1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

Friday, January 13, 2023

বাঙালি মননে হাজির হিমেল পরশ

ছবি : ইন্টারনেট

বাঙালি মননে হাজির হিমেল পরশ

পাভেল আমান

ঘূর্ণিঝড় সিতরাংয়ের দুর্যোগের মধ্যেই কালীপুজো দীপাবলি ও ভাইফোঁটা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হল বাংলার ঘরে ঘরে। শারদ উৎসবের উচ্ছাস আনন্দের মতই এবারের কালী পূজো ও ভাইফোঁটায় বাঙালিরা আলোর রোশনাই মুখরিত হয়ে প্রতিমা দর্শন প্যান্ডেলে ঘোরাঘুরির মধ্য দিয়ে কাটাল স্বতঃস্ফূর্ত ও উজ্জীবিত মননে। সারা বছরের দুঃখ যাতনা হতাশা নিরাশা শূন্যতা অপূর্ণতা ঘাত প্রতিঘাত প্রতিবন্ধকতাকে সরিয়ে রেখে বাঙালিরা মেতে ওঠে পুজোর কয়েকটা দিনের আনন্দকে সারা বছরের কষ্ট লাঘব মোচনের উপশম রূপে। বাঙালি যেন অচিরেই পিছুটান জড়তা টানাপোড়েন কে বিস্মৃত প্রায় করে শারদ উৎসব ও কালীপুজোর উদ্বেলিত আনন্দে শুরু করে জীবনকে নতুনভাবে।বিগত দু বছরের কোভিডে অবরুদ্ধ পুজোর অতৃপ্ত বকেয়া ভালোলাগা বাধভাঙ্গা আনন্দ  বাঙালিরা এবার শুধু আসলে পরিপূর্ণ করেছে। প্রত্যেকের মধ্যেই ছিল নজর কাড়া পুলকিত মাতোয়ারা রোমাঞ্চিত পুজোর উপভোগের নান্দনিক অনুভূতি। শারদ উৎসবে যেমন নিম্নচাপের ভ্রুকুটি কিছুটা বিঘ্নতা সৃষ্টি করেছিল সেভাবেই দীপাবলিতে ঘূর্ণিঝড় ও নিম্নচাপ রাজ্যের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী ও গাঙ্গেয় উপত্যকার জেলাগুলিতে হয়েছে বৃষ্টিপাত। দুর্যোগ কেটে যাওয়ার পর থেকেই ক্রমশ ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে হেমন্ত। ঝলমলে রোদ এবং উত্তরে বাতাসের যুগলবন্দিতে সকালের দিকে হিমেল ভাব অনুভূত হচ্ছে সেইসঙ্গে শীতের হাতছানি। আবহাবিদদের মতে শীতের উপস্থিত হওয়ার কোন নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই। তবে হেমন্তের শেষে পারদপতন উত্তরে বাতাসের আগমন প্রভৃতি জানান দিচ্ছে শীত থিতু হওয়ার আগাম বার্তা। সেই নিরিখে বলা যেতে পারে শীত পড়তে এখনো মাস দেড়েক সময় তো লাগবে তাই আপাতত নরমে গরমে হেমন্ত টাকে আরেকটু উপভোগ করে কাটানোই একমাত্র ভবিতব্য। এবছরের আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা তে কার্যত মার্চ থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ঘেমে রোদে পুড়ে বাঙ্গালীরা অস্থির হয়ে কাটিয়েছে। রোদ গরমের উষ্ণতায় বাঙালি যেন একেবারে নাজেহাল। বর্ষাকালেও দেখা মেলেনি আকাশে ঘন কালো মেঘের ঘনঘটা। হয়নি বর্ষার পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ।শুধু তাই নয় জলবায়ু পরিবর্তনের পাকেচক্রে কার্তিকের হিমতো বাঙালি হারিয়ে ফেলেছিল তাই কাপুনি দিয়ে শীত না হোক হেমন্তের আমেজ অনুভবটা পেলেও খুব একটা অখুশী হওয়ার কারণ নেই। ঘূর্ণিঝড় সিতরাংয় শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাংলাদেশে ঘুরে যাওয়াতে উত্তরো বাতাসের অবদান অনেকটা। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব থেকে এ যাত্রায় পশ্চিমবঙ্গ বেঁচে গেল। উত্তর ভারতে আগত একটি শক্তিশালী পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দৌলাতে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে জোরালো হাওয়া পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। সেই হাওয়া কার্যত ধাক্কা দিয়ে বিদায় করেছে ঘূর্ণিঝড় সিতরাংয়কে। এই তীব্র ঝঞ্ঝাই মূলত ভারতের উত্তর দিকে শীতকে ডেকে আনে এই ঝঞ্ঝার দাপটেই হিমালয় পার্বত্য এলাকায় তুষারপাত হয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই একটি প্রশ্ন এই মুহূর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে অক্টোবরেই জোরালো ঝঞ্ঝার আগমন কি তবে শীতকে অতি দ্রুত হাজির করবে ? শীত কি আবারো পূর্বের চেনা ছন্দে বৈচিত্রে নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ফিরে আসবে? ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া হেমন্তের সেই সহিষ্ণু ভালোলাগার আরামদায়ক শীতলতা কি অনুভব করা যাবে? জাকির শীত পড়ার আগে হৈমন্তিক শীতের অনুভূতি বাঙালি কি আবারো অনুভব করবে ?আবহাবিদদের মতে দুই একটা ঝঞ্ঝা দেখে পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিতভাবে শীতের ত্বরান্বিত ভাব অনুমান করা কষ্টসাধ্য তবে ঝঞ্ঝা যদি নিয়মিত পশ্চিমবঙ্গে  হাজির হয় তাহলে হারিয়ে যাওয়া ফেলে আসা স্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাওয়া সেই আকাঙ্ক্ষিত বাঙালির হেমন্তকাল কে আবারো অনুভব করা যেতে পারে ঋতু বৈচিত্র্য উদযাপনে সেটাই এই মুহূর্তে আপামর বাঙালির কাছে বড় প্রাপ্তি হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের সমাপতনে মেঘ মুক্ত পরিচ্ছন্ন আকাশে দিবাভাগে রোদ ঝলমল আবহাওয়া মধ্যরাত্রিতে শীত শীত ভাব আবারে যেন বাঙ্গালীদের একটু নস্টালজিক করে তুলেছে সেই হেমন্তের শীতল ছোঁয়ার অনুভবে। চারিদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ একটা খুশির মেজাজ। দুর্গাপুজো কালীপুজো দীপাবলি ভাইফোঁটা একে একে প্রতিটি উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ হওয়াতে আপামর বাঙ্গালীদের মধ্যে এক পরিতৃপ্তির ঢেকুর ভালোলাগার সংবেদনশীল অনুভূতি। তারা যেন প্রকৃতার্থে একটু মানসিক দিক থেকে প্রশান্তির আবর্তে নিজেদের চালিত করেছে যতই থাকুক না কেন প্রাত্যহিক সমস্যার বিবিধ সাতকাহন। কারণ জীবন মানেই জটিলতা সংকটময়তা বিপন্নতা বিপর্যয়ের হাতছানি তবুও সুস্থতার বরাভয়ে একটু শান্তির খোঁজে বাঙালিরা বারে বারে ছুটে যায় উৎসব পুজো পার্বণের শাশ্বত পরিমণ্ডলে। এখানে বাঙালিরা অন্যান্যদের থেকে একটু আলাদা, স্বতন্ত্র প্রকৃতির ও ঘরানার। তারা ভালোবাসে সাহিত্য সংস্কৃতি উৎসব পূজো পার্বণ মেলা অনুষ্ঠান। এভাবেই বাঙালি তার আবেগ ঐতিহ্য ঘরানা কৃষ্টি ও সৃষ্টিশীলতাকে আপন করে , পালিত পালিত করে এগিয়ে চলে জীবনের সম্মুখে। বাঙালি অনেক বাধা-বিপত্তি বিঘ্নতা বিপন্নতা বিপর্যয়কে কাটিয়ে ওঠে চলমানতার মন্ত্রে

শান দিয়ে লড়াকু মনোভাবে সংগ্রামী চেতনাকে জাগ্রত করে আজন্ম লালিত সম্প্রীতিকে আঁকড়ে ধরে সর্বোপরি বাঙালিত্বের  ঐক্যবদ্ধতায় এখনো জাগরুক। 

...(সমাপ্ত)...



No comments:

Post a Comment