ছবি : ইন্টারনেট প্রতিশোধ দেবেশ মজুমদার |
বিগড়ে যাওয়া লিফটটার সামনে থেকে সরে এল আকাশ। হতাশ চোখে তাকিয়ে রইল সিড়ির দিকে। এখন এটা বেয়ে চারতলায় উঠতে হবে ভাবতেই গলা শুকিয়ে আসছিল। সারাদিনের অফিসের ধকলে শ্রান্ত পাদুটোকে টেনে নিতে বেশ পরিশ্রম হচ্ছে আকাশের। দোতলা পর্যন্ত উঠতেই হাঁপিয়ে উঠল। যেন অনন্তকাল পর নিজের ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাড়াল আকাশ। ও কলিংবেল চাপবে, হিয়া এসে দরজা খুলবে, এই ধৈর্যটুকুও হলনা আকাশের। ওর কাছে বাড়তি চাবি আছে, ওটা দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।
‘হিয়া, হিয়া,’ হাক ছাড়ল আকাশ। কোনো সাড়া নেই।
কী ব্যাপার? কোথায় গেল মেয়েটা? অন্যান্য দিন তো ও ঘরে ঢুকতেই ছুটে আসে। ভাবতে ভাবতে বেড রুমের দিকে উঁকি দিল আকাশ। উঁহু, কোথাও নেই। বাইরে গেছে বোধহয়। সেলফোনটা বের করে ডায়াল করল হিয়ার নাম্বারে।
আপনার ডায়াল করা নাম্বারটিতে এই মূহুর্তে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা, অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার ডায়াল করুন। পর পর কয়েকবার একঘেয়ে কথাগুলো শুনতে শুনতে মেজাজটাই বিগড়ে গেল আকাশের। খানিকটা ভয়ও করছিল। হিয়া তো কখনো একা বাইরে যায়না। দোকান টোকানেও যাতে না যেতে হয় সেজন্য আকাশ একটা দোকানে বলে রেখেছে, ফোন করলেই প্রয়োজনীয় জিনিসটা দিয়ে যায় ওরা। তাছাড়া কলকাতা শহরে কোনো আত্মীয় স্বজনও নেই হিয়ার। তার ওপর মোবাইলটাও বন্ধ। তাহলে?
মাত্র একমাস আগে ওদের বিয়ে হয়েছে। আকাশের বাবা মা দুজনেই গ্রামে থাকে। আকাশ নিজের ব্যবসা আছে। বেশ বড় ব্যবসাটা। আয়ও যথেষ্ঠ ভাল। প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা পাঠায় বাবা-মা’র কাছে।
আর হিয়া? আকাশের পারিবারিক অবস্থা যতটাই ভাল হিয়ার পারিবারিক অবস্থা ততটাই খারাপ। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে সৎমায়ের কাছে বড় হওয়া মেয়ে হিয়া। জন্মের সময় ওর নিজের মা মারা যান। এরপর বাবা আরেকটা বিয়ে করে হিয়াকে মানুষ করার জন্য।
এর আগেও একটা বিয়ে ঠিক হয়েছিল হিয়ার। বিয়ের কয়েকদিন আগে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায় পাত্র। এরপর হিয়াকে ‘অপয়া’ বিশেষনে ভূষিত করে একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ওর বিয়ে পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করে দেয়ার ব্যাবস্থা করা হয়।
তারপর আকাশ যখন ওর অফিসের এক কর্মচারীর পিড়াপিড়িতে হিয়াকে দেখার জন্য ওদের বাড়িতে আসে তখনই এধরনের কিছু মানুষ নিজ দায়িত্বে আকাশ কানে কথাগুলো পৌঁছে দেয়। তবে এধরনের স্টুপিড কথাবার্তা কখনোই কানে তোলে না আকাশ। হিয়াকে দেখার সাথে সাথেই আকাশের পছন্দ হয়ে যায়। একসপ্তাহের মধ্যে ওদের বিয়ে হয়ে যায়। পরবর্তী একটা মাস স্বপ্নের মত কেটে গেল।
২
প্রায় আধঘন্টার বেশি হয়ে গেছে এখনও কোন খবর নেই হিয়ার। ফোনটা এখন পর্যন্ত বন্ধ। ঝগড়া ঝাটিও তো ওদের মধ্যে হয়নি যার কারণে রাগ করে কোথাও চলে যাবার প্রয়োজন পড়তে পারে হিয়ার। আচমকা বেডরুমে এসে জিনিসটা চোখে পড়ল আকাশের। একটা ভাঁজ করা কাগজ। পেপার ওয়েটটা সরিয়ে কাগজটা হাতে নিল আকাশ। হিয়ার হাতে লেখা বেশ বড় একটা চিঠি। কী এমন ঘটল যার জন্য এতবড় চিঠি লিখতে হবে, ঠিক মাথায় ঢুকলনা আকাশের। চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করল আকাশ।
