1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

সুপর্ণার স্কুল

ছবি : ইন্টারনেট

সুপর্ণার স্কুল

প্রতীক মিত্র


স্কুলটা বড়। ছাত্র-ছাত্রী কম, শিক্ষক-শিক্ষিকা-অশিক্ষক কর্মী কমছে তার চেয়েও দ্রুত।শহর থেকে পেটের দায়ে যারা পড়ি-কি-মরি করে আসতো তারা অধিকাংশ বদলি নিয়ে বাড়ির কাছাকাছি চলে গেছে।কোনো আগন্তুক হঠাৎ করে যদি ঢুকে পড়ে স্কুলের ভেতরে, হেঁটে বেড়ায় মাঠ আর করিডোরে, দিনের বেলাতেও গা তার ছমছম করবে।দিনের বেলাতেই সব কেমন শুনশান।গ্রামের দিকের স্কুলে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম এখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি বলে এইসব সরকারি শিক্ষালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বেশিই থাকে।এটার বেলা কেন যে এমন ব্যতিক্রম হল?সে তাহলে বলতে গেলে অতীতের অনেক কচুরিপানা ঘাঁটতে হয়। সংক্ষেপে বললে বলতে হয় আশপাশে তো অনেকগুলো স্কুল তাই ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যটা ভাগ হয়ে গেছে।স্কুলে তরফে চেষ্টা কম হচ্ছে না সেই সংখ্যাটা বাড়ানোর তা সে নতুন পার্টটাইমার এনে, কমপিঊটার, স্পোকেন ইংলিশ পড়িয়ে কিম্বা উচ্চমাধ্যমিকে নতুন বিষয় এনে হোক। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো ফায়দা বিশেষ হচ্ছে না।আবার সমস্যার গভীরে গেলে কেউ কেউ এটাও হয়তো বলবে স্কুলের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিই স্কুলটার বারোটা বাজার কারণ।হাতে গোণা যেক’জন স্টাফ অবশ্য আছে তাদের সকলে এটা বিশ্বাস করে না।যেমন বিশ্বাস করে না সুপর্ণা দি।না না সুপর্ণা শিক্ষিকা নন, অশিক্ষক কর্মী।স্কুল নিয়ে গোটা গ্রাম এমনকি স্টাফেদের অনেকের ক্ষোভ থাকলেও ওর নেই।ওর কাছে এক-একটা দিন এক-একটা নতুন শুরু।শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক বলে সবার আপত্তি সত্বেও প্রধান শিক্ষকের অনুরোধে মাঝেসাঝে দু’একটা ক্লাসও ও নিয়ে দেখেছে জীবনের প্রতি ভালোলাগাটা ওর আরো গেছে বেড়ে।বিনিময়ে ওকে বেশি পরিশ্রম করতে হলেও ও রাজি।ওর তাও নয় নয় করে দশ বছর হয়ে গেল এখানে।বিয়ে করো বিয়ে করো বলে দিদিমণিরা বলে বলে হেদিয়ে গেলেও বিয়ে আর ও করেনি। অতীতে এই বিয়েরই এমন তেতো অভিজ্ঞতা ছিল ওর যে…স্কুলে ও দুইই---জনপ্রিয় এবং সমালোচিত।কর্মঠ আর ইতিবাচক মনোভাবের জন্য জনপ্রিয় হলেও নোংরা গুজবের কারণে সে সমালোচিতও বটে।গুজবটা হল ওর সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাকি ঘনিষ্টতা আছে।বিষয়টার সবটাই গালগল্প নয়।প্রধান শিক্ষকের ওকে অত বেশি বেশি গুরুত্ব দেওয়াটার ও ভুল ব্যাখ্যা করেছিল।তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য প্রলুব্ধও করেছিল সে।কাজ হয়নি।প্রধান শিক্ষক ছিল দেওয়ালগুলোর মতনই নির্লিপ্ত।সেই থেকে প্রধান শিক্ষকের সাথে ভালো সম্পর্কটা চটকে গেলেও বাকিদের সাথে আলাপচারিতায় কোনো হিমশীতলতা নেই।ও নিজেকে প্রধান শিক্ষকের জায়গায় রেখে বিষয়টার পরিমাপ করার চেষ্টা করেছিল। ওর একাকিত্ব ওর প্রাজ্ঞতা ওর ভয় ওর স্বপ্ন ইত্যাদির কতটার নাগাল পেতে পারে সুপর্ণা?তবে এও খুব অদ্ভুত ওর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার পর থেকেই বাকি শিক্ষকরা ওকে খুব নেক নজরে দেখা শুরু করে দিয়েছে।এটাতে অবশ্য ও অবাকই হয়েছে। ওতো এমনটা চায়নি।প্রধান শিক্ষকের সাথে ওর এই ভুল বোঝাবুঝির জন্য ও নিজেকে দোষী ঠাওরে বেশ কয়েকবার চেষ্টাও করেছিল ওর সাথে বিবাদ মিটিয়ে নিতে।ভদ্রলোক চায়নি।অগত্যা ও পুরো বিষয়টাতে নির্লিপ্ত থেকে চেয়েছে আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে।ফিরেওছে।গায়ে সুগন্ধি আঙুলে নেইলপলিশ, পড়নে উজ্জ্বল বর্ণের পোষাকে ও যে দুঃখী বা অভিমানি এটা কেউ বলতে পারবে না।যদিও স্কুল থেকে বাড়িতে ঢুকলে ঘরবন্দী অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতেমি ওকে প্রতিটা ক্ষণে ওকে বুঝিয়ে দেয় সত্যিই কতটা  বন্ধুহীন একা ও। বাড়িতে ফিরলে ওই জন্য বড্ড অস্বস্তি হয় সুপর্ণার। বাড়িতে তার মালিকানা অধিকারবোধের নিরিখে সমস্ত দখলদারি তার থাকলেও সে ঠিক খাপ খাইয়ে উঠতে পারে না।সে বেড়িয়ে পড়ে।বাজার করার ছুতোয় খানিকটা সময় কাটায় অন্তত বাড়ির বাইরে।তারপর সন্ধ্যেটা যেন কাটতে চায়না।নির্লিপ্ত ধীর সন্ধ্যে রাতে ঢুকলে সুপর্ণা না চাইলেও তার শরীর অবাধ্য হয়। তাকে অতীতের বোকামিগুলো মনে করিয়ে আবারো ভাবায় এবং বিশ্বাস করায় যে এই একাতিত্ব অসহনীয়।সকালের নিজের অবতারকে অবশ্য ও নিজেই চিনতে পারে না।এটা কি ও-ই?সকাল হলে যেন এক নতুন সুপর্ণার জন্ম হয় যে কি অনায়াসে ইতিবাচকের সদাগরি করে বেড়ায়।তখন শুধু স্কুল আর স্কুল।স্কুলে একবার ঢুকে পড়লেই ব্যস।ওর সমস্ত ঘাবড়ে যাওয়া ঠিক হয়ে যায়।ওর কাছে তখন এক-একটা দিন মানে এক-একটা নতুন শুরু। 

...(সমাপ্ত)...


No comments:

Post a Comment