1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Thursday, July 1, 2021

প্রত্যার্পণ

 

ছবি  : ইন্টারনেট

প্রত্যার্পণ

রানা জামান

 

   বেজায় খুশি আজ জাহিদ কবীর না চাইতেই ঘড়া ঘড়া জল পেয়ে যাচ্ছে অফিসের বসের কাছ থেকে আরেকটা প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে ওকে এটা নিয়ে তিনটা প্রকল্পের দায়িত্ব পাচ্ছে প্রতিটা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে ইনসেন্টিভ গ্রস বেতনের শতকরা দশ ভাগ ম্যালা টাকা! এই টাকা দিয়ে পূর্বাচলে একটা তিন কাঠার প্লট কিনে ফেলে রাখবে পাঁচ বছর দাম হয়ে যাবে দ্বিগুণ অথবা তারও বেশি শুধু টাকায় টাকা আনে না-বুদ্ধিও টাকা আনে আর দক্ষতা বৃদ্ধি বসের সুনজরে পড়তে চাইলে অতিরিক্ত সময় কাজ করত হবে অফিসে থেকে জাহিদ কবীর ওসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আজ বসের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে রাত আটটায় বের হলো অফিস থেকে নৈশপ্রহরির পিঠ চাপড়ে দিয়ে উঠলো জিপে পরিচিতি কার্ড দেখিয়ে কয়েক জায়গায় টহল পুলিশ থেকে ছাড়া পেয়ে রাত ন’টা দশে পৌঁছলো বাসায় দারোয়ানকে একবার হাই বলে ঢুকলো লিফটে সপ্তম তলায় ওর ফ্লাট খুশির আতিশয্যে জাহিদ সপ্তম তলায় নেমে ফ্লাটের সামনে এসে দাঁড়ালো ওর কাছে একটা চাবি আছে সে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকে গেলো ডাইনিং রুমে

হাতের প্যাকেট থেকে বার্থ-ডে কেকটা খুললো তাতে লেখা Happy Birthday to Senjuti!

তখন কাঁধে গরম নিঃশ্বাস পড়ায় চমকে পেছনে ঘুরতে গিয়ে সেঁজুতির নাকের সাথে জাহিদের নাকের লেগে গেলো সংঘর্ষ! উফ! বলে দু'জনই নাকে দিলো হাত

জাহিদ স্ত্রীর দুই গাল চেপে ধরে ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বললো, হ্যাপি বার্থডে টু মাই ডার্লিং সেঁজুতি!

সেঁজুতি মুখমণ্ডল জুড়ে হাসি ছড়িয়ে বললো, থ্যাঙ্ক ইউ!

ওয়েট বিট মাই ডার্লিং!

জাহিদ পেন্টের পকেট থেকে একটা ছোট কৌটা বের করে এক ঝটকায় খুলে ভেতর থেকে একটা হীরের লকেট বের করে সেঁজুতির চোখের সামনে দোলাতে লাগলো

সেঁজুতি মুগ্ধ কণ্ঠে বললো, ইট ইজ রিয়েলি সারপ্রাইজ!

আই লাভ ইউ ভেরি মাচ ডার্লিং!

বলতে বলতে জাহিদ কবীর স্ত্রীর কণ্ঠে পরিয়ে দিলো হীরের লকেটটা

এসো, এবার কেক কাটো

আদৃতাকে ডেকে নিয়ে আসি

মা-মণিটা ঘুমায় নি এখনো?

দোতলায় সিঁড়ির উপর থেকে আদৃতা বললো, এই যে আমি এখানে ড্যাডি!

চমকে দু'জনে তাকালো পেছনে জাহিদ বললো, চলে এসো মা-মণি ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামো তুমি আসার পর কেক কাটবে তোমার মাম্মি

দু'জন তাকিয়ে আছে আদৃতার দিকে আদৃতা সিঁড়ির রেলিং ধরে ধরে আস্তে আস্তে নামছে

সেঁজুতি উদ্বিগ্ন স্বরে বললো, পড়ে যাবে না তো মা-টা আমার!

জাহিদ নিম্ন স্বরে বললো, অশুভ চিন্তা করো না সে! ঠিক নেমে চলে আসবে

আদৃতা আসার পর মা মেয়ে একত্রে চাকু ধরে কেকটা কাটতে থাকার সাথে জাহিদ কবীর হ্যাপি বার্থডে টু গানটা গাইতে শুরু করলো আদৃতাও সুর মেলালো বাবার সাথে

সেঁজুতি এক ফালি কেক কেটে জাহিদকে খাওয়াতে চাইলে জাহিদ বললো, উহু! বার্থডেটা তোমার প্রথমে আমাদের ছোট্ট মা-মণি তোমাকে কেক খাওয়াবে; এরপর আমি তোমাকে খাওয়াবো পরে তুমি আমাদের দু'জনকে খাওয়াবে ওকে?

সেঁজুতি কিছু না বলে মুচকি হেসে কেকটা আদৃতার হাতে দিয়ে হাটু গেড়ে বসলো ওর সামনে আদৃতা সেঁজুতির মুখে ধরলে সেঁজুতি সামান্য নিয়ে মেয়ের হাত থেকে কেকের স্লাইসটা নিয়ে প্লেটে রাখলো৷ আরেক স্লাইস কেটে আদৃতাকে সামান্য খাইয়ে বাকিটা ওর হাতে দিয়ে বললো, বাকিটুক তুমি খাও

সেঁজুতি আরেক স্লাইস কেক কেটে জাহিদকে খাইয়ে দিলে জাহিদ বাকিটা হাতে নিয়ে মুখেরটুকু চিবিয়ে আয়ত্তে এনে বললো, রাত বেশি হয় নাই চলো বাইরে ডিনার সেরে আসি পার্টি কাম ডিনার

সেঁজুতি বললো, সন্ধ্যার পর তুমিই তো বলেছিলে তোমার আসতে দেরি হবে তাই আজকে ডিনারটা বাইরে থাকে আনিয়ে রাখতে এনে রেখেছি

জাহিদ কবীর জিভে কামড় দিয়ে বললো, আমি ভুলেই গিয়েছিলাম! সরি! চলো, তাহলে ডিনারটা সেরে ফেলি বেশ রাত হয়ে গেছে মা-মণির নিশ্চয়ই ক্ষিধে পেয়েছে

খাবার টেবিলে বসে জাহিদ কবীর বললো, একটা জবর খবর আছে!

সেঁজুতি খাবার চিবুতে চিবুতে বললো, তোমার জবর খবর আমার মুখস্থ! হয় প্রমোশন নয় ইনসেন্টিভের সাথে অতিরিক্ত দায়িত্ব

আদৃতা একটা গৃল মুরগির রানে কামড় দিয়ে বললো, আমারও মুখস্থ ড্যাডি!

জাহিদ মুচকি হেসে বললো, থ্যাঙ্কু মা-মণি আমার!

সেঁজুতি সাজেদা বললো, তবে তোমার দুই/তিন দিন পর পর রাত করে বাসায় আসাটা আমার পছন্দ না!

আদৃতা বললো, আমারও পছন্দ না! আচ্ছা ড্যাডি, তুমি দুই/তিন দিন পর পর রাত করে বাসায় আসো কেনো?

অফিসে কাজ থাকলে দেরি হয়ে যায় বাসায় আসতে

তোমার কাজ শেষ করতে রাত হয় কেনো ড্যাডি? তুমি কি কাজ কম পারো?

জাহিদ কবীর মৃদু হেসে বললো, কাজ কম পারি না মা-মণি, বেশি করতে গিয়ে রাত হয়ে যায়

বেশি কাজ করো কেনো ড্যাডি?

বেশি কাজ করলে বসের কাছ থেকে পুরস্কার পাওয়া যায়

আজ কি পেয়েছো পুরস্কার ড্যাডি?

গ্রস বেতনের টেন পার্সেন্ট ইনসেন্টিভ

পার্টি হবে না ড্যাডি?

অবশ্যই হবে মা আমার পরশু

আগামীকাল নয় কেনো?

আগামীকাল একটা কন্ফারেন্স এটেন্ড করতে জয়দেবপুর ব্রাক সিডিএম যাচ্ছি নাইট হল্ট করতে হবেদেড় দিনের কন্ফারেন্স ফিরতে ফিরতে পরশু বিকেল

কিছুটা বিদ্রুপ স্বরে সেঁজুতি বললো, বাহ! তাহলে আগামী দুই দিন তোমার থাকা খাওয়া ফাইভ স্টার হোটেল স্টাইল হবে!
সে রকমই আশা করছি তোমার আগামীকালের প্রোগ্রাম কী?

আমার বান্ধবীর বিয়ের বাজার করতে যেতে হবে

কোন বান্ধবী? আমাকে দাওয়াত দিয়েছে বলে তো মনে পড়ছে না?

দেবে
তাহলে ভালোই হলো আমি তোমাকে তোমার সেই বান্ধবীর বাসায় লিফ্ট দিয়ে চলে যাবো

থ্যাঙ্কু

পরদিন সকাল সাতটা কলবেলের শব্দে জাহিদ কবীরের ঘুম ভাংলো একবার দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামলো হ্যাঙ্গার থেকে নাইট গাউনটা গায়ে চড়িয়ে কোমরে ফিতা বাঁধতে বাঁধতে ছুটলো সিঁড়ির দিকে দরজা খুলে অচেনা মহিলাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, কে আপনি? এতো সকালে কী চান?

মহিলা বললো, আমি রোজিনার বদ্লে কাম করতে আসছি আমার নাম রূপবান।

কী হয়েছে রোজিনার?

ওর স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হওয়ায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়া গেছে

তুমি কি ওর কাজ করতে পারবে?

যেই কাম করে, আমিও হেই কাম করি আইজ আমার ছুট্টি তাই বদ্লা দিতে আইছি

তখন নাইট গাউন গায়ে সেঁজুতি সাজেদা জাহিদের পেছনে এসে বললো, আমরা এখনই বাইরে যাচ্ছি রাতে ফিরবো

তোমাকে আদৃতাকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে এবং স্কুল ছুটির পর বাসায় নিয়ে আসতে হবে আমরা না আসা পর্যন্ত তোমাকে বাসায় থাকতে হবে তুমি আদৃতার স্কুল চিনো? মিরপুর তেরো- পানির পাম্পের কাছে নিউ স্কলাস্টিকা স্কুল এন্ড কলেজ

চিনি আমি ওদিকেই কাম করি

গুড আমরা আদৃতাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যাবো তুমি ঘরের কাজ সেরে মা-মণির নাস্তা নিয়ে স্কুলে চলে যাবে

রূপবান বললো, কী নাস্তা নিয়া যাবো আপা?

আমি নাস্তা বানিয়ে রেখে যাবো

তাহলে তো কুনু সমস্যাই নাই বাসার কাম সাইরা সমায় মতন স্কুলে চইলা যামু

সাড়ে সাতটায় আদৃতাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রাস্তায় ওরা ড্রাইভ করছে জাহিদ কবীর এর মধ্যেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার রাস্তা ওরা মিরপুর--এর পাশ দিয়ে যাচ্ছে মিরপুর-১০-এর দিকে গোলচক্কর অতিক্রম করে যাচ্ছে চৌদ্দ নম্বরের দিকে গোলচক্কর থেকে দুটো গলি পরেই সেন্ট স্কলাটিকা স্কুল প্রধান রাস্তার পাশেই স্কুলের পাশে গাড়ি পার্কিং করে তিনজন নামলো গাড়ি থেকে পিতা-মাতা দুজনই পরপর মেয়ের কপালে চুমু খেলো

সেঁজুতি বললো, সাড়ে দশটায় নতুন খালা তোমার টিফিন নিয়ে আসবে স্যান্ডউইচ উইথ চিকেনবল

আদৃতা একবার ঠোঁট চেটে বললো, ইয়াম্মি মাম্মি!

ইয়াম্মি! খালা থেকে যাবে ওর সাথে বাসায় চলে যাবে রাতে তোমাকে ডিনার পার্টিতে নিয়ে যাবো ওকে মা-মণি?

ওকে মাম্মি

লেটস মুভ! বলে জাহিদ মেয়ের হাত ধরলো গেট পর্যন্ত গিয়ে মেয়েকে দারোয়ানের হাতে দিয়ে বললো, আজ নতুন একজন আয়া আসবে নাম রূপবান

দারোয়ান ঠাট্টা করে বললো, রূপবান সিনেমার রূপবান স্যার!

হতে পারে শুধু আজকের জন্যই রূপবানের ফটোটা তোমার মোবাইল ফোনে এমএমএস করে দিচ্ছি আদৃতা মা-মণি তুমি ক্লাসে চলে যাও

আদৃতা গেটের ভেতরে হয়ে গেলো অদৃশ্য জাহিদ কবীর গেটের পাশে দাঁড়িয়ে রূপবানের ফটোটা এমএমএস করে দিলো দারোয়ানের মোবাইল ফোনে দারোয়ান ছবিটা দেখে ইতিবাচক মাথা নাড়লে জাহিদ এসে বসলো পাজেরোর ড্রাইভিং সিটে
সেঁজুতি সাজেদা বললো, তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো জাহিদ?

নাহ! হাতঘড়ি দেখে জাহিদ বললো, এখন বাজে মাত্র আটটা সাড়ে দশটার মধ্যে ঠিক পৌঁছে যাবো তোমার বান্ধবীর বাসা কোথায়?

সাভার তোমার সমস্যা হলে আমি একটা উবার নিয়ে চলে যাই!

না না! দশ মিনিটে পৌঁছে যাবো সাভার

এক্সিলারেটর চেপে জাহিদ কবীর বাড়িয়ে দিলো জিপের গতি গাবতলি সংলগ্ন সেতু পার হবার সড়কদ্বীপ বরাবর একটি জিপকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো জাহিদ কোট-টাই পরা একটি লোক জিপ থেকে নেমে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দুই হাত উপরে তুলে ওকে থামতে বলছে পাশেই নিচে একটা বৃফকেস গাড়ি না থামালে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে

জিপ থামিয়ে জানালার কাঁচ নামালে লোকটা দ্রুত বললো, আমার জিপের ক্লাচপ্লেট ফেঁসে গেছে সাভার বাজার পর্যন্ত যদি একটা লিফ্ট দিতেন!

জাহিদ কবীর স্ত্রীর দিকে তাকালে না দেখা যাওয়ার মতো মুচকি হাসি দিয়ে ইতিবাচক সায় দিলো সামান্য মাথা নেড়ে

জাহিদ পেছনের দরজার তালা খুলে দিয়ে বললো, প্লিজ গেট ইন!

