1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Sunday, September 25, 2022

বেইমানি

ছবি : ইন্টারনেট

বেইমানি

মুকুট রায়


 চিঠিটা লুকিয়ে পৃথার অঙ্ক খাতার ভিতরে রেখেছিল তৃনীর। দুপুরে একটা অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ। শনি মন্দিরের পিছনে ঠিক ছটা…। জানত তৃনীর যে চিঠিটা পেয়ে পৃথা ঠিক বুঝতে পারবে কে লিখেছে চিঠিটা এবং সেই অনুযায়ী সে তৈরি হয়ে ও থাকবে। চিঠিতে সে লিখে ও দিয়েছিল যে পৃথা যেন পড়ে নেওয়ার পর চিঠিটা নষ্ট করে ফেলে। তারপর দুপুরে একটা অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ পাঠিয়েছিল যাতে পৃথা যেন ঠিক ছ'টার সময় শনি মন্দিরের পিছনে চলে আসে। নিজের মোবাইল থেকে মেসেজ পাঠায়নি কারন তাতে পরে ধরা পড়ে যাওয়ার রিস্ক থাকে।

আসলে গত একমাস ধরে সে চেষ্টা চালিয়ে তার সুন্দর চেহারা ও সপ্রতিভ কথার জোরে  পৃথাকে ফাঁদে ফেলেছিল।এখন শুধু রাতের ট্রেনে করে পৃথাকে কোলকাতায় নিয়ে যাওয়া।সোনাগাছির বস লতিফ হুসেন হাওড়া স্টেশনের কাছে একটা বাড়িও আগের থেকে ঠিক করে রেখেছে । সেখানে তৃনীর পৃথাকে নিয়ে তুলবে। সেখানে ক'দিন কাটানোর পর পৃথাকে একদিন রাত্রে লতিফেরই লোক হাত মুখ বেঁধে  সোনাগাছি নিয়ে ফেলবে। প্রতিদানে তৃনীর পাবে কড়কড়ে পাঁচহাজার টাকা।হ্যা, তৃনীর লতিফের আড়কাঠি । সে নানা জায়গা ঘুরে মেয়েদের পটিয়ে, ফাঁদে ফেলে তাদের কোলকাতায় নিয়ে এসে লতিফের হাতে তুলে দেয়। একবার লতিফের হাতে গিয়ে পড়লে সেই মেয়ের আর মুক্তি নেই।লতিফ তাকে গনিকাবৃত্তির কাজে লাগিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করে। 

তৃনীর শনি মন্দিরের পিছনে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন সিগারেট খাচ্ছিল এবং ঘড়ি দেখছিল।সাতটার সময় হাওড়ার ট্রেন ছাড়বে ।তার আগে পৃথাকে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছাতে হবে। হঠাৎ কিছু দূরে দেখা গেল কালো ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে পৃথা  তাড়াতাড়ি চলে আসছে।পৃথাকে দেখতে পেয়ে তৃনীর স্বস্তির শ্বাস ফেলল। আর মেয়েটাকে তার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।দুজনেই তাড়াতাড়ি স্টেশনের দিকে পা বাড়াল।

স্টেশনে পৌছেই পৃথার শিশিরের সঙ্গে দেখা।শিশির পৃথাকে ভালোবাসে কিন্তু পৃথা শিশিরকে পাত্তা দেয়না।শিশির জিজ্ঞেস করল পৃথা কোথায় যাচ্ছে?তার উত্তরে  পৃথা শিশিরকে বলল সে তৃনীরকে ভালোবাসে সেইজন্য তারা কোলকাতা চলে যাচ্ছে বিয়ে করার জন্য।শিশির পৃথাকে বলল,তৃনীর কোন মেয়েকে ভালবাসে না সে মেয়েদের ভুলিয়ে কোলকাতা নিয়ে গিয়ে তাদের বিক্রি করে দেয়।পৃথা শিশিরের কথার প্রতিবাদ করে বলল, না তৃনীর তাকে ভালবাসে এবং তারা দুজনেই কোলকাতা গিয়ে বিয়ে করবে।

এইসময়  আরপিএফের কনস্টেবল অবিনাশ শীল এসে হাজির হলো।তৃনীর অবিনাশ শীলকে দেখেই পালাবার উপক্রম করল। অবিনাশ শীল তৃনীরকে বিলক্ষন চেনেন কারন এই তৃনীর তাঁর মেয়ে মুনিয়াকে মিথ্যা কথায় ভুলিয়ে কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে লতিফের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। অবিনাশ বাবু তাঁর বোকা মেয়েটাকে বাঁচাতে পারেননি।  তিনি তৃনীরের দিকে তাকিয়ে বললেন - কিরে আরেকটা শিকার ধরেছিস? একেও কোলকাতা নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে টাকা কামাবি?

অবিনাশ বাবুর কথায় পৃথা প্রতিবাদ করে বলে - কাকু, আপনি ভুল করছেন তৃনীর আমাকে ভালবাসে, আমরা দুজনে বিয়ে করব। অবিনাশ বাবু বললেন - মা, তুমি ভুল করছ, তৃনীর কাউকে ভালবাসে না।ও তোমাকে কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে টাকা কামাবে। আমার মেয়ে মুনিয়াকেও বিক্রি করে ও টাকা উপার্জন করেছিল। আমার বোকা মেয়েটাকে আমি আজও ফিরে পাইনি। অবিনাশ বাবু তৃনীরের দিকে ফিরে বললেন - তোর  আজকে কোলকাতা যাওয়া হবে না। তুই আজকে আমার সঙ্গে গিয়ে রাতটা হাজতে থাক।কালকেই আমি তোকে জেলে পাঠিয়ে দেব।এই বলে টানতে টানতে তৃনীরকে নিয়ে চললেন।

ঘটনা পরম্পরায় পৃথা ভেঙ্গে পড়েছিল সে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে কাঁদতে লাগলো। এইসময়ে শিশির তার মাথায় হাত দিয়ে বলল - তোমার ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। ভগবানের ইচ্ছায় তুমি খুব বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছ।চল আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসি।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment