়ে বসলাম। তবে হঠাৎ করে কাজ পড়ে যাওয়ার কারণে উনি থাকতে পারলেন না। আমার দু-একটা জিনিস লাগত, তাই বাজারে গেলাম। মাকে পৌঁছ সংবাদটাও তার করলাম। দোকানিটা বেশ চটপটে, নয়তো আঁকার সরঞ্জাম বোঝাতে বোঝাতে কালঘাম ছোটার জোগাড় হয়। বেশ আলাপ হয়ে গেল তার সাথে। বেরিয়ে আসছি যখন, দোকানিটাই জিজ্ঞেস করল, “কোথায় উঠেছেন আপনি?”। আমি বললাম, “ওই তো মহেন্দ্রপুর এস্টেটে, একটা কাজের জন্য ডাকা হয়েছে আমাকে”। দোকানির মুখের ভাষাটা পাল্টে গেল, “কি কাজ? ওই কি যেন বলে.. জী.. জীবনী লেখা?” আমি একটু অবাক হলাম, “না না, জীবনী নয়.. এস্টেটের মালিকের একটা ছবি আঁকতে এসেছি.. কেন বলুন তো?” এবার দোকানিটা সামলালো, বলল, “না, সেরকম কিছু না.. এমনি বললাম। সাবধানে থাকবেন, নতুন জায়গা তো,” বলে গলার স্বরটা খাদে নামিয়ে বলল, “ চার-তিন-পাঁচ-দুই-তিন-পাঁচ, শীতলহাট থানার নম্বর, নম্বরটা মাথায় রাখবেন বাবু। আমার দোকানের ঠিক দুটো দোকান পরে একটা শেঠের দোকান আছে। ওর দোকানে ওই.. ফোন আছে.. দরকার লাগতে পারে..”। কথাগুলোর মাথামুন্ডু কিছু বুঝলাম না। তবে মনের মধ‍্যে একটা কিন্তু কিন্তু ভাব হলো। আরও একটা প্রশ্ন মনে পাক খাচ্ছিল, রাখঢাক না করে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম রথীনবাবুকে, রাতে  একসাথে খেতে বসে, “আচ্ছা, রথীনবাবু, আপনি কি ফুটবল খেলতেন ছোটবেলায়?”  ভদ্রলোক আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন, “কই না তো? কেন বলো তো?” আমি বললাম, “ একটা ছবি দেখলাম বসার ঘরে, একটা ছোট ছেলে ফুটবল পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, মনে হলো আপনারই ছবি তবে…..” 

-“ডানগালে একটা কাটা দাগ রয়েছে, তাই তো?”, রথীনবাবু চোয়াল শক্ত করে বললেন। কিছুক্ষণ সব চুপ, তারপর রথীনবাবু মুখ খুললেন, “ ও আমার দাদা, যতীন লাহিড়ী। বিয়ে থা করেছিল, একটা ছেলেও ছিল, তারপর হঠাৎই একদিন ওর মানসিক বিকার দেখা দেয়। অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। একদিন ছাদ থেকে ঝাঁপ দেয়। বৌদি আর ভাইপো বছরদুয়েক পর বারাণসী থেকে ফেরার পথে নৌকাডুবিতে…”।

নিজেকে খুব  অপরাধী মনে হচ্ছিল, কিন্তু কোথাও একটা প্রশ্ন ঘুরছিল মনে, কেন এই কথাটা সেদিন গোপন করলেন উনি? তবে কি রথীনবাবুকে যা ভেবেছিলাম, তার সাথে কি মিল নেই? কেন তখন দোকানিটা থানার কথা বলল আমাকে? এই সব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। শেষরাতে আমার মাথার কাছে জানলায় একটা খুট করে শব্দ পেলাম। ধড়মড়িয়ে উঠে টর্চের আলো ফেললাম, তাতে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ! জানলায় দাঁড়িয়ে স্বয়ং রথীনবাবু, হ‍্যাঁ, তাই তো রথীনবাবু! কিন্তু এ কী? ওনার ডানগালে এই কাটা দাগটা কোথা থেকে এলো? দেরী না করে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম, ‍ব‍্যাপারটা বোঝার জন‍্য। কিন্তু বেরিয়ে যে কি ভুলটাই না করেছি তা বুঝতে পারলাম, মাথার পেছনে একটা ডান্ডার বাড়ি আর তারপর রাশি রাশি অন্ধকার চোখে নিয়ে লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে।


                          ৪

  জ্ঞান বিরতেই বুঝতে পারলাম বাগানে ঘাসের ওপর শুয়ে আছি। মাথায় খুব যন্ত্রণা, তা সত্ত্বেও উঠে দাঁড়ালাম। রথীনবাবু বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টে চেয়ে আছেন আমার দিকে। অজিতেশ বললো, “কর্তাবাবু, আপনি ঠিকই বলেছিলেন, ছোকরার ওপর নজর রাখতে। শালা, বাজারেও আপনার খোঁজখবর নিচ্ছিল, আমার লোক খবর দিয়েছে.. এক্ষুনি শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে এটাকে “। রথীনবাবু হাসলেন, “আরে তাড়াহুড়ো করছো কেন? একটু রসিয়ে রসিয়ে মারি একে, খুন তো এই প্রথমবার করছি না?” আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না নিজের চোখকে। পালাবো যে তার উপায় নেই। দুটো যমের মতো দারোয়ান গেটে দাঁড়িয়ে। মালিটাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। হা ঈশ্বর! একি বিপদে ফেললে তুমি! কিন্তু শেষ চেষ্টা না করলেই নয়, আমি কাতর স্বরে বললাম, “আমায় ছেড়ে দিন  রথীনবাবু, আপনার দুটি পায়ে পড়ি। আমি মরে গেলে মা বাঁচবে না..”

-“ কিন্তু তুই না মরলে তো আমি বাঁচব না… এই ধর ব‍্যাটাকে..” রথীনবাবু ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন।

হঠাৎই ছাদ থেকে একটা শব্দ পেয়ে সবাই থমকে দাঁড়াল। ছাদে যিনি দাঁড়িয়ে তিনি রথীনবাবুর প্রতিচ্ছবি , শুধু তার ডান গালে একটা কাটা দাগ। 

-“ রথীন, ওকে ছেড়ে দে, নয়তো আমি ছাদ থেকে ঝাঁপ দেবো, সত‍্যি সত‍্যিই, যেমনটা তুই বলে বেড়াস”

রথীনবাবু বিষ্ফারিত চোখে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “না দাদা, তুই থাম,.. এরকম করিস না”।

অজিতেশ ওপরে ওঠার চেষ্টা করছিল, দেখে ছাদ থেকে ভদ্রলোক হুংকার ছাড়ালেন, “এই শুয়োর, একদম চালাকি করবি না। নয়তো এই বন্দুকের গুলিতে তোকে ঝাঁঝরা করে দেব”, বলে একটা দোনলা বন্দুক তাক করলেন ওর দিকে। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই ছোকরা, শিগগিরি থানায় ফোন করো, বলো যতীন লাহিড়ী ডাকছেন….. দোতলার সবচেয়ে বড়ো ঘরটা রথীনের টেলিফোন রথীনের ঘরে আছে… নম্বরটা জানো কি?..”

আমি ঘাড় নাড়লাম, “আজ্ঞে, জানি..”


                              ৫

টুইন টেলিপ‍্যাথি।  অর্থাৎ  অভিন্ন যমজের অদ্ভূত মনের মিল। এই বিষয়টা শুনেছিলাম কাশ্মীরের দুই যমজ রাজা তোরামন ও হিরণ‍্যর মধ্যে। তাদের ভাগ‍্যের এতটাই মিল ছিল যে এক জ‍্যোতিষী তাদের বাবাকে বলেন যে এই দুই ভাইয়ের জন্ম ও মৃত‍্যু একসঙ্গে হবে। তাই তাদের বাবা ভবিষ্যতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দুজনকেই সমান রাজত্ব দেন। কিন্তু বহু যুগ পূর্বের ইতিহাসের এভাবে পুনরাবৃত্তি দেখব ভাবিনি। যতীনবাবু এবং রথীনবাবুর ব‍্যাপারটাও ঠিক এরকমই। তারা দুই অভিন্ন যমজ একই জন্ম- মৃত্যু নিয়ে পৃথিবীতে এসেছেন। সেই কারণেই যতীনবাবুকে তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেই জন‍্যই যতীনবাবুর ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার হুমকিতে রথীনবাবু এতো ভয় পেয়েছিলেন। পুলিশ ওদের জন্মকুষ্ঠি আর ওদের বাবার উইল পেয়েছিল, রথীনবাবু থানায় স্বীকারোক্তিও দেন। ওদের বাবা এই এস্টেটটা দুই ভাইয়ের নামে সমান ভাগ করে যান, হয়তো জ‍্যোতিষীর ভবিষ্যতবাণী শুনে। তবে কোন ভাই যদি  অস্বাভাবিক ভাবে আঘাত প্রাপ্ত হন অন‍্যের দ্বারা, তবে সেইজন সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে, এবং অপরজন কিচ্ছু পাবেনা। এই কথাটাকেই কাজে লাগিয়ে ছিলেন রথীনবাবু। তিনি চেয়েছিলেন, তার ওপর কেউ হামলা করুক, তাকে মেরে উনি পুলিশের কাছে বয়ান দেবেন যে তার দাদা ষড়যন্ত্র করে তাকে মারতে চেয়েছেন। বাজারে তার প্রচুর ঋণ, এস্টেট বন্ধক রেখে টাকা পেতে পারতেন ব‍্যাঙকের থেকে। এই কারণেই আমাকে পোর্ট্রেট আঁকার নাম করে ডেকে আনা হয়েছে। এর আগেও একটি ছেলেকে রথীনবাবু জীবনী লেখার নাম করে ডেকে আনেন, কিন্তু ছেলেটা পালিয়ে যায়। পরে অবশ‍্য ছেলেটার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাই সেদিন দোকানিটা সাবধান করছিল আমাকে। এই যতীনবাবুর স্ত্রী ও পুত্রসন্তানের মৃত‍্যুটা অস্বাভাবিক কিনা  থা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। যতীনবাবুকে এতোদিন বন্দী করে রেখেছিলেন রথীনবাবু, সম্ভবত মালিটাই ওনাকে বেরোতে সাহায‍্য করেছে।

রথীনবাবু আর অজিতেশের মামলাটা অনেকদিন চলেছিল। পোর্ট্রেটটা আমি শেষ করেছিলাম যতীনবাবুকে দেখে। অসুবিধা হয়নি, তারা দুজনে একে ওপরের প্রতিচ্ছবি।

ihddirmas95@gmail.com
কলকাতা

No comments:

Post a Comment