লোকটা বৃফকেসসহ গাড়িতে উঠে বসলে জাহিদ কবীর ছেড়ে দিলো গাড়ি

লোকটা জানলা দিয়ে একবার বাহিরটা দেখে বললো, আপনাদের রোমান্টিক প্রাইভেসি নষ্ট করে দেবার জন্য আই এম রিয়েলি ভেরি সরি!

জাহিদ বললো, ইটস ওকে ফ্রেন্ড সাভার তো কাছেই

লোকটা ফের বললো, আমার নাম উদয়, উদয় আদিত্য আমি আপনার মতো একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করি জিপটা কোম্পানি থেকে দেয়া এই জিপটা অনেক কমফোর্টেবল আমি কখনো কিনলে এমন একটা জিপই কিনবো
জাহিদ কবীর কোনো মন্তব্য না করে মুচকি হাসলো মাত্র

সেঁজুতি সাজেদা বললো, সামনের বাঁকে দিয়ে বামে ঢুকতে হবে

পেছন থেকে উদয় বললো, উহু! সোজা যেতে হবে!

জাহিদ বললো, সোজা কেনো?

আমি যেতে বলছি তাই!

ডোন্ট অরি ওকে ড্রপ করে আমি সোজাই যাবো

কোনো কথা না! সোজা চলেন!

কী বলছেন আপনি মিস্টার উদয়?

উদয় পকেট থেকে একটা সাইলেন্সার লাগানো পিস্টল বের করে সেঁজুতির মাথায় ঠেকিয়ে বললো, কথা না শুনলে তোমার প্রিয় গিন্নির মাথার খুলি উড়িয়ে দেবো!

ভয় আতঙ্কে সেঁজুতি আর্তচিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো জাহিদের হাত সামান্য কেঁপে গেলেও স্টিয়ারিং সামলে নিয়ে বললো, কী করছেন আপনি? কী চান?

আপাততঃ জিপটা সোজা চালাতে থাকো! আর আমার পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকো! ভুলেই গিয়েছিলাম! তোমাদের জানের জান মেয়েটা আমার কব্জায়!

সেঁজুতি আঁতকে উঠে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো, শুনছো, কী বলছে এই লোকটা!

জাহিদ আঁড়চোখে একবার উদয়কে দেখার চেষ্টা করে বললো, ব্লাফ মারছে আমাদের আদৃতা নতুন গৃহকর্মীর কাছে সেফে আছে

হো হো করে সামান্য হেসে উদয় দু'জনের মাঝখানে পিস্টলটা নাড়িয়ে বললো, আমার লোক! বিশ্বাস হলে বাসায় ফোন করো
আদৃতা স্কুলে আমরা নামিয়ে দিয়ে এসেছি

উদয় বললো, ছিলো।এখন বাসায় কথা বলো

উদয় মোবাইল ফোনটা বাড়িয়ে ধরলো সেঁজুতির দিকে

সেঁজুতি মোবাইল ফোনটা নিয়ে কানে ঠেকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, হ্যালো, মা-মণি!

আদৃতা বললো, নতুন বুয়া আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে এসেছে তুমি নাকি নিয়ে আসতে বলেছো?

এ্যা? হা হা মা-মণি তুমি বাসায় থেকো আর নতুন বুয়ার কথা শুনো কেমন?

উদয় উত্তর শোনার সময় না দিয়ে মোবাইল ফোনটা সেঁজুতির হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললো, কী করো তোমরা এসব?

জাহিদ বললো, আমরা কী করলাম? যা করার তা তো আপনিই করছেন!

মেয়েকে ম্যানার শিখান নি! বুয়াকে বুয়া বলা শিখিয়েছেন কেনো? আপা বলা শিখালে মান কি কমে যেতো তোমাদের? যাক সে কথা এখন বুঝতে পারছো আমার কথা না শুনলে তোমাদের আদরের মেয়ে উইল বি স্লটার্ড!

সেঁজুতি আর্তনাদ করে বললো, এই লোকটা কী বলছে জাহিদ!

উদর পিস্তলটা ফের নাচিয়ে বললো, আই মিন ইট! আমি না বলা পর্যন্ত গাড়ি সোজা চলবে!

কিছুদূর যাবার পর উদয় পিস্তলের নল দিয়ে জাহিদের মাথায় আলতো টোকা দিয়ে বললো, একাউন্টে কত আছে?

তা বলবো কেনো আপনাকে?

তা হলে ফোন করলাম রূপবানকে!

সেঁজুতি দ্রুত বললো, বলে দাও -তো আর তোমার টাকা নিয়ে যাচ্ছে না!

জাহিদ কবীর দৃষ্টি বাঁকিয়ে উদয়কে দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে বললো, পঞ্চাশ লাখ দশ হাজারের মতো

এক্সাক্ট ফিগার বলতে হবে মোবাইল ফোনে ব্যাংকের এসএমএস দেখে বলো!

জাহিদ মোবাইল ফোনটা সেঁজুতির দিকে বাড়িয়ে ধরলো সেঁজুতি মোবাইল ফোনটা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃক প্রেরিত এসএমএস দেখে বললো, পঞ্চাশ লাখ দশ হাজার পাঁচ শত চল্লিশ টাকা দশ পয়সা

উদয় বললো, বাহ! পাঁচ শত চল্লিশ টাকা দশ পয়সা রেখে বাকিটা আমাকে দিতে হবে

জাহিদ বললো, চেক লিখতে হলে কোথাও থামতে হবে

নো চেক ক্যাশ

একাউন্ট আমাদের দুজনের নামে

গুড! তোমরা দুজন গাড়িতেই আছো সোজা চলে যাও ব্যাংকে কোন ব্যাংক?

আপস এন্ড ডাউন্স ইসলামি ব্যাংক

ইস্ট ওয়েস্ট সাউথ নর্থ সব শেষ এটাই বাকি ছিলো আমি কোনোদিন ব্যাংক খুললে নাম দিবো কর্ণার টু কর্ণার নন-ইসলামিক ব্যাংক ইসলামিক নাম দিয়ে জনগণকে ভাঁওতা দিচ্ছে আমার ব্যাংক কোনো ভাঁওতাবাজি করবে না

জাহিদ বললো, আমাকেও পার্টনার রাইখেন!

আচ্ছা জোকস হ্যায়! আমার কাছে বৃফকেস আছে ওটা ভর্তি করে টাকা নিয়ে আসতে হবে এক হাজার টাকার নোট চাই কড়কড়ে নোট! সামনেই ব্যাংক

সেঁজুতি বললো, সব টাকা এই তস্করকে দিয়ে দিলে আমাদের কী হবে? আগামী কানাডা ট্যুর প্রোগ্রামের কী হবে জাহিদ?
উদয় পিস্তলের নলটা ফের ঘুরিয়ে বললো, মেয়ের চেয়ে টাকার দরদ মনে হচ্ছে বেশি! ফোন করে বলে দিবো মেয়েটার জান তামাম করে দিতে?

সামান্য ব্রেক কষে একটা ঝাঁকি দিয়ে জাহিদ বললো, তুমি আমাদের মেয়েকে মারবে না এখন তোমার হাতের ট্রাম্পকার্ড
জাহিদ কবীর আপস এন্ড ডাউন্স ব্যাংকের সামনে গাড়ি দাঁড় করালে উদয় বৃফকেসটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, এক টাকাও যেনো কম না হয়! সময় দশ মিনিট আর একটা কথা, কোনো চালাকি বা পুলিশে জানানোর চেষ্টা করো না! তাহলে তোমাদের মেরে ফেলা হবে! আই মিন ইট! ভুলেই গিয়েছিলাম! দুজনের মোবাইল ফোনগুলো রেখে যাও!

স্বামী-স্ত্রী দু'জন দুটো মোবাইল ফোন উদয়কে দিয়ে নামলো জিপ থেকে সেঁজুতির হাতে বৃফকেস পাশাপাশি হেটে কোনো কথা না বলে সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে গেলো উপরে একটা খাম্বার আড়ালে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে সাধারণ মোবাইল ফোনটা বের করলে সেঁজুতি জিজ্ঞেস করলো, কোথায় ফোন করতে চাচ্ছো?

জাহিদ বললো, পুলিশকে জানাই টাকাগুলো রেখেছিলাম কানাডাসহ ইউরোপ টুরে যাবার জন্য

সেঁজুতি হিসিয়ে উঠলো, মেয়ের চেয়ে টাকার মায়া বেশি মনে হচ্ছে তোমার কাছে? আমাদের কানাডা যাবার দরকার নাই ভেতরে ঢুকো দেরি হলে আবার কোন্ কাণ্ড ঘটিয়ে বসবে কে জানে!

জাহিদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস গিলে মোবাইল ফোনটা পকেটে রেখে ঢুকলো ভেতরে চেকটা লিখে উভয়ে দস্তখত করে কাউন্টারে দিলো

কাউন্টারে বসে থাকা অফিসার চেকটা একবার দেখে বললো, এতো টাকা উঠাবেন আগে ইন্টিমেশান দেন নাই স্যার!

জাহিদ ব্যস্ত কণ্ঠে বললো, হঠাৎ জরুরি দরকার পড়লো কিনা!

আপনাকে একবার ম্যানেজার স্যারের সাথে কথা বলতে হবে

চেকটা দিন আমরা যাচ্ছি

ম্যানেজারের সাথে কথা বলে বৃফকেসে টাকা নিয়ে বেরিয়ে এলো ব্যাংক থেকে উভয়ে জিপে উঠে এলে উদয় বৃফকেসটা নিয়ে বললো, এবার জিপ ঢাকা শহরের দিকে যাবে

সেঁজুতি বললো, আপনি টাকা পেয়ে গেছেন এবার আমাদের ছেড়ে দেন

উহু! আরো কাজ আছে!

জাহিদ বললো, সব টাকা নিয়ে নিলেন আর কাজ কী?

সময় এলে বলবো এখন ঢাকার দিকে চলো তাড়াহুড়ো নেই কোনো ড্রাইভ ইজিলি আবার ভুলে গিয়েছিলাম! মানিব্যাগ, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড এবং শরীরের অন্য কোথাও টাকা রেখে থাকলে তাও বের করে দাও এক্ষুণি!

প্রতিবাদ করে কোনো ফায়দা হবে না বুঝতে পেরে উভয়ে মানিব্যাগ, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড নগদ টাকা সাথে যা ছিলো সব বের করে উদয়ের কাছে দিয়ে দিলো উদয় সবগুলো বৃফকেসে রেখে কোটের পকেট থেকে একটা স্পিরিটের বোতল বের করে টাকায় ঢেলে দিলো স্পিরিটে ভেজা টাকায় লাইটার জ্বেলে বৃফেকেসটা বন্ধ করে জানলা দিয়ে ফেলে দিলো পাশের ডোবায়

তা দেখে আঁতকে উঠে সেঁজুতি বললো, কী করলেন আপনি!

আমার জিনিস নিয়ে আমি যা ইচ্ছা করেছি! এতে তোমাদের কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই! আবার ভুলে যাচ্ছিলাম! সেঁজুতিকে একটা ডকুমেন্ট নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে

জাহিদ কবীর বললো, সেঁজুতি যাবে কেনো? আমি নিয়ে যাচ্ছি

তুমি সিদ্ধান্ত দেবার কে? তোমরা শুধু আমার হুকুম তামিল করবে বিনা প্রতিবাদে প্রতিবাদ বা গড়বড় করলে তোমাদের মেয়ের আয়ু যাবে ফুরিয়ে!

সেঁজুতি আর্তনাদ করে বললো, না না! আমিই নিয়ে যাবো!

দ্যাটস গুড গার্ল! সরি লেডি! প্যাকেটের গায়ে ঠিকানা লেখা আছে আর এই তোমার মোবাইল ফোন। সাথে থাকলে কাজে লাগতে পারে। তবে পুলিশে বা অন্য কোথাও ফোন করলে ভুগবে তোমার মেয়ে! মাইন্ড ইট!

সেঁজুতি উদয়ের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে দ্রুত হাটতে লাগলো সামনের দিকে

জাহিদ বললো, ওর কাছে টাকা নেই। যাবে কিভাবে?

উদয় বললো, সো হোয়াট! হেঁটে যাবে!

কী বলছেন আপনি! এতোদূর হেঁটে যাবে কিভাবে?

যাবে! যেতে হবে ওকে!

রাগ দমন করে জাহিদ কবীর বললো, এখন আমরা কী করবো? এখানে বসে থাকবো?

তোমার ওয়াইফ যে ঠিকানায় গেছে আমরা আস্তে আস্তে ওদিকে যাবো

তখন মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক উদয়ের সামনে এসে বললো, আরে! তুমি উদয় শঙ্কর না? কতদিন পরে দেখা! কী করছো তুমি এখন?

প্রথমে থতমত খেলেও সামলে নিয়ে উদয় বললো, ভালো আছি জাকির ভাই আপনি কেমন আছেন?

আমি ভালো আছি উদয়

জাহিদ একটা সুযোগ নিতে চাইলো ভাবলো: লোকটাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে দুজনের কথোপকথনে উদয়ের পুরো পরিচয় জানা যেতে পারে সে দ্রুত বললো, আমাদের তাড়া আছে উদয়বাবু! তাই না? কাজেই জাকির ভাইকে গাড়িতে তুলে নেই যেতে যেতে আপনারা দুজন কথা বলতে পারবেন কতদিন পর আপনাদের দেখা হলো!

জাকির বললো, তাহলে আরো ভালো হয় অনেক কথা বলা যাবে

উদয় ধূর্ত হেসে বললো, জাকির ভাই, আসেন

দুজন পেছনের সিটে বসলে জাহিদ কবীর ছেড়ে দিলো জিপ কথা যা বলার জাকিরই বলে যাচ্ছে উদয় অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছোট বাক্যে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে মজাই লাগছে জাহিদের উদয়কে খানিকটা জব্দ করা গেছে ভেবে!

কিছুদূর যাবার পর জাকির বললো, আমাকে এখানেই নামিয়ে দিন ভাই হঠাৎ একটা জরুরি কাজের কথা মনে পড়ে গেলো
জাহিদ নিস্প্রভ মুচকি হেসে রাস্তার পাশে জিপ দাঁড় করলো জাকির জিপ থেকে নেমে জাহিদের কাছে এসে বললো, আবার দেখা হবে ছোটভাই

জাকির চলে গেলো পাশের একটা গলিতে জাহিদ জিপ ছেড়ে দিয়ে বললো, কোথায় যাবো এবার?

উদয় বললো, তোমার স্ত্রীকে পিকাপ করতে যাবো আবার ভুল! খামে কী আছে তা তোমাকে বলাই হয়নি!

কোন খাম?

যে খামটা তোমার স্ত্রী নিয়ে গেলো

বলুন
বুড়িগঙ্গা ৭ম সেতু নির্মাণের বিড ডকুমেন্টস

কোন কোম্পানির?

ইউনিকোড & ইউনিকোড গ্রুপ!

কীহ! ওটা আমার কোম্পানি! আমি প্রজেক্টের চিফ এক্সিকিউটিভ বৃজের ডকুমেন্টস আমার হেফাজতে লকারে রাখা আছে

টেকনিক জানা থাকলে সব তালাই খোলা যায়!

তার মানে আপনি আমার হাইলি কনফিডেন্সিয়াল ডকুমেন্টস চুরি করেছেন!

ঠিক চুরি করি নি-কপি করেছি মাত্র!

বুঝতে পারছি না আমার সাথে আপনার কিসের শত্রুতা আমার একাউন্ট খালি করে টাকা নিয়ে গেলেন; এখন আবার বিড ডকুমেন্টস চুরি করে আমাদের কোম্পানির রাইভালের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন আমার স্ত্রীর হাত দিয়ে আই উইল বি রুইন্ড! আমার ক্যারিয়ার খতম! স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে

পারলে তোমার স্ত্রীকে ফোন করে ঠেকাও! এই নাও মোবাইল ফোন

জাহিদ উদয়ের হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে দ্রুত রিং করলো সেঁজুতিকে সেঁজুতি ফোন গ্রহণ করতেই নিজ পরিচয় দিয়ে বললো, সেঁজুতি, প্যাকেটটা টাইগার গ্রুপের এমডিকে দিও না চলে এসো!

সেঁজুতি হাতঘড়ি দেখে বললো, সময় আর মাত্র দুই মিনিট বাকি ইবলিশটা বলেছে প্যাকেট না পৌঁছালে আদৃতাকে মেরে ফেলবে মেয়ের প্রতি তোমার টান কম থাকলেও আমার নেই

সেঁজুতি লাইন কেটে দিলে মুখ কালো করে মোবাইল ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো জাহিদ

উদয় জাহিদের হাত থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে বললো, তোমার স্ত্রীও তোমার কথা শুনলো না! আমার কী করার আছে! জিপ স্টার্ট করো টেকনিক্যালের মোড় থেকে সেঁজুতিকে পিকাপ করতে হবে

বিমর্ষ জাহিদ কবীর ছেড়ে দিলো জিপ টেকনিক্যালের মোড়ে পৌঁছতেই সেঁজুতিকে দেখা গেলো হেটে রাস্তা পার হতে

সেঁজুতি জিপে উঠতেই উদয় বললো, এখন সাভারের হেমায়েতপুরের দিকে যেতে হবে

জিপ সামনের থেকে ইউ-টার্ণ নিয়ে ছুটে চললো হেমায়েতপুরের দিকে কেউ কোনো কথা বলছে না

উদয় বললো, টাইগার গ্রুপের এমডি কি কফি খাওয়ালো এক কাপ? সাথে কুপারের একটি কুকিজ মিজ সেঁজুতি?

বিরক্ত স্বরে সেঁজুতি বললো, আই ওয়াজ নট গোয়িং দেয়ার ফর হেভিং কাপ অব টি!

নো এঙ্গার মিজ! এর বিটার কনসিকুয়েন্স ভুগতে হবে তোমাদের প্রিয় মেয়েকে

সেঁজুতি চুপসে গেলো কথাটা শুনে মনে মনে বললো: ডেভিলটা আর কী কী চাবে?

উদয় বললো, তোমরা নিশ্চয়ই ভরপেট নাস্তা খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছো প্ল্যান করায় ব্যস্ত থাকায় নাস্তা খেতে ভুলে গিয়েছিলাম এখন বেশ ক্ষিধে পেয়েছে হেমায়েতপুরে চমৎকার একটা রেস্টুরেন্ট আছে ওখানে আমি নাস্তা খাবো আরাম করে, আর তোমরা ইচ্ছে করলে চা পান করতে পারো!

উদয় হেমায়েতপুরে একটি গলির সামনে জিপ দাঁড় করিয়ে ভেতরে একটি বারোয়ারি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো ওখানে শ্রমিক শ্রেনি ছাড়া অন্যরা আসে না মেঝেতে কাগজের টুকরো সিগারেটের অবশিষ্টাংশ পড়ে আছে অপরিচ্ছন্নতার দূর্গন্ধ নাকে লাগায় উদয় সেঁজুতি নাক কুচকালো উদয় ভেতরের একটা টেবিলে গেলো অনিচ্ছাকে বলি দিয়ে দুজন উদয়ের মুখোমুখি বসলো

উদয় বললো, বসে পড়লে চলবে না দম্পতি!

জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, কী করতে হবে এখন আমাদের?

এখানের নাস্তা-চার বিল দিতে হবে জিপে পেট্রোল তুলতে হবে বহু দূরের যাত্রা হবে আমাদের! টাকার জোগার করো আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নাই!

আমাদের টাকা ক্রেডিট কার্ড সব আপনি নিয়ে আগুন লাগিয়ে ফেলে দিলেন রাস্তার পাশের ডোবায় এখন আমরা টাকা আনবো কোত্থেকে?

সেটা তোমাদের সমস্যা! সময় আধাঘন্টা এই আধাঘন্টায় আমার নাস্তা খাওয়া চা পান হয়ে যাবে আধাঘন্টা হতে আধা মিনিট বেশি হলে তোমাদের মেয়ে জানসে যায়ে গা! অন্যকিছু চালাকি বিষয়ে আগেই নিষেধ করে দিয়েছি! তো টাইম স্টার্ট নাও! আর সেঁজুতি এখন মোবাইল ফোনটা তোমার কাছে না থাকলেও চলবে!

সেঁজুতি মোবাইল ফোনটা উদয়ের হাত দিয়ে দু'জন দ্রুত বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে জাহিদ একবার হাতঘড়ি দেখে এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে বললো, ব্ল্যাকমেলারটা কোথায় যাবে বলছে না পেট্রোল কতটুকু লাগবে বুঝতে পারছি না হাজার দশেক টাকা জোগাড় করা প্রয়োজন

সেঁজুতি বললো, ছিনতাই-এর ভয়ে আমিও দামি কোনো গয়না পরি না-সব ইমিটেশন তোমার কোনো কলিগ বা বন্ধুর কাছে টাকা চাইতে পারো না?

আমরা এখন ঢাকা থেকে বেশ দূরে টাকা নিয়ে আসতে আসতে আধাঘন্টা পার হয়ে যাবে একাউন্টে টাকা ট্রান্সফারের কথা বলা যায়;কিন্তু আমাদের কাছে কোনো চেকবই নাই

তোমার ঘড়িটা....

জাহিদ কবীর সেঁজুতির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ঘড়িটার কথা মনেই ছিলো না! এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে ঘড়িটা কিনেছি তোমাকেও নিতে বলেছিলাম একটি কিন্তু তুমি ঘড়ি পরো না, তাই ডায়মন্ডের নেক্লেস নিলে

ওটা কি পরেছো আজ?

নাহ!
পাশ দিয়ে যেতে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলো, ভাইসাহেব, পুরানো জিনিসপত্র কিনে এমন কোনো দোকান আছে?

কী বিক্রি করতে চান? লোহালক্কড়?

আরে নাহ! একটা ঘড়ি বিক্রি করতে চাই

সামনে গিয়া বামের গলিতে ঢুকেন দোকানটার নাম ওল্ড ইজ সোল্ড

সুন্দর নাম!

দু'জন এগিয়ে গেলো সামনের দিকে বামের গলিতে ঢুকে তাকাতে লাগলো দুইদিকে বামদিকে দোকানটা দু'জনই ঢুকলো দোকানে বিভিন্নরকম পুরানো জিনিসে দোকান ঠাসা কাউন্টারে একটা লোক বসা-থুতুনিতে আধাপাকা একমুঠ লম্বা দাড়ি, তবে টুপি নেই মাথায়

লোকটির কাছে গিয়ে ঘড়িটা দেখিয়ে জাহিদ বললো, এই ঘড়িটা বিক্রি করতে চাই এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি সিঙ্গাপুর থেকে সাত মাস হয়েছে মাত্র

লোকটা ঘড়িটা হাতে নিয়ে তাচ্ছিল্যভাবে দেখে ঠোঁট উল্টে বললো, এই রকম ঘড়ি অহন ধোলাইখালে বানাইতাছে! এইটা যে আসল এর কুনো গ্যারান্টি আছে?

গ্যারান্টি এর পেছনে এপলের এব্রোস করা সিল

আইজকাইল এই রকম সিলও নকল হইতাছে

জাহিদ কিছু না বলে লোকটার হাত থেকে ঘড়িটা নিয়ে সেঁজুতির হাত ধরে বললো, চলো!

তখন লোকটি বললো, সাত হাজার দিমু!

জাহিদ লোকটির দিকে ঘুরে বললো, এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা মূল্যের ঘড়ি মাত্র সাত হাজার টাকা! চলো সেঁজুতি!

সেঁজুতি শো-রুমের একটা ঘড়িতে সময় দেখে বললো, বিশ মিনিট চলে গেছে জাহিদ

জাহিদ হাটার উদ্যোগ নিলে লোকটি বললো, আর এক হাজার টাকা দিমু

জাহিদ ঘুরে ঘড়িটা টেবিলে রেখে বললো, দশ হাজার টাকা থেকে এক টাকা কম দিলেও দেবো না!

লোকটি মুখ টিপে হেসে ড্রয়ার খুলে এক হাজার টাকার দশটা নোট বের করে টেবিলে রেখে ঘড়িটা এক টানে ড্রয়ারে ফেলে আটকে দিলো ড্রয়ারটা বললো, এক ট্যাকাও কম দেই নাই জনাব!

জাহিদ টাকাটা একবার গুণে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে বাইরে পেছনে সেঁজুতি হাতঘড়ি দেখতে দেখতে দ্রুত হাটতে লাগলো রেস্টুরেন্টের দিকে উনত্রিশ মিনিটের মাথায় ওরা পৌঁছলো রেস্টুরেন্টে

টেবিলের সামনে দাঁড়াতেই উদয় ঘড়ি দেখে বললো, আর এক মিনিট পরে এলেই তোমাদের আদরের মেয়ের জীবন সাবাড় হয়ে যেতো! আই মিন ইট আমার নাস্তা খাওয়া হয়ে গেছে তোমরা কি চা পান করবে?

জাহিদ বললো, নো থ্যাঙ্কস! এখানে বিল কত হয়েছে?

এটা বস্তিবাসীদের রেস্টুরেন্টএখানে পেট ফাটিয়ে নাস্তা খেলেও পঞ্চাশ টাকার বেশি বিল হয় না পঞ্চাশ টাকা দিলেই টিপসসহ হয়ে যাবে

তিনজন বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্টের বাইরে

জাহিদ কবীর বললো, এবার কী আদেশ জনাব?

সেঁজুতি উদ্বিগ্ন স্বরে বললো, আর কী আদেশ হবে? টাকা-পয়সা সব দিয়ে দিয়েছি ওর কথামতো প্যাকেটও পৌঁছে দিয়েছি আচ্ছা প্যাকেটে কী ছিলো? তুমি শেষে নিষেধ করেছিলে কেনো?

আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেবার ইন্সট্রুমেন্টস

মানে?
জাহিদ উদয়ের দিকে তাকালে উদয় বললো, নো প্রবলেম! ক্যারি অন!

বুড়িগঙ্গা ৭ম সেতু নির্মাণের বিড ডকুমেন্টস

কী বলছো তুমি! তুমি না প্রজেক্ট ডিরেক্টর?

হাঁ এই লোকটা যে কোনো ভাবে ডকুমেন্টস চুরি করে তোমার মাধ্যমে আমাদের কোম্পানির রাইভাল কোম্পানির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে ক্যারিয়ার কি আমার আছে? বলো?

সেঁজুতি উদয়ের দিকে তাকিয়ে কড়া স্বরে বললো, কেনো আপনি এমন করছেন? কী করেছি আমরা আপনার? এবার আমাদের মুক্তি দিন?

উদয় রহস্যময় হেসে বললো, তুমি রেগে তিনটি প্রশ্ন করেছো আমি একে একে তিনটি প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছি প্রথম প্রশ্নের উত্তর এমন-আমি প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছি প্রশ্ন করতে পারো এই লোকটা কী অন্যায় করেছে আমার সাথে; সময় এলে তা জানতে পারেদ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: তুমি কোনো কিছু করোনি; তুমি ওর স্ত্রী হওয়ায় ভুগছো তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর: আমার লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে; তাই মুক্তির সময় এখনো আসে নি

সেঁজুতি বললো, আপনি ওর উপর যেভাবে পারেন যতখুশি প্রতিশোধ নেন আমাকে ছেড়ে দেন আমি আদৃতার কাছে যাবো মেয়েটা না জানি কত কষ্ট করছে

সেঁজুতির কথা শেষের দিকে ধরে এলো সে ব্যাগ থেকে টিসু বের করে চোখের অশ্রুকণা মুছলো

উদয় কর্কশ কণ্ঠে বললো, সরি! আমাদের এখন জিপে চড়তে হবে পথে কোনো পেট্রোল পাম্প থেকে তেল নিতে হবে


ট্যাংক ভর্তি অকটেন নিয়ে জিপ ছুটে চলেছে মানিকগঞ্জের দিকে ধামরাই বাজারে ঢুকে থানার পাশে জিপ দাঁড় করাতে বললো উদয় জিপ থামলে উদয় নেমে চলে গেলো থানার পেছনে স্বামী-স্ত্রী জিপ থেকে নেমে এদিকওদিক তাকাচ্ছে সেঁজুতির চোখে পড়লো জিপের পেছনের সিটে পড়ে আছে উদয়ের মোবাইল ফোনটা

সেঁজুতি মোবাইল ফোনটা দেখিয়ে ফিসফিস করে বললো, শয়তানটা মোবাইল ফোন রেখে গেছে!

জাহিদ দ্রুত জিপের দরজা খুলে মোবাইল ফোনটা বের করে কললগ দেখে শেষ নাম্বারটা দ্রুত লিখতে বললো সেঁজুতিকে

সেঁজুতি হাতের তালুতে নম্বরটা লিখে রাখলো মোবাইল ফোনটা যথাস্থানে রেখে দেবার পরপরই একটা কালো বৃফকেস নিয়ে উদয়কে থানার পেছন থেকে বের হতে দেখা গেলো

কাছে এসে বৃফকেসটা জাহিদের হাতে ধরিয়ে বললো, এটা এক জায়গায় পৌঁছাতে হবে তোমরা দু'জনই যেতে পারো এই নাও ঠিকানা

পকেট থেকে একটা চার ভাঁজ করা কাগজ বের করে জাহিদের হাতে দিলো উদয় জাহিদ ভাঁজ খুলে ঠিকানাটা দেখলে উদয় ফের বললো, এখানে একটা নিউমার্কেট আছে রিক্সা দিয়ে যেতে আধাঘন্টা লাগবে এখন তোমাদের হাতে টাকা আছে।

দু'জন হাটছে দ্রুত আড়ালে গিয়ে একটা বিজনেস সেন্টারে গিয়ে মোবাইল ফোন নম্বরটায় কল করে ঠিকানাটা জেনে নিলো
জাহিদ বললো, এই ঠিকানায় গেলে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু জানতে পারবো উদয়ের এইসব উদ্ভট খেলার বিষয়ে

সেঁজুতি বললো, আর এই বৃফকেস?

ওটার কথা পরে ভাববো

এটাও শয়তানের একটা খেলা ওর কোনো খেলাকে হেলা করলে আমাদের আদৃতার ক্ষতি করবে এতক্ষণে ওর সম্পর্কে আমার মূল্যায়ন এরকম: লোকটা খুবই নৃশংস

হু এখন চলো একটা সিএনজি নিয়ে ঠিকানায় যাই তারপর বৃফকেস দেবার জন্য নিউমার্কেট যাবো

জলদি চলো সবকিছু ওর দেয়া সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে

একটা স্কুটার ভাড়া নিয়ে উঠে পড়লো দু'জন দশ মিনিটে স্কুটার চলে এলো ঠিকানায় ওটা একটা হোটেল- নাম রূপসীবাংলা হোটেল রেস্তোরাঁ লবিতে ঢুকে থমকে গেলো দু'জন লবিতে এদিকে মুখ করে বসে আছে উদয় শয়তান!

ওদের দেখে রহস্যময় হেসে ইশারায় যেতে বললো কাছে বিস্মিত দু'জন পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলো ওর দিকে এছাড়া কী- বা করার আছে ওদের

উদয়ের মুখোমুখি একটা সোফায় বসলে উদয় বললো, কী ভেবেছিলে তোমরা? ভুল করে আমি মোবাইল ফোন রেখে গেছি গাড়িতে ভুল যা করার তা প্রথমদিকে করেছি ওটাই শোধরাতে চেষ্টা করছি বলতে পারো

এর মানে কী?

এর মানেটা তোমাদের জন্য ভালো না!

মানে?
মানে হলো তোমরা আমার নিষেধ অমান্য করে এদিকওদিক যাবার চেষ্টা করছো! এখানে কিছুই নেই এই বেয়াদপির কী সাজা দেবো? তোমাদের কেউ নেবে সাজাটা, নাকি তোমাদের মেয়েকে দেবো?

সেঁজুতি আর্তনাদ করে বললো, না না! আমার আদৃতাকে কিছু করবেন না! সাজা যা দেবার আমাদের দেন

বেশ বৃফকেসটা সেঁজুতিকে দিয়ে আসতে হবে আর জাহিদের শাস্তির ব্যবস্থা আমি করছি

সেঁজুতি বৃফকেসটা হাতে নিয়ে দ্রুত হাটতে শুরু করলো গুমরে গুমরে কাঁদছে সকালে কী হাসিখুশি হয়ে তিনজন বাসা থেকে বের হলো আর এখন কী পেরেশানির মধ্যে একের পর এক পড়ে যাচ্ছে মেয়েটার কথা মনে হলে কান্নার ঢেলাটা আরো উথলে উঠে ওড়নার আঁচলে অশ্রু মুছে একটা খালি রিক্সায় উঠে গন্তব্য বলে দিলো নিউমার্কেটের গেটে রিক্সা থামলে সেঁজুতি নেমে ভাড়া পরিশোধ করে ঢুকলো ভেতরে টিনশেড থাকায় বেশ গরম কী আর করা! বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করেও লোকেশন জানতে পারলো না দোকানটার দোকানটার নাম আকাশ ভরা সূর্যতারা বই-এর দোকান সে মার্কেটটার প্রতিটি দোকান ধরে খোঁজে নামের কোনো দোকান পেলো না কী করবে সে এখন?

 হঠাৎ ওর মনে হলো মিথ্যে ঠিকানায় পাঠানোও ইবলিশটার খেলার অংশ! ওকে এটা বুঝতে দেয়া যাবে না বৃফকেসটা কোনো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে চলে যাবে কিন্তু বৃফকেসটায় কী আছে? না দেখে ফেলে দেয়া ঠিক হবে না গেটের একপাশে একজন চাবি বানানোর মিস্ত্রিকে বসে থাকতে দেখেছে ভেতরে ঢুকার সময় গেটের কাছে আসতেই এক পাগল ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়াতে লাগলো

সেঁজুতি হতভম্ব ভাব কাটিয়ে চিৎকার করতে লাগলো, আমার বৃফকেস নিয়ে গেলো লোকটা! লোকসকল, দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন!

গেটের দায়িত্বে থাকা দারোয়ান বললো, একটা পাগল ম্যাডাম সামনে গিয়া ব্যাগ ফালায়া দিবো আপনে ওর পেছনে যান!
একটা পথশিশু ছুটছে পাগলার পিছে সেঁজুতিও ছুটছে ওদিকে বাঁক ঘুরেই দেখতে পেলো পথশিশুটা বৃফকেসটা নিয়ে আসছে
পথশিশুটি সেঁজুতির সামনে এসে ব্যাগটি বাড়িয়ে ধরে বললো, নেন আপু আপনের ব্যাগ

সেঁজুতি বৃফকেসটা নিয়ে পথশিশুকে পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে এগিয়ে গেলো গেটের দিকে একটা চাবি বানাতে কোনো সমস্যা হলো না ওর বৃফকেস খুলে হতভম্ব হয়ে গেলো সেঁজুতি কিছু পুরনো পেপার ছাড়া কিছু নেই কী দুষ্টু লোকটা!

ওদের নিয়ে ছেলেখেলা খেলছে আপাতত ওদের করার কিছুই নেই সেঁজুতি মার্কেট থেকে বের হয়ে একটা ডাস্টবিনে বৃফকেসটা ফেলে রিক্সায় উঠলো জায়গায় জিপের কাছে এসে হতভম্ব হয়ে গেলো জাহিদ কবীরের মাথা ন্যাড়া

দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে জাহিদ

সেঁজুতির রাগ হলো বেশ সহ্যের একটা সীমা আছে! একটু কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো উদয়কে, এটা কী হলো?

উদয় হাসিমুখে বললো, সাজা!

মানুষকে অপমান করা কেমন সাজা আপনার মিস্টার উদয়?

আমি যেমন ইচ্ছে করেছি! তবে উচ্চ কণ্ঠে আর কথা না মিজ সেঁজুতি! আই উইল নট টলারেট ইন ফিউচার! বৃফকেসটা ঠিকমতো ডেলিভারি দিয়েছো মিজ সেঁজুতি?

আপনার ঠিকানা যতটুকু একুরেট ছিলো, ডেলিভারিও ততটুকু রাইট হয়েছে এক্ষেত্রেও আপনি আমার সাথে তামাশা করেছেন মিস্টার উদয়!

কথায় জাহিদ কবীর মুখ থেকে হাত সরিয়ে সেঁজুতির দিকে তাকালো ওর চোখে কোনো অশ্রুবিন্দু নেই সেঁজুতি জাহিদের পাশে গিয়ে নিউমার্কেটে ঘটে যাওয়া ঘটনা বললো উদয়ের মুখ জুড়ে ধূর্ততার হাসি খেলা করছে

জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, এসব কী হচ্ছে মিস্টার উদয়?

উদয় বললো, কোনো প্রশ্ন না জাহিদ! কোনো কৈফিয়ত চাওয়া না! জিপে উঠতে হবে এখন আমাদের

দুজন কিছু না বলে উঠে বসলো জিপে জিপ চলছে

উদয়ের নির্দেশনা মতো একটি বেসরকারি অফিসের সামনে দাঁড় করালো জিপ তিনজন বসে আছে চুপচাপ

জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, এখানে দাঁড়িয়েছি কেনো?

উদয় অফিসের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, অপেক্ষা করো সময়মতো আদেশ আসবে

পাঁচ মিনিট পর শাড়ি পরা এক ভদ্রমহিলা বের হলে ওকে দেখিয়ে উদয় বললো, এই মহিলাকে পটাতে হবে

জাহিদ চমকে উদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, কী বলছেন আপনি?

চমকে উঠছো কেনো? তুমি তো অভ্যস্ত ওসবে!

সেঁজুতি বিস্মিত হয়ে উদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, কী বলছেন আপনি!

ব্যাখ্যা করতে পারবো না হাতঘড়ি দেখে উদয় ফের বললো, এখন সময় সকাল সাড়ে দশটা সময় আধাঘন্টা এই আধাঘন্টার মধ্যে ওকে পটাতে না পারলে আদৃতার একটা আঙ্গুল কেটে কাটা আঙ্গুলের ছবি পাঠাতে বলবো সেঁজুতিজি তুমি এই আধাঘন্টায় স্থির করো কোন আঙ্গুলটা কাটতে বলবো আই মিন ইট!

জাহিদ কবীর অসহায় কণ্ঠে বললো, কী খেলা শুরু করেছেন আমাদের সাথে উদয়? কবে শেষ হবে আপনার উদ্ভট খেলা?
এঙ্কসাস হবার কিছু নেই নির্দেশনা মোতাবেক খেলে যাও উতরে গেলে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছে যাবো আর কোনো রাউন্ডে ফেল করলে তোমাদের মেয়ে জান দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করবে! তখন নটেগাছটিও মুড়িবে!

সেঁজুতি রেগেই বললো, সেই সকাল থেকে একের এক হুকুম করে যাচ্ছেন! যতদূর মনে পড়ে আপনার সাথে আমার আগে কখনো দেখা হয় নাই আমার জানামতে আমি কখনো আপনার পাকা ধানে মই দেই নাই তবু আমাকে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে সাজা দিচ্ছেন আপনার দ্বারা আমার মেয়ের অনিষ্ট করার প্রশ্নই আসে না কিন্তু দেখা যাচ্ছে বারবার আপনি আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলার বা অন্য কোনো শারীরিক ক্ষতি করার কথা বলে ভয় দেখাচ্ছেন এটা একদম ঠিক না!

জাহিদ সাথে সাথে বললো, আমারও একই কথা! কী কারণে আমাদের সাথে আপনি এমন আচরণ করছেন, তাও বলছেন না!
উদয় বিরক্ত স্বরে বললো, একদম চুপ! সুযোগ দিলেই তোমরা প্যাচর প্যাচর করতে থাকো! যা বলছি তা করো মিস্টার জাহিদ কুড়ি মিনিটে মেয়েটাকে পটাতে না পারলে আমি যা বলেছি তা- হবে!

সেঁজুতি বললো, কী বলছেন আপনি! আধাঘন্টায় একজন মহিলাকে পটানো সম্ভব? তাও আবার ম্যারেড?

আপনার হাসব্যান্ডের পক্ষে সম্ভব! কী বলো জাহিদ কবীর?

জাহিদ কবীর বিস্মিত হয়ে বললো, কী-কী বলছেন আপনি উদয়? কী করে সম্ভব!

উদয় নিজ হাতঘড়ি দেখে বললো, টাইম স্টার্ট নাও জাহিদ ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে আর সাড়ে উনত্রিশ মিনিট!

খানিকটা ইতস্তত করে ওদিকে হাটতে লাগলো জাহিদ কবীর হাটছে আস্তে ধীরে আর ভাবছে:

ইউনিকোড এন্ড ইউনিকোডে চাকরি করতে ভালোই লাগছে জাহিদ কবীরের লাইন বস থেকে শুরু করে কোম্পানির চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই সন্তুষ্ট ওর কাজে ওর চিন্তায় ইনোভেটিভ আইডিয়া আসে প্রচুর গত দুই বছর দুটো প্রণোদনা পাওয়ায় কোম্পানির সবাই ওকে একবার করে দেখে! বিশেষ করে মহিলা সহকর্মীরা যেচেই কথা বলে ওর সাথে এক  মহিলা সহকর্মীর প্রতি ওর দৃষ্টি গেলো আটকে চুরি করে প্রোফাইল দেখে নিলো লাবণ্যর লাবন্য! নামটা বেশ কয়েকবার উচ্চারণ করলো জাহিদ চোখ বুঝে ভুলে গেলো ঘরে ওর স্ত্রী আছে, নয় বছরের একটা টুকটুকে মেয়ে আছে

ভাবনা থেকে তাড়াতেই পারছে না লাবণ্যকে বিভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা খেলতে থাকে মাথায় শেষে সুখের দাম্পত্য জীবনে একটা ঝুকি নেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে জাহিদ

কারণও ছিলো কারণটা হলো ঢুকে গিয়েছিলো ওরা চিন্তা-চেতনায় স্ত্রী-কণ্যাকে চাপা দিয়ে জাহিদ কবীর একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিলো নিজের সাথেই কত কম সময়ে ওকে পটাতে পারবে লক্ষ্যবস্তু বিবাহিতা; সুবিধাটা এই যে কোনো বাচ্চাকাচ্চা নেই;সম্ভবত এখনো গর্ভধারণও করে নি-যদিও বিয়ে হয়েছে তিন বছর চলছে প্রেমের বিয়ে হওয়াতে এটাও ইতিবাচক দিক হিসেবে ভাবছে জাহিদ সুযোগ খুঁজতে লাগলো জাহিদ-এমন একটা সুযোগ যাতে করে প্রথম চালেই টোপ গিলে ফেলতে বাধ্য হবে মৎস! অধিকাংশ সময় শয়তানি করার সুযোগ চলে আসে দ্রুত

কোম্পানির তরফ থেকে দুজন কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানো হবে একটা ইকুইপমেন্ট আনার জন্য একজন পুরুষ একজন মহিলাজাহিদ কবীর একে তো প্রকৌশলী, এছাড়াও কর্মতৎপরতার কারণে কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেক নজরে আছে কোম্পানির তরফ থেকে প্রস্তাব এলো জাহিদের নাম; জাহিদ প্রভাব খাটিয়ে লাবণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করে নিলো সফরে এবং কায়দা করে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে বলিয়ে নিলো যে জাহিদ কবীরের প্রস্তাবে লাবণ্যের নাম ঢুকেছে এই বিদেশ সফরে

নোংরা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে দেখে ভেতরে একটা উত্তেজনা অনুভব করছে জাহিদ কবীর সে নিজের কিউবিকলে বসে পা নাচাচ্ছে দ্রুত আশা করছে লাবণ্য আসবে ওর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে একটা ছায়া ওর পাশে এসে দাঁড়ালেও ওদিকে তাকালো না পাশের কিউবিকল থেকে একটা চেয়ার টেনে এনে পাশে বসলো ছায়া

এবার জাহিদদকে তাকাতেই হলো লাবণ্যের দিকে বিস্মিত হবার ভান করে বললো, আপনি এখানে?

লাবণ্য একবার জাহিদকে দেখে মোলায়েম কণ্ঠে বললো, আপনার কাছে আমার অসীম কৃতজ্ঞতা

কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রয়োজন নেই মিজ লাবণ্য একজন ফিমেল এমপ্লয়িকে নিতেই হতো সাথে আমি আপনার নাম প্রস্তাব করেছি আপনার মাঝে প্রমিজিং ট্যালেন্ট দেখে পাসপোর্ট আছে? নাকি করতে হবে?

আছে
গুড আগামীকাল নিয়ে আসবেন ভিসার জন্য এ্যাম্বেসিতে যেতে হবে

আচ্ছা চলেন এখন আমার সাথে ক্যান্টিনে যাবেন

ক্যান্টিনে কেনো?

আপনাকে মিষ্টি খাওয়াবো পেট ভর্তি করে মিষ্টি খাওয়াবো যাতে দুপুরে লাঞ্চ করতে না হয়!

আঁতকে উঠার ভান করে জাহিদ বললো, কী বলছেন আপনি মিজ লাবণ্য! তাতে আমার সুগার লেবেল এক লাফে উঠে যাবে ত্রিশে! কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যমে মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসতে চাইছেন!

আরে নাহ! আপনার ডায়াবেটিস আছে নাকি?

বালাই ষাট!

তাহলে ভয় পাচ্ছেন কেনো?

জাস্ট কিডিং! চলেন যাই আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত পাতে মিষ্টি তুলে দিবেন ততক্ষণ পর্যন্ত খাবো!

এর উত্তরে লাবণ্য যে মুচকি হাসিটা দিলো সেটা ওর রাতের ঘুম নষ্ট হওয়ার জন্য হয়ে গেলো যথেষ্ট

দু'জন হাটছে পাশাপাশি জাহিদ কবীর লাবণ্যর দিকে না তাকালেও নিঃশব্দে নাক টেনে ঘ্রাণ নিতে চেষ্টা করছে লাবণ্যর গায়ের ঘ্রাণ একটা আসছে লাবণ্যর শরীর থেকে অচেনা পারফিউমটা সময় মতো জিজ্ঞেস করে করতে হবে ভূয়সী প্রশংসা পারফিউমের অফিসের সহকর্মীরা ওর দিকে তাকাচ্ছে বুঝতে পেরে গর্বের হাসি হাসছে মুখটিপে ক্যান্টিনে চলে আসায় মনে মনে বললো: এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো পথ!

ক্যান্টিনে ঢুকে মুখোমুখি বসলো একটা টেবিলে টেবিলে দুটো পানির বোতল ছিলো জাহিদ কবীর একটা বোতলের মুখ খুলে লাবণ্যের সামনে রেখে বললো, অর্ডারটা আমি দেই মিজ লাবণ্য?

ঠোঁটের লিপস্টিক বাঁচিয়ে মিষ্টি করে হেসে অত্যন্ত বিস্মিত হবার ভাণ করে বললো, সেকি! আপনি অর্ডার দেবেন কেনো?

খাওয়াবো আমি মেইন ডিসের অর্ডার দেবো আমি আপনার কোনো চয়েজ থাকলে বলতে পারেন

জাহিদ কবীর নিস্প্রভ মুচকি হেসে ডান হাত সামনে বাড়িয়ে ডানদিকে এনে বললো, এজ ইউর উইস!

মেসিয়ার এলে লাবণ্য অর্ডার দিয়ে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো, আপনার কোনো চয়েজ বলবেন?

জাহিদ মুখে আগের হাসি ধরে নেতিবাচক মাথা নাড়লো

লাবণ্য বললো, আপনি কোনো স্পেশাল চয়েজের অর্ডার না দিলে বুঝবো আপনি আমার কথায় মাইন্ড করেছেন

জাহিদ মনে মনে বললো: আমি তোমার কথায় মাইন্ড করে কি তোমাকে হারাবো? কিছুতেই না! উচ্চারণ করে বললো,

 না না! মাইন্ড করবো কেনো! আমি এখনই অর্ডার দিচ্ছি!

মেসিয়ার জাহিদ কবীরের অর্ডার পেয়ে চলে গেলো চার পদের মিষ্টি এলো চারটে করে

মিষ্টির পরিমাণ দেখে জাহিদ চোখ কপালে তুলে বললো, এতো মিষ্টি কে খাবে!

লাবণ্য আগের মতোই মুখ জুড়ে হাসি ধরে রেখে বললো, আমরা দু'জন খাবো! নিন শুরু করুন

লাবণ্যকে খুশি রাখতে জাহিদ শুরু করলো মিষ্টি খাওয়া ওর ভাগের সব মিষ্টি খাওয়ার পর লাবণ্যর পাতে তাকিয়ে দেখে লাবণ্য মাত্র একটি মিষ্টি ভক্ষণ করেছে ঠোঁটের লিপস্টিক বাঁচিয়ে

মুখের চিবানো মিষ্টিটুকু গিলে জাহিদ বললো, একি! আপনি মাত্র একটা মিষ্টি খেয়েছেন! এগুলো খাবে কে?

আপনি!
বলেন কি! এতগুলো মিষ্টি খেলে আজ আমার ওজন বাড়বে দুই কেজি এবং আগামীকাল সকালে নির্ঘাৎ ডায়াবেটিসও আমাকে কব্জায় করে ফেলবে!

জাহিদ ইতস্তত করে মিষ্টির প্লেটটা কাছে নিতে চাইলে লাবণ্য বললো, থাক আর খেতে হবে না মন ব্যাজার করে খেলে অসুখ বেঁধে যাবেএখন আমরা সুগারলেস দুই মগ কফি পান করতে পারি কী বলেন জাহিদ?

জাহিদ মনে মনে হাফ ছেড়ে বললো, দ্যাট উইল বি ভেরি গুড!

মেসিয়ার কফি দিয়ে গেলে জাহিদ চুমুক দিয়ে বললো, কফির দামটা আমাকে দিতে হবে

লাবণ্য মৃদু বিষম খেয়ে বললো, কেনো? আপনি দিবেন কেনো?

আপনার সাথে কথা ছিলো আপনি মিষ্টি খাওয়াবেন সেটা হয়ে গেছে তাই কফি পানটা আমার ভাগে পড়ে যায়!

জাহিদ ঘনিষ্ঠতা আরো নিবিড় করার জন্য কথাবার্তা চালিয়ে যেতেই থাকলো এই কথাবার্তার মধ্যেই আগামীকালের কর্মসূচি ঠিক হয়ে গেলো লাবণ্য পাসপোর্ট নিয়ে চলে আসবে অফিসে অফিস থেকে দুজন একত্রে যাবে দূতাবাসে ভিসার জন্য দরখাস্ত জমা দিতে এটা করতে প্রয়োজন হবে মনোনয়নের অফিস আদেশ এটা আজকেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ!



সেঁজুতি তাকিয়ে আছে জাহিদের দিকে কেমন খেলা উদয় নামের এই লোকটার? আধাঘন্টায় কি কোনো মেয়েকে পটানো সম্ভব? আর মেয়েটা যদি বিবাহিত হয় তাহলে একেবারেই অসম্ভব! এই ভদ্রমহিলা বিবাহিত না অবিবাহিত? আমাকে পটাতে জাহিদের সময় লেগেছে এক বছর মনে পড়ে যাচ্ছে সেই দিনগুলোর কথা

জাহিদের সাথে ওর পরিচয় ঘটে ছোট একটা দূর্ঘটনার মাধ্যমে তখন সেঁজুতি পড়ছে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষ বর্ষে শীতে বান্ধবীদের সাথে চলে গেলো শ্রীমঙ্গল মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে আনন্দ করার সময় পা পিসলে পড়ে যাওয়ার সময় জাহিদ কবীর ওর হাত ধরে রক্ষা করেছিলো কিন্তু ফল হয়েছিলো উল্টো

সেঁজুতি জাহিদের মুঠো থেকে নিজ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কর্কশ কণ্ঠে বললো, আমার হাত ধরার আগে অনুমতি নিয়েছেন?

 এতো সাহস আপনার!

হতভম্ব জাহিদ নিজকে সামলে নিয়ে বললো, সরি! আমি না ধরলে আপনি পড়ে যেতেন পানিতে এভাবে!

জাহিদ সেঁজুতিকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে বললো, এনজয়!

হতভম্ব সেঁজুতি পানিতে বসে থাকলো আর ওখানে উপস্থিত ওর বান্ধবী সহ অন্যান্যরা হাসতে লাগলো কেউ বা মুখ টিপে, কেউ সশব্দে ওসব গায়ে না মেখে সেঁজুতি শুরু করলো সাঁতার কাটা অতিরিক্ত কাপড় সাথেই ছিলো পানি থেকে উঠে সংলগ্ন ওয়াশরুমে কাপড় পাল্টে চলতে থাকলো ওদের আনন্দ আহরণ সন্ধ্যার আগেই ওরা চলে এলো হোটেলে

রাতে ডাইনিং হল তথা রেস্টুরেন্টে খেতে এসে ওর বিষম খাওয়ার জোগাড়

জাহিদ মুখমণ্ডল বিস্তৃত হাসি নিয়ে এগিয়ে এলো সেঁজুতির দিকে সেঁজুতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো, এখানেই থাকছেন আপনি? আমিও আজকের পরের ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত

সেঁজুতি বললো, আপনি এতো কথা বলছেন কেনো? কথা বলার অসুখ আছে নাকি আপনার?

কী যে বলেন! আমি সবচেয়ে কম কথা বলা পাবলিক! আমি কি নিজকে ইন্ট্রডিউস করবো মিজ?

নো নিড!

সেঁজুতি পাশ কাটিয়ে চলে গেলো খাবারের দিকে সেই যে পিছু লাগলো জাহিদ সেঁজুতির৷ একেবারে জিগারের আঠার মতো শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে জাহিদকে দেখে বিরক্ত হলো বেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে ইচ্ছে হলো না ওর কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবার আগেই জাহিদ ওর সামনে এসে দাঁড়ালো

জাহিদ বললো, আপনি ভুল করছেন মিজ আমি আপনার জন্য আাসি নি এই ভার্সিটির রেজিস্ট্রার আমার ডিপার্ট্মেন্টের সিনিয়র ভাই ওঁর কাছে এসেছিলাম একটা কাজে চলি মি.. আপনার নামটা জানলে কথা বলতে সুবিধা হতো

সেঁজুতি তোতাপাখির বলে দিলো নিজের নামটা

মুচকি হেসে জাহিদ কবীর বললো, সেঁজুতি নামটা আমার পছন্দ হয়েছে আবার দেখা হবে সেঁজুতি গুড ডে!

এরপর কখন সেঁজুতি জাহিদের প্রেমে পড়ে গেলো বলতে পারবে না এদিকওদিক মাথা নেড়ে মুচকি হাসলো সেঁজুতি

জাহিদ ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে আদৃতাকে পেয়ে ওরা খুব সুখি

আজ কী পরীক্ষায় পড়েছে জাহিদ কিভাবে সে উতরাবে এই পরীক্ষা থেকে? এর মানেটা কী? জাহিদ মেয়েকে পটালে ওর কী হবে? এমনটা করতে দিতে পারে না কিন্তু এটা না করলে যে আদৃতার আঙ্গুল কেটে ফেলবে পিশাচ উদয় যে উভয়সংকট! কী করবে সে এখন? মেয়ের আঙ্গুল অক্ষুণ্ণ রাখতে স্বামীকে জলাঞ্জলি দেবে? এটা কী সম্ভব হয় কোনো রমণীর পক্ষে?


উদয় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো অতীত রোমন্থনে ওর প্রেমটা গাছে ধরতে চায়নি তবে ওর পাল্লায় পড়ে ধরতে হয়েছে গাছে শুধু ওর ঝাকিতেই গাছ থেকে প্রেমটা পড়েছে ওর হাতে

আহা! কী রোমাঞ্চকর ছিলো উঠতি যৌবনের সময়টা যা দেখতো যাকে দেখতো তাকেই ভালো লাগতো প্রেম করতে ইচ্ছে করতো সকলের সাথে প্রেমের তাড়নায় প্রথম নিবেদন করেছিলো ফুফাতো বোনকে ফল হলো উল্টো ফুফাতো বোন আগেই প্রেমে পড়ে থাকায় ঐদিন সন্ধ্যায় প্রেমিক ওকে মিষ্টি কথায় শাসালো প্রেমিক ফুফাতো বোনটার চাচাতো ভাই নিজেদের মধ্যেই ঘটনা প্রথম ব্যর্থতা ওকে অবাক করেছিলো বেশ

এই ঘটনার পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রেম নিবেদন করার মতো কোনো মেয়ে উদয়ের মনে লাগে নি সম্মান পাস করে অন্তর্বর্তীকালিন বেকারত্ব চলছিলো ওর চাকরি পেলে ঢুকে যাবে; অন্যথায় চলবে মাস্টার্স ডিগৃ পড়া নতুন এক বন্ধু ছ্যাকা দিতে গিয়ে ফেঁসে যাওয়ায় গড়ালো বিয়েতে বিয়েতে বন্ধুটা নিজের বোনের সাথে উদয়কে পরিচয় করিয়ে টাস্কি লাগিয়ে দিলো ওকে এতো বছর পর মনে ধরলো আরেকটা মেয়েকে! এই ভাবনায় বেহুশ থেকে চলাফেরা করতে গিয়ে কয়েকবার ক্যারিকেচার এবং একবার মুখোমুখি সংঘর্ষও হলো মেয়েটার সাথে

উদয়ের স্পষ্ট মনে আছে এর পরের বার দেখা হতেই উদয় মেয়েটাকে বলেছিলো: তোমার সাথে আমার কথা আছে!

মেয়েটা শরীরে ঢেউ তুলে বলেছিলো:বলে ফেলুন ভাইয়ার ফ্রেন্ড!

সবার সামনে বলা যাবে না!

তাহলে লিখে দিন! জানেন আমার পত্র পড়তে খুব ভালো লাগে! প্রেমপত্র হলে তো কথাই নেই! আমি রবীন্দ্রনাথের সব পত্র পড়ে ফেলেছি! পড়ার জন্য আরো পত্র খুঁজছি!

শরীরে পুনরায় ঢেউ তুলে সুগন্ধ ছড়িয়ে চলে গেলো মেয়েটা উদয় হতভম্ভ পত্র কিভাবে লিখতে হয় জানে না , প্রেমের পত্র তো নয়-! তখন ওর মনে হলো গুগলে সার্চ দিলে নিশ্চয়ই পত্র পাওয়া যাবে দরকার কাগজ-কলম চমৎকার একটা খামের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিকুচি করি! এটা মেয়েটার ঠাট্টাও হতে পারে কিন্তু ওকে চমকে দেবে ছুটলো উদয় নিউমার্কেটের দিকে চমৎকার একটা খাম, রাইটিং প্যাড নীল বলপয়েন্ট পেন এনে বসে গেলো পত্র লেখায় ইন্টারনেট ঘেঁটে কয়েকটি পত্র থেকে ভাব ভাষা নিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে লিখে ফেললো একটা পত্র পত্রটা পাঠ করে নিজেই অভিভূত হলো উদয় মেয়েটার নামটা জানা থাকলে পত্রটা আরো পরিপূর্ণ হতো উদয় নাম দিলো প্রেমা এবার পত্র প্রদানের পালা বের হলো প্রেমার খোঁজে স্টেজে কনের পাশে বসেছিলো প্রেমা

উদয় নির্দ্বিধায় ওর সামনে গিয়ে বললো, তোমার একটা পত্র ছিলো!

কথাটা শুনে প্রেমা বিষম খেলো কাশি সামলে নিয়ে বিস্মিত হবার ভাণ করে বললো, ডিজিটাল যুগে পত্র! কে দিলো?

তা জানি না! এই নাও পত্রটা!

 

সিঙ্গাপুরের এ্যাম্বেসিতে লাবণ্যকে একা আসতে দেখে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো জাহিদ কবীরের মনে মনে বললো: পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছে! লাবণ্যক বললো জাহিদ, আপনি একা এলেন? আপনার হাসব্যান্ড এলেন না?

লাবণ্য বিস্মিত স্বরে বললো, ওকে আসতে হবে কেনো সাথে! আমি সিঙ্গাপুর এ্যাম্বেসি চিনি এদিক দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় কত দেখেছি!

জাহিদ থতমত খেয়ে বললো, তাই তো! এ্যাম্বেসির কাজ শেষ হলে অফিসে যাবেন, নাকি বাসায় চলে যাবেন?

না না! বাসায় যাবো কেনো!

এ্যাম্বেসির কাজ শেষ হয়ে গেলো আধাঘন্টার মধ্যে একটা উবার ডেকে দু'জন চলে এলো অফিসে গাড়িতে যেচে অনেক কথা বললো জাহিদ কথার চাতুরতায় সম্পর্ক আপনি থেকে কখন তুমিতে চলে যায় লাবণ্য বুঝতে পারে না

সাত দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যায় ওদের এরপর টিকেট ক্রয় সেটাও হয়ে যায় যথা নিয়মে দু'দিন পরেই সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে উড়ান সময় সকাল এগারোটা তিন ঘন্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে

ভোর চারটায় উঠে জাহিদ কবীর লাবণ্যকে ফোন করেতই লাবণ্য বললো, একটা সমস্যা হয়ে গেলো জাহিদ!

জাহিদ আঁতকে উঠে বললো, কী সমস্যা?

আমার হাসব্যান্ডের হঠাৎ ফুড পয়জনিং শুরু হয়ে গেছে তাই আমাকে একাই আসতে হচ্ছে এয়ারপোর্টে

নো প্রবলেম! একটা উবার ডেকে চলে এসো তিনঘণ্টা আগে চেকিং শুরু করতে হবে

ওকে
সেঁজুতি জাহিদকে সি-অফ করার জন্য যেতে চেয়েছিলো; কিন্তু আদৃতাকে এতো ভোরে ঘুম থেকে জাগালে কান্নাকাটি করবে; ওকে বাসায় একা রেখে যাওয়ারও উপায় নেই অগত্যা জাহিদকে একাই যেতে হলো বিমানবন্দরে গাড়িতে বসে ক্ষণে ক্ষণে লাবণ্যর খবর নেবার জন্য সুবিধাই হলো তাতে! দু'জনে কথা বলতে বলতে প্রায় একই সময় পৌঁছলো বিমানবন্দরে পুলকিত দেখালো বেশি জাহিদকে লাবণ্যকে নিবিড় করে পাবার বদ-পরিকল্পনা বলা যায় দ্রুতই বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে! দু'জনে একত্রে ভেতরে ঢুকে শুরু করে দিলো চেকিং জাহিদ অনুনয়ের স্বরে বলে দু'জনের সিট পাশাপাশি করে নিলো হ্যান্ডলাগেজ নিয়ে দু'জন করে নিলো ইমিগ্রেশন রেস্টুরেন্টে নাস্তা সেরে কফি পান করে ঢুকলো ডিউটি-ফৃ শপগুলোয় একটা বেশ দামি পারফিউম কিনে দিলো জাহিদ লাবণ্যকে এমন বস্তু দান করা এবং হাটাহাটি দু'জন নারী-পুরুষের নৈকট্য বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে!

বিমানে পাশাপাশি সিট লাবণ্যর গায়ের ঘ্রাণ অবিরাম নেয়ার সাথে একসময় কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলে জাহিদের আর ঘুম আসে না অনড় থেকে লাবণ্যর ঘুমে দিয়ে যায় অনাবিল আরাম সিঙ্গাপুরে হোটেল রয়াল অর্কিডে পাশাপাশি কক্ষে ঢুকে গেলো দু'জন ফ্রেস হয়ে দু'জন নেমে এলো রেস্টুরেন্টে ডিনার সেরে দু'জন বের হলো শহর দেখতে

এমআরটি বাস ট্রেনে রাত এগারোটা পর্যন্ত শহর ঘুরে ফিরে এলো হোটেলে লবিতে নির্বাক বারোটা পর্যন্ত বসে থেকে চলে গেলো নিজ নিজ কক্ষে পরদিন ব্যস্ততা গেলো উভয়ের সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করে

সিঙ্গাপুরে আসতে পেরে লাবণ্য অত্যন্ত খুশি এই কৃতজ্ঞতা বোধ ওকে জাহিদের নিকট থেকে নিকটতর করতে লাগলো

জাহিদ কবীর মুচকি হেসে মনে মনে বললো: লাবণ্যর শারীরিক উষ্ণতা পেতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে!

আজকের খেলায় নিশ্চিত পরাজয় হবে ওর আধা ঘন্টায় কোনো মেয়েকেই পটানো সম্ভব না-বাজারি ছাড়া তবু এই খেলায় ওকে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে শুধুমাত্র মেয়েটার জন্য মেয়েটার কোনো ক্ষতি হতে দিতে পারে না অনেক ডাক্তার দেখানোর পর মহান আল্লাহ আদৃতাকে ওদের দান করেছেন

সেঁজুতি শিউরে উঠলো বিষয়টা অত্যন্ত কঠিন বিষয়টা যদি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না থাকে? ওর চোখের সামনে একটার পর একটা দৃশ্য চিত্রায়িত হতে থাকলো-

দৃশ্য- অস্পষ্ট চেহারার মহিলাটি জাহিদের হাত ধরে হাটছে কোনো একটা পার্কে দু'জন একটি রাধাচূড়া গাছের গোড়ায় বসলো জাহিদ টুক করে মহিলার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো মহিলা ঝুকে জাহিদের মাথায় বুলিয়ে দিচ্ছে হাত জাহিদ চোখ বুঝে প্রেমিকার স্পর্শের সুখ নিচ্ছে মহিলাটি ঝুকছে জাহিদের মাথার উপর কাট-সেঁজুতি ডানে-বামে মাথা ঝাকালো

দৃশ্য- পাঁচটার পর জাহিদ দ্রুত বেরিয়ে এলো অফিস থেকে গাড়ি চালিয়ে মহিলাটির অফিসের সামনে এলো মহিলাটি আগেই দাঁড়িয়ে ছিলো অফিসের সামনে জাহিদ ড্রাইভিং সিট থেকে নেমে বামদিকের সামনের দরজা খুলে ধরলে অস্পষ্ট চেহারার মহিলাটি শরীরে খুশির ঢেউ তুলে উঠে বসলো সিটে জাহিদ দরজা লাগিয়ে দ্রুত ঘুরে ড্রাইভিং সিটে বসে ছেড়ে দিলো জিপ দু'জনকে খুব প্রফুল্ল দেখাচ্ছে হরবর করে আলাপ করছে দু'জন বারবার মহিলার দিকে তাকাতে থাকায় একবার উল্টোদিক থেকে আসা এক কাভার্ড ভ্যানের সাথে সংঘর্ষের উপক্রম হয়েছিলো প্রায় হার্ডব্রেক দ্রুত স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলো জাহিদ জিপ এসে থামলো একটি থৃ-স্টার হোটেলের সামনে দু'জন জিপ থেকে নেমে ঢুকলো হোটেলের ভেতর রিসেপশন থেকে একটি কক্ষের চাবি নিয়ে দু'জন উঠলো লিফটে চার তলায় এসে লিফট থেকে নেমে ঢুকে গেলো একটা কক্ষে কাট-সেঁজুতি শিউরে উঠে দুই হাতে ঢাকলো মুখমণ্ডল

দৃশ্য- কোনো এক রাত সেঁজুতি আদৃতাকে ঘুম পাড়িয়ে শয্যাকক্ষে অপেক্ষা করছে জাহিদের রাত এগারোটায় দরজার তালা খোলার শব্দে মনে মনে সেঁজুতি বললো: জাহিদ -তো ইদানিং বাহির থেকে খেয়ে আসে-আজও নিশ্চয়ই খেয়ে এসেছে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানায়ই বসে থাকলো

জাহিদ শয্যাকক্ষে ঢুকে একটা কার্ড বাড়িয়ে ধরলো সেঁজুতির দিকে

সেঁজুতি কার্ডটা হাতে নিয়ে বললো, মনে হচ্ছে বিয়ের কার্ড কার বিয়ে? আমাদের পরিচিত কারো?

জাহিদ ভ্রু নাচিয়ে বললো, খুলেই দেখো না!

সেঁজুতি কার্ডের ভাঁজ খুলে বর কনের নাম দেখে চমকে জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো, এর মানে কী?

আমার দ্বিতীয় বিয়ে এখন তোমার অনুমতি প্রয়োজন

কাট! সেঁজুতি দ্রুত হেটে যাচ্ছে জাহিদের দিকে



সম্ভবত পত্রটা পড়েই প্রেমা উদয়ের প্রতি হয়ে গেলো আকৃষ্ট উদয় উড়তে থাকলো আকাশে সারাজীবন তো আর আকাশে উড়া যাবে না! ধরায় নামার ব্যবস্থা করতে হবে! সরাসরি বন্ধুর কাছে বিয়ের কথা বললো বন্ধু চমকে গেলেও থমকালো না

বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, তুই ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্তটা নিচ্ছিস? পরে আফসোস করবি না তো?

এবার উদয়ের বিস্ময়ের পালা বিস্মিত কণ্ঠে বন্ধুকে বললো, প্রেম করেছি তাই বিয়ে ছাড়া অন্যকিছু ভাববো কেনো?
না মানে আমার বোনটা খানিকটা উগ্র ছোটবেলা থেকেই ওকে দেখে আসছি কিনা!

সমস্যা কী বলতো ফ্রেন্ড? তোর কি আমাকে পছন্দ না? তাহলে পালিয়ে বিয়ে করতে হবে আমাকে!

বন্ধুটি বললো, কী বলবো বুঝতে পারছি না আমি উভয় সঙ্কটে পড়ে গেছি তাই আমি হাঁ- বলবো না, না- বলবো না
নো প্রবলেম বন্ধু! আমার প্রেম বিয়েতেই পরিণতি পাবে! বি চিয়ার্স শালা!



সেঁজুতিকে জাহিদের দিকে দ্রুত যেতে দেখে উদয়ের ভাবনায় পড়লো ছেদ সেও দ্রুত এগিয়ে গেলো সেঁজুতির দিকে যে খেলা সে শুরু করেছে, তা সে কোনোমতেই বিঘ্ন ঘটাতে দেবে না সেঁজুতি জাহিদকে ফেড়াতে গেলে চৌপাট হয়ে যাবে খেলায় সে সেঁজুতির পথরোধ করে বললো, উহু! মনে হচ্ছে তুমি আদৃতার কথা ভুলে গেছো!

সেঁজুতি চমকে উঠে বললো, কিন্তু জাহিদ!

জাহিদকে ওর কাজ করতে দাও! ওর সফলতার উপর নির্ভর করছে আদৃতার ভালো থাকা বা না থাকা

সেঁজুতি বিরক্ত হয়ে বললো, আদৃতাকে নিয়ে আমাদেরকে আর কত ব্ল্যাকমেইল করবেন?

এটাকে ব্ল্যাকমেইল ভাবছো কেনো সেঁজুতি! তোমাদের মেয়ের জীবন রক্ষা করা তোমাদের একমাত্র দায়িত্ব ঠিক কিনা?

অবশ্যই ঠিক

তাহলে জাহিদকে খেলতে দাও ওকে খেলায় জয়ী হতে হবে

তখন শোনা গেলো হৈচৈ ওরা তাকালো ওদিকে জাহিদকে ঘিরে আছে অনেক লোকজন শুরু হয়ে গেলো মারপিট

দু'জন ছুটে গেলো ওদিকে মারাত্মক আহত জাহিদকে ভর্তি করা হলো হাসপাতালে সেঁজুতি বেডের পাশে বসে গুমড়ে কাঁদছে উদয় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো নির্বিকার মারপিটে শরীরে কোনো জখম না হলেও ফুলে গেছে যত্রতত্র যেগুলো বেশ ব্যথা দিচ্ছে জাহিদকে জাহিদ বিছানায় শুয়ে ভাবছে আধাঘন্টায় কোনো বিবাহিতাকে পটানো অসম্ভব হলেও এভাবে ধোলাই হয়ে যাবে তা ভাবে নি ওর পরিকল্পনা ছিলো এমন: পরিস্থিতির কথা বলে ভদ্রমহিলাকে অভিনয় করতে বলবে যাতে এই পর্বটা শেষ হয়ে যায় কিন্তু ফল হলো উল্টো এখন কী খেলা খেলতে বলবে নিষ্ঠুর উদয়? উদয়ের দিকে তাকাতে ওর ভয় লাগছে কোন আদেশ করে বসবে কে জানে! হঠাৎ কানের কাছে কথা শুনে চমকে উঠলো জাহিদ উদয় ওর কানে কানে কথা বলছে! কথাগুলো শুনে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো

জাহিদকে হঠাৎ বিছানায় উঠে বসতে দেখে সেঁজুতি জিজ্ঞেস করলো, কী হলো? উঠে বসলে যে? কানে কানে কী বললো উদয়? আপনি আবার কী বললেন ওকে?

