![]() |
ছবি : ইন্টারনেট |
বাড়িওয়ালা
উজ্জ্বল দাস
চরিত্র
বাড়ি ওয়ালা - করিতকর্মা মজুমদার
ভাড়াটে বউ - নন্দিনী
ভাড়াটে কর্তা – গোবর্ধন গুপ্ত
~~~~~~
ওই মালতি লতা দোলে,
- কই গো? আরে দাও দাও জলদি দাও, বুঝলে? নন্দিনী আজ জমিয়ে মাছটা খেতে হবে, তাও আবার পমফ্রেট বলে কথা... একটু কষে কষে করো কিন্তু....
- এই এই এই..তো হয়ে এলো গো, একটু এপিঠ ওপিঠ করে নিয়েই পাতে দিয়ে দেবো গরমা গরম।
(আড়াল থেকে উঁকি মেরে বাড়িওয়ালা)
-অ্যাঁঅঅঅঅঅঅ ব্যাটা বজ্জাত, দুই মাস বাড়ি ভাড়া দেয়নি আবার পমপ্লেট মাছ খাচ্ছে, খাওয়াচ্ছি। (স্বগতোক্তি)
(দরজায় টোকা মারার শব্দ)
টক টক টক...
- আরে আরে কাকু যে! আসুন আসুন, বসুন। যাক এলেন খুব ভালোই হলো নাহলে আমিই যেতাম।
- ওহ, তা তুমি যেতে বুঝি? দাও দাও যখন এসেই পড়েছি নিয়েই যাই, আর রশিদটা কিন্তু বাবা বিকেলে ওপরে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
- ওপরে! মানে কী কাকু? এভাবে ওপরে যাবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয় নাকি?
- কী বললে? অ্যাপন্ট ...মেন্ট। সেটা কী?
(গোবর্ধন বাবুর বউ নন্দিনীর প্রবেশ)
- আরে নানা কাকু, উনি বলছিলেন যে...
- আরে বৌমা, তা পমপ্লেট মাছটা কি রেডি হলো? তোমার কত্তার যে এবার জিভের জল ধরার জন্য বাটি লাগবে। যা লিপ্সা অ্যাঁঅঅঅঅঅ...
- ওওওওহ, আড়ি পাতার অভ্যেস ভালোই আছে দেখছি, তা একটু খেয়েই যান আজ দুপুরে।
- আরে না না আমিতো এসেছিলুম...
- ভাড়ার টাকাটা নিতে তাইতো?
- অজ্ঞে হ্যাঁ, মানে...কথা। দুই মাস হলো তো, তাই আর কী, ভাবছিলাম..
- ভুল ভাবছিলেন কাকু, আসলে চাঁদা-যেহেতু আমাদের দিতেই হয় তাই ভাবছিলাম পাশের ক্লাবের চাঁদার বইটা নিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করব।
-হ, বুঝলাম। বাড়ি ভাড়ার টাকা না দিয়া তোমরা আমার পকেট থেকে টাকা বের করার তাল খুজছো বৌমা তাই তো।
- আরে না না কাকু, টাকাটা তো পরের হপ্তায়...
- এই থামো তো গোবর্ধনবাবু, এই হপ্তার গল্প আমি রোজ সকালে বাথরুমে ঢুকে ভাবি আর একের পর এক হপ্তা পেরিয়ে যায়। আমাকে আর এই হপ্তার গল্প দিও না তো মশাই, যত্তসব। এরপর বাড়ি ছাড়তে হবে কিন্তু।
- দেখুন কাকু, টাকা দিতে পারিনি, ঠিক আছে...
- আরে, ঠিক আছে মানে কী হ্যাঁ? ঠিক আছে মানে কী... (রাগান্বিত হয়ে)
(নন্দিনী)
- আরে কাকু কথাটা তো শুনবেন, তাগাদা দিতে এয়েছেন ঠিক আছে কিন্তু বাড়ি ছাড়তে বললেই কিন্তু... হেঁ হেঁ... হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো।
- আচ্ছা আচ্ছা বৌমা! ঠিক আছে, না হয় পরের হপ্তায় একবার...
- ওহ হ না না, উনি বলতে গেছিলেন পরের হপ্তার পরেরটায় আমাদের একটা ফিক্স ডিপোজিট ম্যাচিওর করবে তখন আপনার টাকাটা একেবারে আগাম....
- আগাম! আগাম মানে কী? তা বৌমা কতগুলো পরের হপ্তা বললে, মনে থাকবে তো? আর এখন তো টাকা বাকি পড়েছে তাহলে আগাম বলছো কেনো?
-দেখুন কাকু কতগুলো হপ্তা বললাম সেটা যে আপনি মনে রাখবেন সেটা পাশের বাড়ির.. অনু কাকিমাও জা...
- আচ্ছা আচ্ছা বেশ। সে না হয় আমিই তাগাদা করে ...
-আচ্ছা, এবার যদি আপনি ওপরে যান তাহলে আমাদের ছুটির দিনের দুপুরটা একটু ভালো কাটে। অন্তত আমরা ভদ্র বাড়ির লোক। ঝগড়া বা তর্ক বিতর্কে যেতে চাই না।
-ঠিক আছে ঠিক আছে। এই মনে রাখলাম। আমার বাড়ি থেকে আমাকে চলে যেতে বলা.. গোবর্ধনবাবু তুমি একটু সজাগ হও, যা দজ্জাল বউ তোমার।
- এই এই দজ্জাল বললেন কেন। দজ্জাল মানে কী! এক্ষুনি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো। যান উপরে।
~~~~~~
(নন্দিনী)
- দেখলে কী ভাবে তাড়াতে হয়, শিখে রাখো এই সব গোবর্ধন কুমার।
- সত্যিই গিন্নি। তোমার তুলনা নেই। এইভাবে যতদিন টাকাপয়সা বাঁচানো যায় আরকি, এদিকে দেখোনা ক্লাবের চাঁদাটাও কেটে নেব কায়দা করে।
~~~~~~~~~
(পরের দিন ভোরবেলা)
-কই গো গিন্নি, চা টা দাও।
- ওই যে বাঁ দিকের টেবিলে রাখা আছে দেখো। চা-টা খেয়ে জলদি বাথরুমে ঢুকে যাও। নইলে কিন্তু আজ তোমার অফিস যেতে দেরি হয়ে যাবে।
-বুঝলে কী ভাবছি?
-কী ভাবছো?
-আজ অফিস যাবার পথে ওই যে তোমার জন্য ঢাকাই জামদানি যেটা দেখে এসেছিলাম...
- ওরে বাবা সে তো অনেক দাম চার..চার হাজার টাকার ওপর।
- আরে শোনো শোনো, ভাবছি ভাড়াটা না দিয়ে ওই টাকা দিয়ে... বায়না করে যাব অফিস যাবার সময়। সন্ধের সময় ফেরার পথে নিয়ে নেব। কিন্তু হ্যাঁ...
-কী ... তা নেবে যখন বলেছোই, নিয়েই নাও।
- আহা তা নয়,
-তালে কী...
-আরে বলতে তো দাও। বলছিলাম বুড়ো যেভাবে আমাদের ওপর নজর রাখছে আজকাল, তাতে করে শাড়িটা নিয়ে বাড়ি ঢুকি কী করে! সেটাই ভাবছি।
- হম্ম, তা মন্দ বলনি। এক কাজ করো বুঝলে, ফেরার সময় দোকান থেকে শাড়িটা কিনে আমাদের বাড়িতে রেখে দিয়ে এসো। ও আমি টুক করে একবার গিয়ে লুকিয়ে বাড়ি নিয়ে আসবক্ষণ।
- সেই, রেখে আসি আর আমার নির্লজ্জ শালিটা পরে বসে থাক আর কী।
- এই ...এই... এই ...কী বললে? আমার বোন ভগ্নিপতি, ঘর জামাই থাকে বলে ওদের তুমি এভাবে বললে? অ্যাঁঅ.... অঅঅ ...অ...
- আরে শোনো শোনো ব্যাপারটা এত সিরিয়াসলি নিও না। গতবার তোমার চুড়িদারের পিসটা ঝেড়ে দিয়েছিল ঠিক এই পলিসিতেই তো। তাই আর কী.. আমি তো আর এটা বলিনি...... যে ওরা শ্বশুর বাবার ঘাড়ে বসে খায়। তাহলে নাহয় রাগ করার একটা কারণ ছিলো।
- এইইইইইই.... তুমি এবার থামবে নাকি আমি মুখ খুলবো?
-আচ্ছা আচ্ছা বাবা রে বাবা। এই তোমার দিব্যি। নাক মুলছি। রাগ করো না। আমি বাথরুমে যাই। ততক্ষনে তুমি ব্রেকফাস্ট রেডি করো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
-এসো না তোমায় এক ছিপি ফলিডল খাইয়ে আজ অফিস পাঠাবো। শয়তান বুড়ো। হাড়মাস জ্বালিয়ে খেলে একেবারে।
(স্নানে চলে যায় কত্তা)
(জলের শব্দ। সঙ্গে কত্তার বাথরুমে গলা ছেড়ে সংগীত)
ওগো কাজল নয়না হরিণী। মেলে দাও না ও দুটি আঁখি....
ওগো......
গান থামিয়ে হঠাৎ বাথরুমের ভেতর থেকে।
- এই শুনছো, দেখোতো জল চলে গেলো।
- ওমা সেকি। দাঁড়াও দেখি বলি বাড়িওয়ালা কাকুকে। কাকুকুকুকু... ও কাকুকুকু... বলছি জল চলে গেছে। এদিকে আমার কত্তা বাথরুমে ঢুকেছে। সারা গায়ে সাবান মেখে চোখ মুখ খুলতে পারছেনা। মাত্র এক বালতি জল আছে।
- এই যে বৌমা শুনতে পেলাম তুমি চিৎকার করছো জল নেই জল নেই করে। আমি তোমাকে বলতেই আসছিলাম যে বাড়ির জল চলে গেছে। জলের লাইনে কি একটা সমস্যা হয়েছে। সক্কাল বেলাই কলের লোককে ফোন করে জানালাম। ট্যাঙ্কিতে জল উঠছে না দেখে। সদ্য দেখে গেলো, আমাকে বললো নাকি ছ'হাজার টাকা খরচা। মটর আর চলবে না।
- ওমা সেকি কাকু?
- হ্যাঁ বৌমা। এদিকে আমি এখন এত টাকা পাই কোথা থেকে বলো। তাই এই সামনেই আমার এক কাকা শ্বশুরের বাড়ি আছে। দিন কয়েক গিয়ে থেকে আসি গে।
- কই গো, কাকু কী বললো? পাম্প কি চালাবে?
- ওই এক বালতি জলে চান করে বেরিয়ে এসো। তারপর সব বলছি।
- আচ্ছা বৌমা আমি তাহলে আসি এখন। টাকা জোগাড় করতে পারলে জল নিয়ে ফিরবো একবারে।
- যাহ, সেকি, কাকু দাঁড়ান দাঁড়ান এই রে। ও কাকু।
- আসি বৌমা...। জল নিয়ে তবেই ফিরবো। তোমাদের অসুবিধা হবে এ আমি চোখেও দেখতে পারবো না। তাই চললুম।
- এই তুমি চান করে এসে দেখো তো। ঘটনাটা ঠিক কী। এটা কি চাপ দিয়ে ভাড়া আদায়ের একটা রাস্তা নাকি?
- হ্যাঁ হ্যাঁ আসছি। বুড়োর একদিন কী আমাদের এক....
- আর ল...চ.... (লম্বা চওড়া) বাত ঝেড়ো নাতো। দিলো তো মুখে মুলো গুঁজে।
- আরে আমি তো তোমার কথা শুনেই ভাড়াটা আটকে রেখে ছিলুম। দাও বেল্টটা দাও... রুমাল টা...
- হ্যাঁ হ্যাঁ এখন সব আমার দোষ। বদমাশ বুড়োকে একটু ঢিট করবো বলেই তো...
- যাই বলো গিন্নি পায়ের উপর পা তুলে ঝগড়া করাটা তোমার একটা স্বভাব আছে। বয়স হচ্ছে এসব এবার একটু ছাড়ো। এই যে এবার আমিও অফিস বেরিয়ে যাবো। থাকো তুমি জল ছাড়া।
- অ্যঁ...অ্যঁ ... হ্যাঁ হ্যাঁ (নাকি কান্নার সুর) যাই হোক যাবার সময় শাড়ির অর্ডার টা দিতে ভুলে যেও না যেন। এই নাও ব্রেকফাস্ট রেডি।
- আরে আচ্ছা গো আচ্ছা তোমার শাড়ি আমি ঠিক অর্ডার দিয়ে যাব যাওয়ার সময়
- আচ্ছা বাবা। দুগ্গা দুগ্গা। জয় ঠাকুর, জয় ঠাকুর। তাড়াতাড়ি এসো এদিকে আমি দেখি জল ছাড়া কি করে চলে! নাকি জলের ব্যবস্থা করতে পারি...
###########
- হ্যালো, এই হ্যালো হ্যালো.. হ্যাঁ নন্দিনী?
- হ্যাঁ বলো।
- আমি অফিস পৌঁছে গেছি। আর শোনো না তোমার ঢাকাই জামদানিটার জন্য গুনে গুনে কড়কড়ে চার হাজার দুশ টাকা দিয়ে এসেছি। বুঝলে, হেঁ হেঁ, এবার একটু হাসো। ওগো হাসো।
- উফফ আমার সন্তাটা, আমার মোন্তাটা। আচ্ছা বুড়ো তো নেই বাড়িতে। ফেরার সময় বাড়িতেই নিয়ে এসো শাড়িটা- কেমন। আর হ্যাঁ শোনো, আমি আপাতত পাড়ার টিউকল থেকে জল ধরে রেখেছি ভর্তি করে। তা দিয়েই আমাদের চলবে ক্ষণ। দেখিনা বুড়ো কদ্দিনে ফিরে আসে।
- আচ্ছা গো আচ্ছা।
~~~~~~~~~
(বিকেল বেলা ফেরার সময়)
আমার সাধ না মিটিলো, আশা না পুরিলো...
(শাড়ির দোকানে গোবর্ধন বাবুর প্রবেশ)
-দাদা নমস্কার। আমি গোবর্ধন গুপ্ত। সকালে চার হাজার দুশ টাকা জমা করে গেছিলাম.....ওই... একটা... জামদানি...
(ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চক্ষু চড়কগাছ। দোকানের ভেতরে হঠাৎ দেখে বাড়িওয়ালা কাকু বসে আছেন)
-অ্যঁআআআআআ! সেকি কাকু আপনি।
- হেঁ হেঁ, কেনো বাছাধন গোবর্ধন, একদম ঠাওর করতে পারোনি তাই না?
-না মানে...
- মানেটা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। এই হলো আমার খুড়শ্বশুরের, ভগ্নিপতির ভায়রা ভাইয়ের কাকিমার জাঠতুত ভাইয়ের দোকান।
-অ্যঁঅঅঅঅঅঅঅ...মানে?
- মানে হলো গিয়ে এই শাড়ির দোকানটা আমার একদম কাছের সম্পর্কের ওই কী যেন হয়, তাদের দোকান। মানেই আমার দোকান।
-আমার টা...কা...টা...
-তোমার বাড়ি ভাড়া প্রতি মাসে এক হাজার। বাকি পড়েছে দু মাসের। আর আগাম নিলাম দুমাসের। এই হলো তোমার চার হাজারের বাড়ি ভাড়ার রশিদ। আর ফেরত দিলাম দুইশত টাকা। হেঁ হেঁ এইবার নিশ্চয়ই তোমার হিসেব মিলে গেছে। যাও কাল থেকে বাড়ির জলও পাবে। আলোও পাবে। হেঁ হেঁ বাবা আমিও করিতকর্মা মজুমদার।
বা......ড়ি যাও,
ফ...লি...ডল খাও।
...(সমাপ্ত)...
No comments:
Post a Comment