1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, April 17, 2022

ভ্রমন অভিজ্ঞতা

ছবি : ইন্টারনেট

ভ্রমন অভিজ্ঞতা

শ্বেতা মোদক

 "একাকিত্ব "থেকে মুক্তি পেতে বারবার মানুষ ছুটে গেছে প্রকৃতির নৈকট্যের  কাছে তার অনেক উদাহরণ আমরা পেয়ে থাকি। ভ্রমণ শব্দটি   শুনলেই আমাদের মনকে নিয়ে চলে যায় বাস্তবের এই কোলাহল মুখর শহর থেকে অনেক অনেক দূরে যেখানে অনন্তব্যাপ্তি করা আকাশ সমুদ্র হয়ে দু হাত ভরে হাতছানি দিয়ে জনগনকে। এটা যেন আশৈশব থেকে মৃত্যুর আগে অবধিবিস্তৃত।

'ভ্রমণ' এর যেমন সমুদ্র, পাহাড়ের ছবি মানসলোকে ফুটে ওঠে, তেমনি ভ্রমণের স্মৃতিও থেকে যায়। অন্তরের মনিকোঠায়। ভ্রমণ যেমন একাকিত্ব ঘোচায়  তেমনি অভিজ্ঞতাও দিয়ে থাকে কখনো কখনো।

তেমনি একটি সত্য অবলম্বিত অভিজ্ঞতা আমি লিপিবদ্ধ করছি। সত্যকথা যেমন রং চড়িয়ে সাজিয়ে বলা যায় না, তা যেমন কঠিন রূপ নিয়ে তার প্রকাশ্য রূপ সকলের সামনে ফুটে ওঠে তেমনি আমার সেই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আজীবন মানসলোকে পরিস্ফুট রূপ ধারণ করে থাকবে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায়।

তখন ছিল দু-হাজার চার সাল। আমার বয়স হবে ঐ আট-নয় ঠিক মনে নেই। আমি আমার দিমি, মা, বাবা সকলে মিলে বেরিয়ে পড়াল জীবনের শৈশবের প্রথম ভ্রমণের উদ্দেশ্যে হায়দ্রাবাদ। আমার দিদি আমার থেকে দু-বছরের বড়। আমরা প্রথম যখন পৌঁছালাম হাওড়া স্টেশন বিকেল পাঁচটায় সময়, কত ব্যস্ততা, কও বড় স্টেশন। ট্রেন লেট ছিল। আমরা সাতটার সময় ট্রেনে উঠে পাড়ি দিলাম আমাদের ভ্রমনের উদ্দেশ্যে। প্রথম দুদিন আমরা হায়দ্রাবাদে থাকলাম, খুব আনন্দ করলাম আমাদের গ্রুপ এর সাথে। পরের দিন সকাল সাতটার সময় পেরিয়ে পরলাম ভাইজ্যাকের উদ্দেশ্যে, ভাইজ্যাকে প্রথম রামুজি ফ্লিমসিটি, আরও কত জিনিস দেখলাম। জীবনের প্রথম সমুদ্রে নেমে "মা"এর হাত ধরে খুব দাঁতে দাঁত পিষে যেন দাড়িয়ে ছিলাম। আর দিদির সাথে ফোটো তুলতে গিয়ে বারবার ঢেউয়ের ঝাপটা লাগার ভয়ে আমি পিছনে তাকিয়ে ছুটে চলে আসছিলাম। এতক্ষন তো ভালো কিছু স্মৃতির কথা দেখলাম। শুধু  সমুদ্র নয়, পাহাড়ের সাথে যেন এটাই প্রথম পরিচয় আমার।

রামুজিফ্লিম সিটি থেকে ফেরার সময় বাসে সবাই আসছিলাম। ঠিক সেই সময় আমার কানে যেন কি একটা থাকে। হোটেলে ফিরে মা কানের জিনিসটাকে বের করে দেয়। বাবা গেছিলো ধূপকাঠি কিনতে। আমি, আমার দিদি শৈশবের চাঞ্চল্যে ছুঁটে চলে যায় বাবাকে দেখাতে। নীচে গিয়ে বাবাকে  না দেখতে না পেরে ফিরে আসতে গিয়ে নিজেদের রুমের নাম্বার হারিয়ে ফেলি। তখন ভয় পেয়ে যায়। আমি কাঁদতে থাকি। সে সময় চারিদিকে বিশাল হোটেলের ইমারত, বিশাল বিশাল ঘর, কত লোকজন নানারকম। আমার কান্নার আওয়াজ শুনে মা ডাকতে থাকে কিন্তু কেউ কাঠকে খুঁজে পাই না কথা 'ইকো'-র জন্য। এরকম চলতে চলতে আমরা একদম হোটেলের উপরে লিফটেতে উঠে যায় যেখানে রান্না হচ্ছিল আমাদের গ্রুপে। সেখানে একটি চেনা কাকু আমাদের দেখে, আমার দিদির বুদ্ধির জন্য আমাদের নিয়ে আসে আমাদের রুমের কাছে।  অবশেষে মা কে দেখতে পেয়ে ছুটে যায়। গ্রুপের সবাই তখন বাইরে দাঁড়িয়ে। মাকে পেয়ে যেন ছুটে যায় ও শান্ত হয়। মাও শান্তি পাই। হয়তো মা এর মনের অবস্থা আকুলতা বোঝার ক্ষমতা বা বুদ্ধি তখনও  আমার হয় নি, আজ যেন বুঝি বয়সের একটা age -এ এসে। মাকে পেয়ে আমরা রুমে চলে যায় ও দরজা  বন্ধ করে দিই। তারপর সারাদিনের ক্লান্তি অবসাদে যেন চারজনেই  ঘুমিয়ে যায় কেউ কাউকে কিছু না বলে। আজও যেন এই ঘটনা মনে করলে তা এ কাঁটা দিয়ে ওঠে, এমনকি তা আজীবন আমার স্মৃতির মণিকোঠায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতার একটি স্মৃতি চিহ্ন হয়ে রয়ে যাবে আজীবন।

 ...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment