1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Friday, January 13, 2023

স্বার্থপর

ছবি  : ইন্টারনেট 

স্বার্থপর 

উত্তম চক্রবর্তী

 - HI. কেমন আছ ?

- কে বলছেন বলুন তো ? নম্বরটা ঠিক চিনতে পারছি না ?

 - বা বাঃ, তুমি যেন সব নম্বরই মনে রাখতে পার ? তোমার বৌয়ের নম্বর মনে আছে ?

- উঁ….উঁ…তা অবশ্য মনে নেই। সেল ফোনে দেখতে হবে। কে আপনি ? আমাকে চেনেন নাকি ?

- তুমি আমাকে আপনি আপনি বলবে না তো সুমন ! তোমার দেওয়া সেই মিষ্টি নামেই ডাক। 

- উঁ… কোন নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। একটু যদি হিন্টস দাও তো…।

- এই তো ধরা পড়ে গেলে। তার মানে তুমি এরকম অনেককেই বিভিন্ন নাম দিয়ে থাক। আমারটা মনে পড়ছে না। আমাকেও এই রকম একটা নাম দিয়েছিলে, কিন্তু এখন সব গুলিয়ে যাচ্ছে তোমার, বাঃ বেশ বেশ।... কী হল, চুপ করে গেলে যে। আমি কি অন্যায় কিছু বললাম ? আমি অঞ্জনা। তোমার অণু।

- আরে অণু, আগে বলবে তো। না আমি সবাইকে আমার পছন্দের নাম দেই না। এই তোমাকে দিয়েছিলাম একবার আর দ্বিতীয় এবং ফাইনাল বার আমার বৌ সুনন্দাকে। তা তুমি কোথায় এখন ? তোমার দাদা মানে আমার বন্ধু রাজা বলেছিল তোমার নাকি দিল্লীতে বিয়ে হয়ে গেছে। জামাই নাকি ব্যবসা করে ।

- হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছ। তবে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আজ দুই বছর হল। আমি এখন কলকাতায়।

- তুমি কি কোথাও চাকরি করছ অণু ? কলকাতায় থাক কোথায় ? একা, নাকি আবার বিয়ে করেছ ?

- আমি আর কাউকে বিয়ে করিনি গো সুমন।

- তা তোমার ছেলে মেয়ে ? ওরা কোথায় ? বাবার কাছে না তোমার কাছে ?

- আমার তো আর কোন ছেলে পুলে নেই সুমন। আমি একা। একদম একা। থাকি একটা এক কামরার ফ্ল্যাটে। তুমি পার্ক লেনে জিতেন ম্যানশন চেনো তো, ঠিক তার দুটো বাড়ি পরেই আমাদের সোসাইটি। জায়গাটা আমার অফিস থেকে খুব কাছে।

- তা তোমার কত্তা তোমাকে কোন খরচা পাতি দেয়না অণু ? তুমি কৃষ্ণ নগরে বাবা মায়ের কাছে চলে গেলে না কেন অণু ! ওখানে গিয়ে নাহয় ওঁদের কাছে থেকে চাকরি করতে ?

- না সুমন। প্রথমত বাবা আর নেই, বিধবা মা দাদা বৌদির কাছে থাকে। আমি আর দাদার বোঝা বাড়াতে চাইনা। বাকি জীবনটা আমি এই ভাবেই কাটিয়ে দেব। ছুটির দিনে বাড়িতেই থাকি।

- তোমার কোন বন্ধু বান্ধব নেই অণু ? ইউনিভার্সিটিতে তো অনেক বান্ধবী ছিল, এখন কেউ নেই !

- না গো, নেই। কলকাতায় হস্টেলে থাকতেই এবং আজও আমি একজনকেই শুধু আমার খুব কাছের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী বলে ভাবতাম আর এখনো তাই ভাবি।

- কে সে অণু ?

- আহা, ন্যাকামো। কে আবার, তুমি।  আমার সাথে তোমার বিয়েটা বাদে সব কিছুই তো হয়ে গেছিল। মনে আছে সেই দিঘায় গিয়ে প্রথমবার তুমি যখন আমার মন্দিরের শুভ উদ্বোধন করলে সুমন ? আমার এখনো সেদিনের কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দেয়। পরে আমরা আরও কতবার কত জায়গায় গেছি, কিন্তু জানো, সেই রাতের কথা আমি কোনদিন ভুলব না। তুমি আমাকে তখন কেন বিয়ে করলে না গো ?  

- আমার বাবা নন্দার বাবাকে কথা দিয়ে রেখেছিলেন অণু। তুমি তো সবই জানো।

- কিন্তু নন্দার বাচ্চা কাচ্চা হচ্ছিল না বলে আবার আমার কাছেই তো তোমাকে আসতে হয়েছিল। আমি তো তখন একা ঐ বেলেঘাটার ফ্ল্যাটে বেশ ছিলাম আমাদের জুঁইকে বুকে চেপে ধরে রেখে। তুমি আমার সেই সুখটাও কেড়ে নিয়েছ সেদিন। তুমি খুব স্বার্থপর সুমন।

- হ্যাঁ, আমি স্বার্থপর স্বীকার করছি অণু। সেদিন তার পিছনে একটা কারণ ছিল অণু। তুমি তো জান আমি তোমাকে বিয়ে করিনি কিন্তু আমাদের মেয়ে জুঁইকে আমি কতটা ভালবাসি। একবছর বাদে যখন জানা গেল নন্দা কোনদিন মা হতে পারবেনা তখন নন্দাই চাইছিল আমি একটা বাচ্চাকে এডপ্ট করি।  আর আমিও চাইছিলাম তোমাকে মুক্তি দিতে , যাতে তুমিও একটা সুন্দর জীবনের জন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও অণু। তাই আমি প্ল্যান করেছিলাম আমাদের জুঁইকেই অনাথ আশ্রম থেকে তুলে এনেছি বলে তুলে দেব নন্দার কোলে। তুমি সেদিন যে আমার কি উপকার করেছিলে অণু তার কোন তুলনাই হয় না। 

- তুমি আমাকে মুক্তি দিলে আর আমিও ভাবলাম একা একা কলকাতা শহরে চাকরি করে কতদিন আর চলবে আমার। এদিকে এতদিন যাবত না না করেও এবার যখন বিয়ে করতে রাজি হলাম সেই শুনেই দাদা এক রকম জোর করে ওঁর বন্ধুর ভাই ঐ অপদার্থ সমীরের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল। এরপর কিছুদিন বাদেই আমি জানতে পারি যে সমীরের না আছে পুরুষত্ব না আছে কোন রকম ভদ্র রুচি। কেবল বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর মদের পার্টি। বিয়ের পর সাত বছর দিল্লিতে আমার ওপর দিয়ে যে কি ঝড় গেছে কী বলব সুমন। তোমাকে আমি আর কোনদিন আমার ব্যাপারে কোন কছুই জানাই নি। শেষে বাধ্য হয়ে আমাকে ডিভোর্স নিতে হল।... তোমার কি পরে আর কোন ছেলেপুলে হল সুমন ?   

- না অণু। আমার স্ত্রী নন্দা ঐ একজনকে, মানে আমাদের জুঁইকে নিয়েই বেশ আনন্দে আছে। এখন উঠতে বসতে শুধু জুঁই আর জুঁই। ওর জীবনটাই পাল্টে দিয়েছ তুমি অণু।

- জুঁই এখন কোন ক্লাশে গো বিমল ? ও কি আমাদের ব্যাপারটা কিছু জানে ?

- না জানে না। নন্দা নিজেই জানেনা কিছু। জুঁই এখন ক্লাশ সিক্সে পড়ছে অণু। একদম তোমার মতই দেখতে হয়েছে জুঁই। সেবার তুমি আমাদের সন্তানকে নন্দার কোলে না তুলে দিলে নন্দাকে আমি বাঁচাতেই পাড়তাম না অণু। ও ভীষণ মেন্টাল ডিসটারবেন্সে ভুগছিল। আমি জানি আমি তোমাকে না বিয়ে করে উল্টে বিয়ের পরেও তোমার কাছ থেকে তোমার কোলের সন্তানকে নিয়ে নিয়েছি আমার নিজের স্বার্থে, কিন্তু তুমি নন্দার জীবন বাঁচিয়েছ অণু। সেটা কি কম পুণ্যের ?

- এবার তুমি আমার একটা উপকার করবে সুমন।  আমার কাছে আসবে আজ, তোমাকে আজ আমার ভীষণ ভীষণ মনে পড়ছে গো। আজ রাতে আমার এখানেই ডিনার করে থেকে যাবে তুমি। আমরা আবার সেই দিঘার দিনে ফিরে যাব সুমন। তুমি আসবে তো ?

- উ... ঠিক আছে। তুমি তোমার এড্রেসটা আমাকে হোয়াটস এপ করে দাও অণু। আমি আজ তোমার ওখানে খাব আর রাতে থেকে যাব। নন্দাকে বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি , কাল ফিরব বলে বেরিয়ে যাব। এরপর  আমাকে তুমি আর কখনো স্বার্থপর বলতে পারবে না অণু।

- হ্যাঁ, এখন আমাকেও তুমি আনন্দে রাখ সুমন। আমিও আর কখনো তোমাকে স্বার্থপর বলব না। এবার থেকে আমিই নাহয় স্বার্থপরের মত তোমাকে যখন তখন ডেকে পাঠাব।

...(সমাপ্ত)...

No comments:

Post a Comment