উদয় ভ্রু নাচিয়ে বললো, খেলা এখনো শেষ হয়নি! ওটাই তোমার হাসব্যান্ডকে স্মরণ করিয়ে দিলাম!

বিস্মিত হয়ে সেঁজুতি বললো, খেলাটাই আবার খেলতে বলছেন ওকে?

খেলা ওরকমই; তবে প্লট চেঞ্জ করা হয়েছে!

সেঁজুতি জাহিদের দিকে তাকালো জাহিদ কিছু না বলে তাকালো অন্যদিকে

ডোন্ট অরি আমরা একত্রেই বাইরে যাচ্ছি

তিনজন জিপে বসতেই উদয় ছেড়ে দিলো জিপ এগলি ওগলি পেরিয়ে জিপ চলছে ঘুরছে জিপ মানিকগঞ্জ শহরে শেষে একটা পাঁচতলা বাড়ির সামনে এসে জিপ থামালো উদয়

সেঁজুতি উদয়কে জিজ্ঞেস করলো, এখানে কেনো? এই বাড়িতে কে আছে? কী করতে হবে আমাদের এখানে?

উদয় বললো, জাহিদ জানে জাহিদ স্টার্ট ইউর গেম!

জাহিদ কিছু না বলে নেমে গেলো জিপ থেকে

সেঁজুতি জিজ্ঞেস করলো, কোথায় চললে?

জাহিদ বললো, তুমি এখানেই থাকো আমি গেমটা খেলে আসি

জাহিদ ঢুকে গেলো বাড়িটার ভেতর একটু পর একটা পুলিশ ভ্যান এসে থামলে উদয় জিপকে সরিয়ে পাশের বাসার সামনে থামিয়ে দ্রুত নেমে পড়লো গাড়ি থেকে অজানা পরিস্থিতির জন্য সে উদ্বিগ্ন

সেঁজুতিও জিপ থেকে নেমে উদয়ের পাশে এসে জিজ্ঞেস করলো, আপনার কথামতো জাহিদ এপার্টমেন্টে ঢুকলো পুলিশ এলো কেনো? কী আছে বাসায়?

উদয় বললো, এটা একটা আনএনাউন্সড ব্রোথেল

কী বলছেন আপনি উদয়! তাহলে জাহিদকে বাসায় ঢুকতে দিলেন কেনো? ব্রোথেলে কী গেম সেট করেছেন আপনি?

গেমটা সহজ ছিলো! পুলিশ আসায় মহা গড়বড় হয়ে যাবে মনে হচ্ছে! জাহিদকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে! ওকে রাখি কী করে!

আমি যাই

সর্বনাশ! তুমি গেলে তোমাকে প্রসটিটিউট বানিয়ে ধরে নিয়ে যাবে! আমাকেই কিছু একটা করতে হবে

কিছুক্ষণ পর উগ্র সাজে সজ্জিত দশজন মহিলা পাঁচজন পুরুষকে তাড়িয়ে নিচে নেমে এলো এই পাঁচ পুরুষের মধ্যে জাহিদও আছে নির্বিকার জাহিদ একবার উদয়কে দেখে উঠে পড়লো পুলিশভ্যানে উদয় ওদিকে এগোতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো পরিস্থিতি এমনটা হবে কখনো ভাবে নি পুলিশভ্যান চলে গেলো

সেঁজুতি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললো, এখন কী হবে?

উদয় বললো, আমাদের থানায় যেতে হবে

থানায় গেলেই কি ওকে ছেড়ে দেবে পুলিশ?

তা কি আর হয়! পুলিশ হলো রাক্ষস জাত! ঝুলি ভরে না দিলে কোনো কাজই হবে না সে ব্যবস্থা হয়ে যাবে এখন আমাদের এসাইনমেন্ট: জাহিদ উদ্ধার!

দু'জন জিপে উঠতেই উদয় ছেড়ে দিলো জিপ ভোঁদড়গঞ্জ থানার সামনে এসে জিপ থামিয়ে দ্রুত নামলো দু'জন

উদয় বললো সেঁজুতিকে, তুমি গাড়িতেই ওয়েট করো আমি জাহিদকে নিয়ে আসছি

উদয় থানায় ঢুকে সরাসরি ঢুকে গেলো ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার চেম্বারে কথাবার্তা লেনদেনের পর জাহিদ হাজত থেকে মুক্তি পেলো ওকে একা বেরিয়ে আসতে দেখে উদয় মুখ টিপে হেসে বললো, এটা সহজ পরীক্ষা ছিলো মিস্টার জাহিদ! ওকে আর লাগবে না! পুলিশের কাছেই থাক !

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চমকে উঠে বললেন, কী ব্যাপার মিস্টার উদয়? হাজতে আসাযাওয়া নিয়ে আপনারা জুয়া খেলছেন না কি?
উদয় জিভে কামড় দিয়ে বললো, কী যে বলেন ওসি সাহেব! অমন ডেঞ্জারাস খেলা আমরা খেলি না! চলি

দু'জন থানা থেকে বেরিয়ে আসতেই সেঁজুতি ছুটে গেলো ওদের দিকে জাহিদের হাত চেপে ধরে বললো, মারধোর করেছে কি জাহিদ?

উদয় জবাব দিলো, না না মারবে কেন! সময়টা অসময় হওয়াতে এই বিশৃ অবস্থায় পড়তে হলো এই ধাক্কাটা সামলে নেবার জন্য আমরা একটা ছোটখাটো পিকনিকে যাবো শুধু আমরা তিনজন

জাহিদ বললো, আমার মামণি ছাড়া আমরা কোনো পিকনিকে যাই না মিস্টার উদয়

উদয় বিদ্রুপ হেসে বললো, এটা সর্বাংশে সত্য না!

কী বলছেন আপনি!

এটা পরে প্রমাণ হবে! এখন জিপে উঠো দু' জন চয়েজ ইজ নট ইউরস! আই হ্যাভ সেইড ইট আর্লিয়ার

উদয় তাড়িয়ে দু'জনকে জিপে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ছেড়ে দিলো জিপ বেশ কিছুক্ষণ কেউ কোনো কথা বললো না যেনো মনে পড়ে গেলো এমনভাবে সেঁজুতি জাহিদকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি বিল্ডিং- কেনো ঢুকেছিলো এবং হঠাৎ পুলিশ এসে তোমাকে সহ বেশ কিছু মহিলা-পুরুষকে তুলে নিয়ে গেলো, এর কিছুই বললে না বিষয়টা কী?

জাহিদ একটু কর্কশ কণ্ঠে বললো, ওটাও উদয় বাবুর খেলার অংশ ছিলো উদয় বাবু খেলা সম্পর্কে তোমাকে কিছু বলে নি?

না
আধাঘন্টায় এক বিবাহিত মহিলাকে পটাতে গিয়ে গণধোলাই খেলাম কিন্তু খেলাটা শেষ হয়ে যায়নি ওটার সহজ সংস্করণ খেলা দিলেন উদয় বাবু বিল্ডিং- ওটা একটা আধুনিক অঘোষিত প্রস্টিটিউট আমার খেলাটা ছিলো একজন অনাঘ্রাতা প্রস্টিটিউটকে পটানো!

অনাঘ্রাতা মানে কী?

যাকে কেউ তখনো স্পর্শ করে নি!

প্রস্টিটিউটেট অমন হয় কখনো?

হয় হয়! ফাঁদে পড়ে অনেক কিশোরী চলে আসে ওখানে

সেঁজুতি উদয়কে আড়চোখে দেখে বললো, আর কী কী খেলা খেলা করছে আপনার মাথায় উদয় বাবু? একজন প্রস্টিটিউটকে পটানো, এর উপর আনটাচ্ড! আপনি কি পারবেন মিস্টার উদয় বাবু অমন করতে?

উদয় সামনে তাকিয়ে থেকে বললো, আমি খেলছি না, খেলাচ্ছি! খেলানোর মজাই আলাদা! তুমিও একসময় খেলিয়েছো মিজ সেঁজুতি!

কী বলছেন আপনি উদয় বাবু? আমি আবার কখন কাকে খেলালাম?

কেনো? জাহিদকে প্রেমের খেলায় খেলাও নি?

লজ্জা পেয়ে সেঁজুতি মুচকি হাসলেও জাহিদ হেসে দিলো হো হো করে

পরিবেশ হয়ে গেলো হাল্কা ফের শুরু হলো নিরবতা জিপ ছুটছে সামনে সেঁজুতির চোখ লেগে আসায় জাহিদের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বুজে নিলো জাহিদ কার কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে যাবে তন্দ্রায়? অগত্যা সামনে ঝুকে পড়া ঠেকিয়ে ঢুলতে থাকলো জাহিদ উদয় তন্দ্রাহীন তন্দ্রায় গেলে অবধারিত দূর্ঘটনা!

যমুনা বৃজের পূর্ব পাশে অবকাশ রিসোর্টে ঢুকে গেলো জিপ একটা কটেজের গাড়ি বারান্দায় জিপ থামলে তন্দ্রামুক্ত হয়ে জাহিদ জিজ্ঞেস করলো, কোথায় এলাম আমরা?

ততক্ষণে সেঁজুতিরও ভেঙ্গে গেলো ঘুম সে মুখে বাম হাতের চেটো রেখে একবার হাই তুলে এদিকওদিক তাকিয়ে বললো, মনে হচ্ছে এটা কোনো রিসোর্ট

উদয় জিপ অফ করে বললো, ঠিক ধরেছো তুমি এটা অবকাশ রিসোর্ট, যমুনা বৃজের পূর্বপাশে এখানে আমরা সারাদিন কাটাবো সন্ধ্যায় বের হবো অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য

জাহিদ শুকনো কণ্ঠে বললো, তো খুব এক্সপেন্সিভ! আমার হাতে এতো টাকা নেই!

তোমার যাকে খুশি বিকাশ করে টাকা পাঠাতে বলো! নগদেও পাঠাতে বলতে পারো! এখানে আর কথা না কটেজে ঢুকে বাকি কথা হবে!

গাড়ি গ্যারেজ করার প্রয়োজন না থাকায় ওটা কটেজের সামনেই রয়ে গেলো তিনজন ঢুকলো ভেতরে প্রথমেই ওয়েটিং রুম বা লবি তিনজন ওখানেই বসলো এটেন্ডেন্ট আসল আমের সরবত রেখে গেলো

উদয় হাতঘড়ি দেখে বললো, এখন লাঞ্চ টাইম আধাঘন্টার মধ্যে ডাইনিং টেবিলে যেতে চাই তার আগে আমাদের রুমগুলো দেখিয়ে দাও একটা ডাবল একটা সিঙ্গেল

জাহিদ একটু ক্ষুব্ধ স্বরে বললো, এমনিতেই হাতে টাকা নেই এতো দামের ঘড়িটা সাত হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে অবস্থায় এতো এক্সপেন্সিভ কটেজে না এলে কি চলতো না মিস্টার উদয়?

হাসিমুখে উদয় বললো, চলতো না বলেই এলাম! প্ল্যানিং আমার, খরচ তোমার! নো ওয়ে!

এটেন্ডেন্ট এলো ওদের রুমে নিয়ে যেতে প্রতিবাদ বা কথা কাটাকাটি করে কোনো ফল হবে না বুঝতে পেরে জাহিদ সেঁজুতি একটা রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো সেঁজুতি জাহিদের বুকে নিলো আশ্রয় জাহিদও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরলো বুকে দু'জন আস্তে আস্তে খামচে ধরছে একে অপরের পিঠ সাথে রক্ত গরম হতে থাকলো উভয়ের জাহিদ আপন ঠোঁট নামিয়ে আনলো সেঁজুতির ঠোঁটে কারো মুখে কোনো কথা নেই; অথচ অনেক ক্ষোভ জমা হয়ে আছে উভয়ের বুকে উদয়ের বিরুদ্ধে সকাল থেকে এভাবে একান্তে পায় নি কেউ কাউকে কখন বিছানায় চলে গেলো দু'জন বলতে পারবে না আনন্দ আহরণ শেষ হলে সেঁজুতি জাহিদের বুকে মাথা রেখে শ্বাস-প্রশ্বাস সামলাতে চেষ্টা করছে জাহিদের বাম হাতের আঙ্গুল সেঁজুতির উদোম পিঠে খেলা করছে সুড়সুড়ি লাগলেও উপভোগ করছে সেঁজুতি

টাকার কথা মনে হতেই সেঁজুতি জাহিদের বুকের লোমে বিলি কাটতে কাটতে বললো, টাকা জোগাড় করতে হবে না?

চমকে জাহিদ বললো, তাই তো! তুমি ওয়াশরুমে যাও, আমি টাকার ব্যবস্থা করছি

আধাঘন্টার মধ্যে দু'জন তৈরি হয়ে বেরিয়ে এলো ডাইনিং হলে ঢুকে দেখে উদয় আগেই বসে আছে ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে চেয়ারে না বসে সেঁজুতি বললো, আমার আদৃতা মার সাথে কথা না বলে আমরা খাবো না
জাহিদ সায় দিয়ে বললো, সেঁজুতি ঠিকই বলেছে

উদয় একটা থালা টেনে এনে বললো, তাতে আমার কী! থাকো তোমরা অভুক্ত! আমি খেতে শুরু করলাম

জাহিদ বললো, আমরা এখান থেকে যাবোও না তুমি যা খুশি করতে পারো!

উদয় থালায় ভাত না নিয়ে বললো, এতো?

হাঁ
সেঁজুতি বললো, মেয়েটাকে কতক্ষণ যাবৎ দেখি না

ওকে আমি ব্যবস্থা করছি

উদয় পেন্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে আদৃতাকে নিয়ে এলো ভিডিওতে ভিডিওতে মাকে দেখে আদৃতা কেঁদেই ফেললো কাঁদতে কাঁদতে বললো, আম্মু, তুমি কোথায় গেছো তুমি? এখনো আসছো না কেনো? একা একা আমার আর ভালো লাগছে না

সেঁজুতি কাঁদতে চাইলে জাহিদ কানে কানে বললো, তুমি কাঁদলে ওখানে আদৃতাকে সামলাবে কে? তুমি স্বাভাবিক স্বরে কথা বলো

সেঁজুতি ভগ্ন কণ্ঠস্বর সামলে নিয়ে বললো, কাঁদে না মা-মণি সন্ধ্যার আগেই আমি চলে আসবো তুমি কি লাঞ্চ করেছো?