প্রথম লাইনটা পড়ার সাথে সাথেই চমকে উঠল আকাশ। চিঠির প্রথমেই লেখা, “বিক্রমকে মনে পড়ে? তোমার প্রিয় বন্ধু বিক্রম?” হ্যাঁ, বিক্রমকে ওর মনে আছে, খুব ভালভাবেই মনে আছে, এবং বাকি জীবন ওকে ভোলার কোন সুযোগই নেই আকাশের। বিক্রম এবং আকাশের বন্ধুত্ব ছিল প্রগাঢ়, অন্তত একটা পর্যায় পর্যন্ত।
ওদের পরিচয় স্কুলের প্রথম দিন থেকেই। এরপর বন্ধুত্ব। একটু একটু করে সেই বন্ধুত্বের ব্যাপ্তি কলেজ ছাড়িয়ে উনিভার্সিটির গন্ডিতে গিয়ে ঠেকে। একসাথেই পড়াশোনা শেষ করে ওরা। পারিবারিক দিক দিয়ে দুজনের পরিবারই ছিল মোটামুটি সচ্ছল। ওদের আগে থেকেই প্ল্যান ছিল ওরা ব্যবসা করবে। সুতরাং পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দুজনের পুঁজি এক করে একটা ব্যবসা দাড় করায়। এক্সপোর্ট -ইমপোর্টের ব্যবসা। ব্যবসায় ভালই লাভ হচ্ছিল। দুজনেই কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনে, গাড়িও হয়। চলছিল ভালই।
আকাশও ধীরে ধীরে অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করে মধ্যেবিত্ত পরিবারের ছেলে আকাশের হাতে প্রচুর টাকা এসে যাওয়ায় ড্রিংকস, বার, জুয়ার মত ব্যাপারগুলোতে বড্ড বেশি জড়িয়ে পড়ছিল ও। তবে বিক্রম সবসময়ই এগুলো থেকে দুরে থেকেছে। ও আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল আকাশকে পথে আনবার। লাভ হয়নি।
মাত্র তিনমাস আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় বিক্রম। ঝারখণ্ডে একটা কাজে গিয়েছিল ওরা দু’বন্ধু। ফেরার পথে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটা গাছের সাথে গাড়ির প্রচন্ডে সংঘর্ষে নিহত হয় বিক্রম। স্পট ডেড। ড্রাইভ করছিল আকাশ। বড়ধরনের কোনো ক্ষতি না হলেও বেশ ইনজিয়র্ড হয় আকাশও।
হিয়া কিভাবে বিক্রমের কথা জানল? বিক্রমের মৃত্যুর পরই তো আকাশ আর হিয়ার পরিচয়।
চিঠির বাকিটা পড়তে শুরু করল আকাশ।
অবাক হচ্ছ তাইনা? বিক্রম কে আমি কিভাবে চিনলাম কিংবা তোমাদের বন্ধুত্বের খবরই বা আমি কিভাবে জানলাম? তুমি বোধহয় জেনেছ, আমার এর আগেও একটা বিয়ে ঠিক হয়েছিল, বিয়ের কয়েকদিন আগে আমার হবু বর রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। হ্যাঁ, বিক্রমই ছিল আমার সেই হবু বর। ও মারা যাবার দিন পনের আগে আমাদের এনগেজমেন্ট হয়। বিক্রমের সাথে আমার পরিচয় মাত্র পনের দিনের হলেও ওই পনেরটা দিনের জন্য আমি হাজার বছর অপেক্ষা করতে পারব।
জন্মের সময় আমার নিজের মা মারা যান। এরপর বড় হয়েছি অনেক কষ্টে। সৎমা বাবার কান ভারী করে করে আমার প্রতি তাঁর মন বিষিয়ে তুলেছিলেন। আমাকে দেখতে পারেনা আমাদের বাড়ির কেউই। আজীবন ভালবাসা থেকে বঞ্চিত আমি ওই পনেরদিনে পেয়ে গিয়েছিলাম ভালবাসার এক অফুরন্ত আধার।
ওই ক’দিনে বিক্রম চারবার কলকাতা থেকে ছুটে আসে বর্ধমানে আমাদের বাড়িতে। মা’কে বলে আমাকে নিয়ে বের হত। গল্প করতাম আমরা, দেখতাম স্বপ্ন। অদ্ভুত রঙিন ছিল আমাদের সেই স্বপ্নগুলো। ভালবাসা নিয়ে এত গল্প, কবিতা, গান কেন রচিত হয়েছে, আমি একটু একটু করে বুঝতে শুরু করলাম। মনে হত, বেচেঁ থাকাটা তাহলে এত আনন্দের!
বিক্রমের কাছেই তোমার সম্পর্কে জানি আমি। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বাইরে বিক্রমের একটা আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল একটাই, আকাশ। সারাদিন তোমার কথা। আমি একদিন ওকে দুষ্টুমি করে বলেছিলাম, ‘এতদিন জানতাম, মেয়েরা মেয়েদের সতীন হয়, এখন দেখছি তোমার এই বন্ধুই আমার সতীন হবে’।
তোমার সাথে আমার দেখা হবার অনেক আগেই তোমাকে আমি চিনতাম। বিক্রমের মানিব্যাগে তোমার একটা ছবি ছিল, দেখেছি। বিক্রমের সান্নিধ্যে যখন জীবনের একটা অর্থ খুঁজে পেতে চাইছি ঠিক তখনই চলে গেল ও। উহুঁ, ভুল বললাম ,চলে যায়নি, তুমি ওকে সরিয়ে দিয়েছ।
এপর্যন্ত এসে থামল আকাশ। পরিষ্কার বুঝতে পারছে এসি’র শীতল হাওয়াও কপালে জমে ওঠা ঘামের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারছেনা। এটা কী লিখেছে হিয়া ? চরম সত্যটা তাহলে জেনে ফেলেছে ও!
৩
বিক্রম আর আকাশ যখন ব্যবসা শুরু করে, তখনই ওদের মাঝে একটা চুক্তি হয়। ওদের দুজনের কেউ যদি মারা যায় তবে পুরো ব্যবসার মালিক হয়ে যাবে অপরজন। আর একটা নির্দিষ্ট অংকের টাকা প্রতিমাসে মৃতের পরিবার পাবে। আকাশ ততদিনে রঙিন জলে গলা পর্যন্ত ডুবে গেছে। জুয়া খেলেও প্রচুর দেনা হয়ে গেছে। কিন্তু বিক্রম হিসাবের বাইরে একটা পয়সাও দিতনা আকাশকে। পাওনাদারদের চাপে আকাশ যখন দিশেহারা ঠিক তখনই ভয়ঙ্কর প্ল্যানটা মাথায় খেলে যায় ওর।
বিক্রমের একটা অভ্যাস ছিল, নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করত। কাউকে ড্রাইভিং সীটে বসতে দিতনা, এমনকি আকাশকেও। অন্য কারো গাড়িতে উঠলেও সম্ভব হলে নিজেই ড্রাইভ করত। এবং খুবই সতর্কতার সাথে গাড়ি চালাত বিক্রম। হয়ত এব্যাপারে কোনো ভীতি কাজ করত ওর মধ্যে।
সেদিন ওরা দুজন ব্যবসার কাজে ঝাড়খণ্ডে যাওয়ার পর ফেরার পথে এরকরকম জোর করেই আকাশ ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ে। প্রথমে অনেক বাধা দিলেও একপর্যায়ে আকাশকে চাবিটা দিয়ে দেয় বিক্রম। কিছুদুর আসার পরই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু করে আকাশ। প্রায় একশ কুড়ি কিলোমিটার বেগে গাড়িটাকে ছুটিয়ে দেয় বড় একটা গাছের দিকে। এমনভাবে, যেন গাছের সঙ্গে গাড়ির বা দিকটার প্রচন্ড সংঘর্ষ ঘটে। বিক্রম সামনের বা দিকটাতেই বসেছিল। সংঘর্ষের ফলে ওর মাথা ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে মারাত্মকভাবে ঠুকে যায়। মাথা ফেঁটে গিয়ে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু ঘটে বিক্রমের।
পুরো ব্যাপারটার মধ্যে আকাশেরও প্রচুর ঝুঁকির উপাদান ছিল। আকাশ গুরুতর আহত হলেও হিসেবের সামান্য গড়মিলেই মারা যেতে পারত আকাশও। কিন্তু প্ল্যানটা ফুলপ্রুফ করতে এর বিকল্প ছিলনা।
৪
বিক্রম মারা যাবার পর পুরো ব্যবসার একচ্ছত্র মালিক বনে যায় আকাশ। কেউ এতটুকু সন্দেহ করেনি। কিন্তু হিয়া ব্যাপারটা জানল কিভাবে? চিঠিটা আবার পড়তে শুরু করল আকাশ।
ভেবেছিলে পরম বন্ধুকে খুন করে বেঁচে যাবে? তুমি হয়ত ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারোনি তোমার নীচ মানসিকতা বিক্রম আগেই টের পেয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়া মানুষ অনেক কিছু বুঝতে পারে, যদিও নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকেনা। বিক্রম মারা যাবার দু’দিন আগে ওর সাথে আমার শেষ দেখা হয়। সেদিন একেবারেই অন্যরকম দেখেছিলাম ওকে। একপর্যায়ে আমাকে আমাকে এমন একটা ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, ওর খুব কাছের একজন ওর ক্ষতি করতে চাইছে। তখন আমল দিইনি কথাটাকে। কিন্তু ওর মৃত্যু আবার সবকিছু গোড়া থেকে ভাবতে বাধ্য করে আমাকে। জানতে পারি সেদিন তুমিই গাড়িটা ড্রাইভ করছিলে, অথচ আমি জানি বিক্রম কোনোভাবেই অন্যের হাতে নিজের গাড়ির চাবি তুলে দেবেনা। নিজেই সবসময় ড্রাইভ করে। কিন্তু কী ঘটল? তুমি যেদিন ড্রাইভ করলে অ্যাক্সিডেন্টটা সেদিনই হল। এতটা কাকতালীয় ঘটনা সাধারণত ঘটেনা। বিক্রমের বলা সেই কথাগুলো মুহূর্তেই অর্থবহ হয়ে ধরা দেয় আমার কাছে। ব্যাস দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে কোনো সমস্যাই হয়নি। এরপর বিক্রমের মৃত্যুতে তুমি পুরো ব্যবসার মালিক বনে যাওয়ার পরও কি আর সামান্য সন্দেহটুকুও থাকে?
ওর মৃত্যু আমার জন্য কতবড় আঘাত, সেটা ব্যাখ্যা করার মত ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়নি।ধনী জামাইকে হারিয়ে মা বাবার অবস্থা তখন তথৈবচ। তাদের সমস্ত রাগ আমার ওপর জমা হল। সব দোষ যেন আমারই। অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে গেল কয়েকগুণ।
এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মেয়েরই একমাত্র পছন্দ আত্মহত্যা। আমিও সে পথটাই বেছে নিতে চেয়েছিলাম। তখনই মনে হল আমি আত্মহত্যা করলে কার কী লাভ? না বিক্রমের আত্মা শান্তি পাবে, না আমার প্রতি অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়া হবে, না তোমার অপরাধের শাস্তি দেয়া হবে। প্রমাণ ছাড়া আমি একা একটা মেয়ে কিভাবে তোমার মত মানুষের সাথে আইনী লড়াইয়ে নামব ? তাই বলে ছেড়ে দেব তোমাকে? বন্ধুকে খুন করেও পার পেয়ে গিয়ে তার সম্পদ ভোগ করে যাবে আজীবন?
ঠিক করলাম তোমাকে শাস্তি আমিই দেব, তবে কষ্টটা হবে ভয়ঙ্কর, একটু একটু করে।
বিক্রমের সাথে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছিল তোমাদের অফিসের একজন কর্মচারীর মাধ্যমে। তিনি আমাদের বাড়ির পাশেই থাকেন। আমাকে খুব স্নেহ করেন। বিক্রমের মৃত্যুর পর একদিন তাঁর কাছে গিয়ে বললাম, তোমাকে যেন একদিন আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন। আমার বিশ্বাস ছিল আমাকে দেখলে তোমার পছন্দ হবেই। হলও তাই। বিয়ে হয়ে গেল আমাদের।
বিয়ের পর একটা মাস তোমাকে ভালবাসার অভিনয় করে গেলাম। যখন বুঝতে পারলাম তুমি আমার প্রেমে পুরোপুরি মজে গেছ তখন বুঝলাম আমার কাজ শেষ। আমি চলে যাচ্ছি। এখন তুমি তোমার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে অনুভব করতে পারবে ভালবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেললে কতটা শুন্য মনে হয় নিজেকে। যে শুন্যতায় তুমি আমায় ডুবিয়েছিলে আজ আমি তোমাকে সেই শুন্যতা উপহার দিলাম। আমার প্রতি অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে।
চিঠিটা পড়ে আকাশের সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে ওর। এই চিঠিটা পড়ার আগ পর্যন্ত বিক্রমের মৃত্যুর জন্য কোনো অপরাধবোধ কাজ করেনি ওর মধ্যে। কিন্তু হিয়ার লেখা প্রতিটা শব্দ ওকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ও একজন কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার ছাড়া আর কিছুইনা। অমানুষ মনে হচ্ছে নিজেকে ওর। সেই সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করতে পারছে, হিয়াকে ও কতটা ভালবেসে ফেলেছিল। বিয়ের পর আকাশ সব খারাপ অভ্যাসগুলো আস্তে আস্তে ছাড়তে শুরু করেছিল, শুধু হিয়ার প্রতি ওর ভালবাসাকে সম্বল করে। সেই হিয়া . . .না, উপযুক্ত প্রতিশোধই নিতে পেরেছে মেয়েটা।
No comments:
Post a Comment