1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

বৃষ্টি

 

বৃষ্টি

প্রতীক মিত্র

     কথাকাটাকাটিতে কোনো বিরতি নেই।তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গুমোট।বাড়িতে আগেভাগে এই কারণেই সবুজ ফিরতে চাইছিল না।হোক না পুটুনের জন্মদিন।কেক কাটাই হোক কিম্বা নিমন্ত্রিতদের আসা সবই সন্ধ্যেবেলা। আত্রেয়ীও কি ভেবে ওকে অনুরোধটা করেছিল কে জানে?দু’জনেই জানে ব্যাপারটা যেদিকে গড়াচ্ছে তা বিশেষ সুবিধার নয়।তবু ছেলেটার কারণে তাদের ছোট্ট ছেলেটার কারণে তারা প্রয়াসে কোনো খামতি রাখতে চাইছে না।স্মৃতির হাওয়া কখনো তেতো কখনো সুস্বাদু হওয়াতে দ্বিধা তাদের মধ্যে বাড়ছে আরো বেশি করে।যুদ্ধবিরতি হলে হচ্ছে তা নিছকই প্রয়োজনীয় ক’টা কথা মানে ওই খাবারের মেনু, কেকের ডেলিভারি,ঘর সাজানোর বেলুন, রঙীন কাগজ, নিমন্ত্রিতদের তালিকা, পুটুনের জন্মদিনের উপহার ইত্যাদি আলোচনার স্বার্থে।তারপরই আবার অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের এপিসেন্টার বনে যায় জি.টি.রোডের ওপরেই ওঠা বেশ দামী ফ্ল্যাটবাড়ির তিনতলার পূর্ব দিকের অংশ। আত্রেয়ী এখানকারই মেয়ে। তার ভাই বোন মা বাবাএর তরফে আসাযাওয়া লেগেই থাকে।সকলেই চিন্তিত মেয়ের সাংসারিক অশান্তি নিয়ে।আজকে একটা বিশেষ দিন। তাড়াতাড়ি এলে ভালো হত;মেয়ে -জামাইএর চাপ কিছুটা কমতো।পুটুনকে যে দিদি দ্যাখে মোক্ষম দিনে সেই মেরেছে ডুব।ফলে আত্রেয়ীর মেজাজ আরো তিরিক্ষি।সবুজের বাড়ির লোকজন পশ্চিম ভারতের।সচরাচর তারা এসে উঠতে পারেনা একে তো দুরত্ব তাছাড়া বাড়ির বহু বছরের শাড়ীর দোকান।সেসব ছেড়ে আসাও মুশকিল।আত্রেয়ী কি আজোও প্রিয়াঙ্কার কথা ভেবে দিনটা নষ্ট করবে?মেয়েটা সবুজের সহকর্মী।একটু বেশিই তাদের ঘনিষ্ঠতা।অনেক বলাবলির পরও সবুজ তার সাথে দুরত্ব বাড়াতে পারেনি।সবুজ?বারান্দার গ্রীল দিয়ে অলস হুগলী নদীর ওপর জমা কালো মেঘের দিকে চেয়ে কি ভাবছে?অনিরুদ্ধের কথা?অনিরুদ্ধ ওরই বন্ধু।বয়সে ছোটোই। আত্রেয়ীকে দিদি বলতো।ও সবুজ আর আত্রেয়ীর সম্পর্কের অবণতির কথা জানে।আত্রেয়ী অনিরুদ্ধকে একটু বেশিই ভরসা করে।শ্রীরামপুরেই ওদের চশমার দোকান।পুটুনের স্কুলে মাসছয়েক আগে অ্যাক্সিডেন্ট হলে সবুজের আগে খবর যায় অনিরুদ্ধের কাছে। সবুজ এমনিতে বেশ খোলামনের। প্রিয়াঙ্কার ওর প্রতি এই দুর্বলতা নিয়ে যেমন মাথা ঘামায়নি তেমনই মাথা ঘামায়নি অনিরুদ্ধের প্রতি আত্রেয়ীর ভরসার বিষয়ে।কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় একটু রাশ টেনে ধরলে…’বাজ পড়ছে বাবা বাজ!’ বলে পুটুন চেঁচাতে সম্বিৎ ফেরে সবুজের।তাইতো বিকেলেই যা অন্ধকার নেমেছে…তারপর কিছু ভেবে ওঠার আগেই তুমুল ঝোড়ো হাওয়া। ‘ছাদে যাবি?’  সবুজ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে পুটুন ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে সম্মতি দেয়।বাবা ছেলে চারতলার ছাদে হাজির।বৃষ্টি নামলে পুটুনের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ নয়।ছেলেকে হাসতে দেখে খুশি হয় সবুজও।তারপর হিমশীতল টোপা টোপা বৃষ্টির ফোঁটা হাতের চেটোয় পড়লে বেশ ভালোই লাগতে থাকে। ‘ আচ্ছা বাবা,মাম্মামকে ডাকো না!’ টুকুনের অনুরোধে সবুজ সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েও থেমে যায়;একে জন্মদিনের ব্যস্ততা তারপর আদৌ আত্রেয়ীর মেজাজ কি অবস্থায় আছে কে জানে?ফলে সিঁড়ির কাছ থেকে ফিরে আসে সবুজ।পুটুন ‘মাম্মাম’ বলে চেঁচালে, সবুজ ঘুরে দ্যাখে পেছনে আত্রেয়ী।তারও মুখে হাসি।ছেলে বৃষ্টি দেখলে খুব খুশি হয়।নিচে ওর ফোন তারপর সবুজের ফোন বেজে যেতেই থাকে।আত্রেয়ীর ভাই এর ফোন।ও জানাতে চাইছিলো, ওদের আসতে দেরি হওয়ার কারণ সবুজের মা আর ভাই এসেছে। ঝড়-বৃষ্টি কমলে একসাথেই আসবে।ওসব নিয়ে আত্রেয়ী, সবুজের ভ্রুক্ষেপ নেই।ওরা তখন তেড়ে বৃষ্টিতে ভিজছে।অন্তরঙ্গতার বৃষ্টি।বিস্মৃতির বৃষ্টি।

mitprat@gmail.com
হুগলী

No comments:

Post a Comment