আদৃতা বললো, জ্বী মা-মণি

নতুন বুয়াটা তোমাকে আদর করছে ঠিকমতো?

করছে মা-মণি নতুন আপামণি খুব ভালো আমার সাথে খেলা করছে

ওকে মা আমার আজ তোমাকে পড়তে হবে না আজ তোমার ছুটি তুমি খেলাধূলা করো ইচ্ছেমতো

উদয় ভিডিও অফ করে বললো, হয়েছে! এবার খেতে বসো খাওয়ার পর এখানে একটা গেম আছে

সেঁজুতি বললো, এখানেও গেম! কত গেম আছে আপনার মাথায় মিস্টার উদয়? কখন আমরা মুক্তি পাবো?

সময় এলেই মুক্তি মিলবে এখন খেয়ে নাও রাতের আগে আর খাবার মিলবে না!

খাওয়া হলে তিনজন লবিতে এসে বসলো

উদয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, আর কী খেলা খেলা করছে আপনার মাথায় মিস্টার উদয়?

উদয় মুখমণ্ডল জুড়ে শেয়ালের হাসি ধরে বললো, আমার মাথা গিজগিজ করছে খেলায়! কোনটা শুরু করবো বুঝতে পারছি না এখন বাজে বিকেল তিনটে আমাদের ছটা পর্যন্ত এখানে থাকতে হবে এই তিনঘন্টা কাটানোর জন্য কী খেলা খেলা যায় বলো তোমরা! ইচ্ছে করলে তোমরা দু'জন গোপনে পরামর্শ করেও বলতে পারো! আই ডোন্ট মাইন্ড!

জাহিদ বললো, আমাদের মাথায় কোন কুটবুদ্ধি নাই যে বলবো এই খেলা খেলা যায়! আপনি খেলাচ্ছেন, আপনিই বলেন!

উদয় একবার চাতুরতার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো, আহ! একটা সুযোগ দিয়েছিলাম গেম সিলেকশনের, নিলে না চান্সটা! তো এখনকার গেমটা সেঁজুতির!

সেঁজুতি উদয়ের দিকে তাকালেও কিছু বললো না

জাহিদ বললো, ওকে টানছেন কেনো? আমি খেলবো গেমটা আই হোপ ইট উইল বি দ্য লাস্ট গেম ফর দ্য ডে

চয়েজ করার সুযোগ তোমরা খুইয়ে ফেলেছো! তোমার জন্য রাতে একটা গেম ফিক্স করা হয়েছে এবং দ্যাট উইল বি দ্য লাস্ট গেম ফর ইউ সো দিজ গেম ফিক্সড ফর সেঁজুতি সেঁজুতি, বি রেডি!

সেঁজুতি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসতে চেষ্টা করলো শুধু

গেমটা কী কেমন, তা কি জানতে ইচ্ছে করছে না মিজ সেঁজুতি?

সেঁজুতি বললো, আমি জানতে না চাইলেও আপনাকে বলতে হবে না বললে গেম খেলবো কিভাবে!

স্মার্ট লেডি! এখনকার গেমটা হলো রেপিড ফায়ার

মানে?
কৌন বনেগা ক্রোরপতি টাইপের তবে এখানে কোনো অপশন থাকবে না দশ সেকেন্ডের মধ্যে উত্তর দিতে হবে এক শ’টা প্রশ্ন করা হবে আশি পাইলে পাশ আশির কম পেলে কী হবে পরে বলবো লেটস স্টার্ট!

নয় নং?

একাশি
একাশির বর্গমূল?

নয়
সিঙ্গাপুরে গিয়েছো?

না!
পাতায়া কোথায়?

থাইল্যান্ড
রোজা রাখো?

জ্বী
নামাজ পড়ো?

মাঝে মাঝে

........
.........
প্রশ্ন চললো অবিরাম সেঁজুতি উনাশিটা প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পেরেছে

উদয় হাতঘড়ি দেখে বললো, এখনো আমাদের হাতে দুই ঘন্টা আছে সেঁজুতি পাস এবার জাহিদ কবীরের পালা তবে রেপিড ফায়ার না প্রথম প্রশ্ন জারজ সন্তান বলতে আমরা কী বুঝি

জাহিদ ঝটপট উত্তর দিলো, যে সন্তানের পিতৃপরিচয় জানা যায় না

গুড পরকীয়ায় সন্তান হলে সেই সন্তানের পিতা কে হবে?

জাহিদ কবীর থমকে সেঁজুতির দিকে একবার তাকিয়ে অতিদ্রুত উদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেনো?

এমন প্রশ্ন করা যাবে না তা কি বলেছো তুমি? তাছাড়া তুমি বললেই আমি শুনবো কেনো! প্রশ্নের উত্তর প্লিজ!

জাহিদ কবীর একবার ঢোক গিলে বললো, এই প্রশ্নের উত্তর বেশ লম্বা এবং ব্যাখ্যামূলক হবে

উদয় বললো, এক মিনিট! আমি কফির অর্ডার দিয়ে আসি

উদয় চলে গেলে সেঁজুতি জাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো, কেমন প্রশ্ন!

জাহিদ বাম হাতে সেঁজুতির ডানহাতে একবার চাপ দিয়ে ছেড়ে বললো, আমিও বুঝতে পারছি না

উদয় এসে বসতে বসতে বললো, আমাদের খেলার ফাইনাল রাউন্ডে সকল রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে! এখন জবাব শুরু করো জাহিদ সময় যত খুশি!

একটু ইতস্তত করে জাহিদ বললো, মূলত সন্তানের পিতা কে তা কেবল মা- বলতে পারে অবশ্য বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে অর্থাৎ ডিএনএ এনালাইসিস করে পিতৃ বা মাতৃ পরিচয় নির্ধারণ করা যায় পরকীয়া চলতে থাকলে অর্থাৎ সেপারেশন না হলে যত মজা সব পরকীয়াওয়ালার; আর বাবার খাতায় নাম বাড়তে থাকে ভোদাই স্বামীপ্রবরের!

উদয় হাততালি দিতে থাকলো হাততালি থামিয়ে উদয় বললো, অবাক হচ্ছো আমার হাততালি দেখে? আমি অবাক হলাম পরকীয়ায় এতো প্রিভিলেজ দেখে! আমার পরকীয়া করতে ইচ্ছে করছে! সেঁজুতি আমার সাথে পরকীয়া করবে নাকি?
সেঁজুতি থতমত খেয়ে বললো, কী বলছেন আপনি?

জাহিদ শব্দ করে একটু হেসে বললো, এভাবে প্রস্তাব করে পরকীয়া করা যায় নাকি?

তাহলে কিভাবে পরকীয়া করা যাবে বলে দাও জাহিদ কবীর! তোমার কী পরকীয়ায় এক্সপেরিয়েন্স আছে নাকি?

জাহিদ মুখের লালায় বিষম খেয়ে কাশতে লাগলো

উদয় হাসতে লাগলো পেট ফাটিয়ে হাসতে হাসতে একসময় কাঁদতে লাগলো ডুকরে ওর অমন কান্নায় জাহিদ সেঁজুতি বাকহীন হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো

সন্ধ্যার পর ছুটে চললো জিপ মহাসড়ক ধরে ছুটছে সারাদিনের ছুটাছুটি স্নায়বিক উত্তেজনা থাকায় কারো মুখে কোনো কথা নেই এবার জাহিদ কবীর সামনে সেঁজুতি পেছনে একা তন্দ্রাচ্ছন্ন হতে হতে একসময় ঘুমিয়ে গেলো দু'জনই

দৃঢ়হাতে জিপের স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে উদয় মাঝে মাঝে চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে ওর একসময় ওর চোখের কোলে দেখা দিলো অশ্রু একবার ফুপিয়ে সামলে নিজকে মনে মনে বললো: আবেগকে প্রশ্রয় দিলে কাজ হবে না যে লক্ষ্য নিয়ে সকাল থেকে এই এসাইনমেন্ট শুরু করেছে, সেই লক্ষ্যের একদম কাছাকাছি চলে এসেছে শেষ খেলাটা জিততে পারলে ষোলআনা সফলতা যার শেষ ভালো তার সব ভালো দুই ঘন্টা জিপ চালিয়ে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ছাড়িয়ে একটি রিসোর্টের এক কটেজের সামনে জিপ দাঁড়াতেই জাহিদ সেঁজুতির ঘুম ভেঙ্গে গেলো

জাহিদ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, কোথায় এসেছি আমরা?

উদয় জিপ থেকে নামতে নামতে বললো, এটাই আমাদের লাস্ট ডেসটিনেশন জায়গাটা তোমার চেনা থাকতে পারে জাহিদ!

সেঁজুতি জিপ থেকে নেমে জাহিদের পাশে দাঁড়িয়ে চারদিক একবার দেখে বললো, কখনো এখানে এসেছি বলে মনে হয় না

উদয় জাহিদের সামনে এসে বললো, আমি বলেছিলাম শেষ খেলাটা তোমাকে খেলতে হবে তোমার খেলার পার্টনার অপেক্ষা করছে ভেতরে আমরা বাইরে অপেক্ষা করছি গো এন্ড এনজয় ইউরসেল্ফ!

চুল পরিমাণ ইতস্তত করে সেঁজুতিকে একবার দেখে এগিয়ে গেলো কটেজের দরজার দিকে জাহিদ মনে মনে ভাবছে: মনে হচ্ছে এখানে আগেও এসেছি কিন্তু রিসোর্টের ভেতরে আলোআঁধারে হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গায় চিনতে পারছি না জাহিদ দরজার সামনে দাঁড়ালো দরজায় টোকা দেবে না কলবেল টিপবে দ্বিধা কাটিয়ে ছোট করে টিপলো কলবেল হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বেড়ে গেছে একটু

ওয়েট মিনিট প্লিজ!

ভেতরের নারীকণ্ঠ শুনে চমকে উঠলো জাহিদ চেনা চেনা লাগছে কণ্ঠটা কিন্তু এখানে আসবে কেনো? দরজা খুললে ভেতরের নারীকে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো জাহিদ- যে সে-ই!

লাবণ্য ওকে দেখে চট করে দেয়াল ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বললো, কাঁটায় কাঁটায় দশটায় এসেছো!

খুশিতে উচ্ছল লাবণ্য জাহিদের হাত ধরে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে বললো, কনগ্রেচুলেশন তোমায় নতুন দায়িত্ব পাবার জন্য তখন তোমাকে অফিসে কনগ্রেচুলেট করতে পারি নি এখানে আসতে বলে ভালোই করেছো কিন্তু আগে কিছু না বলে দুপুরে বলায় বেশ অবাক হয়েছি

এবার জাহিদ বললো, আমি বলেছি!

তুমি ফোনে বলো নি, তবে এসএমএস পাঠিয়েছো এই দেখো

জাহিদ এসএমএসটা দেখলো এসএমএসটা এরকম: বসের সাথে মিটিং- থাকায় কথা বলতে পারছি না তুমি অন্তরালে রিসোর্টে চলে যাও আমি রাত দশটার মধ্যে চলে আসবো স্টে সেফ!

জাহিদ মোবাইল ফোনটা হাতে রেখে ভাবছে: সকাল থেকে ওর ফোন উদয়ের কাছে তাহলে এই ম্যাসেজ নিশ্চয়ই উদয় পাঠিয়েছে উদয় লাবণ্যকে জানে কিভাবে এবং এই রিসোর্টের কথা এই কটেজের বিষয় জানে কিভাবে? উদয়!

অস্ফুট স্বরে জাহিদকে উদয় শব্দটা উচ্চারণ করায় লাবণ্য বললো, কী হলো জাহিদ? কী ভাবছো তুমি? উদয় কে?

জাহিদ একটা সোফায় বসে বললো, এই উদয় সকাল থেকে আমাদের নাচাচ্ছে কেনো ওরকম করছে তোমাকে না দেখা পর্যন্ত কোনো ধারনাই করতে পারছিলাম না এখন আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই উদয় তোমার-আমার সম্পর্কের বিষয়টা জানে এবং আমরা যে এখানে আসি এটাও জানি তোমাকে যে এসএমএস পাঠানো হয়েছে, ওটা আমি পাঠাই নি

লাবণ্য বিস্মিত হয়ে বললো, কিন্তু এসএমএসটা তোমার মোবাইল ফোন থেকে এসেছে!

সকাল থেকে লোকটা আমাদের মোবাইল ফোন, টাকা, ক্রেডিট কার্ড সব কেড়ে নিয়েছে

তোমরা মানে? তোমার সাথে আর কে আছে?

আমার ওয়াইফ

কী বলছো তুমি! উদয়ের বর্ণনা বলো শুনি

আমার মতো লম্বা, তবে একটু স্লিম মুখভর্তি ছাটা দাড়ি, বাম ভ্রুর উপরে সামান্য কাটা দাগ আছে

সাথে সাথে মাথায় হাত দিয়ে পাশের সোফায় বসে বললো, সর্বনাশ! এখন কী হবে?

তুমি অমন করছো কেনো? উদয়কে চেনো নাকি?

ওর নাম উদয় না! উপেন্দ্র কিশোর

কী বলছো তুমি লাবণ্য! এখন উপায়? এই ঘরের বাইরে তোমার স্বামী আর আমার ওয়াইফ

সহজ পথ হলো আমার ভ্যানিস হয়ে যাওয়া! কিন্তু উপায় নেই! পেছনের ব্যালকনিতে গৃল দেয়া

উদয় তথা উপেন্দ্র কিশোর সেঁজুতিকে বললো, চলো সেঁজুতি, আমরা শেষ খেলার কুশীলবদের দেখি কী করছে কটেজের ভেতর!

সেঁজুতি কোনো কথা না বলে ইতিবাচক মাথা নাড়লো দু'জন পাশাপাশি হেটে উঠলো কটেজের বারান্দায় উদয় টিপে দিলো কলবেল অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও দরজা না খোলায় ফের কলবেল টিপে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ আগের চেয়ে আরেকটু বেশি সময় পার হবার পরও দরজা না খোলায় উদয় ফের কলবেল টিপতে যাবে, তখন খুলে গেলো দরজা

দু'জন ঢুকলো ভেতরে জাহিদ লাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে

উপেন্দ্র কিশোর ডান হাতের তর্জনি নির্দেশিত করে বললো, এই ভদ্রমহিলা আমার স্ত্রী, আর ওকে তুমি হাড়-হাড্ডিতে চেনো! দু'জনের মাঝে সম্পর্ক কী নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এখন

rana2344@gmail.com



No comments:

Post a Comment