1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, April 17, 2022

কনুনড্রাম

 

পাঠ-প্রতিক্রিয়া : দয়াল বন্ধু মজুমদার

কনুনড্রাম

লেখক: চন্দ্রচূড় ঘোষ ,অনুজ ধর 
প্রকাশনাঃ- Vitasta Publishing Pvt. Ltd.
মূল্যঃ- ৬০০ টাকা

    ভারত মায়ের শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের সবার শ্রদ্ধার, প্রাণের মানুষ নেতাজী। নেতাজীকে নিয়ে লেখা বই পত্রের অভাব নেই। এত প্রিয়, এত শ্রদ্ধার, এত বিখ্যাত মানুষটিকে নিয়ে রাজনীতি হবেনা, সেটা হতেই পারে না। আমি আবার একটি অত্যন্ত ভীতু মানুষ। একটি শব্দ উচ্চারণ করা বা লেখার আগে পাঁচ বার ভাবি, কেউ আবার এর ভেতর রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখতে পাবে না তো!


       আমরা একটু তরল ভাষায় মাঝে মাঝে রসিকতা করে বলি, এখন তো কেউ জোরে বাতকর্ম করলেও তাই নিয়ে রাজনীতি না হোক অন্তত সোশ্যাল মিডিয়ায় একটু বিশেষজ্ঞের মতামত দিতে কেউ ছাড়ে না। তো, আমি যে বইটি পড়ে সামান্য কিছু লেখার উৎসাহ পেয়েছি, সেটি নেতাজীকে নিয়ে লেখা, ইংরেজী বই, কনুনড্রাম। অনুজ ধর আর চন্দ্রচূড় ঘোষের লেখা, প্রায় সাড়ে আটশ পাতার বইটি তথ্য প্রমাণে ঠাসা। সব কিছুর শেষে বইটি প্রমাণ করে দিয়েছে যে, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত এই অভাগা দেশেই সাধুর বেশে জীবিত ছিলেন। এই পর্যন্ত পড়ে যাদের মনে হবে, ফালতু কথা; তাদের আর আমার এই লেখা পড়ে সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। আর ঐ সাড়ে আটশ পাতার বইটা পড়ার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না।

     নেতাজীর ১৯৪৫ সালের পরের জীবন নিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে বই লিখেছেন শ্রদ্ধেয় নারায়ণ সান্যাল মশাই। সেই যখন ইন্টারনেট আসেনি তখনকার দিনে সান্যাল মশাই যে কঠিন কাজটি করে দেখিয়েছেন, আমরা ভাবতেই পারিনা। তখনই সান্যাল মশাই জানিয়ে দিয়েছেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ ই আগস্ট, তাইহোকুতে কোন বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি। আমার আলোচ্য এই কনুণড্রাম বইটি লেখার সময় ধর ও ঘোষ মশাই ইন্টারনেট -এর সমুহ সুবিধা পেয়েছেন। তাছাড়া এর মধ্যে আমাদের দেশে RTI অর্থাৎ তথ্য জানার অধিকার আইন এসে গেছে। ওনাদের আরও সুবিধা হয়েছে, রাজ্য আর কেন্দ্র সরকার নেতাজী সংক্রান্ত প্রচুর ফাইল জন সমক্ষে আনায়।

     নেতাজী তো মহা সমুদ্রের মত। তার তল পাওয়ার আগে আমাকে বলুন, আপনি দুই প্রনম্য বিপ্লবী ডা পবিত্র মোহন রায় আর প্রাতস্মরনীয়া লীলা রায় মহাশয়া সম্বন্ধে কি জানেন? যদি এনাদের দুজনকে না জানেন, তাহলে আগে এনাদের সম্বন্ধে পড়ে নিন, তারপর নেতাজীর শেষ জীবনের কথা জানার চেষ্টা করে দেখবেন।

     আজ থেকে আঠারো কুড়ি বছর আগে JMCI, অর্থাৎ মুখার্জী কমিশন, নেতাজীর শেষের কিছু বছরের উপর তদন্ত করেন। এই বইটি সেই তদন্তে উঠে আসা শত শত তথ্য প্রমাণ নিয়ে আলোচনা করেছে। বইটির সবথেকে বড় দিক হল, এই সব অসংখ্য তথ্য প্রমাণ। গোটা বইটি না পড়লে বোঝা যাবে না, কী সমস্ত জরুরী তথ্য প্রমাণ আজও একটু অসাবধানি সাধারণ মানুষের জানা নেই।

       বইটি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দেখিয়ে দিয়েছে যে, গুমনামি বাবা বা ভগবানজী নামের যে সন্যাসী উত্তর প্রদেশের অযোধ্যা – ফৈজাবাদের আসে পাশে প্রায় পঁচিশ বছর থেকেছেন, তিনিই আমাদের প্রাণের মানুষ নেতাজী! বিদেশী, পৃথিবী বিখ্যাত হস্তাক্ষর বিশারদরা দ্বর্থ হীন ভাবে জানিয়েছেন, ১৯৪০ সাল নাগাদ নেতাজীর লেখার সাথে ১৯৭০-৮০ সালের ভগবান জীর হাতের লেখার কোন ফারাক নেই।       এছাড়া ডা টি সি ব্যানার্জী, যিনি অনেক বছর ভগবানজীর চিকিৎসা করেছেন, তাঁর সাথে ঘণ্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছেন; তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের কথা শুনলেই বোঝা যায় , ভগবানজী কে ছিলেন। যে দুই প্রণম্য বিপ্লবীর কথা আগে বলেছি, তাঁরা দুজনই ১৯৪০ এর আগে পরে , নেতাজীর সাথে স্বাধীনতার যুদ্ধে কাজ করেছেন। তাঁরা দুজনই ভগবানজীকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলে চিনেছিলেন। এই দুই বিপ্লব,কে লেখা অনেক চিঠই এই বইটিতে দেখা যায়। ঐ চিঠিগুলো পড়লে বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না যে, চিঠির লেখক কে।

      তর্কের খাতিরে অনেক রকম প্রশ্ন করা হয় । যদি উনিই নেতাজী তাহলে কেন? এবং ইত্যাদি। প্রায় সকল প্রশ্নের জবাব পাবেন , এই কোনুনড্রাম বইটি পড়ে।  বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ যদি ঋষি অরবিন্দ হতে পারেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র কেন সাধু ভগবানজী হতে পারবেন না? গোটা ভারতের আপামর জনসাধারণ যাঁকে দেবতার মত শ্রদ্ধা করেন, তিনি কী নিদারুণ দুঃখ কষ্ট ভোগ করে শেষ জীবনের বছরগুলি কাটিয়েছেন, ভাবলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। আন্তর্জাতিক -জাতীয় রাজনীতি, পারিবারিক স্বার্থপরতা এরকম নানান প্রতিকূলতা আমাদের পূজনীয় মানুষটিকে কেমনভাবে কোন ঠাসা করে রেখেছিল, জানতে হলে বইটি পড়ুন।

  আমার সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় আছে এমন একজন নেতাজী গবেষক, যিনি প্রয় ৪৫ বছর নেতাজীকে নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন, আমাকে বলেছেন যে এই বইটি নিয়ে কোন মন্তব্য করবেন  না। কিন্তু তাঁর কথায় বুঝেছি, ১৯৮৫ সালে ভগবানজী দেহত্যাগ করেছেন , এই কথা এনারা মানতে চাননা। জানিনা ভগবানজী সেরকম কোন যোগ সাধনা জানতেন কিনা , যা দিয়ে প্রায় অমরত্ব লাভ করা যায়। ভগবানজীর কিছু কিছু মন্তব্য তাঁর সামান্য মানসিক অসুস্থতার লক্ষণ বলে বলা হয়েছে, কনুনড্রাম বইতে। এতেও নেতাজী গবেষকদের প্রবল আপত্তি আছে। খোলা মনে বইটি পড়লে এসব কিছুই অযৌক্তিক মনে হয় না।

...(সমাপ্ত)...


1 comment:

  1. boro sonkhepe hoye gelo,,,,,, aro ektu details jante parle valo lagto

    ReplyDelete